What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made মোবাইল যাদু (1 Viewer)

Yuvrajj

Administrator
Staff member
Administrator
Joined
Mar 8, 2018
Threads
1,573
Messages
409,391
Credits
2,061,315
School
Sandwich
Shrimp
Rose
Parrot
Camera
মোবাইল যাদু
যুবরাজ

(একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে)

আমিন সাহেব একটি প্রাইভেট ব্যাঙ্কে মাঝারী মানের চাকুরী করেন, বক্সীবাজারে তার অফিস। সেদিন সকালে ১১টার দিকে তাকে দেখা গেল খুব মন খারাপ করে অফিসে বসে থাকতে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, মাত্র গত সপ্তাহেই কেনা তার দামী মোবাইল সেটটি তার ডেস্ক থেকেই চুরি হয়ে গেছে কিছু ক্ষণ আগে।
কিভাবে?সে প্রতারণার এক নয়া কৌশল।

যথারীতি ব্যাঙ্ক খুলেছে সকাল ১০টায়। দুজন ক্লায়েন্ট বিদায় করে একটু চা খাচ্ছিলেন আমিন সাহেব। আর মোবাইলে গল্প করছিলেন পুরানো এক বন্ধুর সাথে – এই ডিসেম্বরে যদি কিছু ডিপোজিট পাওয়া যায়। সামনে অফিসের পিওন ছেলেটি এক কাপ ধূমায়িত চা রেখে গেছে। এই শীতের দিনে অফিস শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হলেও ধূমায়িত এক কাপ চায়ের মজাই আলাদা। মনটা খুশ হয়ে গেল আমিন সাহেবের।
ডেস্কে কারও ছায়া পড়তেই মাথা তুলে তাকালেন আমিন সাহেব। ময়লা একটা শার্ট আর এলোমেলো চুল – এক লিকলিকে শুকনা তরুন দাঁড়িয়ে। ক্লায়েন্ট না, তাই চোখে প্রশ্ন নিয়ে তাকালেন আমিন সাহেব।

ছেলেটি কোন কথা বললো না, শুধু একটা কাগজ বাড়িয়ে দিল, আর অন্য হাতের ফাইলটা আমিন সাহেবের ডেস্ক রাখলো।
আমিন সাহেব কাগজটি পড়ে বুঝলেন যে ছেলেটি বোবা, কথা বলতে পারে না, কিন্তু বুঝতে পারে। তাই ডাক্তারী শাস্ত্র মতে উপযুক্ত চিকিৎসা পেলে সে আবার কথা বলতে পারবে।
ছেলেটির নিষ্পাপ চোখের দিকে তাকিয়ে মায়া হল আমিন সাহেবের। একটা ৫০ টাকার নোট মানিব্যাগ থেকে বের করে দিলেন ছেলেটিকে।
টাকা পেয়ে ছেলেটি এত খুশি হল যে হাত টেনে বিরাট এক স্যালুট দিল। তারপর অফিসে আর কারও কাছে টাকা না চেয়ে নিজের ফাইল আর কাগজ নিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে গেল।

এরও ২০ মিনিট পরে আমিন সাহেবের মনে হল যে বাসায় ফোন করা দরকার, আজ ছোট মেয়েটার স্কুলের ফাইনাল পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে।

কিন্তু কোথায় ফোন?
আরিফের সাথে কথা বলার পরে তো টেবিলের উপরেই রেখেছিলেন। এর মধ্যে আর কোন ক্লায়েন্টও আসে নি।
শুধু এসেছিল – সেই বোবা ছেলেটি।

ঘটনা শুনে অফিসের সবাই এক বাক্যে মানতে বাধ্য হল, এ ঐ ছেলে ছাড়া আর কারও কাজ না।
বাইরে দৌড়ে গেল অফিসের ২ পিওন, কিন্তু কোথায় কে? ২০ মিনিট পরে এসে তারা জানাল ঐ ছেলে এলাকায় নেই, আসে পাশের অন্য কোন অফিসেও নেই।

ফোন হারিয়ে বিষন্ন তাই আমিন সাহেব।


গল্পের মত করে বলা হলেও এমন ঘটনা আপনারা অনেকেই আগে শুনে থাকবেন। এর পরের ঘটনা পড়ে বলুন, এমনটা আগে শুনেছেন কিনা?


আনুমানিক বিকাল ৩টা বাজে। আমিন সাহেবের কলিগ হাফিজ সাহেবের ফোন বেজে উঠলো। হেড অফিস থেকে আসাদ ভাই ফোন করেছেন।
"একটু আমিন সাহেবকে ডেকে দেন না, হাফিজ ভাই।"
"আসাদ ভাই, ভালো আছেন? কোন কাজ থাকলে আমাকে বলেন, আমিন সাহেবের আজ মন খুব খারাপ। উনার মোবাইল অফিস থেকে হারিয়ে গেছে।"
"একটু আমিন সাহেবকে ফোনটা দেন না, উনার মোবাইলের ব্যাপারেই কথা বলবো।"

আমিন সাহেবকে ফোনে আসাদ যা বললেন তার সারমর্ম হল,
জজ কোর্ট এলাকা থেকে এক উকিলের ফোন এসেছিল। তার হাতে আমিন সাহেবের ফোনটা আছে। ফোনের প্রথম সেভড নাম্বারটা আসাদ সাহেবের হওয়াতে উনাকে ফোন করেছিলেন যেন আমিন সাহেব খবরটা জেনে ফোনটা উনার অফিসে গিয়ে নিয়ে আসেন।

আমিন সাহেবের টেবিলের আমনে ভীড়টা মন্দ হল না। ম্যানেজার সাহেবও মোবাইল হারানোর কথা জেনেছিলেন, এখন এই কথা শুনে তিনিও ভীড়ে সামিল হলেন।
"ভালোই হল, এভাবে হারিয়ে ফিরে পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার।"
"যান, স্যার, তাড়াতাড়ি গিয়ে নিয়ে আসেন।"
"একা না গিয়ে ২-৩ জনকে নিয়ে যান সাথে।"
"এটা কিন্তু ট্র্যাপও হতে পারে, আটকে রেখে আরও টাকা চাইল।"
"হ্যা, হতে পারে। শুনেছি এদের দল অনেক সংঘবদ্ধ হয়।"
নানা মুনীর নানা মতে আমিন সাহেব বেসামাল।

শেষে ম্যানেজার সাহেব বললেন, "আমিন সাহেব, শুনেন। জজ কোর্ট এলাকা, লোকটাও নাকি উকিল। লোক যদি নিজের অফিসে থাকে, তাহলে খারাপ কিছু করবে না। আপনি হাফিজ সাহেবকে নিয়ে চলে যান। কি হয়, আপডেট দিয়েন।"

মোবাইল ফিরে পাবার গল্প কম হলেও এভাবে 'ফিরে পাবার আশা'র গল্প হয়তো আপনারা অনেক শুনেছেন।
আবার আসলেই কিন্তু অনেক এই দলের ফাঁদে পড়ে মোবাইল তো পায়ই নি, বরং আরও টাকা দিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে।
এই ক্ষেত্রে কি হল, সেটাই জেনে নিন।


বিকাল ৪টা। জজ কোর্ট এলাকা, সদরঘাট।
কোর্টের পিছন দিকে চিপা একটা গলিতে উকিলের দেয়া ঠিকানা। ততোধিক চিপা সিঁড়ি দিয়ে ৩ তলায় উঠলেন আমিন সাহেব আর হাফিজ সাহেব। অফিসের সামনে বেশ একটা ভীড়। আর ছোট্ট অফিসের ভিতরটাও মানুষের ভীড়ে এক্কেবারে উপচে পড়েছে। হাফিজ সাহেব একটু জোরে 'আমরা বংশাল থেকে এসেছি কল পেয়ে' বলাতে উনাদের ভিতরে ঢুকার পথ করে দেয়া হল।

ফ্লোরে সেই বোবা, মার খেয়ে রক্তাক্ত। টেবিলের উপরে ৪টা মোবাইল ফোন, তার মধ্যে আমিন সাহেবেরটাও আছে।
পরিচয় হল উকিল মাসুদ সাহেবের সাথে, উনিই কল দিয়েছিলেন। হাফিজ সাহেবের কৌতুহলী প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, '২ জন আগেই এসেছেন, আপনারা এলেন, এখন আর এক জন এলে পুরা গল্পটা এক বারে সবাইকে বলা হবে।'
ভীড় ঠেলে আরও দুজন ভিতরে এলেন, উনারা নর্থ-সাউড রোডের একটা ব্যাঙ্ক থেকে এসেছেন, হারানো মোবাইল নিতে।

পরিচয় পর্ব সারা হতে মাসুদ সাহেব আজ দুপুরের গল্প বলতে লাগলেনঃ
হাই কোর্টে কাল একটা কেসের শুনানীর ডেট পালটে গেছে, সেই ব্যাপারে ফোন এসেছিল। ফোনটা রেখে মক্কেলকে জানাবেন, এরই মধ্যে হাজির সেই 'নিষ্পাপ' বোবা। সহজে মাসুদ সাহেব এই সব খুচরা দান-খয়রাত করেন না, কিন্তু বোবার চোখে 'কিছু একটা' দেখে তিনি বোবাকে ১০০ টাকা দিলেন। বোবা যথারীতি বিশাল এক স্যালুট ঠুকে হাতের কাগজ আর টেবিলে রাখা ফাইলটা তুলে নিয়ে চলে গেল।
কিন্তু ক্লায়েন্টকে ফোন দিতে গিয়ে মোবাইলটা আর পেলেন না। মাসুদ সাহেব নিজেকে অত্যন্ত চালাক বলেই মনে করেন, নিমিষেই তিনি বুঝে গেলেন, বোবা ইচ্ছা করেই হাতের ফাইলটা টেবিলে রেখেছিল, মোবাইলের উপরে। আর যাবার সময় ফাইলের সাথে সাথে নিচের মোবাইলটাও তুলে নিয়েছে।
হাক-ডাক শুরু করলেন দরজার বাইরে গিয়ে মাসুদ সাহেব। এই খুপড়ি অফিসগুলোতে চা-সিগারেট আনা নেয়ার জন্য বেশ কিছু ছোকরা থাকে – তাদের ৬-৭ জন মুহুর্তে রাস্তায় নেমে দিকে দিকে ছড়িয়ে গেল। আর ২-৩ মিনিটের মধ্যেই দুজন মিলে টেনে হিচড়ে সেই বোবাকে ধরে আনলো। মার খেয়ে এরই মাঝে তার নাক দিয়ে রক্ত গড়াচ্ছে।
অফিসে এনে তাকে মোবাইল কোথায় রেখেছে – জিজ্ঞাসা করা হল। কিন্তু সে কোন উত্তর দিল না।
তখন তার পকেট, কোমর আর দেহের আনাচে-কানাচে খোজা হল। কিন্তু কোথাও মোবাইল পাওয়া গেল না।
তাহলে কি বোবা নিরপরাধ?
চা-আনা ছোকরাগুলর একজন তখন শেষ বারের মত বডি-সার্চ করলো বোবার। কলারের নিচে, হাতের বগলে, কোমরে, উরু-সন্ধিতে খুঁজে নেমে এল হাঁটুর নিচে। বোবার পায়ে স্যান্ডেল, তাই ঐ জায়গাটায় আগে কারও হাত পড়েনি, মোজা পড়লে হয়ত মোজার ভিতরে লুকিয়েছে ভেবে কেউ খুঁজতো। কিন্তু অভিনব তার বুদ্ধি।
ডান হাঁটুর ঠিক নীচে একটা অ্যাঙ্কলেট পড়ে আছে সে, আর হাঁটুর পিছন দিকে সেই অ্যাঙ্কলেটের ভিতরে লুকানো অবস্থায় পাওয়া গেল ২ টা মোবাইল। কিন্তু মাসুদ সাহেবেরটা পাওয়া গেল না। সেটা পাওয়া গেল বাম হাঁটুর পিছন দিকে, আর একটা অ্যাঙ্কলেটের ভিতরে, আরও ২টা মোবাইলের সাথে। আবার সাবধানে পুরা দেহ খুঁজে দেখা হল, কিন্তু আর কিছু পাওয়া গেল না।
মাসুদ সাহেবের তখন মাথা গরম, এক দিনে এক জন মাত্র মানুষ ৫টা মোবাইল চুরি করেছে!
মাসুদ সাহেব নিজের মোবাইলটা পকেটের রাখলেন, আর বাকী মোবাইলগুলো চালু করে ফোনবুকের প্রথম নাম্বারে ফোন দিয়ে মালিকের সাথে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করলেন। নিজের অফিসের ঠিকানা দিলেন। তারই ফল এখনকার এই সমাবেশ।

এরই মাঝে কারো কারো বাঁধার মধ্যেও ভয়ানক এক দফা পিটুনী খেল ধূর্ত বোবা, আসলেই হয়ত সে বোবা। কারন এত পিটুনীতেও সে মুখ খোলেনি।
মোবাইল নিতে আসা সবাই ২০০-৩০০ করে টাকা দিয়ে সমাবেশের জন্য পিয়াজু-ছোলার আয়োজন করলেন। আমিন সাহেব সেই মোবাইল উদ্ধারকারী দুই ছেলেকে ১০০ করে টাকা দিলেন। আর মাসুদ সাহেবের বুদ্ধির প্রশংসা করে অনেক ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় নিয়ে এলেন।

কিন্তু পাঠক, একবার ভাবুন তো, এই ছেলেটা দিনে ৫টা মোবাইল একাই চুরি করেছে। একেকটা ২ হাজার করে বেচলেও ১০ হাজার টাকা। মাসে ২০ দিন কাজ করলেও ২ লাখ টাকা। কি ভয়ানক হিসাব!
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top