What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made দায়ভার 🃏🀄🏐🎲🎗🎀🖊🗞 (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
সকালের নাস্তা বানাচ্ছিলাম। একদিকে রুটি ফুলে উঠছে অন্যদিকে ভাজি। তখন মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠল। আমার ছেলে রঙ্গন মোবাইল টা এনে দিলো। সুমনা ফোন দিয়েছে। ধরতে ধরতে কেটে গেলো। আবার বেজে উঠল। হাত মুছে ফোন টা রিসিভ করতেই,



-হ্যালো মিরা, এতক্ষন কোথায় ছিলি? সাত-আট বার ফোন দেওয়া পরে ধরিস।



-রুটি বানাচ্ছি, আর এক বার ফোন দিলি না শুধু। আরেকবারে ধরলাম।



-ওহ। ঔ বুয়া হয়ে থাকবি সারাজীবন কত বললাম পারমেনেন্ট কাজের লোক রাখ। আমার কথা শুনিস না। তোকে ভালো পেয়েছে তো রাতুল দা সব করিয়ে নেয়। আমি হলে অনেক আগেই বেরিয়ে আসতাম।



-ফালতু কথা বলিস না, কি জন্য ফোন দিয়েছিস সেটা বল।



- আরে আমরা মালেশিয়া গিয়েছিলাম না। তোর জন্য একটা ব্যাগ এনেছি। চলে আসিস। বিথী ও আসবে। আর শোন কাজ শেষ করে আসিস। এসেই যায় যায় করিস না আবার।



আমি কিছু বলার আগেই কেটে দিলো ফোন। ইসস এইদিকে রুটি পুড়ে গেছে।



ভালোই হয়েছে পোড়া রুটিই খাওয়াবো। একই অফিসে কাজ করে দুইজন একজন বৌ বাচ্চা নিয়ে বছরে বছরে বিদেশ যায় অন্য জন রেস্তোরাঁয় যেতে বললে বলে ঐ টাকা দিয়ে ঘরে মুরগীর পোলাও করো।



টেবিলে রাতুল বসতেই রুটি ভাজি দিয়ে আসলাম। রাতুল আমার দিকে তাকিয়ে রঙ্গন আর পেখমের দিকে তাকাল৷ রঙ্গন বলল-



-সুমনা আন্টির ফোন ছিল।



-তাহলে তো পোড়া রুটি জুটেছে এই আমার ভাগ্যে।



- ভাগ্যে নই পূণ্য বলো আমার মতো বউ পেয়েছো।



-তা তো আমি শূলে চাড়ালেও মানবো, এই আমাকে দিয়ে কেউ অস্বীকার করাতে পারবে না। এই তোরাও না।



বাচ্চারা মুখ টিপে হাসছে৷



-এই বেয়াদ্দপ, একদম হাসবি না।



এইবার সবাই জোরে হেসে উঠল।



-হাসো হাসো। হাসবে তো। আমার ভাগ্য আমার উপর হাসে। একই অফিসে চাকরি করো। এক সাথে পড়ালেখা করা আমার বান্ধবী এক জন তিনটা কাজের লোক রেখে রুপচর্চা করে। অন্যজন রুটি সেকে হাত পুড়ে। একজন মালেশিয়ায় যায় অন্য জন বছরে একবার কক্সবাজার বেড়াতে যায়।



নিজের জন্যই কিছু কিনতে পারি না আবার অন্য কারো জন্য আনবো।



-ওখানের সব জিনিস তো এইখানেই পাওয়া যায়, কি কিনবে ওখান থেকে? আর যাদের আছে তাদের আরো দিয়ে লাভ কি বলো? যাদের নাই তাদের দাও। যার প্রয়োজন।



- হু। তা তো বলবে আমার তো বিদেশী ব্যাগের প্রয়োজন তাই সুমনা দিচ্ছে আর কি।



-কেউ তোমাকে ভালবেসে দিলে আমি কখনো বলবো না নিও না। কিন্তু কেউ তোমাকে ছোট করার জন্য দিলে তা নেওয়া অপমান।



-ফালতু কথা বলবা না। কোন সুখ দিতে পার না আবার অন্যেকে নিয়ে বাজে বলো। ফ্ল্যাট কিনে দাও না গাড়ি কিনে দাও না । তোমার অফিসের সবাই লোন দিয়ে সব করে ফেলছে আর তুমি এই ভাড়া বাসায় জীবন কাটাও।



-জীবনের কোন ঠিক আছে? আমার কাল কিছু হলে এই লোন কে শোধ করবে? আমি কারো উপর দায়ভার দিয়ে যেতে পারি না।



আর কিছু বললাম। ওর কাছে হাজার যুক্তি আছে যার উপরে আসলেই কিছু বলা যায় না।



সুমনার ওখানে গেলে আরো মন খারাপ হয়ে যায়। কি সুন্দর সাজানো ফ্ল্যাট বাসা। ঝকঝকে, দামী দামী শো-পিচ। কাজের লোক সব পরিস্কার করে সারাদিন। সুমনা এই শাড়ি ও শাড়ী সেট জুয়েলারি দেখায়। আর বলে পার্টিতে একবার পড়ে গেলে ওটা আবার পড়তে লজ্জা লাগে। মনে হয় সাবাই বুঝে যাচ্ছে।



বীথিও আমার মতো। কিন্তু ও সুমনা মতো চলতে চায়। কথায় কথায় খোটা মারে৷



-এই তুই কি এনেছিস রে আমাদের জন্য?



-আরে আমার হাতে টাকা থাকে নাকি বেশি?



-হু হু জামাচ্ছে আর কি সব রাতুল দা।



তারপর কানে কানে এসে বলল -



-কত জমা আছে রে?



বলেই দুজনেই হেসে উঠল। হঠাৎ রেগে উঠে যাওয়াই ওরা আবার টেনে বসাল।



-আরে মজা করছি।



রাতে মন খারাপ করে বসে আছি। রাতুল মাথায় বেলী ফুল লাগিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল। তখন সত্যিই কোন মন খারাপ আর রইল না। দুজনে বেগুন ভাজা নিয়ে বাড়ির পিছনে গিয়ে বসি কি বাতাস হয় এই দিকে।



কিছু দিন পর এক সকালে সুমনা ওর মেয়েকে নিয়ে এলো। বেশ আদুরে মেয়েটা।



সুমনার জামাই আকাশ ওদেরকে গাড়ি করে নামিয়ে দিয়ে গেলো যাওয়ার সময় রাতুলকে গাড়িতে নিয়ে নিলো। আসলে নতুন গাড়ি কিনেছে ওটাই দেখাতে এসেছে।



সুমনা আসার পর ওদের নাস্তা দিচ্ছিলাম। সুমনা বলছে,



-বেশি কিছু দিস না। বাপের বাড়ি যাব৷ ভাইয়ের বউ গুলো আবার অনেক কিছু করে রাখে। আসলে ওদের জন্য সব সময় দামি দামি জিনিস গিফট করি। তাই একটু বেশি খাতির করে।



আমি কিছু বললাম না।



তখন রঙ্গন টিউশন করিয়ে ফিরেছে। সুমনাকে নমস্কার করল। মিউ কে দেখে লজ্জা পায় তা আমি অনেক খেয়াল করেছি।

-কোথায় গিয়েছিলে?



-আন্টি একটা টিউশন করাই। ওখান থেকে।



-সবে ইন্টার পাশ করে পাবলিকে ভর্তি হলে এখন থেকে টিউশন? আমার তুহিন তো বন্ধুদের সাথে সাজেক যাইতেই বিশ হাজার টাকা নিয়ে গেলো এইদিন।



-আন্টি আমিও যাব সাজেক। নিজে জমাচ্ছি তারপর যাব। বাবা বলেছে এখন থেকে নিজের পকেট খরচ নিজে জোগাতে। এতেই আমরা স্বাবলম্বী হবো।



সুমনা একটা বাকা হাসি দিলো। মিউ পেখমের রুমে গেল। ওরা একই ক্লাসে তবে স্কুল ভিন্ন।



-সুমনা তোর মেয়েটা বেশ আদুরে। আমার খুব ভাল লাগে। আমার ঘরে নিয়ে আসব বউ করে।



-আমার মেয়ের হাত খরচটাও তোর ছেলেকে দিয়ে পোষাবে না।



-যা, এইভাবে বলছিস কেনো?



-যা সত্যি তাই বলছি। আমি চাই না কোন মিথ্যা আশা রাখিস মনে।



আমি চুপ হয়ে গেলাম। খেয়াল করলাম রঙ্গনের রুমের পর্দা টা একটু নড়ে উঠল।



রাতুল ঐ দিন সবাইকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে গেল। আমাদের বিবাহ বার্ষিকী ছিল। আমাকে রাতে একটা চেইন দিলো স্বর্ণের। খুব পাতলা। আমি বললাম-



-এইটা কি দিলে। সুমনাদের দেখালে হাসবে।



রাতুল বলল- তুমি দশহাজার দিয়ে শাড়ি কিনলে বলতে পারবে দশহাজারের শাড়ি কিনেছো। কিন্তু তা তুমি বেশি হলে দুইবার পড়বে। সব জায়গায় পড়তে পারবে না। কিন্তু দশ হাজার দিয়ে স্বর্ণ বানালে তুমি তা বিপদে আপদে বিক্রি করতে পারবে। শাড়ি পারবে না।



আমি আর কিছু বললাম না।



এইভাবেই সাধারণ ভাবে এইদিক ওদিকের খুশি নিয়ে চলছিল আমার আর রাতুলের সংসার।



কিন্তু একদিন সব উল্টপাল্ট হয়ে গেলো। অফিসে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে লেগে সব শেষ হয়ে গেল। প্রায় কাউকেই বাচাঁনো যায় নি।



আমার সব দিকে অন্ধকার নেমে এলো।



কি করব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। সব শেষ মনে হচ্ছে। সুমনা কান্নাকাটি করে হসপিটালে ভর্তি হয়।



কিন্তু আমি ভেঙ্গে পড়িনি। আমি ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। রাতুল আমাকে এইভাবে একা ফেলে যেতে পারে না।



কিন্তু বাস্তব বড় কঠিন। আমরা রাতুলের চলে যাওয়ার চেয়ে তখন বেশি চিন্তা হয়ে উঠল এখন আমি বাচ্চাদের নিয়ে কিভাবে চলব? ওর শেষকাজ কিভাবে করব?



আমি টলতে টলতে আলমারি খুলে রাতুলের ড্রয়ার খুলি। দেখি ক্যাশ টাকা আছে ৩০ হাজারের মতো।



ওখানে একটা ডায়েরি পেলাম। ব্যাংক একাউন্ট এর নাম্বার আর পিন লেখা আছে। সব জয়েন্ট একাউন্ট। রাতুল আর আমার।



আমার অত কিছু দেখার টাইম নেই তখন। ক্যাশ টাকা যা পেলাম তা থেকে কিছুটা আমার ভাই কে দিলাম। সে সব আয়োজন করছে।



বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে কিন্তু রাতুল আর আসে না অফিস শেষে। বাচ্চাদের নিয়ে বুদ্ধির খেলায় মেতে উঠে না। বেলী ফুল লাগিয়ে আর ঝাপটে ধরে না।



আমাদের সবাই সহানুভূতি দেখায়। আবার এড়িয়েও চলছে যদি ধার চেয়ে বসি। কিন্তু আমি চাইনি। কারণ রাতুল আমরা চলতে পারি মতো যথেষ্ট রেখে গেছে। কেউ আসে নি বলতে রাতুলের থেকে টাকা পেত।



রঙ্গনের জন্য চিন্তা নেই নিজের খরচ নিজেই জুটিয়ে ফেলে বাসার জন্য ও টুকটাক নিয়ে আসে। আমার সাথে সাথেই থাকে। আমি চুপ করে বসে থাকলে পাশে বসে থাকে।



এইদিকে সুমনার অবস্তা ভাল না। গাড়ি লোন শেষ হয় নি তাই ওরা নিয়ে নিয়েছে। ফ্ল্যাট এর অনেক কিস্তি বাকি ছিলো। জমা যা ছিল তা সুমনা আকাশের শেষ কাজ অনেক বড় করে করতে গিয়ে শেষ করে ফেলেছে।



সুমনা প্রথমে কারো কাছে না চাইলে পরে সবার কাছে ধার চাইতে শুরু করে। সবাই ওকে এড়িয়ে চলে। তুহিনের পড়ালেখা বন্ধের পথে প্রাইভেট ভার্সিটির সেমিস্টার ফি জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে সুমনা।



ওরা এখন ছোট একটা বাসা নিয়েছে। সুমনা বার বার যায় অফিসে প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকার জন্য ওরা শুধু কথা দেয় কাজ কিছু হয় না। কিন্তু যখন পায় তখন এমাউন্ট খুব বেশি না। কারণ অফিসে লোন ছিল।আমিও যাই আমাকে দেয় সবার চেয়ে বেশি টাকা। ওরা বলে-



-রাতুল স্যার সবার থেকে বেশি বেতন পেত । কিন্তু ওনি যত শতাংশ জমা রাখে তার চেয়ে ৫ % বেশি রাখত। আর ওনার জীবন বীমাও ছিলো আপনি ওটাও পেয়ে যাবেন। একটু সময় লাগবে। অনেক প্রসেস আছে তাই।



আমি চুপ করে থাকি। লোকটাকে সারাজীবন কথা শুনিয়ে এসেছি। কিন্তু আমাদের জন্য কত চিন্তা সে করে রেখেছে।



আমার মেয়ে পেখম ডাক্তরিতে চান্স পেয়েছে। সবাই অনেক খুশি। আমার চিন্তা ভর্তি করানো নিয়ে। মেয়ে আমায় বলে-



-মা চিন্তা করিও না। বাবা আমার প্রতিবছর জম্মদিনে বার্থ ডে না করে আমাকে নিয়ে গিয়ে ব্যাংকে ঔ টাকা ডিপোজিট করত। সে টাকা দিয়ে আমার পড়ালেখা খুব ভালভাবে চলবে। আর আমার হাত খরচ আমি নিজেই চালিয়ে নিবো। বুঝেছো? চিন্তা করো না তোমার ঘরে এখন ডাক্তার আছে সুই লাগিয়ে দিব। হা হা হা।



লোকটার প্রতি দিন দিন শ্রদ্ধা ভালবাসা আর অভিমান সব যেন বেড়েই চলছিল।



রঙ্গন বি.সি.এস এর প্রথম শ্রেণিতে চলে এলো। আমার যেন আর কোন চিন্তাই নেই। খুব ভালভাবেই মাথা উচু করে চলে যাচ্ছে আমাদের। আমার ভাই সৌরভ আসে খোজ খবর নিতে। একদিন হাতে দশ লাখ টাকা দিয়ে বলে দাদা আমায় ব্যবসা শুরু করার জন্য দিয়েছিল। কাউকে জানায় নি দাদা। বলেছিল যখন পারব তখন দিতে। দাদা জন্য এখনো খেয়ে পড়ে বেচেঁ আছি।



আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলি। কিছুই বলি না।



সুমনা আসে এখন প্রায়। অনেক বয়স্ক লাগে ওকে এখন। তুহিন এখনো কোন কাজ করে না। ঘুরে বেড়ায়। মিউ কোন এক কলেজে অর্নাস করছে।



সুমনা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। কারো কাছে যেতে ইচ্ছে করে না। টাকা চাইব বলে কেউ এখন ঠিক মতো কথা বলে না। ভাইয়ের বউ গুলোকে সারাজীবন এত দিয়েছি এখন গেলে এক কাপ চা ও দেয় না। শুধু তোর কাছে আসি। তোরা ঠিক আগের মতোই চলে যাচ্ছিস। রাতুল দা অনেক করে গেছে তাই না?



সুমনা কানে কানে বলে,



-কত জমা আছে রে?



আমি আজ চুপ করে থাকি না। মাথা উচিয়ে বলি-



- যা আছে তা দিয়ে আরামে কাটিয়ে দিতে পারব। আর ছেলে মেয়ে গুলো তো ওদের ক্যারিয়ার ধরে নিয়েছে। আর কি চিন্তা বল।



-হু। তাই তো। আচ্ছা ভালো কথা তোর ছেলে তো এখন বি.সি.এস ক্যাডার। ছেলে বিয়ে করাবি না?



- হু। দেখি ভালো মেয়ে পাই করিয়ে দিব।



-ওমা মেয়ে খুজঁতে যাবি কেন? তোর না মিউ কে খুব পছন্দ।



আমি কিছু বলতে যাব তখন রঙ্গন এসে বলল-



- আন্টি সরি, আপনার মেয়ের হাত খরচটাও আমাকে দিয়ে ঠিক পোষাবে না।



-এই রঙ্গন, এইভাবে বলছিস কেন?



-না মা, যা সত্যি তা বলছি। আমি চাই না কেউ কোন মিথ্যা আশা রাখুক মনে।



সুমনা কিছু না বলে চুপ করে উঠে চলে যায়। রঙ্গন আমার কাছে এসে বলে।



-মা, যখন তোমাকে কষ্ট দেওয়ার সময় কারো খারাপ না লাগে তোমারও কারো জন্য কষ্ট পাওয়া উচিত না।



আমার মনে হলো আমার পাশে রাতুল বসে আছে। ঠিক রাতুলের মতো রাতুলের আর্দশে রঙ্গন।



রঙ্গন অফিসে চলে যাওয়ার পর রুমে যায়। আস্তে আস্তে রাতুলের সে ডায়েরি টা বের করি।



অনেক গুলো হিসাব নিকাশ। মাসের হিসাব। একাউন্ট নম্বর। আরো অনেক হিসাব। আরো কিছুটা উল্টানোর পর একটা চিঠি পাই।



প্রিয় মিরা,



এই চিঠিটা আমি তোমাকে লিখছি। জানি না যখন পড়বে আমি তোমার পাশে বসে থাকব কিনা। হয়ত কোন এক বিশেষ দিনে তোমাকে দিব। কিংবা আমি নেই।



আমি না থাকলেও আমার প্রতি তোমার রাগ, ঘৃনা থাকবে না। যদি কিছু থাকে তা হলো অভিমান।



আমি তোমার জন্য কোন ঋণ রেখে যাব না। তোমাদের জন্য জমিয়ে রেখেছি যত টুকু সাধ্য। আসলে আমি এইটা তোমার থেকে শিখেছি।



তোমার মনে আছে। আমাদের সংসারের প্রথম দিকে আমি একটা এজেন্সিতে চাকরি করতাম। দিনের টাকা দিনে পেতাম। তোমার দিনের বাজার করে দিতাম। যা থাকত তা দিয়ে আমি সিগারেট, আর বন্ধুদের সাথে নাস্তা খেয়ে শেষ করে ফেলতাম। একদিন কোন টাকাই পেলাম না। ভয়ে লজ্জাই আমি বাসায় ডুকতে পারছিলাম না। তোমরা কি খাবে আজ?



কিন্তু আমি যখন বাসায় ডুকলাম তুমি ভাত নিয়ে টেবিলে বসে ছিলে। আমি জানতে চাইলে তুমি বলেছিলে,



প্রতিদিনের চালের থেকে এক মুঠো করে রেখে দিয়েছি। প্রতিদিন একমুঠো কম রান্না করলে কারো কম হবে না। কিন্তু এই একমুঠো পরে একদিনের হবে।



বিশ্বাস কর আমি তোমার থেকে সেদিন অনেক বড় একটা শিক্ষা পেয়েছিম তাই আজকের সাথে সাথে আমি কালকের চিন্তা করেছি সব সময়।



আমি যা বেতন পাই তা দিয়ে তোমাদের অভিজাত্য আর চাকচিক্য দিতেই পারি কিন্তু এতে করে কালকের জন্য কিছুই থাকবে না। আমি বলছি না এইগুলো করা যাবে না। যাদের আছে তারা করুক আমরাও করব তবে আগে ভিত্তি করি। তাই এই বাসাটা আমি তোমার নামে কিনে নিয়েছি। কারণ এই ঘরের প্রতিটি কোণে তোমার ভালবাসা।



আমি সত্যিই ভাগ্যবান তোমাকে পেয়েছি যে আমাকে অভাবের সময় ছেড়ে যায় নি। তাই আমি তোমাকে কোন অভাবে ছেড়ে যেতে পারি না।



শোন মিরা, সুখে থাকতে ভাল থাকতে খুব বেশি কিছু লাগে না। আমি,তুমি, আর আমাদের এইগুলো দিয়ে বেশ ভাল ভাবে চলা যায়।



রাতুল।



আমি বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে চুল খুলে দিই। বাতাস গুলো ঠিক আগের মত আমার সারাশরীরে সুখের আবেশ বুলিয়ে যায়।



আমি গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠি ঠিক রাতুলের মতো,



যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই হাটে



যখন বাইবো মোর কেয়া তরী এই ঘাটে



তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে



তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে,



(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top