What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী সঞ্জীব চৌধুরী র জন্মদিন আজ! (1 Viewer)

Status
Not open for further replies.

Hasan Shishir

New Member
Joined
Dec 25, 2019
Threads
7
Messages
7
Credits
329
শুভ জন্মদিন সঞ্জীব চৌধুরী

গায়ক, গীতিকার, সুরকার,

কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক

২৫ ডিসেম্বর ১৯৬৪ - ১৯ নভেম্বর ২০০৭

" আমি

ঘুরিয়া ঘুরিয়া, সন্ধান করিয়া

স্বপ্নের ঐ পাখি ধরতে চাই

আমার স্বপ্নেরই কথা বলতে চাই

আমার অন্তরের কথা বলতে চাই। "

সঞ্জীব চৌধুরী, এমন একজন মানুষ, যিনি সব সময় স্বপ্নের কথা বলেছেন, বলতে চেয়েছেন। সমাজের প্রচলিত কুসংস্কার ও অন্যায়ের প্রতিবাদ তাঁর গানে ও কবিতায় উঠে এসেছে সবসময়। ক্ষণজন্মা সঞ্জীব চৌধুরী ছিলেন কবি, সাংবাদিক, গীতিকার, সুরকার, গায়ক ও সংগঠক। ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর হবিগঞ্জের মাকালকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। শরীরে জমিদার বংশের রক্ত থাকার পরও সঞ্জীব চৌধুরী একজন সাধারণ মানুষের মতোই নিজের কর্ম ও সাধনায় নিজেকে বিলিয়েছিলেন অকাতরে।

সঞ্জীব চৌধুরী একটা নাম। অনেকের কাছ একটা ভালবাসার অভিমান, বুকের ভেতর একটা আকাশ সমান বাঁধ ভাঙা চিৎকার। মহাকালের পাঁজর থেকে বড় অকালে নিভে যাওয়া একটি নক্ষত্র। আধুনিক ফিচার সাংবাদিকতার জনক অথবস আধুনিক বাংলা ভাষার কবি বা আধুনিক বাংলা গানের অগ্রপথিক যেই পরিচয় দেয়া হোক না কেন, বুকের কাছে অতি আপন কবি কবি চেহারার সেই মানুষটি, সামাজিক বাধ্য বাধকতার বাইরে একটা সাদা কাগজ, যেখানে কোনও কালির আঁচড় পড়েনি।

সঞ্জীব চৌধুরী ১৯৭৮ সালে মাধ্যমিক এবং ১৯৮০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে ভর্তি হন। তবে পরবর্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনাতে অনিয়মিত হয়ে পড়েন এবং পাস কোর্সে স্নাতক পাস করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে মাস্টার্স করে আশির দশকে সাংবাদিকতা শুরু করেন সঞ্জীব চৌধুরী। খ্যাতনামা সাংবাদিক হিসেবে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ ও যায়যায়দিন-এ কাজ করেন।

ছাত্রজীবনে 'শঙ্খচিল' নামে একটি গানের দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার প্রথম পদচারণা। ১৯৯৬ সালে বাপ্পা মজুমদারের সঙ্গে একত্রিত হয়ে গঠন করেন ব্যান্ড 'দলছুট'। ব্যান্ড ও সলো অ্যালবামে সঞ্জীব চৌধুরীর গাওয়া জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে— 'গাড়ি চলে না', 'বায়োস্কোপ', 'আমি তোমাকেই বলে দেবো', 'কোন মেস্তিরি বানাইয়াছে নাও', 'আমাকে অন্ধ করে দিয়েছিল চাঁদ', 'সাদা ময়লা রঙিলা পালে', 'চোখ', 'কথা বলবো না' প্রভৃতি। 'স্বপ্নবাজি' নামে একটি একক অ্যালবামও মুক্তি পায় তার।

গীতিকার ও সুরকার সঞ্জীব চৌধুরী ছাপিয়ে গিয়েছেন শিল্পী সঞ্জীব চৌধুরীকে, আর তাই গীতিকার ও সুরকার হিসেবে তার জনপ্রিয়তা ছিল বহুগুণ বেশি। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অনেক গীতিকারই তার দ্বারা প্রভাবিত। গানের পাশাপাশি কবিতাও লিখতেন সঞ্জীব চৌধুরী। তার একমাত্র গ্রন্থের নাম 'রাশপ্রিন্ট'। বাংলা একাডেমী 'রাশপ্রিন্ট' নামক কাব্যগ্রন্থকে আশির দশকের সেরা কাব্যগ্রন্থে হিসেবেও নির্বাচিত করেছিল।

দেশের প্রায় সব দৈনিকে তার কবিতা ছাপা হয়েছে। কবিতার পাশাপাশি সঞ্জীব চৌধুরী বেশ কিছু ছোট গল্প ও নাটকের স্ক্রিপ্টও লিখেছেন। সঞ্জীব চৌধুরী অভিনীত একমাত্র নাটক 'সুখের লাগিয়া'। সৃজনশীল ও মেধাবী এ মানুষটির মৃত্যু বাংলা সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যে শূন্যতা সৃষ্টি করেছে— তা অপূরনীয়। সঞ্জীব চৌধুরীদের মৃত্যু নেই, তারা চিরকালই মানুষের স্মৃতিতে ভাস্বর।

নয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি সপ্তম। পিতা গোপাল চৌধুরী এবং মাতা প্রভাষিণী চৌধুরী। তবে তাদের মূল বাড়ি সিলেট জেলার বিশ্বনাথ থানার দশঘর গ্রামে। সেখানকার জমিদার শরৎ রায় চৌধুরী ছিলেন তার পিতামহ। ২০০৭ সালের ১৯ নভেম্বর সঞ্জীব চৌধুরী বাইলেটারেল সেরিব্রাল স্কিমিক স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

তাঁর স্মরণে প্রতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয় সঞ্জীব উৎসব। প্রতিবছর ২৫ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির 'সঞ্জীব চত্বরে' সঞ্জীব উৎসব উদযাপন পর্ষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় সঞ্জীব উৎসব। এ উৎসবে অংশ নেবেন সঞ্জীব অনুরাগী জনপ্রিয় বেশ কিছু ব্যান্ড ও শিল্পীরা ।

আমি তোমাকেই বলে দেবো, সাদা ময়লা, সমুদ্র সন্তান, জোছনাবিহার, তোমার ভাঁজ খোলো আনন্দ দেখাও, আমাকে অন্ধ করে দিয়েছিলো চাঁদ, স্বপ্নবাজি প্রভৃতি কালজয়ী গানের সাথে জড়িয়ে আছে সঞ্জীব চৌধুরীর নাম। গাড়ি চলে না, বায়োস্কোপ, কোন মিস্তরি নাও বানাইছে গান গুলো গেয়ে বাংলা ফোক গানকে তিনি নাগরিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করেছিলেন।

এক সাম্যবাদী সমাজের আশায় উন্মুখ ছিলেন তিনি। তিনি বিশ্বাস করতেন সাম্যবাদে, একদিন সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠিত হবে এই সমাজে- এ আশা ছিল তার। মানবতার ভোগান্তির কারণ হিসেবে বিদ্যমান সকল সাম্রাজ্যবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও ঔপনিবেশিকতাবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে কুন্ঠা বোধ করেননি তিনি।

শ্রেণী সচেতন এই সমাজে সঞ্জীব চৌধুরী এমন একজন মানুষ ছিলেন, যিনি এক নিমেষেই নিজেকে শ্রেণীচ্যুত করে ফেলতে পারতেন। তিনি সব শ্রেণীর মানুষের সাথে কথা বলতে পারতেন, মিশতে পারতেন তাদের মতো করে। জমিদার বংশের ছেলে হয়েও তার মধ্যে ভুলেও কোনোদিন ফুটে ওঠেনি উঁচুশ্রেণী সম্পর্কে অনুকম্পা।
 
Status
Not open for further replies.

Users who are viewing this thread

Back
Top