What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made অন্যরকম ভালোবাসা ❤❤❤❤❤ (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
ভোর সাড়ে পাঁচটায় টিকলীর ঘুম ভাঙল কলিং বেলের শব্দে। আজব কান্ড!! এত সকালে কে আসবে? তমাল কে হাত দিয়ে ডাকল সে। কিন্তু তমাল গভীর ঘুমে। আসলে কাল রাতে বাবু এত জ্বালিয়েছে।কেউ ঘুমুতে পারেনি। বাবুরই বা কি দোষ, যা গরম পড়েছে। এর মধ্যে লোড শেডিং। সত্যি বলতে তারা তিনজন ঘুমুতে ঘুমুতেই ভোর চারটা। অথচ আজ শুক্রবার বলে গতরাতে কি আনন্দ নিয়েই না ঘুমুতে গিয়েছিল টিকলী। শান্তির ঘুমের আশায় আশায় দিনাতিপাত। কিন্তু বাবুর জন্মের পর থেকে এই ১৯ মাসে কবে দুইটা ঘন্টা টানা ঘুমিয়েছে তার মনে পড়েনা।



তমাল উঠছেনা দেখে টিকলী নিজেই উঠে দাঁড়ালো। মাথাটা ঘুরছে, মনে হচ্ছে এখনি পড়ে যাবে। কোনমতে তাল সামলে দরজা পর্যন্ত গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

"কে?"

ভারী পুরুষকন্ঠে জবাব আসলো,

"আমরা"

চেনা চেনা কন্ঠস্বর হলেও চিনতে পারলনা টিকলী।

আবার জিজ্ঞেস করল,

"কে? নাম কি?"

"দরজা খুলুন, আমরা আপনার বেবিকে কিডন্যাপ করতে এসেছি"

বলেই হা হা হি হি হাসি।

টিকলী বুঝতে পারলো এটা টায়রা আর টুকুন। ওর ছোট ভাইবোন।

সাতসকালে কি মনে করে ওরা এলো।সেই মিরপুর থেকে মগবাজার কি মনে করে এত সকালে? কোন সমস্যা নয়তো?আজব তো।



দরজা খুলতেই হাসতে হাসতে ঢুকল দুজন। এক বছরের ছোটবড় পিঠাপিঠি ভাই বোন। টায়রা ছোট। এবার ভার্সিটি এডমিশন টেস্ট দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চান্স পেয়েছে।এখনো ক্লাস শুরু হয়নি আর টুকুন পড়ে খুলনা প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু ভাবসাব ওদের আরো বাচ্চাদের মত।



"কিরে তোদের সমস্যা কি?? এত সকালে?"

টুকুন বলল,

"আপা বসতে দিবি তো আগে? তমাল ভাই কি করে?"

"এত সকালে কি করবে? ঘুমায়"

"আপা চা করতো, সাথে তোর স্পেশাল পরোটা"

সোফায় বসতে বসতে টায়রা বলল,

"আর ডিমভাজি"



টিকলী রেগে গেল,

"ফাইজলামি করতেছিস তোরা?? সকাল সাড়ে পাঁচটায় এসে? কি হইছে বলবি তো?"



টুকুন, "আগে চা পরোটা, পরে গল্প"



টিকলী, "তোরাই চা বানা, আমি ঘুমাইলাম, একটা ছুটির দিন, কি পাইছিস তোরা সবাই? "



টিকলীর মুখটা সত্যি কাঁদো কাঁদো হয়ে গেলো।

টুকুন,"আপা, কান্না কাটি বাদ দিয়ে বাথরুমে গিয়ে মুখে পানি দিয়ে আয়,কতদিন পর দেখা হল,আয় গল্প করি"



দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে তার বেডরুমের সাথের লাগোয়া বাথরুমের দিকে গেলো টিকলী।যেতে যেতে বিছানায় চোখ পড়লো, কি সুন্দর করে বাপ বেটা ঘুমাচ্ছে। ঈর্ষা হল খুব। শুধু কি ঘুম? শেষ কবে পেপারটা হাতে নিয়েছে মনে পড়েনা টিকলীর। কবে টিভিতে একটা প্রোগ্রাম দশ মিনিটের বেশী দেখেছে তাও মনে পড়েনা।সারাটাক্ষন বাবুর সাথেই লেগে থাকা আর অফিসে গিয়েও বাবুর টেনশন। যদিও অফিসের ডে কেয়ার সেন্টারটার সুনাম আছে, আর এক ঘন্টা পরপরই চাইলে দেখে আসা যায়,তবুও টেনশন। মা হবার পর থেকে মাথার উপর এক অদৃশ্য টেনশন লেগেই আছে।



মুখে ঠান্ডা পানির ঝাপ্টা দিয়ে অবশ্য ভালোই লাগলো। ফ্রেশ হয়ে বাথরুম থেকে বের হয়েই টিকলীর একটা হার্টবিট মিস হয়ে গেলো। বাবু তো বিছানায় নেই। বাবু কই? টায়রা টুকুন নিলো নাকি? দৌড়িয়ে বাইরের রুমে গিয়ে দেখে কেউ নেই।



জোড়ে জোড়ে টায়রা আর টুকুন বলে ডাকলো টিকলী। নাহ কেউ উত্তর নিচ্ছেনা। কোন ঘরেই কেউ নেই। ডাকাডাকিতে তমাল উঠে পড়ল।



টিকলীর মুখে সব শুনে কেমন মিলাতে পারেনা সে।

"এত সকালে ওরা কেন আসবে? স্বপ্ন দেখছ নাকি?"



"আগে বাবুকে খুঁজে বের কর"



তমাল ফোন বের করে টুকুন কে ফোন দিল। কিন্তু নাম্বার বন্ধ দেখাচ্ছে। টিকলী বিছানা,বালিশ উলট পালট করতে গিয়ে বাবুর বালিশের নিচে একটা চিঠির খাম পেল। চিঠিটা খুলতেই পরিচিত হাতের লেখা,



"প্রিয় আপা,

আমরা তোর বাবুকে কিডন্যাপ করেছি।আমরা এখন বাবুকে নিয়ে গাজীপুরে আমাদের গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি। তুই অযথা প্যানপ্যান করবি বিধায় তোকে নেয়া গেলোনা। খবরদার বাবুর জন্য কাঁদবি না। সে একটা স্মার্ট বাচ্চা। মামা আর খালামনির কাছে সে ভালোই থাকবে। তোর একটা অদ্ভুত ধারনা হচ্ছে বাবু তোকে ছাড়া থাকেনা।এটা ভুল প্রমাণ করতেই আমরা বাবুকে নিয়ে যাচ্ছি। কালকে সকাল ৯ টার মধ্যে ফেরত পাবি। বাবুর দুধ প্যাম্পারস আমরা আগেই কিনে রেখেছি।আমাদের ফোন বন্ধ থাকবে অযথা চেষ্টা করবি না।



এখন তোর করণীয় কি???



তুই একটা ঘুম দে। বেলা ১০ টায় তিথি আপা আসবে তোর বাসায়। তিথি আপা সেদিন মেসেঞ্জারে বলছিল ভার্সিটি লাইফের কোন ফ্রেন্ডের সাথেই নাকি তোর যোগাযোগ নেই। কি বিশ্রী ব্যপার আপা।অথচ আগে এই তুই কত শত প্ল্যান করে,বন্ধু বান্ধব নিয়ে ঘুরে বেড়াতি।তিথি আপা তোকে নিয়ে চলে যাবে যমুনা রিসোর্টে, ওখানে তোদের ফ্রেন্ড সার্কেলের শায়লা আপা, মামুন ভাই, দিলু আপারাও যাচ্ছে। ভুলেও তমাল ভাইকে নিবিনা। উনাকে উনার ফ্রেন্ড আছেনা ইমন ভাই? উনার বাসায় পাঠিয়ে দিবি।



ওখান থেকে ফিরতে ফিরতে বাজবে রাত ৯ টা। সোজা চলে যাবি ক্যাফে ফোরটি টু তে।ওখানে তোর আর তমাল ভাইয়ার জন্য ক্যান্ডেল নাইট ডিনার বুকিং দেয়া আছে।



আর শোন, অস্থির হবি না, আপা মাঝে মাঝে একটু টেনশন ভাগ করে নিবি। খুব যখন খারাপ লাগবে সব ছেড়ে ছুড়ে এক কাপ কফি বানিয়ে বারান্দায় বসে গান শুনবি। অথবা শাওয়ার নিবি। অথবা বই পড়বি। তোরা মা বাবা হয়েছিস বলেই সবসময় টেনশন আর অস্থিরতার মধ্যে দিন কাটাবি এটা কেমন কথা?? বাবুকে স্মার্ট বানা,মায়ের ল্যাওটা হওয়া কোন ভাল জিনিস না। মাঝে মাঝে এদিক ওদিক ছেড়ে দিবি। ভালো পেমেন্ট পেলে মাসে একদিন এই বাবু ভাগানোর দায়িত্ব আমরাই নিব। শর্ত একটাই,আমাদের দুইজনের বিয়ে হয়ে গেলে তোকেও এই কাজ করতে হবে।



বি:দ্র: আমাদের জন্য ক্যাফে ফোরটি টু থেকে বিফ শর্মা আনিস।"


চিঠিটা রেখে ঘুমাতে গেলো দুজন।

গাজীপুরগামী গাড়িতে তখন ঘুম ভাংল স্মার্ট বেবি নিশানের। উঠেই তাঁর চিৎকার,

"আমার আম্মা আ আ আ কইইইইইইইইইইই?"

টুকুন আর টায়রা হালকা ঢোঁক গিললো।


বেলা পাঁচটা,

টিকলীর মেসেঞ্জারে ছবি এলো, ছবিতে নিশান কুমড়ার মাচার উপরে বসে আর পাশেই টুকুন একটা কুমড়া মাথায় দাঁড়িয়ে।

টিকলীও বন্ধুদের সাথে ট্রি হাউসের ভেতরে ছবি পাঠিয়ে দিলো।



রাত দশটা, টায়রার কোলে শুয়ে ঘুমাচ্ছে নিশান এমন একটা ছবি এলো।
ক্যাপশন," জাস্ট টু মেইক ইউ ফিল বেটার"



(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top