What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made জননী 🤰💙🤰💚🤰💛🤰💜🤰❤ (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
কাজের মেয়ে রহিমা যখন খবর দিলো, আনান নামের একটা ছেলে আমার সাথে দেখা করতে চায়, তাকে বসিয়ে রেখেছে ড্রয়িং রুমে; তখন বেশ কিছুক্ষণ আমি থম মেরে বসে ছিলাম । বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমার গা হাত পা কাঁপছিল।এতগুলো বছর পর ! না চাইতে ও চোখটা ভিঁজে যাচ্ছে । ধাতস্থ হতে বেশ কিছুটা সময় লাগলো ।



আনান আমার ছেলে । যাকে আমি দশ বছর আগে ফেলে এসেছি ! আসলে ফেলে আসতে বাধ্য হয়েছিলাম। আমার প্রাক্তন স্বামী রাসেল যখন বৃষ্টি নামের মেয়েটার প্রেমে পড়ে আমাকে ডিভোর্স দিলো, তখন আমার যাওয়ার কোন জায়গা ছিল। আমার চাকরি নেই । বাবা মা মারা গেছেন । আমি মহা সমুদ্রে পড়লাম। আমার এক খালাতো বোনের বাসায় যেয়ে উঠলাম। সত্যি বলতে কি, যেদিন জেনেছিলাম, রাসেল আর একটা মেয়ে কে ভালোবাসে, সেদিন থেকেই রাসেলের সংসার আমার আর করতে ইচ্ছা করতো না । কিন্তু শুধুমাত্র আমার ছেলে আনানের সাথে থাকার জন্য, আমি অনুরোধ করেছিলাম, আমাকে যেন ডিভোর্স না দেয়। আমি বৃষ্টির সাথে একই সংসারে থাকতে রাজি ছিলাম । কিন্তু বৃষ্টি রাজি ছিল না । সে আনান কে মানতে পারবে, কিন্তু আমাকে নয়। আমি বহু কান্নাকাটি করলাম, কিন্তু লাভ হলো না । অনেকেই কেস করার বুদ্ধি দিলো। কিন্তু আমার পক্ষ থেকে কেস চালানোর মত কেউ ছিল না । তাই চুপচাপ চলে আসতে হলো ঐ বাড়ি থেকে । আনানের বয়স তখন আট বছর । আমি মানসিক ভাবে কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়লাম। আমার ছেলে আমাকে ছাড়া খায় না, খেলেও না, রাতের বেলা আমার কাছে ছাড়া ঘুমাতে পারে না । স্কুল ছাড়া বাকিটা সময়ের সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিলাম আমি । আনান খাচ্ছে না, ঘুমাচ্ছে না এই চিন্তায় বহুদিন আমি খেতে পারিনি, ঘুমাতে পারিনি। বেশ কয়েকবার ও বাড়িতে আবার গিয়েছি, আনান কে দেখার জন্য । কিন্তু ওর সাথে আমাকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। শেষে ওকে দেখতে ওর স্কুলে যেতাম । একদিন বৃষ্টির কাছে ধরা পড়ে গেলাম। বৃষ্টি স্পষ্ট জানিয়ে দিল, আমি যেন আনানের সাথে আর দেখা না করি। কারণ আমাকে দেখলে, আনান বৃষ্টি কে কখনোই মা বলে মানতে পারবে না। কাজেই আনান যাতে পুরোপুরি আমাকে ভুলে যায়, সে ব্যবস্থা ই আমাকে করতে হবে। বৃষ্টি সাথে এ ধামকি ও দিলো যে, না হলে আনানের সাথে সে বিমাতা সুলভ আচরণ করবে। আমার তখন চাকরি নেই, খালাতো বোনের ঘাড়ে বসে খাচ্ছি । তাই বুকে পাথর চেপে সরে আসলাম, আনানের কাছ থেকে ।



প্রায় দুই বছর ধরে চেষ্টার পরে, আমার ভালো একটা চাকরি হলো ব্যাংকে। পোস্টিং হলো সিলেট । তখন আবার গেলাম আনান কে আনতে। কিন্তু ওরা দিতে রাজি হলো না । আমি মেয়ে মানুষ। কিভাবে কেস কাচারি করতে হয়, কিছুই জানি না । তাই আনান কে পাবার আশা ছেড়ে দিলাম। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। আমার ছেলেটা কে, আমাকে একটু দেখতেও দিলো না বলে।



সিলেটে আছি প্রায় আট বছর । কাজের মেয়ে রহিমা আছে দেখে, একাকীত্বে ভুগি না। অফিসের দুই একজন প্রথম প্রথম বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে । কিন্তু সংসার করার কোন ইচ্ছা আমার আর হয়নি। আনানের প্রতি জন্মদিনে বেনামে আনানের জন্য গিফট পাঠিয়েছি। জানি, সেগুলো কোনদিনই আনানের হাতে দেওয়া হয়নি। আমি নিশ্চিত ছিলাম, আমার ছেলে এতদিনে তার নিজের মা কে ভুলে গেছে।



এতগুলো বছর পর, আমার ছেলে আমাকে দেখতে এসেছে ! আমার ঘরটা থেকে ড্রয়িং রুমটা দেখা যায়। আমি সরাসরি ড্রয়িং রুমে না যেয়ে আমার ঘরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আমার ছেলে কে দেখছি। জানটা ভরে দেখছি। কি জানি, সামনে যেয়ে যদি মুখের দিকে তাকাতে সাহস না পাই ? আনানের চেহারাটা আমার মত হয়েছে। ভাবতে অবাক লাগছে, সেই দুরন্ত ছেলেটা, কেমন শান্ত শিষ্ট হয়ে গেছে ! এক সময় চোখের পানি মুছে গেলাম ওর সামনে ।



অনেকক্ষণ বসে আছি দুজন, কোন কথা নেই । ছেলের সাথে কি কথা বলতে হয় আমার জানা নেই। অবশেষে সে ই মুখ খুললো।



আনান - আগামী সপ্তাহে আমি অস্ট্রেলিয়া চলে যাচ্ছি, স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে। বাবা কে বললাম, আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই । বাবা না বলেননি ।



আমি - তুমি কি জানতে, আমি তোমার মা ?



আনান - না, জানতাম না। আমাকে বলা হয়েছিলো, তুমি কোন একজনের সাথে বিদেশে চলে গেছো। আর কোন যোগাযোগ করোনি।



আমি - তারপর ?



আনান - আমার স্কলারশিপ পাওয়া উপলক্ষ্যে এক বন্ধুর বাড়িতে দাওয়াত খেতে গিয়েছিলাম গত পরশু। ওদের এক প্রতিবেশীর সাথে পরিচয় হলো ওখানে । উনি তোমার খালাতো বোন, হাসি খালা। সেই ছোট বেলায় দেখেছি, আমার উনাকে মনে ছিল না । গল্পে গল্পে বেরিয়ে এলো, উনি তোমার খালাতো বোন। আসল ঘটনা উনি বললেন । তোমার বর্তমান ঠিকানা ও উনি দিলেন। উনাকে বলেছিলাম, তোমাকে না জানাতে। হঠাৎ করে আমাকে দেখলে, তোমার কেমন রিয়াকশন হয়, সেটা দেখার ইচ্ছা ছিল ।



আমি - তোমার মা - বাবা আসতে দিলো ?



আনান - হঠাৎ করে আমি জেনে গেছি দেখে, তারা একটু ভয় পেয়েছে। তবে যেহেতু আমি আগামী সপ্তাহেই চলে যাবো, তাই হয়তো না বলেনি।



আমি - তোমার কি কখনো আমার কথা মনে পড়তো?



আনান কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো। তারপর বললো, " আমি তখন অনেকদিন রাতে ঘুমাতে পারতাম না । তুমি তো জানো, আমার তোমার চুল ধরে ঘুমানো অভ্যাস ছিল । আমি সারারাত কাঁদতাম । বাবা বলতো, ছেলে মানুষ কাঁদতে হয় না ।সবাই জানলে হাসাহাসি করবে। তাই পরে আর কোনদিন কাঁদিনি। তবে আমার প্রতি জন্মদিনে বাবা কিছু গিফট নিয়ে আসতো । তখন তোমার কথা প্রচুর মনে হতো। কারন আমার এই পছন্দের জিনিসগুলোর কথা শুধু তুমিই জানতে। তুমি চলে যাওয়ার পরে কেমনে জানি বাবা ও সেটা জানতে পেরেছিল। তাই জন্মদিনে বাবা ঐ গিফটগুলো যখন নিয়ে আসতো, তখন তোমাকে ভীষনভাবে মিস করতাম । কিন্তু বাবা কে বুঝতে দিতাম না । বাবা যদি তোমার কথা ভেবে কষ্ট পায়, এই ভয়ে। আমি কি বোকা ছিলাম, তাই না? "



আমি কোন জবাব দিতে পারলাম না। অনেকদিন আম্মু ডাকটা শুনি না। খুব ইচ্ছা করছিল, কিন্তু বলার সাহস হলো না । বললাম, " তুমি কি আমার কাছে একটা দিন থাকবে? " আনান সম্মতি সূচক মাথা নাড়লো। আমার মনে হলো, পৃথিবীর সব সুখ আজ আমার কাছে এসে ধরা দিয়েছে।



আজ শুক্রবার। সকালেই সব বাজার করে রেখেছিলাম । ছোটবেলায় যেসব খাবার আনানের খুব পছন্দ ছিল, সেসব খাবার বানাতে লাগলাম । আনান আমার পাশে বসে থাকলো । ওর কাছে ওর নতুন ভাই বোনদের খোঁজ নিলাম। ওর বাবার নাকি প্রেসার, ডায়াবেটিস ধরা পরেছে । তবে ওরা সবাই সুখেই আছে। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করলাম। আসলেই পৃথিবীতে কোন শূন্যস্থান শূন্য থাকে না । আনান জিজ্ঞাসা করলো, ও যদি আমাকে বিদেশে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে, তাহলে আমি যাবো কিনা ? আমি কোন উত্তর দিলাম না । সবকিছু এখনো স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে ।



দীর্ঘ দশ বছর পরে আমরা মা, ছেলে আবার একসাথে ঘুমালাম। আসলে দুজনেই ঘুমের ভান ধরে আছি। আমি বুঝতে পারছি, আনানও ঘুমায়নি। গভীর রাতের দিকে দেখি, আনান ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ছেলেদের কাঁদতে হয় না বলে, আমি ওর কান্না থামানোর কোন চেষ্টা করলাম না । কাঁদুক, আমার ছেলেটা কাঁদুক। কতকাল আমার ছেলে কাঁদার সুযোগ পায়নি ! আজ আমাদের দুজনের চোখ দিয়েই দুঃখগুলো ঝরে যাক।


(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top