What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made গন্ধ 🌊🌬🌪🌊🌬🌪🌀🌊🌪🌬🌀 (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
আমাকে লাশবাহি গাড়িতে তোলা হলো। ঠান্ডায় জমে যাচ্ছি আমি। তবু কেন যেন আমার কোন কষ্ট হচ্ছে না। আমার আরাম আরাম বোধ হচ্ছে। তবে এই প্রথম আমার মনে হলো আমি মারা গেছি।



আমাকে এম্বুল্যান্সে তোলার সময় বাসার গেটে দেখলাম পুলিশের গাড়ি। সবাই বলাবলি করছিলো

- মেয়েটা আত্মহত্যা করলো কেন? কি এমন কষ্ট ছিলো মেয়েটার?



আমি নিজেও বুঝতে পারছি না! কেনইবা আত্মহত্যা করলাম আমি?



অবশ্য আত্মহত্যা করে আমার যে তেমন খারাপ কিছু লাগছে তা নয়। বরং কেমন এক ভাললাগা কাজ করছে। সে যাই হোক, আমি আর কিছু ভাবতে চাচ্ছি না। এম্বুল্যন্স এর হীম বাতাসের প্রশান্তিটা থাকুক না কিছুক্ষণ! তবুও চিন্তাটা কেন যে ঘুরে ফিরে আসছে মাথায়। কেন আত্মহত্যা করলাম আমি?



আমার মাথাটা যেন ভোঁতা হয়ে আছে। মৃত্যুর পর সবার এমন হয় কিনা কে জানে? আমার মৃত্যুর সময়টার কথা কিছুতেই মনে করতে পারছি না। তবে মৃত্যুর পরের ঘটনাগুলো আমি কিছুটা মনে করতে পারছি। এই যেমন একটু আগে আমাকে ঝুলন্ত অবস্থায় সিলিং ফ্যান থেকে কয়েকজন মিলে নামালো। এদের মধ্যে তিন জনকে আমি চিনি না।



তবে একজনকে চিনি। আমার বড়খালু। বড়খালু সপ্তাহ খানেক আগে আমাদের বাসায় বেড়াতে এসেছেন মনিকাকে দেখতে। মনিকা আমার খালাতো বোন। মনিকা আমাদের বাসায় থেকে লেখাপড়া করছে।



বড় খালুর কথা মনে পড়তেই একটা ঘিনঘিনে অনুভূতি হলো শরীরটায়। বছর দশেক আগে আমি এস এস সি পরীক্ষার পর বড় খালার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। এক সন্ধ্যায় খালা আমার খালাতো বোন মনিকাকে নিয়ে মার্কেটে গেলেন। একটু জ্বর জ্বর লাগছিলো বলে আমি যাই নি। হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখি খালু আমার বুকে হাত দিয়ে পাশে শুয়ে আছে। আমি হুরমুড়িয়ে উঠি।

-- খালু আপনি এখানে কি করছেন?



লজ্জাহীন লোকটা একটুও লজ্জা পেলো না।



আমার দিকে তাকিয়ে বললো, -- শুনলাম তোমার জ্বর তাই জ্বর মাপতে চাইছিলাম।



আমাকে আরো অবাক করে দিয়ে তিনি থার্মোমিটারটি আমার জামার ভেতর দিয়ে দিতে উদ্যত হলেন। আমি বাধা দেয়া সত্ত্বেও পশুর শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন আমার উপর। বিছানায় আমি পাথরের মত শুয়ে ছিলাম।



খালা আসার আগেই আমি বার বার সাবান দিয়ে গোসল দিলাম। কিন্তু নাক থেকে সেই পশুর গন্ধ দূর হলো না।



আজ যখন ফ্যান থেকে আমাকে নামানো হলো আমি সেই পশুর গন্ধ পেলাম। বুঝলাম বড় খালু আমাকে নামিয়েছেন। আবারও ঘিনঘিন করে উঠলো শরীরটা।



এম্বুল্যান্সটি হঠাৎ ব্রেক কষে হাসপাতালের পার্কিং এ থামাতে আমার ভাবনায় ছেদ পড়লো।



আমাকে প্রথমে আনা হলো হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার আমাকে দেখলেন। ডাক্তার সাহেব ঘোষণা দিলেন..

-- শি ইজ ডেড।



মানে আমি মারা গেছি। আসলে আরো ঘণ্টা দুয়েক আগেই আমি মারা গেছি।



ডাক্তার সাহেব আমার গলায় দড়ির দাগ পরীক্ষা করে দেখলেন। তিনি বললেন



-- মেয়েটা কি গলায় দড়ি দিয়েছিল?আহারে, সুইসাইড করা আজকালকার জামানায় ট্রেন্ড হয়ে গেছে। সামান্য কিছুতেই সুইসাইড।



ডাক্তার সাহেবের কথা শুনে আমার খুব লজ্জা লজ্জা লাগছে। তবে তার গা থেকে ভুরভুর করে ফিনাইলের গন্ধ আসছে। আহা কি মিষ্টি গন্ধ! আমি বুক ভরে ফিনাইলের গন্ধ নিলাম।



কিছুক্ষণ পর দুইজন পুলিশ এলো। কালো বেটে মতন পুলিশটা আমার দিকে বিশ্রী ভাবে তাকালো। তার মনের কথা আমি পড়তে পারলাম। বেঁচে থাকলে ওর গালে আমি দুটো থাপ্পড় বসাতাম। যেমনটা দিয়েছিলাম আমার বড় খালুর গালে।



পুলিশ দুজন খুটিয়ে খুটিয়ে কি কি সব তথ্য নিয়ে গেলো। আমার কিছু ছবিও তুলে নিলো। আমার ভীষণ লজ্জা লাগছে।



ছবি তোলা আমার খুব শখের কাজ। জীবনে কত ছবি তুলেছি। কিন্তু হাসপাতালের ময়লা ট্রলিতে শুয়ে ছবি তুলতে হবে তা কখনো ভাবিনি আমি।



যাহোক, এর কিছুক্ষণ পর আমাকে লাশকাটা ঘরে নিয়ে আসা হলো। একটা বড় ট্রেতে তুলে আমাকে বড় একটা ডিপফ্রিজে রাখা হলো।



লাশকাটা ঘরে ঢুকেই আমার বমি পেলো। মাংস পঁচা গন্ধ। মানুষের মাংস! আমি নিজেকে বোঝালাম। আমি এখন মৃত। তাই আমি মৃত মানুষদের সাথে মৃত পরিবেশে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করলাম।



তবে একটা জিনিস খেয়াল করলাম মৃত্যুর পর আমার নাক খুব স্পর্শকাতর হয়েছে। পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মধ্যে আমার নাক সবচেয়ে সাড়া দিচ্ছে।



সব ভালো মন্দ গন্ধই আমি টের পাচ্ছি। এত গন্ধের মাঝেও বড়খালুর সেই গন্ধটা নাক থেকে কিছুতেই সরাতে পারছি না।



লাশকাটা ঘরের ডিপফ্রিজে শুয়ে আমার মাথাটা আবার কাজ করা শুরু করেছে। একটা বিষয় আমার খুব খটকা লাগছে। আমি আত্মহত্যা করলাম কেন? আমার স্বামী আছে সন্তান আছে। হ্যা, সংসারে মান অভিমান তো আছেই। আমার স্বামী শিমুলের সাথে গত পরশুইতো ঝগড়া হয়েছিলো! এরকম ঝগড়াঝাটি তো সব ফ্যামিলিতেই হয়। আমি তো কিছু মনে রাখিনি! সবকিছুইতো স্বাভাবিক ছিলো।



তবে আত্মহত্যা কেন করবো আমি? না আমি জোর দিয়ে বলতে পারি- আমি আত্মহত্যা করি নি। সিলিং ফেন এর সাথে ঝুলেও পড়ি নি! কিন্তু সবাই যে বললো আমি আত্মহত্যা করেছি?



আমার মাথা আবার গোলমাল পাকাচ্ছে। ধুর, সব চিন্তা বাদ দিলাম। মৃত মানুষের আবার ভালো মন্দ কিসের?



লাশকাটা ঘরের প্রচন্ড গন্ধে আমার পান খেতে ইচ্ছে করছে। ছোটবেলায় আম্মা মুখে পান চিবিয়ে একটুখানি পান বের করে দিতো। আম্মার লালা মাখা পান যেন অমৃত ছিলো। আহা সেই আঁধা চিবানো পান যদি এখন মুখে দিতে পারতাম?

পানের কথা চিন্তা করতেই কিভাবে যে আমি আম্মার কাছে চলে এলাম, আমাদের গ্রামের বাড়িতে।



মরে যাবার পর অনেক সুবিধা হয়েছে দেখলাম। এখন আমি মন চাইলেই নিমিষেই যেখানে ইচ্ছে যেতে পারছি।



আমি গ্রামে এসে দেখি আম্মা কাঁদছে। কয়েকজন মহিলা আম্মাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। আমার বড় ভাবী কোরান তেলোয়াত করছেন। তার মানে আমার মৃত্যুর খবর তারা পেয়েছেন।



বাড়িতে ঢুকেই আমি কিসের একটা গন্ধ পেলাম। একটু নাক পাততেই পরিচিত চ্যাপা শুটকির গন্ধ আমার নাকে এলো। উফ কি সুঘ্রাণ।



আমি পানের কথা বেমালুম ভুলে গেলাম। আম্মাকে বললাম, -- আম্মা তাড়াতাড়ি ভাত দেন।



কিন্তু আম্মা আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন না। আমি রান্না ঘরে চলে এলাম। এসে দেখি রান্না ঘর এলোমেলো। বোঝা যাচ্ছে শুটকি রান্নার প্রস্তুতি চলছিলো। তখনি বোধহয় আমার মৃত্যুর খবরটা আসে। যে যার মত চলে যায়। হুলো বিড়ালটা পাতিল থেকে শুটকি মাছ খাচ্ছে। রাগে আমার গা জ্বলে গেলো।



আর তখন আমার কানে আসে ছোট ভাই টুটনের কান্না ভেজা কণ্ঠ।

টুটন কাঁদছে।

আহারে, আমার আট বছরের আদরের ছোট ভাই,আমার জন্য কাঁদছে!



টুটনের কান্না শুনে আমার ছেলে মন্টির কথা মনে পড়ে গেলো।



আমি যেন চমকে উঠলাম! এতক্ষণ আমার মন্টির কথা মনে পড়লো না কেন? আমার মন্টি কই? মন্টি তো স্কুলে গেছে। হুম, সকালে আমি নিজ হাতে ওকে স্কুল ড্রেস পরিয়ে দিয়েছি। তারপর ওর জন্য ডিম ভাজি করেছিলাম। সে জেদ ধরেছিলো ডিম ভাজি খাবে না। ডিম সেদ্ধ খাবে।



আমি বললাম,

-- বাবা ডিম সেদ্ধ হতে দেরি হবে। তোমার স্কুল বাস চলে যাবে।



আমি বুঝিয়ে ছিলাম, বাবা আজ ডিম ভাজি খাও। কাল তোমাকে ডিম সেদ্ধ করে দিবো। আমার মন্টি ডিম ভাজি খেয়ে স্কুলে চলে গেলো।



হায়রে, আমার ছেলের শেষ আবদার আমি মেটাতে পারলাম না!



এখন টুটনের কান্না শুনে মন্টির চিন্তায় বুক ভেঙ্গে যাচ্ছে আমার। এতক্ষণে নিশ্চয়ই মন্টির স্কুল ছুটি হয়ে গেছে। আমি মন্টির খোঁজে এক নিমিষেই আমার রাজারবাগের বাসায় চলে এলাম। বাসায় এসে মন্টিকে পেলাম না। দুইজন পুলিশ বাসার সামনে বসা। আমি অনেক কাঁদলাম। পুলিশ ভাইকে বললাম,



-- আমার দুই বাচ্চা মন্টি আর রাইমা কই? ওদের যে দেখছি না?



কেও আমার কথা শুনলো না। আমি কেঁদেই চলছি।



তখন আমি আমার স্বামী শিমুলকে খুঁজে পেলাম। নিচ থেকে দেখলাম দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে কয়েকজন পুলিশের সাথে কি নিয়ে আলাপ করছে সে।



আমি শিমুলের কাছে যেতে চাইতেই হেঁচকা টানে লাশকাটা হীম ঘরের ট্রেটা বের করে আনলো কে যেন। আমার প্রাণহীন দেহ দুলে উঠলো আবার। লাশকাটা ঘরের সেই মাংশপচা গন্ধ আবার আমার নাকে এসে লাগলো।



দুজন ডোম রুস্তম আর ঘনশ্যাম আমাকে চ্যাংদোলা করে তুলে আনলো টেবিলের উপর। টেবিলের উপরে হাজার ভোল্টের লাইট জ্বলছে।



ঘনশ্যাম আমার পেটে ছুরি চালালো। ইলিশ মাছের পেট ফাঁক করে যেভাবে আমরা মাছের ডিম বের করে আনি সেভাবে আমার নাড়িভুড়ি বের করে আনছে।



তবে আমার কোন ব্যথা হচ্ছে না। কিন্তু আমি তীব্র এলকোহলের গন্ধ পাচ্ছি। ডোম দুজনের মুখ থেকে ভরভর করে মদের গন্ধ বের হচ্ছে। তবে এলকোহলের গন্ধটা মন্দ লাগছে না আমার।



হঠাৎ রুস্তম ডোম আমার ডান স্তনে হাত দিলো। শয়তানটা আমার স্তনে অমানুষের মত চাপ দিতে লাগলো। আমি চিৎকার করে উঠলাম। আমার স্তন থেকে দু ফোঁটা দুধ গড়িয়ে পড়লো। দুধ দেখে রাইমার কথা মনে পড়ে গেলো ‍আমার।



আমি চেঁচিয়ে বললাম,

-- তোমরা কি আমার রাইমা মা কে দেখেছো? আমার দেড় বছরের বাচ্চা মেয়ে। মাথায় ঝুটি করা! নাকটা একটু বোঁচা। তোমরা দেখেছো আমার রাইমাকে?



কিন্তু ওরা দুজন নিশ্চুপ থাকলো।



আমি কান্না জুড়ে দিলাম।

-- আমার দেড় বছরের মেয়েটার কোন খোঁজ দিচ্ছ না কেন? দয়াকরে তোমরা আমার রাইমা সোনাকে আমার কাছে এনে দাও। ওর এখন ক্ষিদে পেয়েছে। আমি ওকে দুধ দিতে চাই।



ওরা আমার কথা শুনতে পেলো না। এবার ওরা আমার গলায় হাত দিলো। আমার আত্মহত্যার দাগ পরীক্ষা করতে লাগলো আর বাংলা হিন্দি মিশিয়ে কথা বলতে থাকলো।



রুস্তম ডোম বললো,

-- এ লাড়কি খুব সুরত থি। উসকি গোলে পার যো দাগ হ্যায় উসনে ফাছ কি নেহি হো।

(এই মেয়ে খুব সুন্দর ছিল।এর গলায় যে দাগ তা ফাঁসের নয়)



রুস্তমেরে কথা শুনে এগিয়ে আসে ঘনশ্যাম। চেচিয়ে উঠে ঘনশ্যাম,



-- মুজছ্যে ভি দেখনে দো।(আমাকেও দেখতে দাও)



দুজন মিলে আমার গলা পরীক্ষা করতে থাকে।



এবার ঘনশ্যাম বলে ওঠে

-- এ কয়ি মামুলি কেস নিহি হে রে রুস্তম। এ দাগ আত্মহাত্যাকো নেহি হে। কয়ি উসনে মার ডালা।( এটা কোন সাধারণ কেস নয়। এই দাগ অত্নহনেনের নয়। কেও একে খুন করেছে)



--বিলকুল সহি কাহা তুমনে। কয়ি উসকো গলে দাবানে মারা।( একদম ঠিক বলেছো। কেও অকে গালা টিপে মেরেছে)



রুস্তম একমত হয় ঘনশ্যামের সাথে।



ওদের কথা শুনে আমার মাথাটা আবার ভোঁতা হয়ে গেলো। আর তখনি আমার আবছা আবছা কিছু সময় মনে পড়ে গেল। হুম, আমি মনে করতে পারছি। কে যেন দু হাত দিয়ে আমার গলায় চেপে ধরেছিলো?



আমি মন্টিকে বিদায় দিয়ে গিয়েছিলাম রান্নাঘরে। তখনি পেছন থেকে কেও এসে আমার গলা টিপে ধরলো।



আমার স্পষ্ট মনে পড়ছে। আমি কত চিৎকার করলাম। কিন্তু কেও এলো না।



শুধু দেখলাম মনিকা আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সে বারান্দা থেকে সবকিছু দেখতে পেয়েছে।



মনিকার চোখগুলো পাথরের মত মনে হচ্ছিলো। আমি ভাবলাম আমার বোন মনিকা আমাকে বাঁচাবে। কিন্তু মনিকা এলো না। মনে হলো ভয়ে পাথরের মত জমে গিয়েছিলো সে!



আচ্ছা মনিকাকে খুনি দেখে ফেলেনি তো?

হায় আল্লাহ।

তুমি মনিকাকে রক্ষা করো।



মনিকাই আমার খুনের চাক্ষুস স্বাক্ষী।



আচ্ছা তাহলে কে আমাকে গলা টিপে ধরলো? আমি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম?

উত্তর পেলাম না।



আমি তো দেখতে পাইনি। ইস কত চেষ্টা করলাম ছাড়িয়ে নিতে। পারলাম না। দেখতেও পেলাম না সেই নিষ্ঠুর খুনিটাকে?



তবে হ্যাঁ, খুনির গায়ে একটা গন্ধ ছিলো। কি যেন এক সুগন্ধি মেখেছিলো সে। খুব কড়া। নেশার মত লাগছিলো আমার। এখনো আমার নাকে লেগে আছে গন্ধটা।



এরপর কারা যে আমাকে শাড়ি পেঁচিয়ে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দিলো!



আহারে আমার স্বামী শিমুল তখন বাথরুমে ছিলো। শেভ করে গোসল করছিলো। অফিসে যাবে সে।



আমি কত ডাকলাম। তবু সে শুনতে পেলো না। চিন্তায় আমার সব কিছু জট পাকিয়ে যাচ্ছে আবার।



রুস্তম আর ঘনশ্যাম আমাকে আবার হিম ট্রেতে ঢুকিয়ে দিলো। হিম ট্রেতে ঢুকে আমার খুব ক্লান্ত লাগছে। শুয়ে শুয়ে শিমুলের কথা মনে পড়ে গেলো।



আহা বেচারা। আমাকে হারিয়ে না জানি কত ভেঙে পড়েছে সে। আমার খুব শিমুলকে দেখতে ইচ্ছে করছে।



কিন্তু আমার শরীরে এখন আর বেশি শক্তি নেই। এখন চাইলেই আগের মত এদিক সেদিক যেতে পারছি না। তবু মনের জোরে আবার বাসায় গেলাম। কাওকে পেলাম না। সেখানেই শুনতে পেলাম বড় খালুকে নাকি পুলিশ গ্রফেতার করেছে। তাহলে বড় খালু কি সেই থাপ্পড়ের কথা এখনো ভুলেন নি?

থাপ্পড়ের বদলে খুন?



কিন্তু মনিকা? মনিকাকে পুলিশ ধরেছে কেন? মনিকা কি ওর বাবাকে সাহায্য করেছে?



আমার মাথায় যেন কিছুই ঢুকছে না। এই পুলিশের লোকগুলোর না কোন কান্ডজ্ঞান নেই। মনিকা আমার বোন। ও কেন আমাকে খুন করবে?



আমার শক্তি একেবারে শেষ হয়ে গেছে। আমি আর বাইরে থাকতে পারছি না। আমি আবার হিমঘরে ঢুকে গেলাম।



একটু পর হিমঘর থেকে আমাকে বের করা হলো। আমাকে গোসল দেয়া হলো। কাফনের কাপড় পড়ানো হলো। এখন আমাকে আমার গ্রামের বাড়িতে নেয়া হচ্ছে। গ্রামে পৌঁছালাম মাগরিবের পরপর।



গ্রামের সবাই আমাকে দেখতে এসেছে। আমার সকল স্বজন আমাকে শেষ বিদায় জানাতে এসেছে।



কিন্তু আমি আমার দুই সন্তানকে খুঁজছি। ভীড়ের কারণে ওদের আর খুঁজে পেলাম না। আমি অনবরত কেঁদেই যাচ্ছি। আম্মার কাছে মিনতি করছি। আব্বার পায়ে ধরছি। কেও আমার সন্তান দুটোকে বুকে এনে দাও প্লিজ। শুধু একবার আমি ওদের বুকে জড়িয়ে আদর দিতে চাই। শুধু একবার এনে দাও ওদের!



এমন সময় কেও একজন আমার কফিনের সামনে থেকে সবাইকে সরে যেতে বললো। সবাই সরে গিয়ে জায়গা করে দিলো।



মন্টি আর রাইমাকে আমার কফিনের সামনে আনা হয়েছে। আমার দুই কলিজার টুকরাকে দেখে আমি আর সহ্য করতে পারছি না।



দেখলাম আমার ছেলেটা কাঁদছে। ছেলেটার গায়ে এখনো স্কুল ড্রেস। কেও কি ছিলো না ওর ড্রেসটা বদলে দিতে?



আহারে ছেলেটা নানা বাড়ি আসার জন্য কতই না বায়না করতো? অথচ আজ এলো মায়ের লাশ নিয়ে।



এমন সময় কে যেন মন্টিকে আমার সামনে থেকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমি মন্টিকে ডেকেই যাচ্ছি।

বাবা দাঁড়া। আর একবার দেখি তোকে। কিন্তু মন্টি চলে গেলো। আহারে আমার ছেলেটাকে আর দেখতে পাবো না কোনদিন।



আমার কান্না না কমতেই দেখি আমার ছোট মেয়েটা এসেছে আমাকে শেষ দেখা দেখতে। রাইমা আমার বোন শিউলি আপার কোলে।



আমি কত করে ডাকলাম, শিউলি আপা ওকে একটু আমার কোলে দাও। আমি ওকে আদর করবো। তোমার দোহাই লাগে শিউলি আপা। তোমার দোহাই লাগে। শিউলি আপা আমার কথা শুনলোই না।



আমি আবার বললাম, শিউলি আপা, আমার বুকটা টনটন করছে। দুধে ফেটে যাচ্ছে বুক। আমার মামনিটা সকাল থেকে দুধ খায়নি। দাও না আপা। আমার জান পাখিটাকে আমি শেষ বারের মত দুধ দিবো আপা!



শিউলি আপা আমার কথা শুনলেন না।কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলেন রাইমাকে নিয়ে।



আমার চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছে। চোখ খুলে রাখতে পারছি না। শরীরে আর এতটুকু শক্তি নেই। বুঝলাম এবার আমার বিদায়ের পালা।



আর তখনি সেই ঘটনাটা ঘটলো। আবার সেই গন্ধটা আমার নাকে এসে জানান দিলো। আমার খুনের সময় যে গন্ধটা পেয়েছিলাম। সেই গন্ধ! আমার খুনি তাহলে এখানেই আছে!



প্রচন্ড ভীরের মধ্যে আমি খঁজছি সেই গন্ধটার উৎস। কিন্তু পাচ্ছি না।



এদিকে আমার শক্তি শেষ হয়ে যাচ্ছে। অনেক কষ্ট বুকে নিয়ে চোখ দুটো বন্ধ হয়ে গেলো আমার।



কিন্তু কিছুক্ষণ পর গন্ধটা আরো গাঢ় হলো। হুম সেই গন্ধ। আমি ভুল করতে পারি না। আমি সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করলাম। তবু দেখতে পারছি না। কিন্তু আমাকে চোখ খুলতেই হবে। দেখতে হবে এ গন্ধ কার? কে আমার খুনি?



আমি অনেক কষ্টে চোখ খুললাম। আমি ভীষণ চমকে গেলাম।



দেখি আমার স্বামী শিমুল। আমার কফিনে ঝুকে আছে। আমার গালে চুমু দিয়ে পাগলের মত কাঁদছে। শিমুলের শরীর থেকেই গন্ধটা আসছে।



আমি অবাক হয়ে গেলাম!



শিমুল তুমি???



তুমি আমাকে হত্যা করলে! তুমি না আমাকে কত ভালোবাসতে?



তবে কি বড় আপার কথাই ঠিক ছিলো? মনিকার সাথে তোমার বোঝাপড়াটা কি মিথ্যে ছিলো না তাহলে? মনিকার সেই পাথর দৃষ্টির অর্থ আমি বুঝতে পারছি এতক্ষণে। কেন মনিকা আমাকে মরতে দেখে টু শব্দটিও করে নি।



হঠাৎ দেখলাম শিমুলের পাশে দুজন পুলিশ এসে দাঁড়িয়েছে।



পুলিশ এসে বললো, শিমুল সাহেব আপনাকে আমাদের সাথে থানায় যেতে হবে।



পুলিশ গাড়িতে করে শিমুলকে নিয়ে গেলো।

শিমুল চলে গেল। সাথে সেই গন্ধটাও।


(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top