What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made অন্তিম অপেক্ষা 📛🔰🔱⭕ (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
শফিক সাহেবের মৃত্যুর দুদিন পরে পারিবারিক মিটিং বসলো।

তার স্ত্রী সাজেদা বেগম এখন কোথায় থাকবেন, মিটিং এর প্রধান আলোচ্যসূচী।

বড় মেয়ে লন্ডন থাকে, মেজ ছেলে কানাডায়। একমেয়ে থাকে কাজীপাড়ায়,

ছোটমেয়ে রাজশাহীতে থাকে, আর ছোট ছেলে সরকারি চাকুরে, সারা দেশে ঘুরতে হয়।



মোহাম্মদপুরের এই দোতলা বাড়িতে নিচতলায় একটা ফ্যামিলি ভাড়া থাকে।

দোতলায় এতদিন শফিক সাহেব আর সাজেদা বেগম থাকতেন।

শফিক সাহেব যখন এই জায়গা কিনেছিলেন, তখন বাড়ির সামনে কিছুটা জায়গা রেখেছিলেন, একটা শিরীষ গাছ আছে সেখানে, মনে মনে ইচ্ছে ছিল, এত কষ্টে জমানো টাকায় বাড়ি করা, মৃত্যুর পরে শেষ আশ্রয় এই শিরীষ গাছের নিচে হোক।



সময়ের ব্যবধানে এই জায়গা এখন হীরের চেয়েও দামী, তাই ছেলেমেয়েরা শফিক সাহেবকে এখানে শায়িত করে জায়গাটা নষ্ট করেনি!

সলিমুল্লাহ রোডের পাশে কবরস্থানে তাকে রেখে এসেছে।



সাজেদা বেগম মৃদূ স্বরে প্রতিবাদ করেছিলেন কিন্তু সবাই হা হা করে উঠলো!

তিনি চুপ করে গেলেন।

এখন ওরা এই জায়গা ডেভেলপারকে দিয়ে দেবে বলে আলোচনা করছে।

নিচতলায় দোতলা পর্যন্ত মার্কেট হবে, আর

সবাই দুটো করে ফ্ল্যাট পাবে, এতেই খুশি, সমস্যা হলো মা কার কাছে থাকবেন!



বিদেশে থাকা ছেলে আর মেয়ে তো বাদ, তারা খরচ দেবে কিন্তু মা কে নিয়ে যাওয়া এখন সম্ভব নয়, আর সাজেদা বেগম যেতেও চান না।

রাজশাহীর মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে থাকে, ছোট ছেলে তো নিজেই ব্যচেলর। কাজীপাড়ায় যে মেয়ে থাকে, তার দুইটা বাচ্চা, নিজের শ্বাশুড়ি থাকে সাথে, সাজেদা বেগম কোথায় থাকবেন!



সাজেদা বেগমের সাথে থাকে দুলির মা, কাজ টাজ করতো, কিন্তু কাজের লোকের চাইতে আপন।

পাশের রুমে বসে এসব আলোচনা শুনছিলো সাজেদা বেগম আর দুলির মা।



---কি লাগাইছে পোলাপানডি, এহনও তিন দিন হয় নাই বাপে মরছে, এহনি এইসব আলাপ আলোচনা।

মিলাদটা তো হবে নাকি!



সাজেদা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।

শফিক সাহেব মজা করে বলতেন, আমরা যে আগে যাবো, সে বেঁচে যাবে। যে থাকবে, সে বুঝবে একাকীত্ব কি জিনিস, পৃথিবীটা কত অচেনা।



মনে পড়ে, সেদিনটার কথা, অফিস থেকে এসে শফিক সাহেব বলেছিলেন, সাজু একটা জায়গা পাইছি, হাজার পয়ত্রিশ টাকা হলে রাখা যায়, একটু পিছনের দিকে, তাও ভালো, টিনের ঘর করলেও তুমি বাগান করতে পারবা।

তখন তারা জুরাইন থাকতেন।



টাকা ম্যানেজ করা কত কষ্ট, ধার করলেন কিছু টাকা, তাও শেষে রেজিষ্ট্রি করার টাকা কম পড়লো, সাজেদা বেগম গলার চেইনটা বন্ধক রাখলেন।



জায়গা কেনা হলো, আশে পাশে তেমন কিচ্ছু নাই।

বাড়ি ঘর, দোকান পাট। মাটির রাস্তা।

প্রতি শুক্রবার সকালে তারা চলে আসতেন, এসে গাছ পালা লাগাতেন।

আস্তে আস্তে বাড়ির কাজ শুরু হলো, একটা রুম, একতলা, দোতলা।

ছেলে মেয়েরা বড় হলো, যে যার মতো ব্যস্ত হয়ে গেলো, বিয়ে শাদি হলো!

ছিলেন তারা দুজন, গত পরশু থেকে সাজেদা বেগম একা!

মেজ মেয়ে প্রস্তাব দিলো, আগারগাঁও এ বৃদ্ধাশ্রম আছে, ওখানে মা যত্নেই থাকবে!



সবাই একে একে সায় দিতে লাগলো!



সাজেদা বেগম উঠলেন!

ওদের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললেন, কিভাবে যেন আজকের দিনটা তোমাদের বাবা আগেই দেখেছিলেন,

তাই বাড়ির কাগজপত্র তার অবর্তমানে আমাকে দিয়ে গেছেন।

তোমরা ব্যস্ত, নিজেদের নিয়ে।

এমনি হয়, তাই এত চিন্তা আপাতত করতে হবে না।

আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করো, যতদিন আমি তোমাদের বাবার কাছে যেতে না পারি।

আমি যাওয়ার পরে এই জায়গা মার্কেট হবে নাকি এপার্টমেন্ট হবে, সেটা সিদ্ধান্ত নিও।

আপাতত আমি এ বাড়ি ভাঙছি না।



ছেলেমেয়েরা একে অন্যের মুখের দিকে তাকালো!

সাজেদা বেগম ছাদে উঠে গেলেন!

অনেক বছর আগে ছাদে দাঁড়িয়েছিলেন প্রথমবার, শফিক সাহেবের হাত ধরে।

আজ এসেছেন একা।

গেটে লাগানো বাগান বিলাসটা তখন ছোট, আজ সে ডালপালা মেলে ছাদে উঠে ঝাপড়া হয়েছে!

আজ তারও অনেক ডালপালা, কিন্তু বাগান বিলাসের মতো কেউ তাকে জড়িয়ে নেই।



ছাদে লাগালো গাছগুলোতে চড়ুই কিচির মিচির করছে

সাজেদা বেগম আকাশের দিকে তাকালেন, আজ হয়ত বৃষ্টি হতে পারে, একটা প্লেন উড়ে গেল, সাদা বকের মতো।



তিনি শূন্যে তাকিয়ে থাকেন অন্তিম অপেক্ষায়।


(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top