আপওয়ার্ক হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অনলাইন ফ্রিলান্সিং মার্কেটপ্লেস। শুরুতে এটি ওডেস্ক নামে পরিচিত ছিল যা পরে নাম পরিবর্তন করে অন্য একটি মার্কেটপ্লেস ইল্যান্সের সাথে একীভূত হয় আপওয়ার্ক নাম ধারণ করে। যারা অনলাইনে কাজ করেন তাদের অনেকেরই স্বপ্ন থাকে আপওয়ার্কে একটি একাউন্ট খুলে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার। আবার এমন কেউ কেউ আছেন যারা আপওয়ার্ককে খুব একটা পছন্দ করেন না।
বাস্তবতা হচ্ছে, আপনি পছন্দ করেন বা না করেন, আপওয়ার্ককে কেউই অস্বীকার করতে পারবেন না; কারণ এর ব্যাপ্তি ও প্রভাব অনেক বেশি। হয়ত আপনি যতটা চিন্তা করতে পারবেন তার থেকেও! বড় বড় কোম্পানি যেমন মাইক্রোসফট, অটোম্যাটিক, এরাও কোনো কোনো ক্ষেত্রে আপওয়ার্ক এর ক্লায়েন্ট।
একজন ফ্রিল্যান্সার এর কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল ক্লায়েন্ট খুঁজে বের করা। আপওয়ার্ক এর মত প্লাটফর্ম ক্লায়েন্ট এবং ফ্রিল্যান্সার উভয়ের জন্যই একে অপরকে খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারটা সহজ করে দেয়। বাড়তি আয় হোক, কিংবা প্রধান জীবিকা- আপওয়ার্কে সব ধরনের ফ্রিল্যান্সারই রয়েছেন।
আপওয়ার্ক কী এবং কীভাবে কাজ করে?
আপওয়ার্ক কী এটা ইতোমধ্যেই বলে ফেলেছি। আপওয়ার্কে ফ্রিল্যান্সারগণ তাদের প্রোফাইলে নিজেদের কাজ, অভিজ্ঞতা এসব তুলে ধরেন। ক্লায়েন্টরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী কাজের বিবরণ এবং এর জন্য তারা কত সম্মানী প্রদান করবেন তা উল্লেখ করে আপওয়ার্ক এ পোস্ট করেন। এরপর ফ্রিল্যান্সাররা কাজের তালিকা থেকে নিজেদের অভিজ্ঞতার সাথে মিলিয়ে কাজের জন্য প্রপোজাল পাঠান।
ক্লায়েন্টরা আগ্রহী ফ্রিল্যান্সারের তালিকা থেকে তাদের পছন্দের এক বা একাধিকজনকে নির্বাচন করে চুক্তিবদ্ধ হন। আবার ক্লায়েন্ট চাইলে কোনো ফ্রিল্যান্সার এর প্রোফাইল দেখে তাকে কাজের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে পারেন।
সহজ কথায়, আপওয়ার্ক এর কাজ হল ফ্রিল্যান্সার এবং ক্লায়েন্টের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা। পুরো প্রক্রিয়াটি ইন্টারনেটের মাধ্যমে আপওয়ার্ক প্ল্যাটফর্মে সম্পন্ন হয়।
ফ্রিল্যান্সারকে তাদের পারিশ্রমিক আপওয়ার্ক এর সাথে ভাগ করে নিতে হয়। কোনো নির্দিষ্ট বায়ার/ক্লায়েন্টের কাছ থেকে একজন ফ্রিল্যান্সারের প্রথম ৫০০ ডলার আয়ের ২০% অর্থ ফি হিসেবে কেটে নেয় আপওয়ার্ক। একই কন্ট্রাক্টে ৫০১ থেকে ১০ হাজার ডলার আয়ের মধ্যে ১০% যায় আপওয়ার্ক এর ভাগে। আর সেই কন্ট্রাক্টে ফ্রিল্যান্সারের আয়ের পরিমাণ ১০ হাজার ডলারের বেশি হলে তার থেকে ৫% পায় আপওয়ার্ক। অর্থাৎ, আয় যত বেশি হবে এবং যত বেশি দীর্ঘমেয়াদী ক্লায়েন্ট-ফ্রিল্যান্সার সম্পর্ক হবে, তত কম ফি চার্জ হবে ফ্রিল্যান্সারের একাউন্টে। এছাড়া, বায়ারের দিক থেকেও বিভিন্ন প্ল্যানে বিভিন্ন রকম ফি নেয় আপওয়ার্ক।
আপওয়ার্ক এ কাজের প্রকারভেদ
ফ্রিল্যান্সিং এর উপর ভিত্তি করে চালিত আপওয়ার্ক এ বিভিন্ন ধরনের কাজের দেখা মিলবে। মূলত শিল্প এবং দক্ষতাভিত্তিক কাজই এখানে গুরুত্ব পায়। আপওয়ার্ক এ যেসব কাজের দেখা মিলবে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য মূল ক্যাটেগরিগুলো নিম্নরূপঃ
- ফটোগ্রাফি এবং এডিটিং
- ভিডিও প্রোডাকশন
- ওয়েব ডিজাইন
- সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও)
- মার্কেটিং
- সোস্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট
- গ্রাফিক ডিজাইন
- প্রোগ্রামিং
- সফটওয়্যার ডেভলপমেন্ট
- লিটারেচার (লেখা ও এডিটিং)
- কপিরাইটিং
- এডভার্টাইজিং
- টিচিং
- অনুবাদ করা
- কন্ঠ প্রদান (ভয়েস ওভার)
- আর্ট ডিরেকশন
- সাপোর্ট, ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট
আপওয়ার্ক আপনার আয়ের একটি ভালো অংক কেটে নিবে, কিন্তু এত বিশাল একটি ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ পাওয়াও সহজ ব্যপার নয়। আপওয়ার্ক আপনাকে ক্লায়েন্ট খুঁজে পেতে সাহায্য করবে। এক্ষেত্রে তারা যে লভ্যাংশ গ্রহণ করছে, তা যদি আপনি মেনে নিতে পারেন তবে আপওয়ার্ক এর মাধ্যমে কাজ করা আপনার জন্য তেমন একটা অসুবিধার হবেনা।
আপওয়ার্ক এ কীভাবে একাউন্ট খুলতে হয়?
আপনি যদি আপওয়ার্ক এ কাজ করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তবে নিম্নোক্ত ভাবে সাইন আপ করবেন –
১. আপওয়ার্ক এর সাইন আপ পেজ এ প্রবেশ করুন।
২. আপনি চাইলে এই কাজে তাদের এন্ড্রয়েড এপ ও ব্যবহার করতে পারেন। তবে সাইন আপ করতে গেলে আপনাকে পূর্বে উল্লেখিত পেজে রিডিরেক্ট করা হবে।
৩. প্রয়োজনীয় সব তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করুন।
৪. ইমেইল এবং ফোন নম্বর সঠিকভাবে ভেরিফাই করুন।
৫. সব তথ্য সঠিকভাবে লেখা হয়ে গেলে এবার সাবমিট বাটন চাপুন।
উল্লিখিত পদ্ধতি অনুসরণ করলে আপনি সফল ভাবে আপওয়ার্ক এর একজন মেম্বার হয়ে যাবেন। তবে একাউন্ট এপ্রুভ হওয়া পর্যন্ত আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে।
সফলভাবে আপওয়ার্ক একাউন্ট তৈরী করার পর আপনি নিন্মোক্ত ব্যাপারগুলো অনুসরণ করতে পারেন। এতে আপনার কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
- এই লিংকে প্রবেশ করে আপনার আইডি ভেরিফাই করুন।
- আপনার প্রোফাইলে পূর্বে করা কাজসমূহের অভিজ্ঞতা এবং বিবরণ উল্লেখ করুন।
- ভিউ প্রোফাইল অপশনে প্রবেশ করে প্রয়োজনীয় সব তথ্য পূরণ করুন।
- আপনার দক্ষতার উপর ভিত্তি করে আপনার প্রোফাইল ডিজাইন করুন।
- আপওয়ার্ক এর ফ্রিল্যান্সার এডুকেশন সেন্টার এ ঘুরে আসতে পারেন।
ক্লায়েন্টকে কাজের প্রোপোজাল পাঠাতে আপনার কানেক্টস এর প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ এখানে কানেক্টস অনেকটা টোকেন এর মত কাজ করে। প্রতিটা জবের জন্য বিড করতে ১ থেকে ৬ পর্যন্ত কানেক্টস এর প্রয়োজন পড়ে। তবে প্রজেক্ট বাতিল হলে আপনি আপনার কানেক্টস ফেরত পাবেন।
আপওয়ার্ক এ সাইন আপ করার পর আপনি কিছু কানেক্টস ফ্রি পাবেন। তবে সেগুলো কিছুদিনের মধ্যে ফুরিয়ে যাবে। আপনি যদি আপওয়ার্ক এর ফ্রি মেম্বারশিপ প্ল্যান ব্যবহার করে থাকেন, তবে প্রতিটি কানেক্ট এর জন্য আপনাকে ০.১৫ ডলার খরচ করতে হবে।
তবে যারা ১৪.৯৯ ডলারের বিনিময়ে মাসিক মেম্বারশিপ প্ল্যানে সাবস্ক্রাইব করবেন, তারা ৭০ কানেক্টস ফ্রি পাবেন। পাশাপাশি আরও কিছু বাড়তি সুবিধাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এই প্ল্যানে। আপওয়ার্ক কানেক্টস সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ুন।
আপওয়ার্ক এ কীভাবে কাজ পাবেন?
১. আপওয়ার্ক সাইটে বা অ্যাপে লগইন করে “ফাইন্ড ওয়ার্ক” ট্যাবে প্রবেশ করে ফিড থেকে আপনার পছন্দের কাজ খুঁজে নিন। এছাড়াও সার্চ করে কাজের কাজ খুঁজে নিতে পারেন।
২. পছন্দনীয় কাজ খুঁজে পেলে কাজের বিবরণ পড়ুন।
৩. “সেন্ড এ প্রপোজাল” বাটন এ ক্লিক করুন।
৪. এই সেকশনে আপনি নিজের পরিচয়, কাজের অভিজ্ঞতা এবং আশানুরূপ সম্মানী এসব বিষয় উল্লেখ করবেন।
৫. যদি ক্লায়েন্ট আপনার সাথে কাজ করতে আগ্রহী হন, তাহলে তিনি আপনার সাথে মেসেজে যোগাযোগ করবেন।
৬. দুই পক্ষের সম্মতি হলে কাজ নিয়ে চুক্তি হয়।
আপওয়ার্ক এ বিভিন্ন ধরনের পেমেন্ট নেয়ার অপশন রয়েছে। আরও জানতে আপওয়ার্ক এর পেমেন্ট সম্পর্কিত পেজটি ঘুরে আসতে পারেন।
পরামর্শ
- একটি সুন্দর দেখতে প্রোফাইল পিকচার সেট করুন।
- আপনার প্রোফাইল সকল তথ্য দিয়ে সম্পূর্ণভাবে পূরণ করুন।
- প্রোপোজাল প্রেরণ বা জবের জন্য বিড করার সময় নিজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে সঠিকভাবে তুলে ধরুন।
- আপওয়ার্ক এর লোকাল ইভেন্টগুলোতে অংশ নিন।
- ক্লায়েন্ট এর মেসেজ এ যথাসময়ে সঠিকভাবে সাড়া দিন।
- নিজের কাজের যথাযত মর্যাদা নিশ্চিত করুন। সচেতন থাকুন যাতে কেউ আপনাকে ঠকাতে না পারে।
- সবসময় সততা অবলম্বন করুন।
- নিজের দক্ষতা সম্পর্কে বাড়িয়ে বললে সেটা আপনার আপওয়ার্ক ক্যারিয়ারের জন্য ক্ষতিকর হবে।
- একজন ব্যক্তির জন্য আপওয়ার্ক একটাই একাউন্ট ব্যবহারের অনুমতি দেয়। একাধিক একাউন্ট খুললে ব্যান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।