What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made সোসাইটি 🌋🍷🍻🍹🍸🍷🍹 (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
আমি হচ্ছি সুফিয়া বুয়ার অনেক বড় একজন ফ্যান এবং ফলোয়ার। আমার খুব ইচ্ছেকরে সুফিয়া বুয়ার মতো হতে।

হুম, আমার বাসার বুয়ার কথাই বলছি। আমি প্রতিদিনই সুফিয়া বুয়াকে দেখে দেখে শুধু হিংসা করি।



একদিন সকাল সকাল রান্নাঘর থেকে থালাবাসনের ঝনঝন শব্দ আসছে। আমার শাশুড়ি আমার দরজা নক করে বল্ল, "বৌমা তাড়াতাড়ি আসো। আজকে মনেহয় আবারো মারামারি করে আসছে"!!



আমি দরজা খুলে রান্নাঘরে গিয়ে দেখি সুফিয়া বুয়া মেঝেতে বসে গজগজ করছে আর লাল লাল দাগ হয়ে যাওয়া ফোলা হাতে আর কপালে মলম লাগাচ্ছে।

"আমি কি কারো খাই না পরি? আমি গায়গতরে খাইটা কামাই। আমি যা কামাই আমার আর আমার মাইয়ার পেট চলে যাইব। হারামজাদাটারে লাত্তি মাইরা বাইর করছি আইজ ঘর থেকে। আমার নামও সুফিয়া! আমারে ব্যাডা চেনে নায়। সুফিয়া কুনু কুত্তার ধার ধারিনা"।



আমি কিছুটা বিরক্ত হয়েই বল্লাম,

"সকাল সকাল কি শুরু করলা? তোমার মেয়ে না বড় হচ্ছে সুফিয়া? মেয়ের সামনেই এসব কর তোমরা? ছিঃ! এই কারণেই তো মানুষ বলে বস্তির মানুষের মত ক্যাঁচক্যাঁচে স্বভাব! ভদ্রযে কবে হবা তোমরা!"



সুফিয়া বুয়া দ্বিগুন বিরক্তি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,

"থাকেন আপনি আপনার ভদররতা নিয়া। আমার ভদরতার দরকার নাই। কুত্তারবাচ্চা মাল খাই আসব আর কথায় কথায় গায়ে হাত তুলবো! বাহ! এত সোজা! আমিও দিছি একবারে লাকড়ি দিয়া বাড়ি। দা খুঁজছিলাম, হাতের কাছে পাই নাই। নইলে কল্লা কই থাকত আইজ হে কই থাকত! মাইয়াটারে বুঝাইয়া সুঝাইয়া রফিকের বাড়িত রাখি আইছি। একটা বাসায় কামে দিমু। টাকা বেশি লাগত না, খালি একটু পড়াইলে হইব।"



আমি আর সুফিয়া বুয়া দুজনেই প্রায় একই বয়সের। দুজনেই মা, দুজনেই কর্মজীবী। আরো কত সব অদ্ভুত মিল আমাদের দুজনের মধ্যে! আবার কত হাজারো অমিল!



আমার শাশুড়ির মতে এই বদমহিলাকে অনেক আগেই বিদায় দেয়া উচিৎ ছিলো আমার! প্রায় দিনই জ্যাম ঠেলে ক্লান্ত শরীরে ঘরে ফিরেই আমাকে শুনতে হয়,

"বৌমা, তোমার এই ফাজিল বুয়াকে বিদায় কর। আমার কান, মাথা সব শেষ করে ফেল্ল এই মহিলা! এত চিল্লাচিল্লি করে! আল্লাহ!"



শাশুড়িমা পারলে সুফিয়ারে তখনি বিদায় করে! কিন্তু সুফিয়া খুবই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন স্বভাবের, পরিপাটি গোছানো এবং সবচেয়ে বড় কথা সে বিশ্বস্ত। আমি সারাটাদিন পুরো ঘরসংসার আর আমার সত্তুর বছর বয়সি বৃদ্ধা শাশুড়িকে সুফিয়া বুয়ার কাছে রেখে নিশ্চিন্তে স্কুলে থাকি। আমি স্কুল থেকে ফিরলে, রাতের রান্না শেষ করে সুফিয়া তার বস্তিতে ফিরে যায়।



আমি বিরক্তি নিয়েই স্কুলের জন্য রেডি হতে থাকি। সুফিয়া গজগজ করতে করতে টেবিলে নাস্তা দেয়। আমি নাস্তা খেয়ে মেয়ে নিয়ে বের হয়ে যাই। টুটুল সেদিন রাতেও ঘরে ফিরেনি। টুটুল এখন প্রায়ই রাতে ফিরে না। গত তিনবছর ধরে চলতে থাকা এসব এখন আমার কাছে একদম স্বাভাবিক।

টুটুল এখন প্রায় রাতেই নীলার সাথে থাকে।



সোসাইটি বলে একটা কথা আছে না! শহরের নামকরা সাবেক মরহুম লইয়ার রহমান সাহেবের ছোট ছেলে, প্রবাসী ব্যারিস্টার আদনান রহমানের ছোটভাই ব্যারিস্টার টুটুল রহমান। তার হাইসোসাইটির দুএকটা পার্টিতে সপ্তাহে এক দুইবার যেতেই হবে, এটাই স্বাভাবিক! সেসব পার্টিতে দামী সব ড্রিঙ্কস থাকবে সেটাই স্বাভাবিক! এসব পার্টিতে দু একজন বান্ধবী থাকা এবং সারা সপ্তাহের নানান রকম কেসের স্ট্রেস থেকে রিলিফের স্বার্থে সামান্য একটু ড্রিঙ্কস আর বান্ধবীর সাথে ভাল সময় কাটানো একদমই স্বাভাবিক!



এতসব স্বাভাবিক ব্যাপার নিয়ে অযথা কথা বলা, চিল্লাচিল্লি, কান্নাকাটি করাটাই বরং চরম অস্বাভাবিক। অন্তত আমার মতো একটা মফস্বলের নিন্মমধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ের জন্য চরম অস্বাভাবিক!



মাতো শোনার পর কেঁদে কেঁদে বলেই ফেল্ল আমার অন্তত অবিবাহিত দুই দুইটা কলেজ পড়ুয়া বোনের কথা, ভাইটার চাকুরী আর অবসরে থাকা ডাইবেটিসের রোগী বাবার কথাটা ভাবা উচিত। স্কুলে চাকুরী করে ডিভোর্সি হয়ে এই সমাজে শুধু আমি নিজের জন্য নয় বরং পুরো পরিবারেরই বিরাট ক্ষতি করে ফেলব! আত্বীয়স্বজনকে মুখ দেখাতে পারবেনা কেউ! সবাই মিলে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না!



আমার চরম সৌভাগ্য আমি সুন্দরী! সেই সৌভাগ্যের বদৌলতে শহরের নামকরা পরিবারের ছোট ছেলের সাথে কোনরকম যৌতুক ছাড়া হটাত করে আমার বিয়ে হয়ে যায়। মফস্বলের একটা নিন্মবিত্ত পরিবারের কপাল ফিরে যায়! আমাদের ঘরে দামী সব ইলেক্ট্রনিক্স আসে, বেকার ভাইটার মোটা বেতনের চাকুরী হয়, ছোট বোন দুটো শহরের নামকরা কলেজে ভাল সাবজেক্টে পড়ার সুযোগ পায়!



আমার বাবামা আত্বীয়স্বজনের সামনে জামাই বলতে অজ্ঞান! কাছের দূরের আত্বীয়রা আমার সৌভাগ্যকে হিংসা করতে শুরু করে!! তাদের হিংসা করতে দেখে আমার মা বাবার বুকের ছাতি আরো দুই ইঞ্চি ফুলে উঠে অহংকারে!



আমার শাশুড়িআম্মা নীলার ব্যাপারটা মেনে নিতে পারেনা। ছেলেকে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে কাজ না হওয়াতে একদিন আমাকেই স্মার্ট হবার উপদেশ দেন উনি। স্বাভাবিকতা আর অস্বাভাবিকতা নিয়ে বিশাল এক লেকচার দেন। আমি সেদিনই মেয়ে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু শাশুড়িমা আমাকে আমার সীমাবদ্ধতার কথা আরেকবার ভেবে দেখার অনুরোধ করেন। সহানুভূতি দেখানোর ঢঙে ভয় দেখান, ডিভোর্স দিতে গেলে এই ঝানু আইনজ্ঞ পরিবার আইনের মারপ্যাঁচে আমার মেয়েকে রেখেতো দিবেই বরং সমাজের কাছে আমাকেই অপরাধী বানিয়ে ছাড়বে সবাই!



তাই আমি এখনো ব্যারিস্টার টুটুল রহমানের বউ হিসেবে সমাজে নাক উঁচু করে থাকি।

দামী সব শাড়িগয়না পরে উচ্চবিত্তদের ঝকমকে পার্টিতে যাই।

শখ করে সময় কাটানোর জন্য হাই সোসাইটির বাচ্চাদের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে জব করি।



মানসন্মান আর সামাজিকতা মাকড়সার জালের মতো আমাকে আটকে ফেলে! আমিও নির্বিকার হবার মতো স্মার্ট হবার আপ্রাণ চেষ্টা করি!



আমার সৌন্দর্য আর ভদ্রতায় মুগ্ধ সোসাইটির সবাই।



কিন্তু আমার যে খুব সুফিয়া বুয়া হতে ইচ্ছে করে!



ভীষণ ইচ্ছেকরে গলা ফাটিয়ে বস্তির মানুষগুলার মতন চিল্লাচিল্লি করতে, ঝগড়া করে বুকের পাথরটাকে প্রচণ্ড জোরে ছুড়ে ফেলতে। ইচ্ছেকরে সুফিয়া বুয়ার মতন লাকড়ি নিয়ে বেইমান টুটুলকে এলোপাথাড়ি মারতে। ইচ্ছেকরে একটা দা দিয়ে কুপিয়ে মাতাল টুটুলকে বন্ধুত্ব আর পরকীয়ার সংজ্ঞা বুঝাতে।



আমি কিছুই করতে পারিনা। আমি উঁচুতলার মানুষ হয়ে কাঁদা মাটিতে নামতে পারিনা।



আমি ভীষণ পরিপাটি কাপড়চোপড় পরে কাঁদামাটির ভীষণ স্বাধীন সুফিয়া বুয়াকে দেখে দেখে শুধু হিংসাই করি!


(সমাপ্ত)
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top