What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made বিষাক্ত ছোবল 🐛🐙🐊🦀🐍 (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
"ভাবী আদা হইবো, আমাগো আদা শ্যাষ হইয়া গ্যাসে তাই চাইতে আইলাম। আমাগো কিনলেই দিয়া যামুনে।"



পাশের ফ্ল্যাটের কাজের মেয়ে হাসি আল্লাহর ত্রিশটা দিনই কিছু না কিছু চাইতে আসবে মুন্নির কাছে। আজ আদা তো কাল পেঁয়াজ। অসহ্য লাগে মুন্নির। আজ বলেই ফেললো ওকে,



-কিরে হাসি তোর আপা ভাইয়া কি বাজার হাট কোনদিন করে না, নাকি রে? অবশ্য তারাতো দিনে অফিস আর রাত ভর ঝগড়া করে। বাজার করবে কখন!

-তা ক্যান হইবো ভাবী ? আফায় কিনে তো আনাজ ফাতি! ঐতো আফা অফিস থন ফিরোনের পথেই লইয়া আইবো বাজার।

-তোর ভাইয়া বাজার করলেই তো পারে।

-কি কন ভাবী, ভাইয়া কত বড় অপিসার মানুষ, উনি যাইবো বাজারে? আর আমার আফা, ভাইয়ার করা বাজার সদাই এক্কেবারে পছন্দ করে না।

-নে ধর নিয়ে যা আদা। তোর আপাও অনেক বড় অফিসার হাসি। তোর আপা ভাইয়া দু'জনেই সমান কারন দুজনেই উনারা ব্যাংকার।



হাসির আপার নাম দিশা। উপরে উপরে দেখলে মহিলাকে বেশ বিচক্ষণ বলেই মনে হয়। দিশার স্বামীর নাম রিয়াজ। বাহির থেকে দেখলে রিয়াজকেও কেউ খারাপ বলতে পারবে না। দিশা রিয়াজের একটি মাত্রই সন্তান। নাম রাইসা, ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। এদিকে আজ মুন্নির খুব ইচ্ছা করছিলো হাসির কাছে থেকে ওদের বাড়ির কিছু কথা জানবে। তারপর কি মনে করে যেনো মুন্নি চেপে গেলো বিষয়টা।



মুন্নির স্বামী শফিক পেশায় ডাক্তার । মুন্নি গৃহিনী। একমাত্র পুত্রকে নিয়ে সুখের সংসার ওদের। শফিক ব্যস্ত থাকে হাসপাতাল রোগী নিয়ে আর মুন্নির ব্যস্ততা সন্তানকে ঘিরে। হাসপাতাল রোগী, তারপরও শফিক চেষ্টা করে দুপুরে পরিবারের সাথে বাসায় লাঞ্চ করতে । তবে সব সময় যে এটা পারে তা নয়। ডাক্তার মানুষ লাঞ্চ করেই সোজা চেম্বারে চলে যায় । তবে চেম্বারেও রাত দশটার পর আর পাওয়া যাবে না শফিককে। দশটার পরই বাসায় চলে আসে ডাক্তার সাহেব।



ইদানিং প্রায় রাতেই দিশাদের ফ্ল্যাট থেকে চিৎকার চেঁচামেচি এমনকি মারধোরের আওয়াজ শোনা যায়। বিষয়টা নতুন না। আগেও রাত বিরাতে দিশা আর রিয়াজ এমন চিল্লাচিল্লি মারধোর করতো। তখন ওদের একমাত্র সন্তান রাইসা গগন বিদারী আওয়াজ করে কান্না শুরু করতো। যারা এই এ্যাপার্টমেন্টে ফ্ল্যাট কিনেছেন তারাতো আর নিজের বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে পারে না। তবে যারা ভাড়াটিয়া তারা অনেকেই এই বাড়ি ছেড়ে অন্যখানে চলে যায়। চলে যাবার কারন হলো এই দম্পত্তি। এরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করে প্রতিবেশীর কাছে নালিশ নিয়ে যায়। কার দায় পড়েছে এই সময়ে নিজেদের রাজ্যের কাজ কর্ম ফেলে ওদের ঝগড়া বিবাদ মেটাবে।



-আজ তোকে জানে মেরেই ফেলবো রে লুচ্চা। তুই আবারো আজ লাঞ্চ করতে গিয়েছিলি ঐ হারামজাদীর সাথে! আমি পিওনকে বলে রেখেছি তোর সব তথ্য যেন আমাকে দেয়।

-মুখ সামলিয়ে কথা বল দিশা, খবরদার বললাম নোংরা গালি দিবি না ওকে। তুই কি মনে করিস শুধু তুই ই আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে তোর নাগরকে নিয়ে লাঞ্চে যাবি ? আমিও পারি বুঝেছিস। আমিও তোর অফিসের পিওনকে টাকা ঘুষ দিয়ে তোর সব খবরই রাখি,এটা জানিস তুই? যেমন তুই তেমনি আমি।



একবার শুরু হলে দিশা রিয়াজের ঝগড়া যেন থামতেই চায় না। ওদের একবারও মনে হয় না মেয়েটা বড় হচ্ছে। দিন দিন যেন মেয়ের কথা ওরা ভুলতে বসেছে।



মুন্নি নিজেদের এই ফ্ল্যাটে আসার পর বড় জোর দু'বার দিশার মাকে আসতে দেখেছে মেয়ের বাসায়। একদিন দিশা অফিস যাবার পর ওর মা গল্প করতে এসেছিলো মুন্নির সাথে । দিশার মা বলছিলো,

-মারে আমার মেয়েটা বড্ড জেদি, ছোটবেলা থেকেই এমন। নিজে পছন্দ করে বিয়ে করলো রিয়াজকে। তারপরও এই ঝগড়া ফ্যাসাদ লেগেই থাকে ওদের।

-ওমা তাই খালাম্মা? দিশা ভাবীর লাভ ম্যারেজ? আমাদের অবশ্য আ্যারেন্জ ম্যারেজ। জেনে শুনে বিয়ে করে এই দশা উনাদের!

-মারে ওরা দু'জন ওদের মেয়ের কথাও ভাবে না। আবার আমাকে এসে থাকতে বলে ওর মেয়েকে যেনো দেখেশুনে রাখি তাই। এদিকে আমি একটানা অতদিন থাকতে পারি না বলে আমাকেও আমার মেয়ে নোংরা ভাষায় গালাগালি করে। তুমি বলতো মা, আমি কিভাবে এসে থাকবো ? থাকি ছেলেদের কাছে। সবাই আমাকে চাই। আমি মা, সবার মন রক্ষা করেই তো চলতে হবে আমাকে, তাই না বলো?

-জ্বি খালাম্মা তাতো অবশ্যই।



ইদানিং প্রায় সময়ই রাইসা চলে আসে মুন্নির কাছে। মেয়েটাকে দেখে বড্ড মায়া লাগে মুন্নির। কি সুন্দর দেখতে! লেখাপড়ায়ও ভালো। " এমন মেয়ের ভবিষ্যতের কথা না ভেবে কি করে পারে ওর মা বাবা রাত দুপুরে বিবাদ করতে।" মনে মনেই বলে মুন্নি।



মুন্নির দরজা দিনের বেলাতে খোলা থাকে। মুন্নি ছেলেকে স্কুলে দিয়ে এসে ইউ টিউবে রান্না শিখছিলো। হঠাৎ আন্টি ডাক শুনে চোখ ফিরিয়ে দেখে রাইসা দরজার কাছে দাঁড়ানো।

-কি হলো রাইসা, ভেতরে এসো। এসো এসো।

-আন্টি আপনাকে আমার খুব ভালো লাগে। তাই গল্প করতে আসি।

-তারপর পড়ালেখা কেমন চলছে? সামনে তো পরীক্ষা নাকি?

-আর পড়ালেখা ? আমার আম্মু আব্বু কোন খোঁজ খবর নেয় আমার পড়ালেখার ? তারাতো নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত। জ্বি আন্টি কোনরকমে চলছে আমার পড়াশুনা। আর আমার নানী একটা বদমাশ। সে আমার মামাদের ছেলেমেয়েদের জন্য অস্থির। অথচ আমি একা থাকি, আমাকে দেখতে আসার সময় পায় না সে। আপনি বলেন আন্টি আমার আম্মু লেখাপড়া জানে জবতো করবেই। আমার মামীরা তো মামাদের পয়সায় বসে বসে খায়। যত্তসব মূর্খের দল !

-ছিঃ রাইসা বড়দের সম্পর্কে এভাবে বলতে নেই মা। তুমি কত ভালো! কে কি করলো বা বললো তুমি সেদিকে নজর না দিয়ে নিজের লেখাপড়া করবে। তোমাকে বড় হতে হবে তো।

-জানেন আন্টি আব্বু আম্মুর কারনে আমার কিছুই ভালো লাগে না। মাঝে মাঝেই মনে হয় পালিয়ে যায় বাড়ি থেকে। আচ্ছা আন্টি আপনি পারবেন আমার আম্মুকে একটু বোঝাতে ?

-আমি ? কি বলবো তোমার আম্মুকে ?

-এই যে ওরা যেন অন্য দশটা হ্যাপি ফ্যামিলির মত আনন্দে থাকে। একটু বোঝাতে পারবেন ?



আজ মুন্নি ঠিক করেছে সন্ধ্যার পর চা খেতে যাবে রাইসাদের বাসায়। মেয়েটা এত করে বলে গেলো, মায়ায় লাগছিলো মেয়েটাকে দেখে।

-দিশা ভাবী কেমন আছেন? চা খেতে চলে আসলাম।

-আরে আসেন ভাবী। আপনাকে তো ইদানিং আর দেখি না ভাবী। এই হাসি.... হাসি.... চা দে আমাদেরকে।

এই সামান্য চা দেবার কথাটাও চিৎকার করে বলছে দিশা। মুন্নি বলে,

-ব্যস্ত হবেন না ভাবী। গল্প করবো তাই আসলাম।



এই কথার অপেক্ষায় করছিলো দিশা। কারন ওতো মুখিয়ে আছে স্বামীর নামে হাজারটা কথা বলার জন্য। দিশা যখন রিয়াজের বদনাম করা শুরু করে তখন মুখ চোখের এমন ভঙ্গি করে যে রীতিমত ভয় লাগে। যার কাছে যখন স্বামীর বদনাম করে মহিলা তখন তার একটা হাত নিজের হাতের মধ্যে চেপে ধরে রাখে।আর থেকে থেকেই হাতটা মুচড়ে দেবার মত করে। বিশ্রী একটা ব্যাপার।দিশা আজ মুন্নির এক হাত চেপে ধরে মুচড়ে দিতে দিতে বলে,

-আমার আর গল্প ! শয়তান একটা ইবলিশ শয়তানের বাচ্চার সাথে সংসার করি ভাবী। আমি বলে করছি ওর সংসার। রাইসার বাপ তো একটা লুচ্চা। আমার শ্বশুরও তাই ছিলো। শয়তানের বাচ্চা শয়তানই হয়। আগে জানলে কি আর আমি বিয়ে করতাম ওকে ?

-আপনি তো নিজের পায়ে দাঁড়ানো মানুষ। তারপরও কেন করেন এমন লোকের সংসার? রোজ রোজ ঝগড়া ফ্যাসাদ ভালো লাগে ? যাই বলেন ভাবী আপনার মেয়ের উপর এসবের প্রভাব পড়ছে। ওতো ভালো কিছু শিখছে না। আর দশটা মেয়ের মত বড় হচ্ছে না আপনার মেয়ে। প্রতিদিন এসব দেখতে দেখতে ওর মনটা অন্য রকম হয়ে যেতে পারে। আমি বাহিরের মানুষ তবুও মেলা কথা বলে ফেললাম। আচ্ছা ভাবী আমি যাই আজ। পরে আসবো আবার।

-বসেন ভাবী আর একটু কথা বলি। জানেন ভাবী রাইসার বাপ ওরই এক কলিগের বউয়ের সাথে পরকিয়া করে।

-ভাবী এসব কথা শুনতে আমার একদম ভালো লাগে না। আজ আমি আসি কেমন।



"বুঝছো শফিক পাশের ফ্ল্যাটের ভাবীর কাছে গিয়েছিলাম দুটো গল্প করবো বলে। মহিলাকে মানসিক রোগী বলে মনে হলো আমার। মহিলা সংসারের গল্প না করে উল্টো শুধু শুধু সব কথার মধ্যে উনার স্বামীকে টেনে আনছে আর স্বামীর দোষ দিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে উনার কোন দোষই নেই। আজব! অথচ ঐ ভাবীর মা আমাদের বাসায় বসে নিজের মেয়ের কত কথায় না বলেছেন আমাকে। বাপরে বাপ এত বকবক করতে পারে দিশা ভাবী! কান ঝালাপালা করে দিলো আজ আমার।"

রাতে খাবার টেবিলে মুন্নি শফিককে বলছে। শফিক শুনেই বলে,

-তুমিতো জানো উনার স্বভাবই এমন। গেলে কেন ঐ বাসায়?

-এমনি কি আর গেলাম গো, রাইসার কথা ভেবে গেলাম। বললাম না সেদিন তোমায় রাইসা এসেছিলো।ও বলেছিলো আন্টি আপনি এসে আম্মুর সাথে কথা বলেন তাই গিয়েছিলাম। তবে কানে ধরেছি আর যাবো না কোন কিছু বোঝাতে। যাদের ভালো তারা বুঝুক।

-হ্যাঁ সেটাই তো। এসব মানুষ খুব একটা সুবিধার হয় না। তুমি আর যেয়ো না। দেখোই তো এ্যাপার্টমেন্টের সবাই ওদেরকে এড়িয়ে চলে।



দিশা আর রিয়াজ ইদানিং এক ঘরে শোয় না। ওদের কাজের মেয়ে হাসি আদা রসুন পেঁয়াজ চাইতে এসে মুন্নিকে দু'চারটা গল্প শুনিয়ে যায়। ওদিকে রাইসারও ব্যবহার কথাবার্তা খুবই নাকি খারাপ হয়ে যাচ্ছে দিন কে দিন, হাসি বলে। মুন্নির এসব শুনে খারাপই লাগে। মুন্নি কিছুতেই বুঝতে পারে না দুটো উচ্চ শিক্ষিত মানুষ ভালোবেসে বিয়ে করে পরবর্তিতে এমন কেন করে? দোষটা সত্যি আসলে কার? যদি দুজনের মনের মিল না হয় তবে ডিভোর্স দিলেই তো পারে দিশা ভাবী। উনি তো শুধু মাত্র গৃহিনী না। উনি নিজে রোজগার করেন।



এরই মাঝে বাজে একটা ঘটনা ঘটে গেলো। দিশার মেয়ে রাইসা ওর প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গিয়েছে। এদিকে দিশা পুরো দোষ নিজের স্বামীকে দিচ্ছে। ওদের অশান্তি যেন চরমে উঠলো। অবশেষে এতদিনে দিশা রিয়াজ দুজনেই আলাদা হবার সিদ্ধানও নিয়ে নিলো। এরই মাঝে রাইসা একদিন ফোন করে মা বাবাকে জানিয়ে দিয়েছে সে নাকি তার প্রেমিক রিজভীর সাথে বিয়ে করে ওদের বাসায় বেশ সুখেই আছে। এসব কথা কাজের মেয়ে হাসির কাছেই শুনেছে মুন্নি।



রাইসার বর রিজভী সদ্যই মাস্টার্স পাশ করেছে। এখনো জব পাইনি। তবে জব খুঁজছে।রিজভীরা দু'ভাই, বোন নেই। রিজভীর মা বাবা দুজনেই হাই স্কুলের টিচার। হঠাত কাউকে কোন কিছু না জানিয়ে বড় ছেলে এভাবে বিয়ে করে বউ নিয়ে আসাতে বেশ খানিকটা অস্বস্তিতে পড়েছে রিজভীর মা বাবা। প্রতিবেশি থেকে আত্মীয়স্বজন কেউই কথা শোনাতে ছাড়ছে না। তবুও রিজভীর মা বাবা সবার সামনেই রাইসার খুব প্রশংসা করছে। মাঝে মধ্যে অসহায়ের মত খুব নিকটজনের কাছে রিজভীর মা বলছে, " এ কোন সমস্যায় পড়লাম! ছেলে এখনো চাকরী করে না অথচ বিয়ে করে বউ আনলো। মেয়ের বাবা মা দুজনেই নাকি উচ্চ শিক্ষিত, ব্যাংকে চাকরী করে তবে শুনছি তাদের নাকি তালাকও হয়েছে। আল্লাহ জানে কি আছে আমাদের কপালে!"



রাইসা ওর শাশুড়িকে আম্মু বলেই ডাকে। শাশুড়ির মেয়ে না থাকায় উনিও রাইসাকে মেয়ের মতই দেখে। বেশ ভালোই কাটছে ওদের দিনগুলো। রাইসা অবাক হয়ে দেখে আর ভাবে ওর শ্বশুর আর শাশুড়ির কত মিল ! কখনো কাজের মেয়ে না আসলে ওর শ্বশুর, প্রায় সব কাজেই শাশুড়িকে সাহায্য করে।মাঝে মাঝেই রাতে দু'জন ছাদে বসে গান করে। রাইসার শ্বশুর প্রতিদিন সকালে চা করে বাড়ির সবাইকে খাওয়ায়। এসব কিছু রাইসার ভালো লাগলেও হিংসা হয় খুব। এমনও হয়েছে শাশুড়ি একটু অসুস্থ বোধ করলে ওর শ্বশুর রান্নাও করছে। একদিন রাইসা রিজভীকে বলেই ফেলে,

-আচ্ছা তোমার আব্বু আম্মুর ঝগড়া হয় না কখনো? দুজনের কত ভালো সম্পর্ক! উনাদের দেখে আমার খুব হিংসা হয় !

-হাহাহাহাহা..... হিংসা হবে কেন ? আর কই ঝগড়া হতে দেখিনি তো। আব্বু খুব ভালোবাসে আম্মুকে। ছোটবেলা থেকেই দেখছি এমনটা। আর একটা বিষয় দেখেছি সব কাজ কর্ম আব্বু আম্মু খুব গুছিয়ে করেন। যেহেতু দুজনই চাকরী করেন তাই কোন সময় ঠিক কি কাজ করতে হবে সব কিছুই ভালো ভাবে দেখেন উনারা।

-আচ্ছা তোমরা দু'ভাই যখন ছোট ছিলে তখন তোমাদের দু'ভাইকে কে দেখতো? যেহেতু তোমার আব্বু আম্মু স্কুলে যেতেন তাই জিজ্ঞেস করছি।

-ও আচ্ছা। আমার দাদী থাকতেন আমাদের বাসায়। আট বছর হলো দাদী মারা গিয়েছেন, তুমিতো জানোই।

-হুম..! আমার নানী বুড়ি যদি এভাবে আমার আম্মুর কাছে থাকতো সাহায্য করতো তবে আমার আম্মুও নিশ্চিন্তে অফিস করতে পারতো। রান্না বান্না আর আমাকে নিয়ে টেনশন করতে হতো না আম্মুকে।



শ্বশুরবাড়িতে বেশ আনন্দেই কাটছে রাইসার দিনগুলো। ওর শাশুড়ি এতদিনেও একটা কাজে হাত দিতে দেয়নি ওকে। একটা কথায় সব সময় বলে, "তুমি মন দিয়ে পড়াশোনা করো। পালিয়ে বিয়ে করলে, এখন লোকে যেন না বলে পালিয়ে বিয়ে করার জন্যই পড়াশোনা হলো না তোমার। অতএব মন দিয়ে পড়ো।"



রিজভী একটা ঔষধ কোম্পানীতে চাকরী পেয়েছে। বেতন মোটামুটি। তবে রিজভী আর ওর আব্বু আম্মুরও ইচ্ছা বিসিএস দিয়ে কলেজের শিক্ষক হবে রিজভী। ওকে হয়তো এখনই চাকরী করতে হতো না। যেহেতু রিজভী নিজেই বিয়ে করেছে আর রাইসারও এমন কিছু জিনিস দরকার হয় সেটার জন্য মায়ের কাছে টাকা চাইতে লজ্জা লাগে ওর। তাই বউয়ের কিছু আবদার পূরণের জন্যই চাকরীটা বড় দরকার ছিলো রিজভীর। বিসিএসের প্রস্তুতি বাদ দিয়ে এখনই ঔষধ কোম্পানীর চাকরীতে যাওয়াটা মোটেও পছন্দ করছে না রিজভীর আব্বু আম্মু। এ নিয়ে নতুন অশান্তি শুরু হয়েছে ওদের বাসায়। রিজভীর মা রেগে গিয়ে ছেলেকে বলে,

-তোর কেন এখনই চাকরী করতে হবে ? রাইসার জন্য আমরাতো সবই করছি। কিসের অভাব হচ্ছে তোদের ?

রিজভীর বাবাও বলে,

-কত আশা ছিলো তুই বিসিএস ক্যাডর হবি। তা না এখন যেন তেন চাকরীতে হুট করে ঢুকে গেলি । এর'চে বরং মন দিয়ে বিসিএসের প্রস্তুতি নিতি তবে তোর ভবিষ্যতের জন্যই ভালো হতো।



ইদানিং রিজভীদের প্রতিবেশিরা বলাবলি করে,

"বাড়িটাতে এতদিনে অশান্তি শুরু হয়েছে তবে !"



এদিকে এই চাকরী হবার পর রাইসা প্রায়ই রিজভীকে বলে,

-রিজভী চলো তুমি আমি দুজন মিলে সংসার করি। কি দরকার এখানে থাকার? আমরা একটা ছোট্ট বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি।

-মানে ? আমরা আলাদা বাসা নেবো কেন ?

-নেবো না কেন ? কতদিন তোমার মা বাবার সাথে থাকবো? স্বাবলম্বি হতে হবে না তোমাকে ? কতদিন আর বাপ মায়ের খোকা বাবু হয়ে থাকবা ?

-মানে ? কি বলছো কি তুমি ? এটা সম্ভব না। আব্বু আম্মুকে ছেড়ে আমি যাবো না। আমি এতবড় অন্যায় করার পরও তারা আমাদেরকে মেনে নিয়েছেন। এখন আমরা অকৃতজ্ঞের মত উনাদের ছেড়ে চলে যাবো ? নাহ... এমন শিক্ষা আমি পাইনি রাইসা।

-আর তোমার যখন সরকারী জব হবে তখন কি করবা, তখনো মায়ের আঁচল ধরে থাকবা নাকি ?

-তুমি আজকাল খুব বাজে বকছো কিন্তু রাইসা। আমার আম্মুকে নিয়ে একটি কথাও বলবা না।

-কেন কি করবা বললে ? কি করবা ?



ছেলে আর বউয়ের চিৎকার শুনে রিজভীর মা বাবা দৌড়ে আসে ওদের রুমে। আজকাল প্রায়ই রাতে ছেলে আর বউয়ের চিল্লা পাল্লার সময় রিজভীর মায়ের বুকটা ধড়ফড় করতে শুরু করে। বলে,

-তোরা কেন এত রাতে চিৎকার করছিস ? এসব শুনলে আমার বুক ধড়ফড় করে, বুঝিস না কেন তোরা ? আহহা.. লজ্জায় আর মুখ দেখাতে পারবো না প্রতিবেশিদের কাছে। অথচ কত মান সম্মানের সাথে চলি আমরা।

রিজভীর আব্বুও বলে,

-তোদের জন্যই এলাকার লোকের কাছে একবার ছোট হলাম । আবার সেই তোরাও যদি এখন মিলেমিশে না থাকিস তবে মুখ দেখাবো কেমন করে আমরা, বল রিজভী ?



রিজভী বিছানায় মাথাটা হেলান দিয়ে বসে আছে। ওর মুখে কোন কথা নেই। হঠাৎ রাইসা বলে ওঠে,

-মুখ দেখাতে এত লজ্জা কিসের আপনাদের ? ঝগড়া বিবাদ হতেই পারে, এর সাথে পাড়ায় মুখ দেখানোর কি সম্পর্ক, বলেন ?

-এইটুকু তুমি বুঝলে তো ভালোই হতো মা । দয়া করে আর কথা বলো না। যাও ঘুমিয়ে পড়ো তোমরা।

রাইসা বেশ খানিকটা ঝগড়ার সুরে বলে শ্বশুরকে,

-একটা কথা শোনেন, আমরা বাসা ভাড়া নিবো। ওর অফিসের আশে পাশে চলে যাবো আগামি মাসে। আপনাদের বাসায় আপনারা মান সম্মান নিয়ে পড়ে থাকেন। আমি এখানে থাকবো না।

-ভাড়া বাসা ? কেন কেন মা ? রিজভী কিরে ?



রাইসার কথায় রিজভীর আব্বু আম্মু দুজনেই হতবাক ! তাদের আদরের বড় ছেলে কখন এমন সিদ্ধান্ত নিলো সেটাতো তারা জানে না।দু'জন মধ্য বয়স্ক মানুষ অসহায়ের মত একে অপরকে দেখছে। এমন সময়ই রিজভীর আম্মু বলে,

-বাবুর আব্বু আমাকে ধরো ধরো আমার মাথা ঘুরছে । মাথা ঘুরছে !

কথাটা বলেই জ্ঞাণ হারালো রিজভীর আম্মু।



ছয় মাসের বেশি সময় হয়েছে রিজভীরা আলাদা বাসা ভাড়া নিয়েছে । প্রতিদিনের অশান্তির চেয়ে ছেলে আর বউ দুরে ভালো থাকুক সেটাই চায় রিজভীর মা । তাই মনের মধ্যে অনেক কষ্ট হলেও শেষ পর্যন্ত ছেলেকে আলাদা বাসা ভাড়া নিতে বলে ওর মা বাবা। এদিকে রিজভী প্রতিদিনই একবার অল্প সময়ের জন্য হলেও বাসায় আসে মা বাবাকে দেখতে। ওর ছোট ভাইটি এবার উচ্চ মাধ্যমিক দিবে । ওর সাথেও পড়ার ব্যাপারে টুকটাক কথা হয়।



রাইসা আজকাল ওর মায়ের সাথে প্রায়ই মোবাইলে কথা বলে। দিশা এখন একলা একটা ছোট বাসা ভাড়া নিয়ে একাই থাকে। ওদিকে রাইসার বাবা তার কলিগের বউকে বিয়ে করেছে। সে আছে তার মত । একদিন কথায় কথায় দিশা মেয়েকে বলে,

-তোর বাপ যখন বিয়ে করেছে তখন আমিও বিয়ে করবো। কোন দুখে একলা থাকবো রে ? তুইও তো বেশ আছিস। জীবন একটাই সুতরাং প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করবো ।

-এসব কি বলছো আম্মু, তুমি বিয়ে করবা ? খবরদার তুমি এমন করবা না । মুখ দেখাতে পারবো না তাহলে আমি ।

-চুপ কর তুই। একটা লোয়ার ক্লাস ফ্যামিলিতে পালিয়ে বিয়ে করে মুখে এখন বড় বড় কথা বলছিস। শুনতেও ঘেন্না লাগে।

-আম্মু....!



রিজভী আজ সন্ধ্যার বেশ খানিকটা আগেই বাড়ি এসেছে। বাড়ি ফিরেই দেখে মনটা খারাপ রাইসার।

-কি ব্যাপার রাই মন এত খারাপ কেন ? কি হলো?

-জানো রিজভী আমার আম্মু আবারো বিয়ে করবে বললো। আর আম্মু যখন বলেছে বিয়ে করবো তখন করবেই।

-তোমার মা বাবাতো অমনই। এ আর নতুন কি ? উনাদের মত নির্লজ্জ মানুষ আজকাল প্রায় দেখা যায়। সো এটা নিয়ে মন খারাপ করো না তুমি ।বরং চলো যাই একটা মুভি দেখে আসি ।মুভি দেখতে যাবো বলেই বসকে ফাঁকি দিয়ে আগে ভাগে বাড়ি এসেছি।

-কি বললা তুমি, আমার মা বাবা নির্লজ্জ ?

-হ্যাঁ তাইতো । তোমার মুখেই সব শুনেছি তাদের সম্পর্কে। আমার সাথে যখন প্রেম করতা কখন তো খুব মা বাবার নামে আমার কাছে নালিশ করতা আর কাঁদতা, ভুলে গেছো ? এখন তোমার বাবা অন্যের বউকে ভাগিয়ে বিয়ে করেছে, তোমার মা আবার বিয়ে করবে। এরা নির্লজ্জ নয় তো কি ?

-লোয়ার ক্লাস একটা আস্ত ছোট লোকের বাচ্চা তুই ! তোর এতবড় সাহস আমার মা বাবাকে নিয়ে বাজে কথা বলিস তুই !

-মুখ সামলিয়ে কথা বলো রাইসা। অবশ্য ভালো মানুষের বাচ্চা তো তুমি নও যে ভালো কথা মুখ দিয়ে বেরোবে তোমার।

-কি বললি থাম তুই, আমার মাকে দিয়ে তোকে আজ আচ্ছা মত শায়েস্তা করবো। খুব বড় বড় কথা বলছিস দু'পয়সার চাকরী পেয়ে তাই না?

-তুমি মেয়েটা আসলেই ভালো না। আজ তোমার কারনেই আমার মা অসুস্থ। অবশ্য আমারও দোষ আছে । আমি যদি তোমার মত একটা বেয়াদব মেয়েকে বিয়ে করে ঘরে না আনতাম তবে আমি আমার আব্বু আম্মু ভাই সবাই আগের মতই সুখে থাকতাম ।



রিজভী ডুকরে কেঁদে ওঠে, "আল্লাহ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো আল্লাহ। মা বাবার মনে আমি কষ্ট দিয়েছি আর তারই ফল ভোগ করছি এখন।"



সন্ধ্যার পর রাইসা একাই বাড়ির বাহিরে যায়। মন খারাপ করে রিজভী চোখটা বন্ধ করে চুপচাপ মরার মত পড়ে আছে বিছানায়। ওদিকে এক পাতা ঘুমের ঔষধ কিনে আনে রাইসা। মনে মনেই বলে, " রিজভী তোকে আমি শায়েস্তা করবোই করবো।"



সকালে ঘুম থেকে উঠছে না দেখে রাই রাই বলে ডাকাডাকি করছে রিজভী। কিন্তু কোন সাড়া নেই। রিজভী দ্রুত ওর আব্বুকে ফোন করে বলে,

"আব্বু তাড়াতাড়ি আমার বাসায় আসো। দ্রুত আসো। আম্মুকে কিছু বলো না। প্রেশার বেড়ে যাবে আম্মুর।"



হাসপাতালে যখন চোখ মেলে তাকায় রাইসা দেখে ওর পাশে রিজভী আর ওর শ্বশুর বসে আছে। রিজভী বলে,

-তুমি এমনটা কেন করলে রাই ? তোমাকে এত ভালোবাসি আমি। তারপরও আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাও।

রাইসা কথা বলার মত পরিস্থিতিতে নেই। শরীরটা বেশ দূর্বল ওর।



এরই মাঝে একদিন রাইসার মা জামাইয়ের অনুপস্থিতিতে মেয়ের বাড়ি আসে । এসেই বলতে শুরু করে,

-এ কেমন জীবন তোর ? ভিখিরিকে বিয়ে করলে অবশ্য এমনই হয় । এই ছেলের সাথে তুই কখনো সুখে থাকবি না। ওর স্কুল মাস্টার বাপ মায়ের দাসী বান্দী হয়ে জীবন কাটাতে হবে তোকে, সত্যি বলছি পরে মিলিয়ে নিস আমার কথা।



বিসিএস পরীক্ষার কোন প্রস্তুতি নেই রিজভীর। অফিস করে পড়তেও ইচ্ছা করে না ওর। আর বাড়ির পরিবেশও পড়ালেখা করার উপযুক্ত না। এদিকে সারাক্ষণ রাইসার আহাজারী " আমার বান্ধবীরা কত পয়সাওয়ালা বড় চাকুরে বর পেয়েছে আর আমার কপালে এই ফকিন্নির পোলা!"



ইদানিং রাইসা রিজভীর অশান্তি চরমে উঠেছে। রাইসা সহ্যই করতে পারে না রিজভীকে। একই কথা বলে,

-মানুষ কত ভালো চাকরী করে, কত টাকা পয়সা ওদের আর তুমি কিনা ঔষধ নিয়ে ডাক্তারের দ্বারে দ্বারে বিক্রী করে বেড়াও।

-রাই আমি খুব শখ করে এই চাকরী করি না। প্রয়োজনে করতে হচ্ছে আমাকে। আমার আব্বু আম্মু এখনো বলে চাকরী ছেড়ে মন দিয়ে পড়তে। কিন্তু তোমার জন্যই আমাকে চাকরীটা করতে হচ্ছে রাই।

-ও এখন সব দোষ আমার ? আমাকে বিয়ে করেছিলি কেন ? নিশ্চয় বড় লোক বাবা মার একমাত্র মেয়ে আমি সেই লোভে। আমার মা বাবার সব কিছুতো আমি পাবো। সেই লোভে পড়েই আমাকে বিয়ে করেছিস, তাই না?

-এত খারাপ কথা তুমি বলো কেমন করে রাই ? আচ্ছা কি করলে তুমি অন্তত ভালো ভাষায় কথা বলবা বলো তো ?

-তুই পারবি বড় চাকরী করতে ? ঔষধ বিক্রী করে খা তুই । আমি আমার মায়ের কাছে চলে যাবো। মা বলেছে আমি যেন মায়ের কাছে থাকি।

-আমার আম্মুও তো আমাকে তোমাকে বলেছিলো ঐ বাড়িতে থাকতে। কিন্তু আমি শুধু তোমার জন্যই ও বাড়ি ছাড়লাম রাই আর তুমি কিনা আজ আমাকে একা রেখে তোমার মায়ের কাছে চলে যাবা ? তাও আবার তোমার মায়ের দ্বিতীয় স্বামীর ঘরে ?

-আমার মা নিজে রোজগার করে। তার দ্বিতীয় স্বামীর পয়সায় চলবো নাকি আমি ? যত্ত সব লোয়ার ক্লাস মার্কা কথা বার্তা।



রাইসা চলে গিয়েছে প্রায় পনেরো দিন হলো। রিজভী ওর আব্বু আম্মুকে বলেছে বিষয়টা। মা বাবা ছেলের এই দুঃসময়ে ছেলের ভাড়া বাসায় আসে। ছেলেকে বলে,

-আমরা কি কথা বলবো রাইসার সাথে ? তুই বললে তাই করবো বাবা।বল ফোন করবো রাইসাকে ?

-কথা বলে কোন লাভ হবে না আম্মু।ও হয়তো কথা বলবে না তোমাদের সাথে।



রিজভীর বাবা ফোন করে রাইসাকে। দু'তিন বার লাইনটা কেটে দিলেও শেষে রেগে গিয়ে ফোন ধরেই রাইসা চিৎকার দিয়ে বলে,

-আমি আর রিজভীর সাথে সংসার করবো না। খুব শীঘ্রই ডিভোর্স দেবো ওকে।

-এসব কি বলছো মা ? কেন এমন কথা বলছো ? তোমার জন্য আমার ছেলে কত কিছু করলো আর তুমি তাকে ত্যাগ করবা ? আসলে তোমাদের মত মেয়েরা ঠিক কি যে চাও তা বুঝি তোমরা নিজেও জানে না ।

-আপনি আপনার স্কুলে জ্ঞান বিতরন করবেন। আমাকে জ্ঞান দিতে আসবেন না।

-সেই..সেই তো ! তোমার মা বাবার মত জ্ঞানী লোকের অতি জ্ঞানী মেয়েকে কিছু শেখানো আমার পক্ষে সম্ভব না । তুমি বরং ডিভোর্স দাও রিজভীকে। তোমার মত মেয়ের সাথে আমার ছেলে আর ক'টা দিন থাকলে হয়তো মানসিক রোগী হয়ে যেতো। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। আসলে কি জানো তো, তুমি একটা লোভী মেয়ে আর তোমার মত লোভী মেয়ের স্বাদ আহ্লাদ কেউই পূরণ করতে পারবে না এই দুনিয়াতে ।

-বুইড়্যা... এই বুইড়্যা....রাতদিন তো ঐ বুড়ি বউকে তোষামোদ করে চলতে হয়, বউয়ের ধামাধরা চাকর কোথাকার !



ফোন লাইন কেটে দেয় রিজভীর বাবা। রিজভী ওর মা ওখানে বসে বসে সব কথায় শুনছিলো । রিজভী বাবা মা'র উদ্দেশ্যে বলে,

-আব্বু আম্মু তোমরা চলো, আমাকে বাড়ি নিয়ে চলো। আম্মু আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো।

কাঁদতে কাঁদতেই রিজভী বলে,

-জীবনের শুরুতেই মস্ত বড় ভুলটা করলাম। তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো। আমি ইনশাআল্লাহ তোমাদের সব ইচ্ছা পূরণ করবো।



রিজভীর মা ছেলের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,

-আল্লাহ যা করেন তা ভালোর জন্যই রে বাবা। এই ঘটনা থেকে তুই নিশ্চয় শিক্ষা পেলি। সামনের দিনগুলো যেন ভালো হয় তার প্রস্তুতি নে বাবা। আমরা আছি তো!

মায়ের কথায় রিজভী বলে,

-বিসিএসের জন্য পড়াশোনা করতে হবে আমাকে। আমি একজন আদর্শ শিক্ষক হবো তোমাদের মত।

-আমাদের মত না ! তুই অনেক বড় হবি রে বাবা। জ্ঞান-গরিমায় ধর্মে কর্মে বড় মানুষ হবি। আমাদের দোয়া সব সময় তোর সাথে আছে থাকবেও। আমরা দুই বুড়ো বুড়ি সামান্য হাই স্কুলের মাস্টার । আল্লাহকে বলি আমার দুই ছেলেকে মান মর্যাদায় অনেক বড় করো।



পুরোপুরি স্বস্তি ফিরে না আসলেও এখন অনেকটাই আগের মত অবস্থায় ফিরেছে রিজভীদের বাড়ির পরিবেশ। রিজভীর বাবা এখনো ওর মাকে সব কাজে কর্মে সাহায্য করে। ছেলেদেরকে চা বানিয়ে খাওয়ায়। শুধু ছাদের উপর বসে মানুষ দুটি আর গান গায় না। তবে সুখ দুখের অনেক গল্পই করে তারা।



গল্পে গল্পে রিজভীর মা স্বামীকে বলে, " আগের দিনে মুরুব্বীরা বলতেন বংশ দেখে সে ঘরে সন্তানের বিয়ে দিতে হয়।ভালো বংশের মানুষ যদি দরিদ্রও হয় তবুও তাদের আচার আচরণ কথা বার্তা অনেক অনেক মার্জিত হয়। আর এই কথাটা কত যে সত্য তা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারলাম।"


(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top