What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made অকৃতজ্ঞ 💵💴💶💷💴💵💶💷 (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
আব্বা শোন,মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে তুমি আমার কে হও তুমি কিন্তু বলবা না যে তুমি আমার বাবা।বলবা তুমি আমার গ্রামের পরিচিত লোক।আমার কাছে বিশেষ সাহায্য চাইতে আসছো।মনে থাকবতো কথাডা! তুমি যদি কও যে, তুমি আমার আব্বা তাইলে আমার ইজ্জত আর থাকত না। অফিসে আমারে লইয়া সবাই হাসাহাসি করব।

এক নিঃশ্বাসে বাবা রহিছ উদ্দিনকে কথাগুলি বলে থামলেন তার বিসিএস কর্মকর্তা ছেলে সালাউদ্দিন।



আসরের নামাজে যাবেন বলে ম্যাজিস্ট্রেট সালাউদ্দিনের বাবা রহিছ উদ্দিন তার গায়ে পাঞ্জাবিটা মাত্র চড়িয়েছেন।কিন্তু ছেলের কথায় অবাক হয়ে তিনি তার অতি আদরের ছোটছেলে সালাউদ্দিনের মুখের দিকে তাকালেন। পাঞ্জাবিটা গা থাকে খুলে চেয়ারের হাতলে রেখে শুধু গেঞ্জি আর তার উপর গামছাটা গায়ে চরিয়ে নামাজটা আদায় করে ফেললেন। সহজ সরল রহিসউদ্দিন তার আদরের ছেলেকে কিছুতেই বিব্রত করতে চায়না। কিন্তু অবোঝ মনটার ভেতরে শুরু হয়েছে অকালের কাল বৈশেখী ঝড়।যা তার শিক্ষিত ছেলে বুঝতে পারেনি।



আজ দুপুরেই তিনি সালাউদ্দিনের মাকে নিয়ে ছেলের বাসায় এসেছেন। ফোনে একমাত্র নাতিটার অসুখের কথা শুনে আর দেরি করেননি। নাতিটাকর চারমাস হয়ে গেলো এখনো দেখেননি তারা।তাছাড়া নতুন ধান উঠেছে,বড় ছেলের বৌ তার আদরের দেবরের জন্য হরেকরকম পিঠা আর নিজের ঘরে পালা গরুর দুধের পায়েস রান্না করে নিয়ে এসেছেন।সাথে জ্বাল দিয়ে ঘন করা খেজুরের রস।এই সব কিছুই তার ছোটছেলে সালাউদ্দিনের খুব পছন্দ।



ছোটছেলে সালাউদ্দিন অনেকদিন ধরে বাড়িতে যাচ্ছেনা। আর যাবে কী করে!এতো বড় চাকরি করলে কি কথায় কথায় বাড়ি যাওয়া যায়! আবার এখনতো বৌ আর বাচ্চাও আছে। তাইতো তিনি তার ছেলের উপর রাগ বা অভিমান করেন না। ছেলে ফোন করে খবর নেয়।আবার মাস শেষ হলেই দুই তিন হাজার টাকা পাঠায় ঔষধপথ্য খাওয়ার জন্য। সেই ছেলের উপরে কী তিনি রাগ করতে পারেন!!

কিন্তু এখন তিনি তার ছেলের কথায় বেশ অবাক হয়েছেন। গ্রামের অশিক্ষিত মানুষ হলেও ছেলের এমন কথার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না তিনি। আস্তে আস্তে গা থেকে পাঞ্জাবিটা খুলে ফেললেন তিনি।তারপর ব্যাগ খুলে গামছাটা বের করে গায়ে দিয়ে ঘরেই নামাজে দাড়ালেন। বাবার এমন কর্মকাণ্ডে সালাউদ্দিন অবাক হলেও ভাবতে পারেনি তার বাবা এতো সহজে সবকিছু মেনে নেবে।

যাক বাবা!বাঁচা গেলো।সালাউদ্দিন মনে মনে ভাবলেন।

কিন্তু পরক্ষণেই তার মনটা ছুটে গেলো সুদূর অতীতে।

তার মনে পড়ে গেলো ছেলেবেলার কথা। তার কৃষক বাবা একসময় কত কষ্ট করেছেন তার তিনটা ছেলে নিয়ে।



রহিছউদ্দিন কৃষক হলে কি হবে!তার ছেলেগুলো খুব মেধাবী। ছোটবেলায় তার তিনটা ছেলেই লেখাপড়ায় অনেক ভালো ছিলো। কিন্তু যারা পেট ভরে খেতে পায়না তাদের আবার লেখাপড়া! তার বড় ছেলে শওকতও পড়ালেখায় ভালো ছিলো।গ্রামের স্কুল থেকে ক্লাস ফাইভে বৃত্তি পায় সে।কিন্তু হাইস্কলের উঠার শুরুতেই বিপত্তি বাঁধে।দুইগ্রাম পেরিয়ে স্কুল, তাছাড়া পড়ার খরচ কিভাবে চালাবেন এই ভাবনায় ছেলেকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করছিলেন তিনি ।তখন এগিয়ে এলেন চেয়ারম্যান চাচা।তিনি বললেন তার বাড়ীতে বড় ছেলেটাকে জায়গির দিয়ে দিতে। সরল বিশ্বাসে তিনি আদরের ছেলেটাকে চেয়ারম্যান বাড়িতে জায়গির দিয়ে দিলেন। ঐ বাড়ি থেকে স্কুলটা বেশ কাছে। ভাবলেন ছেলের সুবিধা হবে।



প্রথম বছর ভালই ছিলো।চেয়ারম্যান এর নাতি আর শওকত একক্লাসেই পড়ে,।বার্ষিক পরীক্ষায় দেখা যায় শওকত ক্লাসে প্রথম হয়েছে।চেয়ারম্যান এর নাতি কিছুই হয়নি। তখন থেকেই সমস্যা শুরু হয়। ক্লাস সেভেনে উঠার পর কয়েক মাস পরেই একদিন স্কুল মাস্টার এর সাথে দেখা হলো, তিনি বলেলেন,

--- তোমার ছেলেতো স্কুলে যায়না। এত ভাল ছাত্র পড়ালেখা ছাড়লো কেন?

মাস্টারের কথা শুনে তাড়াতাড়ি তিনি চেয়ারম্যান বাড়িতে গেলেন।গিয়ে দেখেন স্কুলে না পাঠিয়ে তার ছেলেকে দিয়ে সারাদিন চেয়ারম্যান এর ক্ষেতের কাজ করান। রহিছউদ্দিন আমতা আমতা করে বললেন,

--স্কুলে না পাঠাইলে পোলার পড়ার ক্ষতি হইয়া যাইবো। আমার পোলাতো পড়বার চায়। একথা শুনে চেয়ারম্যান সাহেব রেগে গেলেন বললেন,



----তোমার পোলারে কিতা ম্যাজিস্ট্রেট বানাইবানি!ক্ষেতে কাম করলে তোমার পোলার কিতা ইজ্জত যাইবগা?দুই কলম না পড়াইয়াঐ অত দেমাগ!লইয়া যাও তোমার পোলারে। বাইত নিয়া ম্যাজিস্ট্রেট বানাওগা।



ঐখানেই শওকতের পড়ালেখা শেষ।মেজ ছেলেটা লেখাপড়ায় ভালো থাকলেও বেশিদূর এগুতে পারেনি।তাই এই দুই ছেলেই রহিছউদ্দিনের জমির চাষে সাহায্য করে।রহিছউদ্দিনের ইচ্ছে ছোটছেলেকে আর স্কুলেই পাঠাবেনা।কি দরকার!পড়ালেখায় ভাল হয়েও বেশি পড়তে না পারলে আরও কষ্ট লাগে। কিন্তু বড় দুইভাই ছোটভাইকে পড়াবেই। তারা আদরের ছোটভাইটাকে স্কুলে ভর্তি করে দিলো।

সালাউদ্দিন লেখাপড়ায় আরও ভালো। যখন সে হাই স্কুলে উঠলো তাকে একটা সাইকেল কিনে দিলেন বড় ভাই।সে এখন বাজারে একটা মুদির দোকান দিয়েছে। ছেলেদের পরিশ্রমে আস্তে আস্তে রহিছউদ্দিনের সংসারের চেহারা বদলে গেলো।অল্প বয়সেই বড় ছেলেদুটো ভালো রোজগার করে।ছোট ছেলে এসএসসি পাশ কলেজে ভর্তি হয়ে ঢাকায় চলে গেলো ।এইচএসসি পাশ করার পর ভর্তি হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। উচ্চশিক্ষায় সালাউদ্দিনকে বেশি টাকাপয়সা দিতে হয়নি।বৃত্তি আর টিউশনি করে সে উল্টা বাবাকে কিছু টাকা দিত।



মনে মনে টার্গেট করেছে বিসিএস দিয়ে প্রশাসনে ঢুকবে।হলোও তাই প্রথম চান্সেই ম্যাজিস্ট্রেট হলো সালাউদ্দিন। এই খুশির খবর গ্রামে পৌছলে বড় ছেলে শওকত মিষ্টি নিয়ে চেয়ারম্যান বাড়িতে যায়।বৃদ্ধ চেয়ারম্যানকে সালাম করে বললো,

---দাদা আমি হইতে না পারলেও আমার ছোট ভাই আজ ম্যাজিস্ট্রেট অইছে। তাই মিষ্টি লইয়া আইলাম।দোয়া কইরেন দাদা।



চাকরি পাওয়ার পর সালাউদ্দিনের বাড়ি আসা অনেক কমে গেলো। দূরের শহরে পোস্টিং। সবসময় অন্য কলিগদের মাঝে সে একটু সংকুচিত হয়ে থাকে। সে একজন কৃষকের ছেলে,অভব অনটনে বড় হয়েছে এই পরিচয়টা নিয়ে সবসময় যেন তাকে বিব্রত করে।নতুন একটা পরিচয় দরকার তার, যা নিয়ে গর্ব করা যাবে।



ইতোমধ্যে একজন সিনিয়র কলিগ তার শ্যালিকার বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। এটা ছিলো তার জন্য একটা সুযোগ তাই মানা করেনি। এতদিনতো সে এমনটাই চেয়েছে।একটা নতুন পরিচয়। শ্বশুর একজন ব্যবসায়ী। পয়সার অভাব নেই। তাইতো বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়নি।শুধু বাবা আর বড় ভাইদের উপস্থিতিতে বিয়েটা হয়ে গেলো।একদিনের জন্য নতুন বৌকে গ্রামে নিয়ে গেলেন। নতুন বৌ গ্রামের ভালোমন্দ বোঝার কিংবা আত্মীয় স্বজনের সাথে পরিচিত হওয়ার আগেই তাকে নিয়ে ঢাকায় চলে গেলো।

ঢাকা শহরের বিলাসবহুল শ্বশুর বাড়িতে। সে চায়না নতুন বৌ তার গ্রামের পরিচয় নিয়ে লজ্জা পাক। তাইতো তড়িঘড়ি করে নতুন বৌকে নিয়ে চলে আসে তার সরকারী বাসায়।

ঢাকা থেকে দলবেঁধে শ্বশুর বাড়ির লোকজন প্রাইভেটকার নিয়ে বেড়াতে আসে সালাউদ্দিনের নতুন বাসায়। তার খুব ভালো লাগে এখন আর বিব্রত লাগেনা।আধুনিক শিক্ষিত বৌ নিয়ে খুব গর্বিত সে। উদার শ্বশুর আধুনিক ফার্ণিচার দিয়ে সালাউদ্দিনের সরকারী বাসা সাজিয়ে দিয়েছে।এতদিনে যেন নিজের

একটা সত্যিকার পরিচয় পেয়েছে।এতবড় চাকরির সাথে কোন জৌলুস না থাকলে ভালো লাগে?



তাইতো হঠাৎ করে গ্রামথেকে বাবা মা এসে পড়ায় ভীষণ বিব্রত সে।বৌ তাড়াতাড়ি করে তার আলমিরা খুলে শাশুড়িকে বিয়েতে পাওয়া কয়েকটা পুরানো শাড়ী বের করে দিয়েছে পরতে।শাশুড়ি যে শাড়ী পড়ে এতদূর চলে এসেছে এই শাড়ীতো তার কাজের বুয়াও পরেনা।কতদিন থাকবেন বলাতো যায়না!!

আবার যদি কোয়ার্টার এর কোন ভাবি বাসায় চলে আসে!! কেলেংকারির শেষ থাকবেনা।

কি পরিচয় দেবে ওদেরকে! এই নিয়ে খুব টেনশনে আছে স্বামী স্ত্রী। সবাই তাহলে সালাউদ্দিনের মতো এমন স্মার্ট লোকের সত্যি পরিচয়টা জেনে যাবে।



রহিছউদ্দিন অশিক্ষিত কৃষক হলেও বুদ্ধি কম নয়। এখানে এসেই বুঝে গেছে এই জায়গা তার নয়।

এমন জায়গায় আসলেইত ওরা বেমানান। এমন শিক্ষিত ছেলের বাসায় কি বেশিদিন থাকা যায়!তাইতো পরদিন সকালে উঠেই বীজতলা পরিষ্কার করা লাগবে এটা বলে আবার গ্রামে ফিরে গেলেন।

শুধু অবুঝ মা বুঝতে পারলেননা রহিছউদ্দিন কেন ছেলের কাছে মিথ্যা কথা বলেছেন।


(সমাপ্ত)
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top