আমি নিজেই অবাক হয়ে যাচ্ছি । আমার মত শিক্ষিত, আধুনিক মেয়ে, ভূতের ভয় পাচ্ছি। ব্যাপারটা কারো সাথে শেয়ার করতে পারছি না । লোকে কি বলবে ? আমি নিজেও তো ভূত বিশ্বাস করি না ।
ব্যাপারটা প্রথম খেয়াল করি, আমার বিয়ের রাতে। না, এটা আমার প্রথম বিয়ে না। এটা আমার দ্বিতীয় বিয়ে। আমার স্বামী ডা. সোহেলেরও এটা দ্বিতীয় বিয়ে। সোহেল যখন বাসর রাতে আমার কাছে আসছিল, ঠিক তখনই আমি ভূতটা দেখি। ভূত বলছি, কারণ ও সোহেলের মৃত স্ত্রী ডা. নীতু। যার ছবি আমি দেখেছি, বিয়ের আগেই। সোহেল ই দেখিয়েছে। না, সিনেমা নাটকে যেমন ভূত দেখা যায়, তেমন নয়। খুব সুন্দর একটা মেয়ে । নীতুর ছবি আমি প্রথম যেদিন দেখেছিলাম, সেদিন ই আমার একটু মন খারাপ হয়েছিল । মনে হয়েছিল, যার বউ এত সুন্দর ছিল, সে কি এত সহজেই আমাকে আপন ভাবতে পারবে ?!
তো যেটা বলছিলাম, সোহেল যখন আমার দিকে এগিয়ে আসছিল, তখনই আমাদের দুজনের মাঝে নীতু কে দেখতে পেলাম । ভীষণ অবাক হয়ে একবার সোহেল কে দেখছে, একবার আমাকে । আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলাম। প্রথমে ভেবেছিলাম, সোহেলও নীতু কে দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু একটু পরেই আমার ভুল ভাঙলো । সোহেল ওকে দেখতে পেলে এত রোমান্টিক ভাবে আমার দিকে এগিয়ে আসতে পারতো না । আমি ভয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে গেলাম ।
সোহেল ভেবেছিল, আমি হয়তো মানসিক ভাবে প্রস্তুত নই। তাই এমন আচরণ করছি। সোহেল আমাকে বললো, " ভয় পেয়ো না তুলি। তুমি ইচ্ছা করলেই কিছু সময় নিতে পারো। তোমার আগের স্বামী কে হয়তো ভুলতে পারছো না । এ ব্যাপারে আমার কোন আপত্তি নেই । আমি অপেক্ষা করবো। " আমি কিছু বলতে পারলাম না । বলতে পারলাম না, আমি আমার আগের স্বামী কে ভুলে গেছি বলেই আবার বিয়ে করতে রাজি হয়েছি। আমার প্রাক্তন স্বামী রিপন পেশায় একজন ব্যাংকার ছিল। আমাদের প্রেমের বিয়ে ছিল। একই সাথে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি আমরা । পাশ করার পরই ওর ব্যাংক এ চাকরি হয়ে গেল । ওদের এলাকাতেই পোস্টিং হলো। বিয়েতে আমার বাবা, মা তেমন রাজি ছিল না । কারণ রিপনদের বাড়ি গ্রামে এবং অবস্থা খুব খারাপ ছিল । ভাই বোন গুলো শিক্ষিত ছিল না । আমাদের পারিবারিক অবস্থার সাথে ওদের ঠিক যায় না। কিন্তু আমি বাড়িতে জানিয়ে দিলাম, বিয়ে করলে আমি রিপনকেই করবো । বাধ্য হয়েই বাবা বিয়েতে রাজি হলো।
বিয়ের পরে রিপন আমাকে গ্রামের বাড়িতেই তুললো। ওদের বাড়ি থেকে শহরে রিপনের অফিসে যেতে ঘন্টা খানেক সময় লাগে । তাই আর শহরে বাসা ভাড়া নিলো না রিপন। গ্রাম্য পরিবেশে কষ্ট হচ্ছিলো, সেজন্য নয়। আসলে গ্রাম্য রাজনীতি তে আমি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। প্রতিদিন রিপন বাসায় ফিরলেই ওর মা এবং বোন ওকে ঘরে ডেকে নিয়ে আমার নামে যা ইচ্ছা তাই লাগাতো। আর রিপন ও তাদের কথা বিশ্বাস করে, আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতো। শহরের বড়লোক এর মেয়ে বিয়ে করে সে যে বউ এর গোলাম হয়ে যায়নি, এটা বোঝানোর জন্য মাঝে মাঝে গায়ে হাত ও তুলতো। আমি বাপের বাড়িতে যেয়ে সেসব বললে, সবাই বলতো, ' বিয়ের পরে সবকিছু মানিয়ে নিতে হয়। ' আমার নিজের কোন চাকরি ছিল না। তাই মুখ বুজে সহ্য করা ছাড়া উপায় ছিল না । প্রেমের বিয়ে বলেই বোধ হয়, মানসিক ভাবে বেশি ভেঙে পড়েছিলাম ।
একবার আমার বাবা এসেছিল, আমার শ্বশুর বাড়িতে। তার আগের দিন, রিপনের একটা চড়ে আমার ঠোঁট কেটে গিয়েছিল । ঠোট ভীষণ ফুলে ছিল। সেই বার বাবা নিজেই আমাকে ওখান থেকে নিয়ে চলে আসে। পরে রিপনের সাথে আমার ডিভোর্স হয়ে যায় । পরবর্তীতে আমি সরকারি প্রাইমারি স্কুলের চাকরিটা পাই। এর বছর খানেক পরেই সোহেলের সাথে বিয়ের এই প্রস্তাবটা, আমার ছোট ফুপি এনেছিল।
সোহেলের বউ ডা. নীতু, বছর খানেক হলো মারা গেছে । সুস্থ সবল মানুষটা । সাত বছরের একটা ছেলে ছিল । আর একটা বাচ্চার জন্য চেষ্টা করছিল। শেষে জরায়ুতে না হয়ে, জরায়ুর বাইরে কনসিভ করলো। অপারেশন টা সাধারণ ই ছিল। কিন্তু কেন জানি, বাঁচাতে পারেনি নীতু কে ।
নীতুর মৃত্যুর পর ছেলেটা তার নানির কাছে থাকে । ডা. সোহেল কে শহরের সবাই ভালো মানুষ হিসাবেই জানে । তার সাথে কথাবার্তা বলে, আমার ভালোই লাগলো। তাই বিয়েতে রাজি হয়ে গেলাম। কাজেই সোহেল যেটা চিন্তা করছে, সেটা মোটেও নয়। আমি রিপনের জন্য মন খারাপ করছি না । আমার ভূতের ভয় করছে। কিন্তু আমি সেটা লজ্জায় বলতে পারছি না । সে রাতে কোন রকমে গুটিশুটি মেরে আমি শুয়ে থাকলাম। চোখ বন্ধ করে আছি, কিন্তু সারারাত একফোঁটা ঘুম এলো না চোখে । কারণ অনুভব করতে পারছিলাম, আমাদের দুজনের মাঝে শুয়ে আছে নীতু !
পরের দিনও যেই বিছানায় শুতে যাবো, তখনই দেখি, নীতু আমার আগেই বিছানায় যেয়ে শুয়ে পড়লো। সোহেল তখনও রুমে আসেনি। আমার মনে হচ্ছিলো, নীতু আমাকে তার বিছানায় শুতে দিবে না । আমি ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলাম । সোহেল এসে, আমাকে এভাবে দাঁড়ানো দেখে খুব অবাক হলো। বললো,
- এখনও ঘুমাওনি ?
- না, ঘুম আসছে না । আমি আসলে এই খাটে ঘুমাতে চাচ্ছি না। তুমি যদি কিছু মনে না করো, তাহলে আমি এই সোফাতে ঘুমাতে চাই।
- তুলি, তুমি আমার ব্যাপারে নিশ্চিন্তে থাকো। তারপরও যদি তোমার আমার ব্যাপারে ভয় হয়, তাহলে আমি ই সোফা তে শুচ্ছি অথবা অন্য ঘরে যেয়ে শুচ্ছি।
- না না, অন্য ঘরে যেয়ো না প্লিজ । মানুষ দেখলে নানা রকম কথা বলবে। আর আমি এই খাটে আপাতত শুবো না। আমিই সোফা তে শুই। পরে যখন ইচ্ছা হবে, তখন খাটে চলে যাবো।
কেন জানি ঘুম আসে না চোখে । সোহেল কিছুই বুঝতে পারে না । কিন্তু আমি সারারাত দেখি, নীতু কি গভীর মমতা নিয়ে সারারাত তাকিয়ে থাকে সোহেলের দিকে।
ঘরের ওয়াশরুম টা ও আমি ব্যবহার করতে পারি না। বাড়ির অন্য কোন ওয়াশরুমে গেলে সমস্যা হয় না, কিন্তু আমাদের বেডরুমের ওয়াশরুম এ ঢুকলেই নীতু এসে দাঁড়িয়ে থাকে । বাধ্য হয়ে অন্যটায় যেতে হয় । আমার ড্রেসগুলো এখনও ঘরের আলমারিতে রাখতে পারিনি । মোট কথা নীতু তার ঘরে আমাকে প্রবেশ করতে দেবে না বলেই ঠিক করেছে মনে হয় । কিন্তু এ কথা আমি কাউকে বলতে ও পারছি না । সবাই যদি হাসা হাসি করে ? অথবা আমাকে পাগল ভাবে ? তবে আমার কপাল ভালো, সোহেল এখনও পর্যন্ত কোন সন্দেহ করেনি।
এভাবেই ছয় সাত দিন পার হয়ে গেল । সব কিছুই ঠিক আছে, শুধু ঐ ঘরটা তে আমার কোন অধিকার নেই । সোহেল খুব চায়, আমি তার কাছে যাবো । কিন্তু, আমি ভয়ে যেতে পারি না , সমস্যাটা ও বলতে পারি না ।
সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার । সোহেল জানালো, সে তার ছেলে কে দেখতে যাবে। প্রতি বৃহস্পতিবার বিকালে সে তার ছেলে আইয়ান এর সাথে দেখা করতে যায়। গত সপ্তাহে বিয়ের ঝামেলায় যেতে পারে নাই। আমি বললাম, " আমি ও তোমার সাথে যেতে চাই। " সোহেল একটু চিন্তায় পড়ে গেল । সম্ভবত আইয়ান কিভাবে রিয়াক্ট করে, সেটা নিয়ে সে চিন্তিত। ছোট বেলা থেকেই আমি বাচ্চা খুব পছন্দ করি। আর বাচ্চারাও কেন জানি, আমার সাথে সহজেই মিশে যায় । আমি সোহেল কে অভয় দান করলাম যে, কোন সমস্যা হবে না ।
যা ভেবেছিলাম, তাই হলো। আইয়ান সহজেই আমার সাথে মিশে গেল। আমি আইয়ান কে আমাদের সাথে বাড়ি নিয়ে আসার প্রস্তাব দিলাম। আইয়ান এর নানি প্রথমে রাজি হচ্ছিলো না। কিন্তু আইয়ান ই জোর করে আমাদের সাথে আসলো।
আমি আর আইয়ান দুজনে মিলে আবার আইয়ান এর ঘরটা গোছালাম। আসার পথে আইয়ান এর জন্য বেশ কিছু খেলনা কিনেছিলাম। দুজনে মিলে সেগুলো নিয়ে খেললাম। রাতে আইয়ান কে খাইয়ে দিয়ে, ওকে ঘুম পাড়িয়ে যখন রুমে আসলাম, তখন আমি বেশ ক্লান্ত । সোজা যেয়ে সোফায় শুয়ে পড়লাম ।
হঠাৎ করেই বিছানার দিকে নজর গেল । সোহেল ঘুমাচ্ছে। কিন্তু, সোহেলের পাশ থেকে নীতু কই গেল ?! ওয়াশরুমে ? হঠাৎ করেই দেহের ক্লান্তি চলে গেল । উঠে আস্তে আস্তে ওয়াশরুমের দিকে গেলাম। না তো ! ওয়াশরুমে ও নাই ! সাহস করে খাটের দিকে গেলাম। খাটে যেয়ে বসতেই সোহেলের ঘুম ভেঙে গেল । সোহেল অবাক হয়ে আমাকে দেখছে । আমার নজর দরজার দিকে গেল। দেখি, নীতু হাসছে। সোহেল খুব রোমান্টিক ভাবে আমার দিকে এগিয়ে আসছে । নীতু হাসতে হাসতে ই চলে গেল । আমি একবার সোহেল কে দেখছি আর একবার নীতুর চলে যাওয়া দেখছি । মন বলছে, নীতু আর আসবে না । এতদিন তবে আমাদের দুজনের মাঝে মধ্যবর্তিনী হয়ে কে ছিল ? নীতুর ভূত নাকি আমার বিবেক?
(সমাপ্ত)
ব্যাপারটা প্রথম খেয়াল করি, আমার বিয়ের রাতে। না, এটা আমার প্রথম বিয়ে না। এটা আমার দ্বিতীয় বিয়ে। আমার স্বামী ডা. সোহেলেরও এটা দ্বিতীয় বিয়ে। সোহেল যখন বাসর রাতে আমার কাছে আসছিল, ঠিক তখনই আমি ভূতটা দেখি। ভূত বলছি, কারণ ও সোহেলের মৃত স্ত্রী ডা. নীতু। যার ছবি আমি দেখেছি, বিয়ের আগেই। সোহেল ই দেখিয়েছে। না, সিনেমা নাটকে যেমন ভূত দেখা যায়, তেমন নয়। খুব সুন্দর একটা মেয়ে । নীতুর ছবি আমি প্রথম যেদিন দেখেছিলাম, সেদিন ই আমার একটু মন খারাপ হয়েছিল । মনে হয়েছিল, যার বউ এত সুন্দর ছিল, সে কি এত সহজেই আমাকে আপন ভাবতে পারবে ?!
তো যেটা বলছিলাম, সোহেল যখন আমার দিকে এগিয়ে আসছিল, তখনই আমাদের দুজনের মাঝে নীতু কে দেখতে পেলাম । ভীষণ অবাক হয়ে একবার সোহেল কে দেখছে, একবার আমাকে । আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলাম। প্রথমে ভেবেছিলাম, সোহেলও নীতু কে দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু একটু পরেই আমার ভুল ভাঙলো । সোহেল ওকে দেখতে পেলে এত রোমান্টিক ভাবে আমার দিকে এগিয়ে আসতে পারতো না । আমি ভয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে গেলাম ।
সোহেল ভেবেছিল, আমি হয়তো মানসিক ভাবে প্রস্তুত নই। তাই এমন আচরণ করছি। সোহেল আমাকে বললো, " ভয় পেয়ো না তুলি। তুমি ইচ্ছা করলেই কিছু সময় নিতে পারো। তোমার আগের স্বামী কে হয়তো ভুলতে পারছো না । এ ব্যাপারে আমার কোন আপত্তি নেই । আমি অপেক্ষা করবো। " আমি কিছু বলতে পারলাম না । বলতে পারলাম না, আমি আমার আগের স্বামী কে ভুলে গেছি বলেই আবার বিয়ে করতে রাজি হয়েছি। আমার প্রাক্তন স্বামী রিপন পেশায় একজন ব্যাংকার ছিল। আমাদের প্রেমের বিয়ে ছিল। একই সাথে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি আমরা । পাশ করার পরই ওর ব্যাংক এ চাকরি হয়ে গেল । ওদের এলাকাতেই পোস্টিং হলো। বিয়েতে আমার বাবা, মা তেমন রাজি ছিল না । কারণ রিপনদের বাড়ি গ্রামে এবং অবস্থা খুব খারাপ ছিল । ভাই বোন গুলো শিক্ষিত ছিল না । আমাদের পারিবারিক অবস্থার সাথে ওদের ঠিক যায় না। কিন্তু আমি বাড়িতে জানিয়ে দিলাম, বিয়ে করলে আমি রিপনকেই করবো । বাধ্য হয়েই বাবা বিয়েতে রাজি হলো।
বিয়ের পরে রিপন আমাকে গ্রামের বাড়িতেই তুললো। ওদের বাড়ি থেকে শহরে রিপনের অফিসে যেতে ঘন্টা খানেক সময় লাগে । তাই আর শহরে বাসা ভাড়া নিলো না রিপন। গ্রাম্য পরিবেশে কষ্ট হচ্ছিলো, সেজন্য নয়। আসলে গ্রাম্য রাজনীতি তে আমি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। প্রতিদিন রিপন বাসায় ফিরলেই ওর মা এবং বোন ওকে ঘরে ডেকে নিয়ে আমার নামে যা ইচ্ছা তাই লাগাতো। আর রিপন ও তাদের কথা বিশ্বাস করে, আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতো। শহরের বড়লোক এর মেয়ে বিয়ে করে সে যে বউ এর গোলাম হয়ে যায়নি, এটা বোঝানোর জন্য মাঝে মাঝে গায়ে হাত ও তুলতো। আমি বাপের বাড়িতে যেয়ে সেসব বললে, সবাই বলতো, ' বিয়ের পরে সবকিছু মানিয়ে নিতে হয়। ' আমার নিজের কোন চাকরি ছিল না। তাই মুখ বুজে সহ্য করা ছাড়া উপায় ছিল না । প্রেমের বিয়ে বলেই বোধ হয়, মানসিক ভাবে বেশি ভেঙে পড়েছিলাম ।
একবার আমার বাবা এসেছিল, আমার শ্বশুর বাড়িতে। তার আগের দিন, রিপনের একটা চড়ে আমার ঠোঁট কেটে গিয়েছিল । ঠোট ভীষণ ফুলে ছিল। সেই বার বাবা নিজেই আমাকে ওখান থেকে নিয়ে চলে আসে। পরে রিপনের সাথে আমার ডিভোর্স হয়ে যায় । পরবর্তীতে আমি সরকারি প্রাইমারি স্কুলের চাকরিটা পাই। এর বছর খানেক পরেই সোহেলের সাথে বিয়ের এই প্রস্তাবটা, আমার ছোট ফুপি এনেছিল।
সোহেলের বউ ডা. নীতু, বছর খানেক হলো মারা গেছে । সুস্থ সবল মানুষটা । সাত বছরের একটা ছেলে ছিল । আর একটা বাচ্চার জন্য চেষ্টা করছিল। শেষে জরায়ুতে না হয়ে, জরায়ুর বাইরে কনসিভ করলো। অপারেশন টা সাধারণ ই ছিল। কিন্তু কেন জানি, বাঁচাতে পারেনি নীতু কে ।
নীতুর মৃত্যুর পর ছেলেটা তার নানির কাছে থাকে । ডা. সোহেল কে শহরের সবাই ভালো মানুষ হিসাবেই জানে । তার সাথে কথাবার্তা বলে, আমার ভালোই লাগলো। তাই বিয়েতে রাজি হয়ে গেলাম। কাজেই সোহেল যেটা চিন্তা করছে, সেটা মোটেও নয়। আমি রিপনের জন্য মন খারাপ করছি না । আমার ভূতের ভয় করছে। কিন্তু আমি সেটা লজ্জায় বলতে পারছি না । সে রাতে কোন রকমে গুটিশুটি মেরে আমি শুয়ে থাকলাম। চোখ বন্ধ করে আছি, কিন্তু সারারাত একফোঁটা ঘুম এলো না চোখে । কারণ অনুভব করতে পারছিলাম, আমাদের দুজনের মাঝে শুয়ে আছে নীতু !
পরের দিনও যেই বিছানায় শুতে যাবো, তখনই দেখি, নীতু আমার আগেই বিছানায় যেয়ে শুয়ে পড়লো। সোহেল তখনও রুমে আসেনি। আমার মনে হচ্ছিলো, নীতু আমাকে তার বিছানায় শুতে দিবে না । আমি ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলাম । সোহেল এসে, আমাকে এভাবে দাঁড়ানো দেখে খুব অবাক হলো। বললো,
- এখনও ঘুমাওনি ?
- না, ঘুম আসছে না । আমি আসলে এই খাটে ঘুমাতে চাচ্ছি না। তুমি যদি কিছু মনে না করো, তাহলে আমি এই সোফাতে ঘুমাতে চাই।
- তুলি, তুমি আমার ব্যাপারে নিশ্চিন্তে থাকো। তারপরও যদি তোমার আমার ব্যাপারে ভয় হয়, তাহলে আমি ই সোফা তে শুচ্ছি অথবা অন্য ঘরে যেয়ে শুচ্ছি।
- না না, অন্য ঘরে যেয়ো না প্লিজ । মানুষ দেখলে নানা রকম কথা বলবে। আর আমি এই খাটে আপাতত শুবো না। আমিই সোফা তে শুই। পরে যখন ইচ্ছা হবে, তখন খাটে চলে যাবো।
কেন জানি ঘুম আসে না চোখে । সোহেল কিছুই বুঝতে পারে না । কিন্তু আমি সারারাত দেখি, নীতু কি গভীর মমতা নিয়ে সারারাত তাকিয়ে থাকে সোহেলের দিকে।
ঘরের ওয়াশরুম টা ও আমি ব্যবহার করতে পারি না। বাড়ির অন্য কোন ওয়াশরুমে গেলে সমস্যা হয় না, কিন্তু আমাদের বেডরুমের ওয়াশরুম এ ঢুকলেই নীতু এসে দাঁড়িয়ে থাকে । বাধ্য হয়ে অন্যটায় যেতে হয় । আমার ড্রেসগুলো এখনও ঘরের আলমারিতে রাখতে পারিনি । মোট কথা নীতু তার ঘরে আমাকে প্রবেশ করতে দেবে না বলেই ঠিক করেছে মনে হয় । কিন্তু এ কথা আমি কাউকে বলতে ও পারছি না । সবাই যদি হাসা হাসি করে ? অথবা আমাকে পাগল ভাবে ? তবে আমার কপাল ভালো, সোহেল এখনও পর্যন্ত কোন সন্দেহ করেনি।
এভাবেই ছয় সাত দিন পার হয়ে গেল । সব কিছুই ঠিক আছে, শুধু ঐ ঘরটা তে আমার কোন অধিকার নেই । সোহেল খুব চায়, আমি তার কাছে যাবো । কিন্তু, আমি ভয়ে যেতে পারি না , সমস্যাটা ও বলতে পারি না ।
সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার । সোহেল জানালো, সে তার ছেলে কে দেখতে যাবে। প্রতি বৃহস্পতিবার বিকালে সে তার ছেলে আইয়ান এর সাথে দেখা করতে যায়। গত সপ্তাহে বিয়ের ঝামেলায় যেতে পারে নাই। আমি বললাম, " আমি ও তোমার সাথে যেতে চাই। " সোহেল একটু চিন্তায় পড়ে গেল । সম্ভবত আইয়ান কিভাবে রিয়াক্ট করে, সেটা নিয়ে সে চিন্তিত। ছোট বেলা থেকেই আমি বাচ্চা খুব পছন্দ করি। আর বাচ্চারাও কেন জানি, আমার সাথে সহজেই মিশে যায় । আমি সোহেল কে অভয় দান করলাম যে, কোন সমস্যা হবে না ।
যা ভেবেছিলাম, তাই হলো। আইয়ান সহজেই আমার সাথে মিশে গেল। আমি আইয়ান কে আমাদের সাথে বাড়ি নিয়ে আসার প্রস্তাব দিলাম। আইয়ান এর নানি প্রথমে রাজি হচ্ছিলো না। কিন্তু আইয়ান ই জোর করে আমাদের সাথে আসলো।
আমি আর আইয়ান দুজনে মিলে আবার আইয়ান এর ঘরটা গোছালাম। আসার পথে আইয়ান এর জন্য বেশ কিছু খেলনা কিনেছিলাম। দুজনে মিলে সেগুলো নিয়ে খেললাম। রাতে আইয়ান কে খাইয়ে দিয়ে, ওকে ঘুম পাড়িয়ে যখন রুমে আসলাম, তখন আমি বেশ ক্লান্ত । সোজা যেয়ে সোফায় শুয়ে পড়লাম ।
হঠাৎ করেই বিছানার দিকে নজর গেল । সোহেল ঘুমাচ্ছে। কিন্তু, সোহেলের পাশ থেকে নীতু কই গেল ?! ওয়াশরুমে ? হঠাৎ করেই দেহের ক্লান্তি চলে গেল । উঠে আস্তে আস্তে ওয়াশরুমের দিকে গেলাম। না তো ! ওয়াশরুমে ও নাই ! সাহস করে খাটের দিকে গেলাম। খাটে যেয়ে বসতেই সোহেলের ঘুম ভেঙে গেল । সোহেল অবাক হয়ে আমাকে দেখছে । আমার নজর দরজার দিকে গেল। দেখি, নীতু হাসছে। সোহেল খুব রোমান্টিক ভাবে আমার দিকে এগিয়ে আসছে । নীতু হাসতে হাসতে ই চলে গেল । আমি একবার সোহেল কে দেখছি আর একবার নীতুর চলে যাওয়া দেখছি । মন বলছে, নীতু আর আসবে না । এতদিন তবে আমাদের দুজনের মাঝে মধ্যবর্তিনী হয়ে কে ছিল ? নীতুর ভূত নাকি আমার বিবেক?
(সমাপ্ত)