মুল লেখক ফেরদৌস সাগরের অনুমতিক্রমে প্রকাশিত
আমি ফেরদৌস।
জন্ম বাংলাদেশে হলেও বেড়ে ওঠা নেদারল্যান্ডসে। বাংলা-সাহিত্যে পড়াশুনা করা মায়ের কারণে বাংলা ভাষায় কখনো পিছিয়ে যাইনি। আমি পড়াশুনা করা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু পেশায় ফটোগ্রাফার। দেশ-বিদেশের নানা প্রান্তে আমার বিচরণ, নানা রঙের, নানা ঢঙের মানুষের সাথে আমার ওঠবস।
এই জীবনের বাইরেও আমি একজন অকেশনাল সাইকোলজিষ্ট এবং প্যারানরমাল-রিসার্চার, কাউন্সেলর ও এক্টিভিষ্ট।
এই সূত্র ধরেই পরিচয় প্রিয়াসীর সাথে। ইটালিতে থাকতেন স্বামীর সাথে। স্বামীর ব্যবসা ফুলে-ফেঁপে বড় হবার দরুন স্বামী তার ব্যবসা জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসেও বিস্তৃত করেন। ফ্যামিলি বিজনেস আরকি! পরে ইটালির ব্যবসা গুটিয়ে আনেন সেখানকার অর্থনৈতিক মন্দার কারণে। এরপর এখানে এসে মানে নেদারল্যান্ডসে বসবাস শুরু করেন।
প্রিয়াসীর শাশুড়ি কখনোই যে বউমাকে পছন্দ করতেন না সে কথা সকলেরই জানা। কারণ প্রিয়াসী দেখতে খাটো। বিয়ের সময় থেকেই এই সমস্যা। পরিবার মিলে ওকে দেখতে গেলে সৌরভ পছন্দ করলেও মেয়ে খাটো বলে মা রাজি হয়নি। একরকম মায়ের বিরুদ্ধে গিয়েই ওকে বিয়ে করা। তার মা সেকেলে ধ্যানধারণায় বিশ্বাসী। খাটো মেয়ে পরিবারের জন্য অমংগল বয়ে আনে এমন মানসিকতার মানুষ সে।
বনেদী উচ্চশিক্ষিত হিন্দু পরিবারের মেয়ে প্রিয়াসী। পড়াশুনা করেছেন ঢাবি'তে। সে বা তার পরিবার এসব কুসংস্কার কিংবা সেকেলে ধ্যানধারণায় বিশ্বাসী নয়। বিয়ের পরে বেশ কয়েক মাস প্রিয়াসী বাংলাদেশে থাকে। এই সময়ে সে বুঝতে পারে যে সে তার শাশুড়ির আপন কখনই হয়তো হতে পারবেনা। অনেক চেষ্টা করেছে শাশুড়ির মন জয়ের। কিন্তু তাতে বরং হিতে বিপরীরই হয়েছে। এমন অপবাদও তাকে শুনতে হয়েছে - বিষ মিশিয়ে প্রিয়াসী নাকি শাশুড়িকে মারতে চেয়েছে!
এই ঘটনার পরপরই সৌরভ ওকে ইটালিতে নিয়ে আসে। সে তার মা'কে চেনে। জানে বউ ওখানে থাকলে বউ টিকবে না।
দেশ ছাড়ার আগ দিয়েই প্রিয়াসী অসুস্থ হতে থাকে। ডাক্তারে বলেছে মানসিক সমস্যা। রোগ ধরতে পারেনি আসলে। যাইহোক, অনেক ঔষধ-পাতি খেয়েও কোনো লাভ হয়না। সৌরভ দেশে আসে ওকে নিয়ে যাবার জন্যে। আসার আগে ওকে অনেক হুজুর-কবিরাজ দেখায়। এসবের পেছনে শুধু কাড়ি কাড়ি টাকায় যায়।
অবশেষে ও চলে আসে ইটালিতে। ওখানেও অনেক নামকরা ডাক্তার দেখালেও কোনো উন্নতি হয়না। ওর মাথার চুল পুরোই ঝরে পড়ে, শরীরের অধিকাংশ স্থানে ফোসকা, চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া ইত্যাদি!
কত শত চেক-আপ আর হাজার হাজার ইউরোর খরচা! ফলাফল শূণ্য। মৃত্যুর খাতায় নাম লেখাতে যাওয়া প্রিয়াসীর জীবনে অবশেষে দেবদূতের মত হাজির জন বিলকিস নামের বাংলা কমিউনিটির এক মেয়ে। কলকাতার মেয়ে বিলকিস। ইটালিতে পড়াশুনা করে মাষ্টার্স প্রোগ্রামে। ভারতে থাকতে সে তার কোনো এক দাদুর কাছ থেকে সাদা-জাদুর হাতেখড়ি পেয়েছিলেন। কালো-জাদুর প্রভাব নষ্ট করতে প্রয়োজন সাদা-জাদু।
তো বিলকিসই একদিন প্রিয়াসীকে দেখতে আসে। বাংলা-কমিউনিটিতে প্রিয়াসীর কথা জনে জনে শুনে কেন জানি ওর মনে হতে থাকে যেহুতু চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর কোনো সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না, এমনও তো হতে পারে যে ওকে কালোজাদু বা বান মারা হয়েছে!
সৌরভ আর প্রিয়াসীকে জিজ্ঞস করা হয় তাদের কোনো শত্রু আছে কিনা যে শত্রুতাবশত কোনো ক্ষতি করতে পারে বলে মনে হয়? ওদের জানা মতে সেরকম কেউ না থাকায় তৎক্ষনাৎ না বললেও কিছু সময় পরে গিয়ে সৌরভ নিজের থেকেই বলে যে হ্যাঁ, আছে, আমার মা। আমার মা আমার বউকে পছন্দ করেনা প্রথম থেকেই। আর আমার মা বহু আগে থেকেই কবিরাজ-বাড়ি যেত। জানিনা কি করতো, কিন্তু আমাদেরকে বলতো, কবিরাজ বাবার আশির্বাদ আনতে যেত নাকি! কিন্তু আমার কাছে সারাজীবন সেটা অধরাই রয়ে যায়।
একটা কাকতালীয় ঘটনা প্রিয়াসীকে বাচিঁয়ে দেয়। বিলকিস যখন ওদের কথা শুনছিল, ওর হাতের কাছে ছিল প্রিয়াসীর সিদুঁরদানী। হঠাৎ করে ও খেয়াল করে যে ঐ সিদুঁরদানীর ঢাকনি, দানীর যে অংশের সাথে লেগে থাকে, তার দুই পাশের মুখদুটো মোম দিয়ে আটকানো।
কি মনে করে বিলকিস ঐ মোম নখ দিয়ে খোলার ট্রাই করে। সেটা দেখে প্রিয়াসী বিলকিস কে বলে, কি করছেন আপনি? ওটা আমার শাশুড়ির দেয়া উপহার। আমি যখন দেশ ছেড়েছিলাম আমাকে দিয়েছিলেন ওটা।
বিলকিস বলে, সেটাই তো দেখতে পাচ্ছি। সৌরভ কে একটা সুচঁ দিতে বলে ও।
সুচঁ দিয়ে মোম বের করা হলে সেখান থেকে একটা ছোট্ট টিকটিকির লেজ বের করা হয়। সেটা দেখে সৌরভ আর প্রিয়াসী আতঁকে ওঠে। তখন বিলকিস বলে আতঁকে ওঠার এখনো কিছু দেখেননি। যা বুঝছি তা হলো, এমন আরো কিছু আছে। আচ্ছা প্রিয়াসী আপনার মাথায় যে সিদুঁর এটা কি এটার। উত্তর আসে হ্যাঁ।
এবার সে একটা শুকনো বাটিঁ আনতে বলে, তাকে বাটিঁ দেয়া হলে সব সিদুঁর সেখানে ঢালে আর বলে, দেখুন আমি মুসলিম পরিবারে জন্ম নিলেও হিন্দুস্তানের মেয়ে আমি। আমার চারিপাশে কিন্তু হিন্দুরই বাস। তো আমি কিন্তু খুব ভালো করেই সিদুঁর চিনি। এই দেখুন তো, এর মধ্যে এগুলো কি? এই বলে সে সৌরভ আর প্রিয়াসীকে সিদুঁর এর মধ্যে থাকা কিছু হালকা কালো জিনিস দেখায়।
ওরা জিজ্ঞেস করে, এগুলো কি?
বিলকিস জবাব দেয়, এলাচ এর ভেতরে থাকা কালো অংশের ক্ষুদ্র গুড়ো। লাল রঙ দিয়ে মিশিয়ে পরে আবার সিদুঁরের সাথে মেশানো হয়েছে!
এরপরে বিলকিস জানতে চায় আর কি কি গিফট দেয়া হয়েছিল আপনার শাশুডির পক্ষ থেকে? সেগুলো একটু আমার সামনে আনুন।
আনা হয় সাবান, শ্যাম্পু, পারফিউম, বডি স্প্রে, দুইটা দামী শাড়ি, অনেক চুড়ি, একটা পায়ের নুপুর, চোখের কাজল সহ আরো অনেক কিছুই।
বিলকিস এবার ওদের দুজন কে বলে, শুনুন প্রিয়াসী, আপনার ওপর অমাবস্যার শয়তান বা ইফরিৎ এর সাহায্য নিয়ে কালোজাদু করা হয়েছে। ইফরিৎ শয়তান জ্বীনের অন্তর্গত। এরা খুব বেশি শক্তিশালী। আপনি বা আপনারা কি এগুলোতে বিশ্বাস করেন, মানে এসব কালোজাদু, জ্বীন-ভূতে?
সৌরভ বিশ্বাস করে আর প্রিয়াসী আংশিকভাবে বিশ্বাস করে!
কোন দ্রব্য দিয়ে কি জাদু করা হয়েছে, কিভাবে করা হয়েছে - তা জানার আগে আমরা একটু বিলকিসের জীবনে ঘটা কিছু ঘটনা জেনে আসি। বিলকিসের কথা আমি ২০১৭ সালে জানি প্রিয়াসীর এই গল্প শোনার মাধ্যমে। বিলকিসের সাথে সেবছরই দেখা করে আসি ইটালিতে।
আগেই বলেছি বিলকিস কোলকাতার মেয়ে। বিলকিস কেন এবং কিভাবে জাদুবিদ্যার ওপর আগ্রহী হয়ে উঠেছিল সে গল্পটাই আজ বলবো। এর সাথে করে আরো জানা যাবে সাদা এবং কালো-জাদু উভয় জাদু সম্বন্ধে অনেক অজানা তথ্য।
খুব ছোট থাকতেই বিলকিসের মা মারা যায়। ও শুনতো যে ওর মা'কে নাকি ওরই ফুপু বান মেরেছে। ধীরে ধীরে ও বড় হতে থাকে। প্রতিশোধপরায়ণ আত্না সবসময় চাইতো ফুপুকে শেষ করে ফেলার জন্য। কিন্তু কিভাবে? কথায় আছে, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। স্কুলে গ্রেড টেনে থাকতে একদিন স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে ব্যস্ত রাস্তার পাশে এক ফকির ওকে ডাকে। ডেকে বলে, তোর মধ্যে সেই শক্তি দেখতে পাই যা আজো দেখিনি। তুইই পারবি সব অনিষ্ট শক্তির বিরুদ্ধে ঢাল হয়ে দাড়াঁতে। তোর চওড়া কপাল বলে তোর জন্ম পূর্ণ চন্দ্রগহণের মধ্যখানে। তোর মা ছিল যোদ্ধা।
আমি ফেরদৌস।
জন্ম বাংলাদেশে হলেও বেড়ে ওঠা নেদারল্যান্ডসে। বাংলা-সাহিত্যে পড়াশুনা করা মায়ের কারণে বাংলা ভাষায় কখনো পিছিয়ে যাইনি। আমি পড়াশুনা করা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু পেশায় ফটোগ্রাফার। দেশ-বিদেশের নানা প্রান্তে আমার বিচরণ, নানা রঙের, নানা ঢঙের মানুষের সাথে আমার ওঠবস।
এই জীবনের বাইরেও আমি একজন অকেশনাল সাইকোলজিষ্ট এবং প্যারানরমাল-রিসার্চার, কাউন্সেলর ও এক্টিভিষ্ট।
এই সূত্র ধরেই পরিচয় প্রিয়াসীর সাথে। ইটালিতে থাকতেন স্বামীর সাথে। স্বামীর ব্যবসা ফুলে-ফেঁপে বড় হবার দরুন স্বামী তার ব্যবসা জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসেও বিস্তৃত করেন। ফ্যামিলি বিজনেস আরকি! পরে ইটালির ব্যবসা গুটিয়ে আনেন সেখানকার অর্থনৈতিক মন্দার কারণে। এরপর এখানে এসে মানে নেদারল্যান্ডসে বসবাস শুরু করেন।
প্রিয়াসীর শাশুড়ি কখনোই যে বউমাকে পছন্দ করতেন না সে কথা সকলেরই জানা। কারণ প্রিয়াসী দেখতে খাটো। বিয়ের সময় থেকেই এই সমস্যা। পরিবার মিলে ওকে দেখতে গেলে সৌরভ পছন্দ করলেও মেয়ে খাটো বলে মা রাজি হয়নি। একরকম মায়ের বিরুদ্ধে গিয়েই ওকে বিয়ে করা। তার মা সেকেলে ধ্যানধারণায় বিশ্বাসী। খাটো মেয়ে পরিবারের জন্য অমংগল বয়ে আনে এমন মানসিকতার মানুষ সে।
বনেদী উচ্চশিক্ষিত হিন্দু পরিবারের মেয়ে প্রিয়াসী। পড়াশুনা করেছেন ঢাবি'তে। সে বা তার পরিবার এসব কুসংস্কার কিংবা সেকেলে ধ্যানধারণায় বিশ্বাসী নয়। বিয়ের পরে বেশ কয়েক মাস প্রিয়াসী বাংলাদেশে থাকে। এই সময়ে সে বুঝতে পারে যে সে তার শাশুড়ির আপন কখনই হয়তো হতে পারবেনা। অনেক চেষ্টা করেছে শাশুড়ির মন জয়ের। কিন্তু তাতে বরং হিতে বিপরীরই হয়েছে। এমন অপবাদও তাকে শুনতে হয়েছে - বিষ মিশিয়ে প্রিয়াসী নাকি শাশুড়িকে মারতে চেয়েছে!
এই ঘটনার পরপরই সৌরভ ওকে ইটালিতে নিয়ে আসে। সে তার মা'কে চেনে। জানে বউ ওখানে থাকলে বউ টিকবে না।
দেশ ছাড়ার আগ দিয়েই প্রিয়াসী অসুস্থ হতে থাকে। ডাক্তারে বলেছে মানসিক সমস্যা। রোগ ধরতে পারেনি আসলে। যাইহোক, অনেক ঔষধ-পাতি খেয়েও কোনো লাভ হয়না। সৌরভ দেশে আসে ওকে নিয়ে যাবার জন্যে। আসার আগে ওকে অনেক হুজুর-কবিরাজ দেখায়। এসবের পেছনে শুধু কাড়ি কাড়ি টাকায় যায়।
অবশেষে ও চলে আসে ইটালিতে। ওখানেও অনেক নামকরা ডাক্তার দেখালেও কোনো উন্নতি হয়না। ওর মাথার চুল পুরোই ঝরে পড়ে, শরীরের অধিকাংশ স্থানে ফোসকা, চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া ইত্যাদি!
কত শত চেক-আপ আর হাজার হাজার ইউরোর খরচা! ফলাফল শূণ্য। মৃত্যুর খাতায় নাম লেখাতে যাওয়া প্রিয়াসীর জীবনে অবশেষে দেবদূতের মত হাজির জন বিলকিস নামের বাংলা কমিউনিটির এক মেয়ে। কলকাতার মেয়ে বিলকিস। ইটালিতে পড়াশুনা করে মাষ্টার্স প্রোগ্রামে। ভারতে থাকতে সে তার কোনো এক দাদুর কাছ থেকে সাদা-জাদুর হাতেখড়ি পেয়েছিলেন। কালো-জাদুর প্রভাব নষ্ট করতে প্রয়োজন সাদা-জাদু।
তো বিলকিসই একদিন প্রিয়াসীকে দেখতে আসে। বাংলা-কমিউনিটিতে প্রিয়াসীর কথা জনে জনে শুনে কেন জানি ওর মনে হতে থাকে যেহুতু চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর কোনো সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না, এমনও তো হতে পারে যে ওকে কালোজাদু বা বান মারা হয়েছে!
সৌরভ আর প্রিয়াসীকে জিজ্ঞস করা হয় তাদের কোনো শত্রু আছে কিনা যে শত্রুতাবশত কোনো ক্ষতি করতে পারে বলে মনে হয়? ওদের জানা মতে সেরকম কেউ না থাকায় তৎক্ষনাৎ না বললেও কিছু সময় পরে গিয়ে সৌরভ নিজের থেকেই বলে যে হ্যাঁ, আছে, আমার মা। আমার মা আমার বউকে পছন্দ করেনা প্রথম থেকেই। আর আমার মা বহু আগে থেকেই কবিরাজ-বাড়ি যেত। জানিনা কি করতো, কিন্তু আমাদেরকে বলতো, কবিরাজ বাবার আশির্বাদ আনতে যেত নাকি! কিন্তু আমার কাছে সারাজীবন সেটা অধরাই রয়ে যায়।
একটা কাকতালীয় ঘটনা প্রিয়াসীকে বাচিঁয়ে দেয়। বিলকিস যখন ওদের কথা শুনছিল, ওর হাতের কাছে ছিল প্রিয়াসীর সিদুঁরদানী। হঠাৎ করে ও খেয়াল করে যে ঐ সিদুঁরদানীর ঢাকনি, দানীর যে অংশের সাথে লেগে থাকে, তার দুই পাশের মুখদুটো মোম দিয়ে আটকানো।
কি মনে করে বিলকিস ঐ মোম নখ দিয়ে খোলার ট্রাই করে। সেটা দেখে প্রিয়াসী বিলকিস কে বলে, কি করছেন আপনি? ওটা আমার শাশুড়ির দেয়া উপহার। আমি যখন দেশ ছেড়েছিলাম আমাকে দিয়েছিলেন ওটা।
বিলকিস বলে, সেটাই তো দেখতে পাচ্ছি। সৌরভ কে একটা সুচঁ দিতে বলে ও।
সুচঁ দিয়ে মোম বের করা হলে সেখান থেকে একটা ছোট্ট টিকটিকির লেজ বের করা হয়। সেটা দেখে সৌরভ আর প্রিয়াসী আতঁকে ওঠে। তখন বিলকিস বলে আতঁকে ওঠার এখনো কিছু দেখেননি। যা বুঝছি তা হলো, এমন আরো কিছু আছে। আচ্ছা প্রিয়াসী আপনার মাথায় যে সিদুঁর এটা কি এটার। উত্তর আসে হ্যাঁ।
এবার সে একটা শুকনো বাটিঁ আনতে বলে, তাকে বাটিঁ দেয়া হলে সব সিদুঁর সেখানে ঢালে আর বলে, দেখুন আমি মুসলিম পরিবারে জন্ম নিলেও হিন্দুস্তানের মেয়ে আমি। আমার চারিপাশে কিন্তু হিন্দুরই বাস। তো আমি কিন্তু খুব ভালো করেই সিদুঁর চিনি। এই দেখুন তো, এর মধ্যে এগুলো কি? এই বলে সে সৌরভ আর প্রিয়াসীকে সিদুঁর এর মধ্যে থাকা কিছু হালকা কালো জিনিস দেখায়।
ওরা জিজ্ঞেস করে, এগুলো কি?
বিলকিস জবাব দেয়, এলাচ এর ভেতরে থাকা কালো অংশের ক্ষুদ্র গুড়ো। লাল রঙ দিয়ে মিশিয়ে পরে আবার সিদুঁরের সাথে মেশানো হয়েছে!
এরপরে বিলকিস জানতে চায় আর কি কি গিফট দেয়া হয়েছিল আপনার শাশুডির পক্ষ থেকে? সেগুলো একটু আমার সামনে আনুন।
আনা হয় সাবান, শ্যাম্পু, পারফিউম, বডি স্প্রে, দুইটা দামী শাড়ি, অনেক চুড়ি, একটা পায়ের নুপুর, চোখের কাজল সহ আরো অনেক কিছুই।
বিলকিস এবার ওদের দুজন কে বলে, শুনুন প্রিয়াসী, আপনার ওপর অমাবস্যার শয়তান বা ইফরিৎ এর সাহায্য নিয়ে কালোজাদু করা হয়েছে। ইফরিৎ শয়তান জ্বীনের অন্তর্গত। এরা খুব বেশি শক্তিশালী। আপনি বা আপনারা কি এগুলোতে বিশ্বাস করেন, মানে এসব কালোজাদু, জ্বীন-ভূতে?
সৌরভ বিশ্বাস করে আর প্রিয়াসী আংশিকভাবে বিশ্বাস করে!
কোন দ্রব্য দিয়ে কি জাদু করা হয়েছে, কিভাবে করা হয়েছে - তা জানার আগে আমরা একটু বিলকিসের জীবনে ঘটা কিছু ঘটনা জেনে আসি। বিলকিসের কথা আমি ২০১৭ সালে জানি প্রিয়াসীর এই গল্প শোনার মাধ্যমে। বিলকিসের সাথে সেবছরই দেখা করে আসি ইটালিতে।
আগেই বলেছি বিলকিস কোলকাতার মেয়ে। বিলকিস কেন এবং কিভাবে জাদুবিদ্যার ওপর আগ্রহী হয়ে উঠেছিল সে গল্পটাই আজ বলবো। এর সাথে করে আরো জানা যাবে সাদা এবং কালো-জাদু উভয় জাদু সম্বন্ধে অনেক অজানা তথ্য।
খুব ছোট থাকতেই বিলকিসের মা মারা যায়। ও শুনতো যে ওর মা'কে নাকি ওরই ফুপু বান মেরেছে। ধীরে ধীরে ও বড় হতে থাকে। প্রতিশোধপরায়ণ আত্না সবসময় চাইতো ফুপুকে শেষ করে ফেলার জন্য। কিন্তু কিভাবে? কথায় আছে, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। স্কুলে গ্রেড টেনে থাকতে একদিন স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে ব্যস্ত রাস্তার পাশে এক ফকির ওকে ডাকে। ডেকে বলে, তোর মধ্যে সেই শক্তি দেখতে পাই যা আজো দেখিনি। তুইই পারবি সব অনিষ্ট শক্তির বিরুদ্ধে ঢাল হয়ে দাড়াঁতে। তোর চওড়া কপাল বলে তোর জন্ম পূর্ণ চন্দ্রগহণের মধ্যখানে। তোর মা ছিল যোদ্ধা।