মিস্টি
–‘কী হল? কিছু বলছ না যে? বাড়তি একজনের রান্না করতে নিশ্চয়ই অসুবিধে হবে না তোমার?’
-‘তুমি যা বলেছ তাই তো মেনে নিয়েছি। আমি আপত্তি করলেই কি শুনবে তুমি? আমি তো প্রথমেই বলেছিলাম এ বাড়িতে ভাড়াটে এনো না। মানলে কি তুমি? এখন আবার সংসারের মধ্যে ঢোকাতে চাইছ। এরপর প্রাইভেসি বলে কিছু থাকবে আমাদের?’
-‘না, তুমি সত্যি রেগে গেছ। ভাড়াটে বলছ কেন? রাহুলের বাবা একসময় আমার অনেক উপকার করেছিলেন। রাহুলের এখানে বছরখানেকের ট্রেনিং। আর ব্যাচেলর ছেলেদের জন্যে ঘরভাড়া পাওয়াও মুসকিল। এ অবস্থায় আমি না বলি কী করে? আর একটা কথা ভেবেছ সীমা, এতে আমাদেরও স্বার্থ আছে।’
-‘আমাদের স্বার্থ?’
-‘হ্যা, গত এক মাসের মধ্যে আমাকে ট্যুরে যেতে হয়নি বলে ব্যাপারটা বুঝতে পারো নি। দিন পনের পরে আমাকে বেরোতে হবে। প্রথমে টানা পাঁচদিন, তারপরে একদিন দুদিন করে। বল সীমা, পাঁচদিন তোমাকে এ বাড়িতে একা রেখে যাব কোন ভরষায়?’
সীমা মানসের কাছে এসে ওর কাঁধে হাত রাখল। এর চোখে মুখে আসন্ন বিচ্ছেদ বেদনার আভাস। বলল-‘তুমি তাহলে এরপর থেকে এমনি ট্যুরই করে যাবে? তোমাকে বিয়ের আগে বলেছিলাম না এই চাকরীটা ছেড়ে দিতে?’
-‘ছাড়ব, শীগগিরই ছাড়ব,’ মানস সীমার হাতটা ধরে আশ্বাস দেবার চেষ্টা করল,-‘কিন্তু ভালো কিছু একটা পেতে হবে তো? আচ্ছা, একটা কথা ভাবো, রাহুল আজ প্রায় একমাস হল এসেছে, তুমি একদিনও ওর সাথে ভালো করে কথা বল নি, বোধহয় আমার উপর রাগ করেই। প্লীজ সীমা, রাহুলের সাথে একটু মিশে দেখ, দেখবে ছেলেটা খুবই ভালো। যদি ওর সম্বন্ধে তেমন কোন অভিযোগ থাকে, আমি কথা দিচ্ছি ওকে অন্য কোথাও শিফ্ট করার ব্যাবস্থা করব।’
সীমা একটু নরম হল মানসের কথায়। বলল,-‘ঠিক আছে, এরপর থেকে আমি চেষ্টা করব। তুমি তো আগে এসব কথা বল নি। আচ্ছা, ছেলেটা কেমন গো?’
সীমার কথার সুরে ভরষা পেল মানস। সীমাকে হালকা আদর করতে করতে বলল,-‘রাহুল খুব ভালো ছেলে। শিশুর মত সরল ওর মনটা। ওকে কেউ একটু ভালোবাসলে ও তার জন্যে জীবন দিয়ে দিতে পারে। আচ্ছা আজ রাত থেকে ওকে খেতে বলব কি?’
-‘আমার কোন অসুবিধে হবে না গো,’-সীমা আশ্বাস দিল,-‘ওবেলায় তো একটু বেশীই রান্না করা আছে। খাবার আগে বলবে, গরম করে দেব।’
************