What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected সেই হাসিটা (1 Viewer)

Feedback2009

New Member
Joined
Nov 19, 2019
Threads
30
Messages
30
Credits
632
ছোট বেলা থেকেই আমি একা থাকতে ভালবাসি।
হৈ – হুল্লোড় চেঁচামেচি এসব একদম ভালো লাগে না।আর হোস্টেলে বড় হবার কারণে, নিজের কাজগুলো গুছিয়ে করার অভ্যেসটাও আছে।অদ্ভুত ব্যাপার হলো, আমার যে দুজন ঘনিষ্ট বন্ধু – ইমন এবং জন ; ওরা ছিল আমার সম্পূর্ণ বিপরীত চরিত্রের।তবে, বাহ্যিক আচরণগত দিক থেকে যতই অমিল থাকুক না কেন আমাদের মনের মিল ছিল অনেক বেশি।ইমন একদিন ঠাট্টার ছলে আমায় বলেছিলো,
– শৌমিক, আমার কেন জানি মনে হয় আমাদের মতোই এমন কোন হুল্লোড়বাজ…. ইয়ে মানে মেয়েদের ক্ষেত্রে এই ধরনের শব্দ চয়ন একটু দৃষ্টিকটু দেখায়।হুম, চঞ্চলমনা বললে ঠিক হবে।এমন চঞ্চলমনা কেউই হবে তোর জীবনসঙ্গী।ভাবছিস, কেন বলছি এ কথা ? জানিস তো, ইলেকট্রন প্রোটনকে আর্কষণ করে।
ওর কথা শুনে আমি নিঃশব্দে হেসেছিলাম শুধু।একবারের জন্যেও মনে হয়নি, কথাগুলো পুরোপুরি বাস্তবে রূপ নেবে।এমনকি, যেদিন তোমার সাথে প্রথমবার দেখা হয়েছিলো সেদিনও না।
কি ভাবছো, ভুলে গিয়েছি ! আমাদের সেই প্রথম দিনের স্মৃতি !
ভুলে যেও না, তোমার চেয়ে আমার স্মৃতিশক্তি বরাবরই একটু বেশি রকমের ভাল ছিল।তুমি হয়ত পরখ করার জন্য প্রশ্ন করতে পারো – সেদিন তোমার পরনে কোন জামাটা ছিল, কিংবা চুলে তোমার প্রিয় নীল রঙা ক্লিপটা ছিল কিনা। সেসব প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি হয়ত অপারগ।অথচ, মজার ব্যাপার কি জানো ! তোমার মাথায় যে প্রশ্নটি একটিবারের জন্যেও আসবে না ; আমি কিন্ত ঠিকঠাক সে উত্তরটা দিতে পারবো।সেদিন তোমার শিশির ভেজা ঠোঁটে ছিল গোলাপী আভা।তাতে হয়ত আমার হৃদয়ের শত বছরের বদ্ধ কপাট উন্মুক্ত হয়েছিলো।যদি প্রশ্ন করো – প্রেমে পড়েছিলাম কিনা, তবে উত্তরটা হবে না।' প্রেম ' শব্দটার আক্ষরিক কিংবা অনুভবের দিক অর্থ্যাৎ, যেদিক থেকেই বলো না কেন ; তার স্হায়িত্বতা ভালবাসার চাইতে কম।তাই বলবো, সেদিন না হলেও এরপরে তোমায় ভালবেসে ছিলাম।বলতে পারো, একটু বেশিই ভালবেসে ছিলাম।আবারো ভুল করে ফেললাম, ছিলাম হবে না আজও তোমাকে অনেক বেশি ভালবাসি মধুরিমা।

তোমার উদ্ভট কান্ড দেখে প্রথমদিন খুব অবাক হয়েছিলাম ! একটা মোটামুটি বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের ফুড কর্ণারে তুমি- আমি মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ট্রলিতে কিছু টুকিটাকি নিচ্ছিলাম।অথচ,একটিবারও আমাদের চোখাচোখি হলো না।আবারো দুজন ক্যাশ কাউন্টারের দিকে এগিয়ে এলাম।তুমি ছিলে আমার ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে।কিছু না ভেবেই আমার সফট ড্রিংকসের মিনি কনটেইনারটা নিয়ে বললে,
– এটা তো আমি নিয়েছিলাম।আপনি ভুল করেছেন হয়তো।
তোমার অদ্ভুত আচরণ আমাকে পেছনে ফিরতে বাধ্য করলো।আর ভাবখানা দেখে মনে হয়েছিলো, ড্রিংকস কেবল একটি মাত্র অবশিষ্ট ছিলো।তবে কি জানো…..ওই যে তোমার হাসিটা ! তা দেখে আর কোন কটু কথা জবাবে বলা হলো না।

তারপর তুমি আর দেরী না করে, তৃষ্ণা নিবারণে ব্যস্ত হয়ে গেলে।তৃপ্তির স্বরে বললে,
– যা গরম পড়েছে। যাক একটু স্বস্তি পেলাম।
ডিসেম্বর মাসে, তারওপর সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই জায়গায় কি করে তোমার গরম অনুভূত হচ্ছিলো ; তা ভেবে আমি নিঃশব্দে হাসলাম।যে কারণে আমায় উদ্দেশ্য করে এমনটা বলেছিলে, তার ফলাফল কিন্ত ছিলো শূণ্য।অতঃপর…. আর কি, যা ঘটার তাই ঘটলো।ট্রলিতে তোমার নিজের রাখা ড্রিংকসের কনটেইনার দেখে স্বাভাবিকভাবেই তুমি আঁতকে উঠলে ! ততক্ষণে আমি বোধহয় ওখান থেকে বেরিয়ে পড়েছি।তাই বলে, তুমি পিছু ছাড়লে না।হুট করে আমার সামনে এসে, ড্রিংকসটা আমার হাতে কোনমতে ধরিয়ে দৌড়ে সেখান থেকে পালালে।আমি কি হাসবো নাকি, অবাক হবো ভেবে পাচ্ছিলাম না !
যদিও সেদিন জানতাম না আমরা একই এলাকায় থাকি অর্থ্যাৎ, প্রতিবেশী।সে বিষয়টা অবহিত হলেও তেমন কিছু হতো না।কারণ, তথাকথিত প্রেমিকদের মতো তোমার বাড়ির সামনে গিয়ে আমি সকাল-সন্ধ্যা দাঁড়িয়ে থাকতাম না।তিন – চার দিন না যেতেই আমাদের দ্বিতীয়বারের মতো দেখা হলো।আমি যে রিক্সার ভাড়া ঠিক করছিলাম, তুমি এক লাফে ওটাতেই উঠে বললে,
– ভাই চলেন, বামদিকের দুনম্বর গলিতে।
এরপর আমার দিকে চোখ পড়তেই ভ্রু নাচিয়ে বললে,
– আরে আপনি ! কি খবর কেমন আছেন ?
আমি ভদ্রতা দেখাতে সামান্য হাসলাম।
– ও আচ্ছা, আপনি।
– কোথায় যাবেন ?
– বাসস্ট্যান্ডের দিকে।
– তাহলে উঠে পড়ুন।আমাকে ওই গলিতে নামিয়ে, একটু সামনেই তো বাসস্ট্যান্ড।
– কিন্ত !?
আমার কন্ঠে দ্বিধার আভাস পেয়ে তুমি বলেছিলে,
– কোন ব্যাপার না, উঠে পড়ুন।
আমার জানা মতে, কোন মেয়ের অপরিচিত কাউকে এভাবে পাশে বসতে দেবার কথা নয় ! তুমি কেন দিয়েছিলে ? এই প্রশ্নটা কি আমার করা উচিত ছিল সেদিন ?
সেদিনের পর আমাদের যোগাযোগের গতি কিন্ত থেমে থাকে নি।পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় একে হয়ত বলা যেতে পারে, সুষম দ্রুতিতে সরল পথে চলতে থাকলো।ধীরে ধীরে আমার তোমাকে ভাল লাগতে শুরু করলো।তবে ভাললাগাটা যে কবে ভালবাসাতে পরিবর্তত হয়েছিলো, তা ঠিক জানি না।
কোন রকম বিশেষ আয়োজন ছাড়াই যেদিন তোমায় বলেছিলাম,
– একটা ছোট বাসা দেখি আমাদের জন্য ? দুটো বেড, একটা ড্রয়িং আর ডাইনিং।সারাদিন একা থাকতে পারবে তো ?
সেদিন তোমার অশ্রুসিক্ত নয়ন জোড়ায়, আমাদের সুখের আলয়ের প্রতিচ্ছবিটা দেখেছিলাম।
দুঃখজনক হলেও, আমাদের যে মিল ছিল তা হলো- আমরা দুজনেই বাবা-মাকে হারিয়েছি।
তুমি বড় হয়েছো ভাইয়া- ভাবীর সংসারে।যদিও, তোমার ভাবী মায়ের চেয়ে কোন অংশে কম ছিল না।আর আমি, বাবা- মা মারা যাবার পর জামালপুর ছেড়ে চাকরির সুবাদে এখানেই আছি।বিয়ে নিয়ে এগোবার ক্ষেত্রেও আমাদের খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি।তোমার ভাইয়া খুব স্বাভাবিকভাবে আমাদের সম্পর্কটা মেনে নিলেন।বেশ সুখেই কেটে যাচ্ছিলো দিনগুলো।কিন্ত… সেই সুখ কি বেশিদিন আমাদের সঙ্গী হলো !!
অফিস থেকে ফেরার পর প্রায়ই দেখতাম, তুমি মনমরা হয়ে পড়ে থাকতে।কি হয়েছে জানতে চাইলে বলতে, সামান্য মাথাব্যথা আর কিছু না।যদিও, তোমার এই মাথাব্যথার বিষয়টা আমি তখন ঠিক গুরুত্ব দেই নি।সেটা নিঃসন্দেহে আমার একটা বড় ভুল ছিল।তুমি প্রতিদিন খুব ভোরে উঠতে।যাতে আমাকে দুপুরে বাইরে খেতে না হয় তাই, নিজ দায়িত্বে খাবার তৈরি করে যাবার সময় আমার হাতে দিয়ে দিতে।সম্ভবত ফযরের নামাজের পর আর ঘুমোতে না।কিছুদিন পর লক্ষ্য করলাম, প্রতিদিনই তুমি রান্নায় কোন না কোন গোলমাল বাঁধাতে।কোনদিন লবণ দিতে ভুলে যেতে।কোনদিন ঝালের তীব্রতায় খাবার মুখে দেয়া যেত না।আবার কোনদিন অতি মাত্রায় হলুদের প্রয়োগে, সেটা কি ছিল হয়ত তা-ই সঠিক ভাবে চিহ্নিত করা যেত না।
অথচ তোমার রান্নার হাত ছিল, আমার মায়ের মতন।বিয়ের আগে তা পরখ করার সু্যোগ হয়েছিলো আমার।ভাবলাম, কিছুদিন ভাইয়া- ভাবীর কাছে থেকে ঘুরে এলে সব ঠিক হয়ে যাবে।ছোটবেলা থেকে ওনাদের কাছে ছিলে।হয়ত এখানে মন বসছে না।তাছাড়া, পুরোটা দিন বাড়িতে একা পড়ে থাকো।কিন্ত আমার কথায় তুমি তো কিছুতেই রাজী হলেই না, সেই সাথে ঢাকার বাইরে কোথাও ঘুরে আসার যে প্ল্যানটা করলাম ; সেটাও অসুস্থতার কথা বলে এড়িয়ে গেলে।তোমার যে লাবণ্যময়ী হাসি আমাকে মুগ্ধ করেছিলো, ধীর গতিতে তা আমার জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছিলো।দিন দিন তোমার ভুলে যাওয়া অর্থ্যাৎ, স্মরণশক্তি হ্রাসের মাত্রা বাড়তে থাকে।সত্যি বলতে, সেটাও আমার তেমন ভাবে নজরে পড়েনি।মাথাব্যথার সাথে একটু- আধটু জ্বর থাকতো তোমার মাঝেমধ্যে।একদিন দেখলাম, আমার শার্ট অর্ধেক প্রেস করা ফেলে পাশের ঘরে কি যেন করছো।একটু পর আর কি ! যা ঘটার ছিলো তা-ই হলো।শার্টের কাঁধের কাছে অনেকটা জায়গা পুড়ে গেল।তোমার কান্না থামাতে বললাম,
– একটা শার্ট-ই তো, মধুরিমা।এমন কিছু হয়নি।

ওটা ছিল আমায় দেয়া তোমার প্রথম উপহার।তাই খুব কষ্ট পেয়েছিলে তুমি।
যেদিন তোমার অসুস্থতা অবশেষে আমার নজরে পড়লো, সেদিন বোধোদয় হলো – আসলেই একটু বেশি দেরী করে ফেলেছি।সেদিন সকালে তোমার শরীর ভাল না দেখে ঠিক করেছিলাম, লাঞ্চের পর ছুটি নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবো।বাড়ি ফিরে, তোমায় না পেয়ে অজানা আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে গেলাম।ভাইয়া – ভাবী, পরিচিত আত্মীয়স্বজন কোথাও ফোন করে কিছু জানতে পারলাম না।কিছু না ভেবেই বেরিয়ে পড়লাম।কোন দিকে যাচ্ছি, কি করা উচিত, কিছুই ভেবে পাচ্ছিলাম না ! কিছুদূর এগোতেই দেখলাম, তুমি একজন ভদ্রলোকের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছো।লোকটিকে দূর থেকে হলেও, চেনা লাগছিলো।আরো একটু এগোবার পর দেখলাম, সে ছিলো হিল্লোল।ভাবীর ফুপাতো ভাই হিল্লোল, যার সাথে তোমার একসময়ে পারিবারিক ভাবে বিয়ে ঠিক হয়েছিল।কিন্ত হিল্লোলের সুমনা নামের কারো সাথে সম্পর্ক থাকায়, এ বিয়েতে রাজী ছিল না।
আমি দৌড়ে তোমার কাছে ছুটে গেলাম।কিন্ত, তোমার এ ধরনের কথা শোনার জন্য আমি মানুসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলাম না।
– আরে, কি করছেন আপনি ! আমার হাত ধরছেন কেন ? এখন আমার হবু বর হিল্লোল যদি মাইন্ড করে ? কেন এমন করছেন, আহ্ ছাড়ুন তো।
হিল্লোলের সাথে আমার দু-একবার দেখা হলেও, তেমন কোন কথা হয়নি কখনো।তোমার এরূপ আচরণের কি কারণ, তা সে আমার কাছে জানতে চাইলো।আমি ওকে কোন উত্তর দিয়ে, তোমাকে কিছুটা জোর করেই নিয়ে এলাম।হিল্লোল পেছন থেকে ডেকে ছিল কয়েকবার।তবে, আমি সাড়া দেইনি।বাড়ি ফিরে তোমায় নিজ হাতে খাইয়ে ঘুমোতে বললাম।পরদিন সকালে তোমাকে নিয়ে গেলাম ডাক্তারের কাছে।যদিও, তখন দেখলাম আমাকে তুমি ঠিকঠাক চিনতে পারছো।

সব জানার পর ডাক্তার যা বললেন তা ছিল কিছুটা এরকম-
ধীর গতিতে হলেও তুমি মনে রাখার ক্ষমতা বা স্মরণশক্তি যা-ই বলো না কেন, তা হারিয়ে ফেলছো।সেই সাথে অতীতের কোন সময়কে বতর্মান ভেবে, তাতেই বসবাস করছো।একে বলা হয় – পাস্ট ভার্সেস প্রেসেন্ট বর্ডারলাইন পারসোনালিটি ডিসওর্ডার ( Past Vs Present Borderline Personality Disorder ) সেদিনের ঘটনানুযায়ী এর স্হায়িত্ব ক্ষণিকের জন্য হলেও, তা দীর্ঘায়িত হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।তবে, উপযুক্ত চিকিৎসা তা হ্রাসও পেতে পারে।
সবকিছু শোনার পর মারুফ ভাই, সেই সাথে ভাই তোমাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যাবার জন্য অস্হির হয়ে গেলেন।আমি সারাদিন অফিসে থাকি।একা বাড়িতে তোমার সাথে কত দুর্ঘটনা-ই তো ঘটতে পারে – এসব বলে তিনি আমাকে বোঝালেন।কিন্ত আমি কিছুতেই রাজি হলাম না।অফিস থেকে এক মাসের ছুটি নিলাম।দিন দিন তোমার অবস্হা যাচ্ছিলো খারাপের দিকে।আমার সাথেও তেমন একটা কথা বলতে না।মাঝে মাঝে কি যেন দেখে ভয় পেতে ! পরে ইন্টারনেট থেকে জানলাম- এসব ক্ষেত্রে কোন কোন ওষুধের সাইড এফেক্টের কারণে হ্যালুসিনেশন হতে পারে।তবে তুমি এভাবে সব ভুলে যাবে, এতটা ভাবিনি ! পুরো বাড়িতে ছোট ছোট চিরকুট লিখে দিলাম সব প্রয়োজনীয় জিনিসের সামনে।
যেমন, ঘড়ি – সময় দেখার জন্যে।
রেফ্রিজারেটর – খাওয়া শেষ করে বাড়তি খাবারগুলো এখানে রেখে দিলে, তা ভাল থাকবে।
মারুফ ভাই তোমাকে মানুসিক হাসপাতালে ভর্তি করতে বললেন।ওনার কথায় আমি কিভাবে যেন ক্রোধে চিরবিরিয়ে উঠলাম।আর বললাম,
– খবরদার ভাই ! আপনি আমার মধুরিমাকে পাগোল বলবেন না।
একসময় চাকরিটাও ছেড়ে দিলাম।

ভাবলাম সারাদিন তোমার কাছাকাছি থাকবো।আর্থিকভাবে স্বচ্ছল না হওয়ায়, আমাদের দিনগুলো খুব একটা ভাল কাটছিলো না।একদিন বাজার থেকে ফিরে তোমায় না পেয়ে, প্রায় উন্মাদ হয়ে গেলাম।ছুটে গেলাম মারুফ ভাইয়ের কাছে।ক্ষিপ্ত স্বরে বললাম,
– আপনি এমন করছেন কেন, আমার সাথে ? মধুরিমা কোথায় ?
ভাইয়া জানালেন,তুমি স্বইচ্ছায় ওনার সাথে এসেছো।কারণ, তুমি আমার সাথে কোন দিক থেকেই সুখে নেই।তোমার সাথে একবার দেখাও করতে দিলেন না।পুরো দুটা মাস এভাবে কেটে গেল।ফোনেও তোমায় পাওয়া গেল না।কোন আত্মীয় বা বন্ধু-বান্ধবের অনুরোধেও, ভাইয়া তোমার সাথে আমাকে দেখা করতে দিলেন না।উল্টো বললেন, তুমি যেখানে আছো ভালই আছো।আগামী মাসে আমাকে ডিভোর্স লেটার পাঠানো হবে।আর, তোমার অন্য জায়গায় বিয়েও ঠিক করেছেন তিনি।উনার প্রতি আমার মনে তীব্র ঘৃণা জন্ম নিলো।একদিন মারুফ ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে হুট করে তোমাদের বাড়িতে গেলাম।তোমাকে প্রতিটা ঘরে খুঁজলাম।ভাবীও বাঁধা দিলেন না।কিন্ত কোথাও তোমায় পেলাম না।ভাবীর হাতটা ধরে বললাম,
– প্লিজ ভাবী, ওকে কোথায় রেখেছেন আপনারা ? এ অবস্হায় ওর বিয়ের কথাই বা কি করে ভাবছেন ?! আমাকে শুধু একবার ওর সাথে দেখা করার সুযোগ দিন।
– শৌমিক, তোমাকে ক্ষেপিয়ে তোলার জন্য মারুফ ওসব বলেছে।যাতে তুমি নিজের জীবন নিয়ে ভাবতে শুরু করো।আবারো নতুন করে সংসার করার কথা ভাবো।মধুরিমার বতর্মান অবস্হা আগের চাইতেও খারাপের দিকে।এখন হাসপাতালে আছে।
ভাবীর কাছে থেকে তোমার ঠিকানা পেলাম।এরপর….. শেষবারের মতো যেদিন তোমায় দেখেছিলাম, তুমি ছিলে হাসপাতালের বাগানে একটা বেঞ্চে বসা।

আর, পাশে একজন নার্স দাঁড়িয়েছিল।তোমার ঠিক পায়ের কাছে দুটো খরগোশের ছানা খেলা করছিলো।তোমার ঠোঁটে মায়াবী হাসির পরিবর্তে, সেদিন ছিল বিষনণ্নতার ছায়া।তাই নার্সকে জিজ্ঞাসা করলাম, কি হয়েছে তোমার।উনি বললেন, তুমি যে তিনটি খরগোশ ছানার সাথে প্রতিদিন বিকেলে খেলা করতে ওদের একটি আজ সকালে মারা গেছে।সেজন্যে তোমার মন খারাপ।
আমি তোমার একটু কাছে গিয়ে বললাম,
– কেমন আছো মধুরিমা ?
তুমি চিৎকার করে একটা গাছের পেছনে গিয়ে লুকালে।নার্স তোমার দিকে এগিয়ে গেল।আমি দূর থেকে দাঁড়িয়ে তোমায় মনভরে কিছুক্ষণ দেখলাম।

কলমটা রেখে শৌমিক এবার কফিতে চুমুক দিলো।এখন তার অবসরের সঙ্গী হলো এই ডায়েরি।অফিস থেকে ফিরে, প্রায় প্রতিদিনই কিছু না কিছু সে লিখে এ ডায়রিতে।আর, ঘুমোবার সময় সেটা বালিশের পাশে রাখে।কে বলে মধুরিমা নেই তার পাশে ! ওর হাসিটা আবছা হলেও, আজও তার চোখেতে ভাসে।

………………… সমাপ্ত………………………

( একটি বিদেশী গল্পের ছায়া অবলম্বনে )
 
  • Like
Reactions: mon

Users who are viewing this thread

Back
Top