নীলু আপার বাসায় বসে আছি। একটু দূরেই রান্নাঘর থেকে ঘুটুর ঘুটুর আওয়াজ আসছে, ব্যাপক রান্না হচ্ছে বোঝাই যাচ্ছে। থেকে থেকে বিচিত্র ধরনের গন্ধও ভেসে আসছে, বেশ আনন্দ লাগছে মনে কারন রান্না গুলো হচ্ছে আমার জন্যই।
কোরবানীর ঈদে ভালো মন্দ খেতে পাই নাই শুনে নীলু আপা অতি দুঃখিত গলায় ফোন করেছিলেন, উনি থাকতে কি না আমি না খেয়ে দিন কাটাই!
কাজেই আমাকে ছুটি নিয়ে দুই দিনের জন্য নীলু আপার বাসায় আসতে হল। নীলু আপা আমার কাজিন। আমার চেয়ে প্রায় বছর দশেকের বড়। হলে কি হবে, আমার সাথে এমন করে যেন আমি তার মেয়ে। আপার বাসায় পা রেখেই জমজমাট রান্নার প্রস্তুতি দেখতে পেলাম। মনটা ভরে গেল আমার, আহা! এই না হল মায়ের মত বোন।
দুলাভাই, নীলু আপার হ্যাজব্যান্ড অতি বিচিত্র কারণে আমাকে খুব একটা পছন্দ করেন না। আমি গেলেই উনার বাসায় একদম হইচই শুরু করি সেটা একটা কারন হতে পারে অবশ্য। তবে আশ্চর্যের বিষয় এবার আমাকে দেখে দুলাভাই অসম্ভব খুশি হলেন। খুশি যেন চাপতে পারছেন না। তার উপচে পড়া আনন্দ দেখে কেমন সন্দেহ হল আমার, বিয়ের ব্যাপার স্যাপার নাতো!
কিছু দিন ধরে মাঝে মাঝেই ছেলেধরার মত কোত্থেকে কোত্থেকে যেন ছেলে ধরে নিয়ে আসে আপা, বিয়ে দেবার জন্য। আমি যতই না করি, শোনে না। এজন্য আপার বাসায় আসাই ছেড়ে দিয়েছিলাম বেশ কিছু দিন ধরে। এখন ভাবছি, খাওয়ানোর নাম করে ছেলে দেখাতে আনলো না তো আবার! না হলে দুলাভাইয়ের এতো খুশি হবার তো কোন কারন দেখিনা।
: কি শারমিন, খবর ভালো?
: জী ভাইয়া, আপনার?
: আর আমার ...চলছে কোন রকম
দুলাভাইয়ের কথা শেষ না হতেই নীলু আপা খাবারের ট্রে হাতে ঢুকলেন। সাথে সাথে দুলাভাই স্প্রিংয়ের মতো লাফ দিয়ে পেপার হাতে উঠে চলে গেলেন। খুবই অপমানজনক ব্যাপার কিন্তু গায়ে মাখলাম না, শ্বশুরবাড়ির লোকজন খাওয়াতে দেখলেই যেন দুলাভাইয়ের জ্বলে।
: নে, খেতে শুরু কর, এক্ষুনি। আরে বলিস না, তোর কথা শুনে আমার এত্তো মন খারাপ হয়েছে পরে, ঈদে আসলেই পারতি।
: তখন তো ছুটিই ছিলোনা আপা
: বুঝছি, নে খা, আগামী দুই দিন তুই শুধু গরুর মাংস খাবি আর আমি তোকে নতুন নতুন রেসিপি বানিয়ে খাওয়াব, কেমন ..
খুশিতে বত্রিশ দাঁত বের হয়ে গেল আমার। ট্রের উপরে ঝাপিয়ে পড়লাম। কাবাব টাইপ খাবার দেখা যাচ্ছে, সেটা দিয়েই শুরু করা যাক। কিন্তু মুখে দিয়েই থমকে গেলাম।
: আপা এটা কি?
: এটা হল মাংশের হালুয়া, ইউটিউব থেকে শিখেছি, আজই রাঁধলাম, কেমন হয়েছে বলতো?
: ইয়ে ভালোই।
: সত্যি! তাইলে আরেকটু আনি তোর জন্য হ্যা ..
: না না আপা ...
মহা মুসিবতে পড়া গেল! আপাকে খুশি করতে ভালো বলে তো ফেসে গেলাম মনে হচ্ছে। আপা আরেক বাটি আনতে গেছে, এই মিষ্টি মিষ্টি হালুয়া একবাটিই শেষ হচ্ছে না, আবার আরেক! শুনেই তো আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
সত্যি বলতে জিনিসটা খেতে জঘন্য হয়েছে। মাংস দিয়ে যে হালুয়া হতে পারে জানতামই না। আপা কোত্থেকে শিখল এ জিনিস কে জানে!
: নে তোর জন্য আরেক বাটি। এই দেখ, তুই কি সুন্দর বললি ভালো অথচ তোর দুলাভাই! একটাবার বলবেও না কিছু, অসহ্য।
: দুলাভাই কেও খাইয়েছো!
: হ্যা, কিন্তু খেয়ে দেয়ে কোন মন্তব্য করেনা দেখে রাগ করে ঝগড়া করেছি, তখন ওই বুদ্ধি দিলো তোকে ফোন করতে, তুই খানা খাদ্য পছন্দ করিস, সমঝদার, ফুড টেস্টার হিসেবে পারফেক্ট।
এতোক্ষণে দুলাভাইয়ের হাসির রহস্য উদ্ঘাটন করা গেল। কি পরিমান বজ্জাত লোক ভাবা যায়!
: আপা, এইসব নতুন নতুন রেসিপি না করে নরমাল কিছু কর।
: আরে কি বলিস! সারাজীবন তো নরমালই খাস, আর কোরবানী ছাড়া অন্য সময় এতো মাংস কোথায় পাওয়া যাবে যে নতুন নতুন রেসিপি ট্রাই করব! চুপচাপ বসে বসে খা, আর খেয়ে বল কেমন হয়েছে, বুঝলি।
আতংকে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে এলো। বাসায় ঢুকতেই মাংসের হালুয়া, আরও নানা জানি কি কি আছে কপালে। ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম ..
: আপা দুপুরের মেনু কি?
: গরুর মাংসের জর্দা, শুঁটকি গরু আর গরুর মাংসের সাথে পেয়ারা দিয়ে বীফ গুয়াভা ।
: বীফ অলিভ শুনেছি, বীফ গুয়াভা এই প্রথম শুনলাম আপা।
: এটা তো নতুন ফিউশন ফুড, আমি বানিয়েছি, আগে শুনবি কিভাবে!
: অ্যা!....আপা একটু পানি দিবা, কলিজা কেমন ধরফর করছে।
: ভালো কথা মনে করেছিস, গরুর কলিজার সাথে ছাগলের দুধ মিশিয়ে একটা আইটেমও আছে, মিল্কি বীফ লিভার।
আমার শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেল। নাম শুনেই তো ভিরমি খাবার যোগাড়, এই জিনিস মুখে তুলব কি করে!
দুপুরের খাবারের আগে আগেই দেখি দুলাভাই বের হয়ে গেলেন, তার নাকি অফিসের জরুরি কাজ আছে। বদলোক, ইচ্ছে করে আমাকে এই বিপদে ফেলে পগারপার হয়ে গেল।
আমি দ্রুত বুদ্ধি বের করার চেষ্টা করলাম। এক বন্ধুকে মেসেজ দিলাম, যাতে আমাকে ফোন দিয়ে বলে যে, আমার ছুটি ক্যানসেল হইছে। আমি যেন দ্রুত ইউনিটে ফেরত আসি।
কথামতো নিজাম ফোন দিল আমাকে। আমি ফোন ধরে জোরে জোরে আপাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলছি ...
: জী স্যার, অবশ্যই স্যার, আমি এক্ষুনি আসছি। আগে তো দেশের জন্য কাজ করতে হবে তারপর অন্য কিছু স্যার, রাইট স্যার।
আপা এতোক্ষণ চুপচাপ শুনছিলেন। হঠাত ফোন কেড়ে নিয়ে কথা বলা শুরু করলেন।
: ভাই, আমি ওর বড় বোন, ওতো মাত্র এলো, ঈদে বেচারি ছুটি যায়নি, ভালো মন্দ খেতেও পায়নি, তাই ভাবছিলাম একটু খাওয়াব.......... আচ্ছা আচ্ছা, তবে কালকে যাক? .....ও আচ্ছা তাইলে রাতে এটলিস্ট, একটা বেলা একটু খেতে তো দেবেন নাকি, আর ঠিকঠাক না খেলে দেশের জন্য কাজ করবে কিভাবে বলেন..
আমি অসহায়ের মত দাড়িয়ে রইলাম। নিজাম হারামজাদা আমাকে রাত পর্যন্ত থাকার অনুমতি দিয়েছে, আপার কথার সাথে পেরে ওঠেনি শেষ পর্যন্ত।
আমি তখন বাধ্য হয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গাড়ি ডাকলাম। ড্রাইভারকে বললাম এসেই যাতে ফোন করে বলে আমাকে অফিসের কিছু জরুরি ফাইল সাইন করতে হবে, সেটা নিয়ে এসেছে। এই বলে নিচে নামব আর ফেরত যাবনা। এখন শুধু দুপুরের খাবার এই পর্যন্ত বন্ধ রাখলেই হয়।
কি করে এই সময়টুকু পার করা যায় চিন্তা করতে লাগলাম। আপা কবিতা পছন্দ করে মনে পড়তেই কবিতা নিয়ে কথা তুললাম।
: আপা তুমি আর আবৃত্তি শোন না? আগে না ইউটিউবে কত আবৃত্তি শুনতা!
: না রে এখন শুধু রান্নার ভিডিও দেখি , অনেক দিন আবৃত্তি শুনিনা আর..
: আমি শোনাই, শুনবা? শোন
বল বীর বল চির উন্নত মম শির
শির নেহারি আমারই নত শির ঐ
: এই দাঁড়া দাঁড়া, ভালো কথা মনে করেছিস, মধু আর আনারস দিয়ে নেহারির একটা প্রিপারেশন দেখেছিলাম, ঐটাও আজকে বানাব, তুই খেয়ে বলবি কেমন হয়েছে বুঝলি .....তুই একটু বস আমি নেহারি টা চুলায় দিয়ে আসি, হ্যা ....
ইচ্ছে করল মাথার চুল সব নিজেই টেনে ছিঁড়ে ফেলি। কি দরকার ছিল কবিতার, এখন আইটেম আরেকটা যোগ হল। ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে এখন শুধুই অপেক্ষা করছি...
গাড়ি আসবার আর কত দেরি, কত দেরি পাঞ্জেরী ..
(সমাপ্ত)
কোরবানীর ঈদে ভালো মন্দ খেতে পাই নাই শুনে নীলু আপা অতি দুঃখিত গলায় ফোন করেছিলেন, উনি থাকতে কি না আমি না খেয়ে দিন কাটাই!
কাজেই আমাকে ছুটি নিয়ে দুই দিনের জন্য নীলু আপার বাসায় আসতে হল। নীলু আপা আমার কাজিন। আমার চেয়ে প্রায় বছর দশেকের বড়। হলে কি হবে, আমার সাথে এমন করে যেন আমি তার মেয়ে। আপার বাসায় পা রেখেই জমজমাট রান্নার প্রস্তুতি দেখতে পেলাম। মনটা ভরে গেল আমার, আহা! এই না হল মায়ের মত বোন।
দুলাভাই, নীলু আপার হ্যাজব্যান্ড অতি বিচিত্র কারণে আমাকে খুব একটা পছন্দ করেন না। আমি গেলেই উনার বাসায় একদম হইচই শুরু করি সেটা একটা কারন হতে পারে অবশ্য। তবে আশ্চর্যের বিষয় এবার আমাকে দেখে দুলাভাই অসম্ভব খুশি হলেন। খুশি যেন চাপতে পারছেন না। তার উপচে পড়া আনন্দ দেখে কেমন সন্দেহ হল আমার, বিয়ের ব্যাপার স্যাপার নাতো!
কিছু দিন ধরে মাঝে মাঝেই ছেলেধরার মত কোত্থেকে কোত্থেকে যেন ছেলে ধরে নিয়ে আসে আপা, বিয়ে দেবার জন্য। আমি যতই না করি, শোনে না। এজন্য আপার বাসায় আসাই ছেড়ে দিয়েছিলাম বেশ কিছু দিন ধরে। এখন ভাবছি, খাওয়ানোর নাম করে ছেলে দেখাতে আনলো না তো আবার! না হলে দুলাভাইয়ের এতো খুশি হবার তো কোন কারন দেখিনা।
: কি শারমিন, খবর ভালো?
: জী ভাইয়া, আপনার?
: আর আমার ...চলছে কোন রকম
দুলাভাইয়ের কথা শেষ না হতেই নীলু আপা খাবারের ট্রে হাতে ঢুকলেন। সাথে সাথে দুলাভাই স্প্রিংয়ের মতো লাফ দিয়ে পেপার হাতে উঠে চলে গেলেন। খুবই অপমানজনক ব্যাপার কিন্তু গায়ে মাখলাম না, শ্বশুরবাড়ির লোকজন খাওয়াতে দেখলেই যেন দুলাভাইয়ের জ্বলে।
: নে, খেতে শুরু কর, এক্ষুনি। আরে বলিস না, তোর কথা শুনে আমার এত্তো মন খারাপ হয়েছে পরে, ঈদে আসলেই পারতি।
: তখন তো ছুটিই ছিলোনা আপা
: বুঝছি, নে খা, আগামী দুই দিন তুই শুধু গরুর মাংস খাবি আর আমি তোকে নতুন নতুন রেসিপি বানিয়ে খাওয়াব, কেমন ..
খুশিতে বত্রিশ দাঁত বের হয়ে গেল আমার। ট্রের উপরে ঝাপিয়ে পড়লাম। কাবাব টাইপ খাবার দেখা যাচ্ছে, সেটা দিয়েই শুরু করা যাক। কিন্তু মুখে দিয়েই থমকে গেলাম।
: আপা এটা কি?
: এটা হল মাংশের হালুয়া, ইউটিউব থেকে শিখেছি, আজই রাঁধলাম, কেমন হয়েছে বলতো?
: ইয়ে ভালোই।
: সত্যি! তাইলে আরেকটু আনি তোর জন্য হ্যা ..
: না না আপা ...
মহা মুসিবতে পড়া গেল! আপাকে খুশি করতে ভালো বলে তো ফেসে গেলাম মনে হচ্ছে। আপা আরেক বাটি আনতে গেছে, এই মিষ্টি মিষ্টি হালুয়া একবাটিই শেষ হচ্ছে না, আবার আরেক! শুনেই তো আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
সত্যি বলতে জিনিসটা খেতে জঘন্য হয়েছে। মাংস দিয়ে যে হালুয়া হতে পারে জানতামই না। আপা কোত্থেকে শিখল এ জিনিস কে জানে!
: নে তোর জন্য আরেক বাটি। এই দেখ, তুই কি সুন্দর বললি ভালো অথচ তোর দুলাভাই! একটাবার বলবেও না কিছু, অসহ্য।
: দুলাভাই কেও খাইয়েছো!
: হ্যা, কিন্তু খেয়ে দেয়ে কোন মন্তব্য করেনা দেখে রাগ করে ঝগড়া করেছি, তখন ওই বুদ্ধি দিলো তোকে ফোন করতে, তুই খানা খাদ্য পছন্দ করিস, সমঝদার, ফুড টেস্টার হিসেবে পারফেক্ট।
এতোক্ষণে দুলাভাইয়ের হাসির রহস্য উদ্ঘাটন করা গেল। কি পরিমান বজ্জাত লোক ভাবা যায়!
: আপা, এইসব নতুন নতুন রেসিপি না করে নরমাল কিছু কর।
: আরে কি বলিস! সারাজীবন তো নরমালই খাস, আর কোরবানী ছাড়া অন্য সময় এতো মাংস কোথায় পাওয়া যাবে যে নতুন নতুন রেসিপি ট্রাই করব! চুপচাপ বসে বসে খা, আর খেয়ে বল কেমন হয়েছে, বুঝলি।
আতংকে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে এলো। বাসায় ঢুকতেই মাংসের হালুয়া, আরও নানা জানি কি কি আছে কপালে। ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম ..
: আপা দুপুরের মেনু কি?
: গরুর মাংসের জর্দা, শুঁটকি গরু আর গরুর মাংসের সাথে পেয়ারা দিয়ে বীফ গুয়াভা ।
: বীফ অলিভ শুনেছি, বীফ গুয়াভা এই প্রথম শুনলাম আপা।
: এটা তো নতুন ফিউশন ফুড, আমি বানিয়েছি, আগে শুনবি কিভাবে!
: অ্যা!....আপা একটু পানি দিবা, কলিজা কেমন ধরফর করছে।
: ভালো কথা মনে করেছিস, গরুর কলিজার সাথে ছাগলের দুধ মিশিয়ে একটা আইটেমও আছে, মিল্কি বীফ লিভার।
আমার শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেল। নাম শুনেই তো ভিরমি খাবার যোগাড়, এই জিনিস মুখে তুলব কি করে!
দুপুরের খাবারের আগে আগেই দেখি দুলাভাই বের হয়ে গেলেন, তার নাকি অফিসের জরুরি কাজ আছে। বদলোক, ইচ্ছে করে আমাকে এই বিপদে ফেলে পগারপার হয়ে গেল।
আমি দ্রুত বুদ্ধি বের করার চেষ্টা করলাম। এক বন্ধুকে মেসেজ দিলাম, যাতে আমাকে ফোন দিয়ে বলে যে, আমার ছুটি ক্যানসেল হইছে। আমি যেন দ্রুত ইউনিটে ফেরত আসি।
কথামতো নিজাম ফোন দিল আমাকে। আমি ফোন ধরে জোরে জোরে আপাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলছি ...
: জী স্যার, অবশ্যই স্যার, আমি এক্ষুনি আসছি। আগে তো দেশের জন্য কাজ করতে হবে তারপর অন্য কিছু স্যার, রাইট স্যার।
আপা এতোক্ষণ চুপচাপ শুনছিলেন। হঠাত ফোন কেড়ে নিয়ে কথা বলা শুরু করলেন।
: ভাই, আমি ওর বড় বোন, ওতো মাত্র এলো, ঈদে বেচারি ছুটি যায়নি, ভালো মন্দ খেতেও পায়নি, তাই ভাবছিলাম একটু খাওয়াব.......... আচ্ছা আচ্ছা, তবে কালকে যাক? .....ও আচ্ছা তাইলে রাতে এটলিস্ট, একটা বেলা একটু খেতে তো দেবেন নাকি, আর ঠিকঠাক না খেলে দেশের জন্য কাজ করবে কিভাবে বলেন..
আমি অসহায়ের মত দাড়িয়ে রইলাম। নিজাম হারামজাদা আমাকে রাত পর্যন্ত থাকার অনুমতি দিয়েছে, আপার কথার সাথে পেরে ওঠেনি শেষ পর্যন্ত।
আমি তখন বাধ্য হয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গাড়ি ডাকলাম। ড্রাইভারকে বললাম এসেই যাতে ফোন করে বলে আমাকে অফিসের কিছু জরুরি ফাইল সাইন করতে হবে, সেটা নিয়ে এসেছে। এই বলে নিচে নামব আর ফেরত যাবনা। এখন শুধু দুপুরের খাবার এই পর্যন্ত বন্ধ রাখলেই হয়।
কি করে এই সময়টুকু পার করা যায় চিন্তা করতে লাগলাম। আপা কবিতা পছন্দ করে মনে পড়তেই কবিতা নিয়ে কথা তুললাম।
: আপা তুমি আর আবৃত্তি শোন না? আগে না ইউটিউবে কত আবৃত্তি শুনতা!
: না রে এখন শুধু রান্নার ভিডিও দেখি , অনেক দিন আবৃত্তি শুনিনা আর..
: আমি শোনাই, শুনবা? শোন
বল বীর বল চির উন্নত মম শির
শির নেহারি আমারই নত শির ঐ
: এই দাঁড়া দাঁড়া, ভালো কথা মনে করেছিস, মধু আর আনারস দিয়ে নেহারির একটা প্রিপারেশন দেখেছিলাম, ঐটাও আজকে বানাব, তুই খেয়ে বলবি কেমন হয়েছে বুঝলি .....তুই একটু বস আমি নেহারি টা চুলায় দিয়ে আসি, হ্যা ....
ইচ্ছে করল মাথার চুল সব নিজেই টেনে ছিঁড়ে ফেলি। কি দরকার ছিল কবিতার, এখন আইটেম আরেকটা যোগ হল। ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে এখন শুধুই অপেক্ষা করছি...
গাড়ি আসবার আর কত দেরি, কত দেরি পাঞ্জেরী ..
(সমাপ্ত)