What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made পরিচয় 👫👬👭👥👥👥 (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
:আন্টি এটা আপনের জন্য আনছি।নাস্তা কইরা খাইয়েন।



আমার বাসায় যে মেয়েটা কাজ করে,রুনা সে একটা হাফ লিটার আইসক্রীমের বাক্স আমার দিকে এগিয়ে দিল।



টেবিলের ওপর রাখা আইসক্রীম বক্সটার দিকে তাকাই, ঈগলু ভ্যানিলা ফ্লেভার! কম করে হলেও একশ' টাকা হবে।ওটার দিকে তাকিয়ে বলি



: আবার? তোমাকে না বলছি টাকা নষ্ট না করতে! ছেলে মেয়েদের জন্য জমাও।



:আচ্ছা আর আনব না। কালকে রাতে বাসায় যাইতে আপনের কথা খুব মনে হইছিল, তাই আপনের জন্য কিনা নিয়ে ফ্রীজে থুইসিলাম।



রুনা নিচু নরম গলায় জবাব দেয়।



: হুম। ভাল কথা। তবে আর টাকা অযথা খরচ করবে না; ঠিক আছে?



: আচ্ছা। আন্টি কি রাগ করছেন?



সরল প্রশ্নে হেসে দেই, বলি



: নাহ! রাগ হব কেন? তুমি ভালবেসে আমার জন্য নিয়ে এসছ এতো খুশির কথা! আমি তোমার ভালর জন্য বলছি। এগুলো জমাও। তোমার সংসারের কাজে আসবে। বুঝলে?



: জ্বী



এখন সকাল বেলা। ঘড়ির কাঁটা প্রায় ছটা বেজে চল্লিশ ছুঁই ছুঁই। মেয়েটা আমার বাসায় আসে দুই বেলা। সকালে আর বিকেলে।সকাল ছটার মাঝেই ও আমার বাসায় হাজিরা দেয় হোক না কোন রকম ঝড়, বৃষ্টি, বাদল ওকে ওর পথ রোধ করে না কিছুই।মেয়েটার বয়স বড়জোর বাইশ কি তেইশ হবে। মেয়েটা দেখতে চমৎকার!এই লম্বা কালো মাথার চুল যা আমাদের সব মেয়েদেরই ভীষণ পছন্দের! এই অল্প বয়সেই দুই সন্তানের মা।নিজে আয় করে সংসার চালাচ্ছে বেশ! ও যখন কাজ নিতে আমার বাসায় আসে, তখন বেতনের ব্যাপারে কথা বলার সময় অনুনয় করল খুব সংযত আর নরম ভাবে এত সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলার ক্ষমতা যে এদেরও আছে তা দেখে সত্যি বলতে কি আমি যারপরনাই রীতিমত চমৎকৃত হলাম।



যা হোক ওর ফ্যামিলি ক্রাইসিস শুনে ওর চাওয়া বেতনের অংকেই রাজি হয়ে যাই কোনরকম কথাবার্তা ছাড়াই! সত্যি বলতে কি মেয়েটার সাথে কথা বলে ওকে ভাল লেগেছিল বেশ! যা হোক,কাজ শুরু করল ও আমার বাসায়, এটাই ওর প্রথম কোন বাসায় কাজ করা, সুতরাং কাজ ধরাতে একটু সময় লেগে গেল। আর মেয়েটা একটু ধীরস্থির টাইপের! যা হোক, এই নিয়ে তেমন মাথা ব্যাথা করিনি খুব একটা। আমার কাজ হওয়া দিয়ে কথা। ও যতক্ষণে করে করুক। তাই ওকে বেশি একটা ঘাটাই নি কখনও।



অল্প কয়দিনে মাশাআল্লাহ ভালই কাজ রপ্ত করে নিল রুনা।বেশ হাসিখুশি চন্চল স্বভাবের মেয়ে, হবে নাই বা কেন? বয়স আর কত ওর! দিন যায় ওর জীবনের টুকটাক কথাবার্তা বলে মাঝে মাঝে বলে আমাকে। বড় সুন্দর করে মাথায় তেল মালিশ করতে পারে ও, যাতে আরামে একেবারে চোখ বুজে আসে। তাই প্রায় সন্ধ্যায় আমার মাথা ভালই দলাইমলাই করে দেয় ও। আমার আবার মাইগ্রেনের সমস্যা আছে বেশ!তাই ওর মাথায় মালিশ করাটা ভালই উপভোগ করি। তেমনি একদিনের কথা, মাথায় তেল মাখছিল রুনা। বেশ কয়দিন ধরে দেখছিলাম বেশ চুপচাপ ও। দেখে মনে হচ্ছিল বেশ মন খারাপ! জানতে চাব কি চাব না তাই মনে করতে করতে জিজ্ঞাসা করে ফেলি



: কি ব্যাপার রুনা? মন খারাপ দেখি কয়দিন ধরে।



রুনা চুপ করে থাকে, মাথার তালুতে ওর আঙুলের পরশ বেশ আরাম করে টের পাচ্ছিলাম। আবারও বললাম



: কি হলো রুনা? কোন সমস্যা?



: না আন্টি এমনি!



: এমনি এত চুপচাপ? বাসায় সব ভাল তো?



: আন্টি,ওদের বাপে আমার সোনার এক জোড়া দুল নিয়ে চলে গেছে। অনেক কষ্টে জমানো টাকা আর মানুষের কাঁথা কাপড় সেলাই করে এডি জমা কইরা দুল জোড়া বানাইছিলাম। দুই তিন ধইরা হেয় বাড়িতে আসে না পরে দেখি দুল জোড়া নাই।



একটু সোজা হয়ে বসি; পেছনে ফিরে ওর দিকে তাকাই বলি



: তা তোমার জামাই কি করে?



: কিছু না।



: কিছু না মানে? একবার যে শুনেছিলাম গাড়ি চালায়?



: চালাইত আগে এখন চালায় না! হের কাম করতে মন চায় না।



: তবে সংসার খরচ কি তুমি একা দাও?অন্য কোন মহিলার ধান্দায় পড়ছে নাকি আবার?



রুনা এবার একটু চমকে ওঠে কিছুটা প্রতিবাদী হয়ে বলে



: না আন্টি! হের কোন বাজে দোষ নাই!খালি কাম চোর! আমার মায়ে বুড়া মানুষ হইয়া আমার পোলাটারে স্কুলে লইয়া যায় আনে, হেয় বাড়িত থাকলেও যায় না। এডি নিয়া মা প্রায় বাড়িত গিয়া চিল্লা পাল্লা করে। কন তো শরমের ব্যাপার না? নিজের স্বামীকে সবার সামনে ছোট করলে কি লোকে ভাল কইব? তাছাড়া কইলাম না হেয় খালি কামচোর কিন্তু লোক ভালা।নিজের ঘরের কথা কি দশজন লোককে জানান ভালা কথা? আমার মায়ে এডি বুঝতে চায় না; এলাকার সবার সামনে চিল্লায় এগুলা নিয়া।



মেয়েটার কথায় ধাক্কা খাই। বস্তিবাসী একটা মেয়ে কিন্তু আত্মসন্মান বোধ প্রচুর! বিশেষ করে অন্যান্য কাজের লোকদের দেখি নিজেদের পারিবারিক কলহের ঘটনা উপস্থাপন করে কিছুটা সহমর্মিতা বা সুযোগ আদায় করতে, এই মেয়েটার নিজের স্বামীর প্রতি সম্মানবোধ আর পারিবারিক ব্যাপারের দিকে ইতিবাচক খেয়াল দেখে একটু না ভালই চমৎকৃতই হলাম।এমন বোধ আমাদের সমাজের অনেক সুশীল,শিক্ষিত,উঁচুস্তরের লোকেদেরও থাকে না।



রুনা বেশ আন্তরিক এবং মিষ্টি স্বভাবের মেয়ে।কোন রকম আলগা আবরণ ওর মাঝে নেই। আমার দুটো বাচ্চা ওর ভীষণ ভাবে ভক্ত! দরজার ডোরবেল বাজলেই দুজনের মাঝে হুড়োহুড়ি লেগে যায় রুনা আপুর জন্য দরজা কে আগে খুলবে?বলে দেওয়ার অপেক্ষা থাকে না ওর আদর আর আন্তরিকতাই আমার মেয়েদুটিকে ওর বেশ কাছাকাছি নিয়েছে।



একদিন সন্ধ্যায় মেয়েটিকে নিয়ে দ্বিতীয় চমক খেলাম। বড় মেয়েকে পড়ানো শেষে ছোটটাকে নিয়ে বসব হোমওয়ার্ক করাতে!বাচ্চাদের রুমের দরজার কাছে এসে থমকে দাঁড়াই দেখি রুনা ছোটটাকে স্কুলের হোমওয়ার্ক করাচ্ছে! অবাক হলাম বেশ আবারো;কিছু না বলে কাছে যেয়ে দাঁড়াই, আমার ছোট মেয়েটা চন্চল খুব! ওঁকে পড়াতে বসানো খুবই কঠিণ বিষয় আমি আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করি সে খুব সুন্দর করে রুনার কাছে তার সববিষয়রে হোমওয়ার্ক শেষ করেছে এবং চমৎকার করে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে করেছে।



: মা দেখ নুনা আপু( রুনা আপু)র কাছে পড়া লিখা করছি।



মেয়ে ওর হোমওয়ার্ক কপি মেলে দেখালে,বলি



: বাহ! দারুণ! মাশাআল্লাহ! খুব সুন্দর!আপুর কাছে পড়তে মজা লেগেছে?



: হ্যাঁ।



মেয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে উত্তর করে



: গুড



রুনা চুপচাপ শুকনা কাপড় ভাঁজ করছিল। এবার প্রশ্ন করি



: লেখাপড়া কতদূর করছে?



: আন্টি ফোর পর্যন্ত।



: বেশ ভাল! বাড়িতে ছেলেকে কি তুমি পড়াও?



: জ্বী আন্টি।



: মাশাআল্লাহ। খুব ভাল।



আমি সত্যি মেয়েটিকে যত দেখছি অভিভূত হচ্ছি। এর মাঝে ধরতে গেলে ও আমার পরিবারের সদস্যই হয়ে গেছে। ঐ যে বললাম ওর আন্তরিকতা প্রচুর! যা ওঁকে আমাদের পরস্পরের হৃদয়ের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।



যা হোক,একদিন ছোটটাকে স্কুলে নিব। কাছেই স্কুল! স্কুলের পাশে একটা মুদির দোকান। মাসের চাল কিনব কেজি দশেক! তো একা টানতে হবে ভেবে ওকেও সাথে নেই। আমার আলমারি থেকে একটা ভাল পুরান জামা ওঁকে পড়তে বলি। মেয়েটা দেখতে যথেষ্ঠ সুন্দরী আর ভদ্রোচিত! অতএব একটু ফিটফাট হওয়াতে ওকে অন্যরকম ভাল লাগছিল



: তোমাকে সুন্দর লাগছে রুনা!



উত্তরে ও একটু হাসে বলে



: আন্টি জামাটা অনেক সুন্দর!



আমিও হাসি।বলি



: চল



বাচ্চার স্কুলের সামনে দোকান থেকে চাল কিনে নেবার সময় দুজন গার্ডিয়ানের সাথে দেখা। কুশল বিনিময় করে নেই, এর মাঝে একজন ভাবী প্রশ্ন করে



: ও কে ভাবী?



: আমার ভাগ্নী।



সত্যি বলতে কি!যে মানুষটা এত আন্তরিকতায় আমাদের বেঁধে নিয়েছে তাকে কেন যেন বাসার কাজের লোক হিসেবে পরিচয় দিতে মনে বাঁধছিল, তাই চটপট উত্তর করি, কোন রকম সংকোচ ছাড়াই!



: অনেক সুন্দর তো!



একজন ভাবীর কথায় হেসে ফেলে বলি



: হ্যাঁ। ও অনেক সুন্দর।আচ্ছা ভাবী আসি। বাসায় কাজ আছে। ছুটির সময় দেখা হবে।



: আচ্ছা



ওনাদের থেকে নিয়ে বিদায় নিয়ে চুপচাপ রুনা সহ চালের প্যাকেট বাসায় আনি। বাসায় ঢুকে ওকে একটু চা করতে বলে নিজের ঘরে যেয়ে বসি।আমার সকালে গান শোনার অভ্যাস! মোবাইলের সাথে স্পীকার কানেক্ট করেছি মাত্র। তখনই রুনা চায়ের কাপ হাতে ঘরে প্রবেশ করে,বলে



: আন্টি চা।



হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নেবার সময় দেখি ও মাথা নিচু করে রয়েছে কেন যেন মনে হল কান্না করছে। কি হল হঠাৎ! প্রশ্ন করলাম



: কি হল রুনা? কোন সমস্যা?



ও বরাবরের মত চুপ। চোখ মাটিতেই নামান। একটু বিরক্ত আর অধৈর্য হই বলি



: কি হল কি? বলবে তো?



এবার আমাকে অবাক করে দিয়ে মেয়েটা আমাকে হঠাৎ জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে। আমি ভীষন অবাক ও বিব্রতবোধ করছিলাম, আবারও বলি



: আরে বাবা! বলবে তো কি হয়েছে?



: আন্টি,আপনি অনেক ভাল। আপনি আমাকে কাজের মানুষ বলেন নাই ভাগ্নী বলছেন। আমার যে কি ভাল লাগছে!



বিষম খাই একটু।রুনা কেঁদে যাচ্ছে; ছোট একটা ব্যাপার! সামান্য একটু আন্তরিকতার পরিচয়! ওকে যে এতটা আবেগী করে তুলবে বুঝতে পারি নি। কিছু বলার মত খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ওকে কাঁদতে সময় দেই। কতক্ষণ পর শান্ত হয়ে চোখ মুছে বলে



: আন্টি,আল্লাহ আপনাদের অনেক ভাল করব;দেইখেন।



এবার ওর হাত ধরে বলি



: রুনা তুমি আমাকে লজ্জায় ফেলছ। আমি এমন কিছুই বলি নি। তুমি তো আমার ঘরেরই একজন তাই না? আমি শুধু সেটুকুই বলেছি। আমাদের জন্য তুমি দোয়া কর।



: না আন্টি,আপনি অনেক ভাল।



মেয়েটা ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলতে থাকে, আবারও হাসি বলি



: হুম। আমি জানি আমি অনেক ভাল। এখন কান্না থামাও দেখি! ভাল মানুষের সাথে মানুষ হাসিখুশি থাকে! কান্নাই যদি কর তো আমার ভাল মানুষ হয়ে কি লাভ?এবার হাসত একটু!



মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠতে দেখা যায় এবার।এরপর ও ওর মত কাজ করতে থাকে। যথারীতি বিকেলে ও কাজে আসে এবং আমার মাথায় তেল দিতে থাকে, চোখ বুজে আরাম নিচ্ছিলাম। রুনার মনটা আজ বেশ ফুরফুরে বেশ উৎফুল্ল হয়ে নিজে নিজে কথা বলছে। আমাকে বলে



: আন্টি আপনি কি ফুচকা খান, বেশি টক দিয়া?



চোখ বুজে উত্তর করি



: হুম।



: আমাদের ঐখানে এক লোকে মজা কইরা ফুচকা বানায়। আপনার জন্য একদিন নিয়া আসব।



: হুম।আচ্ছা।



: আন্টি আপনি কি জিলাপি ভালবাসেন, মুড়ি মাখানি.!আমাদের ঐ খানে একজন...



: কি ব্যাপার রুনা? মনে হচ্ছে পুরো দুনিয়া খাইয়ে দিবে?



একটু লজ্জা পেল মনে হয়, মাথায় ওর হাতের তালুর জোরে ঘষানি টের পাই, বলে



: কি জানি আন্টি আমার মনে হয় আপনারে সবকিছু

আইনা দেই। খালি মনে চায়!



: তাই নাকি?



: হ। আন্টি আপনি কি আচার খান.........



রুনা বলেই চলেছে, চোখমুখ ভরা আনন্দ! ওর সুন্দর মুখের আনন্দ দেখতে বেশ লাগছে! আবারও ভাবি,ছোট অতি সাধারণ একটা কথা, একটা আন্তরিক পরিচয় যে,একটা মানুষকে কত আনন্দ দিতে পারে তা আজ নিজের চোখে দেখে নিলাম। রুনা বলছে, ব্যাস! বলেই যাচ্ছে!! আমিও মন ভরে দেখে যাচ্ছি।



(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top