What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made বাসা বদল 🏫🏬🏫🏬🏫🏬🏫🏬🏫🏬 (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
রান্না ঘর থেকে আমার স্ত্রী শিমু চিৎকার করতে করতে বলছে, আম্মা বলত আমার নাকি রাজরানীর কপাল। এমন জামাই একমাত্র রাজরানীর কপালে জুটে। হায়রে আমার কপাল। জামাই আমার এই দুই রুমের বাসায় রেখে জীবনটা পার করে দিল। আজকে পানির কল নষ্টতো কাল গ্যাসের লাইনে গ্যাস নাই। কত দিন থেকে বলছি বাসাটা এবার পাল্টাও, বাসাটা এবার পাল্টাও। আল্লাহ জানেন, তারে এই বাসা কি যাদু করল।



সোবহান বাগের ব্যাটারি গলির ঠিক শেষ বাড়িটাতে আমাদের বাসা। ভাড়া বাসা। দুই রুমের । এই বাসায় আমার আর শিমুর পনের বছরের সংসার। আমাদের বড় ছেলে মিঠুন আর মেয়ে বিথীর জন্ম এই বাসাতেই। মিঠুনের যখন বয়স চার তখন এই বাসার দরজায় আঙ্গুল থেতলে গিয়েছিল। বাথরুমের বেসিনের সাথে লেগে বিথীর কপালও কেঁটেছিল। সে কাঁটার দাগ বিথীর এখনো আছে ।



আজ ২৯শে মার্চ। কাল সকালে আমরা এই বাসা ছেড়ে খিলগাঁও বড় একটা বাসায় উঠবো। ঐ বাসাটাও ভাড়া। চার রুমের। সুন্দর, গোছালো। টাইলস করা। আমার বেতন বেড়েছে অনেক দিন হল। ছেলে মেয়ে বড় হচ্ছে। জিনিস পত্রও বেড়েছে। মেয়ের জন্য একটা আলাদা রুম প্রয়োজন। সব মিলিয়ে নতুন একটা বাসায় উঠবো উঠবো করে অনেকদিন কেটে গেল। শেষ পর্যন্ত আমি আর শিমু গিয়ে বাসাটা ফাইনাল করে এসেছি। শিমু বেশ খুশি। চক চক করা টাইলস দেয়া বাসায় উঠবো আমরা।



সন্ধ্যা থেকে দেখছি শিমুর বেশ মন খারাপ। এত মন খারাপ শিমু খুব একটা করে না। অনেকদিন এই বাসায় আছি। আশে পাশের সবাই খুব পরিচিত আর আপন হয়ে গিয়েছে। আমরা বাসা ছেড়ে যাচ্ছি বলে অনেকে আসছেন দেখা করতে। রাতে ঘুমাতে গেলাম। শিমু শুয়ে আছে। এক সময় দেখি শিমু ফুফিয়ে কাঁদছে। আমি জিজ্ঞেস করতেই বেশ করুণ গলায় বললো, এই বাসা ছেড়ে আমার একটুও যেতে ইচ্ছে করছে না। ভীষণ মায়া হচ্ছে।



শিমুর কথা শুনে আমারও মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেল। রোজ রোজ শিমুই এই বাসা পাল্টাতে চিৎকার চেচামেচি করত। এখন শিমুই মন খারাপ করছে। সত্যি এই বাসার সাথে আমাদের কত স্মৃতি যে জড়িয়ে আছে। এই বাসার সবকিছুর সাথে যেন আমার, শিমুর, আমার ছেলে মেয়ের ছোঁয়া লেগে আছে। বাথরুমের পানির টেপটা প্রায় নষ্ট হয়। মাঝে মাঝে খুব রাগ হয়। রাগ করে সিদ্ধান্ত নিই এই মাসেই বাসা পাল্টাবো অথচ এমন পাল্টাবো পাল্টাবো করে প্রায় বছর পেরিয়ে যায়, বাসা আর পাল্টানো হয় না। জানিনা কেন। কি এক মায়া বুঝতে পারিনা।



দক্ষিণের জানালাটা খুললেই জানালা লাগোয়া একটা লিচু গাছ । আমি কখনো এই গাছে লিচু হতে দেখিনি। জানালা খুললেই আমরা লিচু গাছের পাতা ষ্পর্ষ করতে পারি। আমার ছেলে মেয়ে দুটো মাঝে মাঝে এই লিচু পাতা ছুঁয়ে দেখে। ছোট থাকতে আমি একবার বলেছিলাম গাছের পাতা ছিঁড়লে গাছের ব্যথা লাগে। তারপর থেকে এরা ছুঁয়ে ছুঁয়ে এই গাছকে আদর করে। কখনো পাতা ছিঁড়ে না। আমার দেখতে ভীষণ ভালো লাগে। গাছটা আমাদের ভীষণ প্রিয়। এই জানালার পাশে দাড়ালে মনটা ভীষণ ভালো হয়ে যায়।



আমাদের বিল্ডিং এর ঠিক উল্টো পাশে মোজাম্মেল চাচার বাসা। খুব আন্তরিক মানুষ। মিঠুন আর বিথীর ছোট বেলাটা এই বাসায় কেঁটেছে। ঐ বাসার সবাই এই দুই ভাইবোনকে খুব ভালোবাসে। এখনও ভালো কিছু রান্না হলে চাচী বিথী আর মিঠুনের জন্য পাঠিয়ে দেন। শিমু মোজাম্মেল চাচা চাচির কথা বলে হাউমাউ করে কান্না শুরু করল। শিমু কাঁদতে কাঁদতে বলল, মোজাম্মেল চাচার নাকি খুব মন খারাপ। আমাদের চলে যাওয়া নিয়ে চাচী নাকি কেঁদেছেও। শুনে আমারও ভীষণ খারাপ লাগলো।



আমাদের বাড়িওয়ালা বেশ কঠিন ধরনের মানুষ। রুটিনের বাইরে পানির মোটর চালানোর অনুরোধ করলে তার মুখ দেখার চেয়ে তিনদিন গোসল না করে থাকা শ্রেয়। সেই বাড়িওয়ালা সন্ধ্যা বেলায় আমার হাত দুটো ধরে বললেন, আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন। নানা সময় নানা কথা বলেছি। অনেকদিন একসাথে ছিলেন। আপনাদের কথা খুব মনে পড়বে।



লোকটাকে আজ ভীষণ আপন মনে হল। এতদিন থাকতে থাকতে আসলেই এত কঠিন লোকও যে নিজের ভেতর একটা জায়গা করে নিয়েছে তা ভাবতে খুব ভালো লাগছে।



ভোর থেকে আমাদের সব মালপত্র গোছানো হচ্ছে। সামনের রুমের পশ্চিমের দেয়াল থেকে মিঠুন আর বিথীর জন্মদিনের তারিখ লেখা ছবিটা নামানো হল। এই দেয়ালের সাথে ছবিটা দেখতে দেখতে ভীষণ এক ভালো লাগা জড়িয়ে গিয়েছে। মনে হচ্ছে এই দেয়ালের চেয়ে ভালো কোন জায়গা এই ছবির জন্য হবে না। ছবিটা এখানেই সুন্দর।

মিঠুন যখন মাত্র লিখতে শিখেছে তখন রং পেন্সিল, কলম দিয়ে খাটের পাশে লাগানো দেয়ালটায় কত কিছু লিখেছে, একেঁছে। বাবা, মা, বোনের নাম, ছবি কত কি। মাঝে মাঝে এই লেখা দেখে মিঠুনের ছোট বেলার সময়টুকু মনে পড়ে যায়। ভীষণ ভালো লাগে তখন। মালপত্র গোছাতে গিয়ে লেখাগুলো দেখে বুকটা চিনচিন করে উঠলো। মিঠুনের এই লেখাগুলো আর দেখা হবে না।



মতিয়ার মা আমাদের সাথে মালপত্র গুছিয়ে দিচ্ছে। এই মহিলাটিকে আমরা যখন পনের বছর আগে এই বাসায় আসি তখন থেকে এই এলাকায় দেখছি। বিভিন্ন বাসায় কাজ করে। আমাদের কাপড় ধোয়ার কাজটা করে। মাস শেষে বিভিন্ন বাসার কাজের টাকাগুলো সে শিমুর কাছেই জমিয়ে রাখে। দেশের বাড়ি যাওয়ার সময় শিমুর কাছ থেকে নিয়ে যায়। শিমুর প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস আর ভালোবাসা। আমি জানিনা মানুষ এভাবে কাউকে বিশ্বাস করে কিনা। সেই মতিয়ার মা শিমুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। আমার দেখতে খুব খারাপ লাগছে। এই ভালোবাসা যে স্বার্থহীন। মানুষের স্বার্থহীন ভালোবাসা দেখা ভীষণ কষ্টের।



আমাদের উপর তলার ভাড়াটিয়া লোকটার সাথে আমার খুব একটা দেখা সাক্ষাৎ বা কথাবার্তা হয় না। খুব গম্ভীর প্রকৃতির লোক। লোকটা আমাকে দেখে কাছে আসলেন। আমার সাথে কোলাকুলি করে বলল, আপনারা নাকি চলে যাচ্ছেন। শুনে খারাপ লাগছে। এতদিন একসাথে ছিলেন। দোষ ত্রুটি ক্ষমা করে দিয়েন।



সামনা সামনি দেখা হলে যে লোক খুব একটা কথা বলেন না সে লোকের এমন আচরণ দেখে খুব ভালো লাগল। আসলে কথা বার্তা না হলেও একসাথে থাকলে নিজের ভেতর একটা ভালোবাসা, ভালো লাগা এমনিতেই জন্মায়।



গাড়িতে মালপত্র সব তোলা হয়েছে। আমরা সবার সাথে দেখা করে চলে যাচ্ছি। গাড়ি পেছনে ফেলে যাচ্ছে আমাদের পনের বছর বসবাস করা বাসাটি। কষ্টে বুকটা ফেটে যেতে চাইছে। এতটা কষ্ট হবে বুঝিনি। শিমু কাঁদছে। চেনা রাস্তা, গলি, দোকানপাট, মানুষজন সবকিছু পেছনে ফেলে যাচ্ছি। রোজ রোজ আর দেখা হবেনা এমন পরিচিত জিনিসগুলোর সাথে। দিনের পর দিন কেমন এক মায়ায় জড়িয়ে ছিলাম। আমরা যাচ্ছি। আমাদের খুব চেনা মানুষগুলো তাকিয়ে আছে খিলগাঁও এর দিকে এগিয়ে যাওয়া গাড়িটির দিকে । ছেলে মেয়ে দুজনেরই খুব মন খারাপ। বিথী বলল, এই বাসাটা না পাল্টালেই ভালো ছিল। লিচু গাছটার জন্য আমার খুব মায়া হচ্ছে।



আমি জানিনা মায়া আসলে কি? দিনের পর দিন, বছরের পর বছর একটা জায়গায় বসবাস করে যে ম্মৃতি, সুখ দুঃখ, মায়া ভালোবাসা আমরা ধারণ করি তা চাইলে খুব সহজে মুছে ফেলা কঠিন। এই সময় আর স্মৃতিগুলোর সাথে খুব নিবিড়ভাবে জড়িয়ে থাকে মানুষের অনেক জীবন গাঁথা। যে জীবনে আছে সুখ দুঃখ আর নানা সংগ্রামের স্মৃতি। দিন বদলের ম্মৃতি। যে স্মৃতি মনে করে মানুষ জীবনের সুখ দুঃখ উপলব্ধি করে।


(সমাপ্ত)
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top