What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected সমুদ্র স্নান (1 Viewer)

dukhopakhi

Global Moderator
Staff member
Global Mod
Joined
Mar 3, 2018
Threads
98
Messages
10,957
Credits
103,594
LittleRed Car
Camera photo
T-Shirt
Thermometer
Glasses sunglasses
Strawberry
সমুদ্র স্নান

মূল লেখক : জনাব আসিফ রহমান জয়



পর্ব - ১

সমুদ্রের সাথে আমার প্রেম একেবারে সেই ছোটবেলা থেকে!
আমার বয়স তখন তিন কি চার হবে অথবা চার কিংবা পাঁচ। আম্মার মুখ থেকেই সব শোনা। নিজের স্মৃতি বলতে মগজের ধূসর কোষে রয়ে যাওয়া খুবই আবছা আবছা কিছু টুকরো ছবি। আর সেই সময়ের মোটা একটা পারিবারিক এ্যালবামে রঙ উঠে যাওয়া কিছু সাদা-কালো স্টিল পিকচার।

আব্বা-আম্মা দু'জনেই চাকরি করতেন। আমাকে সারাদিন দেখা-শোনা করার জন্য 'আসাদ' নামে পনেরো-ষোল বছরের একটা ছেলে ছিলো। আসাদ আমাকে সারাদিন কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়াতো-এ বাড়ি থেকে সে বাড়ি, এই রাস্তা থেকে সেই রাস্তা। আসাদ একদিন দৌড়াতে দৌড়াতে এসে আম্মাকে বললো যে, আমি নাকি পুরো একটা বাক্য বলেছি! আমি নাকি আসাদকে হাত উঁচু করে বড় রাস্তা দেখিয়ে বলেছি-'আমি যাবো...উন উন উন দিকে...'। আম্মার ভাষ্যমতে, এটাই আমার বলা প্রথম একটা পূর্নাংগ বাক্য।

আমি আম্মাকে এখনো কোথাও বেড়াতে যাবার কথা বললেই আম্মা হাসতে হাসতে বলেন-'কোথায় যাবি? উন উন উন দিকে?' সব মায়ের স্টকেই নিশ্চই এই ধরনের কিছু গল্প থাকে, এসব গল্পের রঙ কখনোই ফিকে হয় না। সন্তানের প্রথম হাসি, প্রথম কথা, প্রথম উঠে দাঁড়ানো, প্রথম হাঁটা-এগুলোর সাক্ষী বেশীরভাগ ক্ষেত্রে মায়েরাই হয়। মায়েরা সময়-অসময়ে এধরনের গল্পের কথা মনে করেন আর একা একাই তৃপ্তির হাসি হাসেন।

প্রসংগে ফিরে আসি। আসাদের শরীরে নাকি একধরনের চুলকানি রোগ ছিলো। সেই রোগ ছড়িয়ে গেলো আমার শরীরেও। আম্মা ডাক্তার হওয়ায় আমাদের প্রাথমিক চিকিৎসাগুলো খুব দ্রুত হতো। রোগ বেশী দিন কন্টিনিউ করলে আম্মা অন্য ডাক্তারের স্মরনাপন্ন হতেন। "একজন ডাক্তার যতই কনফিডেন্ট হোন না কেন, নিজের সন্তানের ব্যাপারে তিনি সবসময়ই নার্ভাস।" ক্লাস টেনে যখন আমার হাত ভেঙ্গে গেলো, যখন হাসপাতালের ডাক্তার আমার হাত প্লাস্টার করছিলেন আর আমি প্রচন্ড ব্যথায় উহ...আহ...করছিলাম, তখন পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে আম্মাকে মুখচাপা দিয়ে কাঁদতে দেখে ভীষন অবাক হয়েছিলাম! মনে হয়েছিলো, আরে...আম্মা না ডাক্তার! তাহলে আম্মা অন্য 'আম্মা'র মতো কাঁদে কেন? "একজন মহিলা-ডাক্তার কি আগে ডাক্তার তারপর মা, নাকি আগে মা তারপর ডাক্তার?"

আবারো প্রসংগে ফিরে আসি! আজ কেন জানি বার বার প্রসংগ থেকে সরে যাচ্ছি!
আম্মার দেওয়া ঔষুধে আসাদ ভালো হয়ে গেলো, কিন্তু আমার কনুইয়ের কাছে একটা ঘা কিছুতেই ভালো হচ্ছিলো না। আম্মা ঔষুধ বদলে দিলেন, তবু সারে না। আম্মা-আব্বা দু'জনেই খুব চিন্তিত হয়ে আমাকে নিয়ে গেলেন ডাঃ আক্কাস সাহেবের কাছে। তিনি আমাকে বেশ খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে দেখলেন। আম্মার দেওয়া প্রেসক্রিপশন দেখলেন। নাহ, ঔষুধ তো ঠিকই আছে। চশমা খুলে চেয়ারে হেলান দিতে দিতে তিনি বললেন-'এক কাজ করেন, ওকে নিয়ে সমুদ্র থেকে ঘুরে আসেন। সমুদ্রের পানিতেই আরাম হবে।'
সমুদ্রের সাথে আমার প্রেম শুরুতে স্বতস্ফুর্ত ছিলোনা, অনেকটাই আরোপিত ছিলো! It was destined. ডাঃ আক্কাস খুব নামকরা ডাক্তার ছিলেন। তাঁর কথায় কাজ হয়েছিলো।

সেই আমার প্রথম সমুদ্রস্নান! তারপরও বেশ কয়েকবার আমি সমুদ্রের কাছে গিয়েছি, বার বার গিয়েছি। ফোর্থ ইয়ারে স্টাডিট্যুরে যখন গিয়েছিলাম, সমুদ্রের কাছে প্রমিস করছিলাম যে, এরপর যখন আসবো, সাথে মুন্নি থাকবে। আমি সেই প্রমিসও রেখেছিলাম।
এতোবার গেছি কিন্তু কখনোই সমুদ্রকে আমার কাছে পুরনো মনে হয়নি। প্রতিবারই বিস্ময় ভরা চোখে নতুনভাবে সমুদ্রকে দেখেছি! কক্সবাজারের বিশাল সৈকতে ঘন্টার পর ঘন্টা হেটেছি, কখনোই ক্লান্তি অনুভব করিনি!

দ্বিতীয়বার সমুদ্রের কাছে যেতে অবশ্য অনেক দেরী হয়েছিলো। আমি তখন ইন্টারমিডিয়েট ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি-ঢাকা রেসিডেনশিয়াল মডেল কলেজ। আম্মার হুট করে একটা ট্রেনিং শুরু হলো, খুব সম্ভবতঃ ফাউন্ডেশন ট্রেনিং। ট্রেনিং এর শেষ হবে কক্সবাজারে সাত দিনের একটা ট্যুর দিয়ে। আম্মা আমাকে বললো, 'তুই যাবি আমার সাথে?' আমি খুশীতে বাকবাকুম হয়ে বললাম-'অবশ্যই যাবো। সাত দিনে তুমি আমাকে সাতশো টাকা দিবা। পার ডে একশো।' তখন ১৯৯১ সাল। আমি ঢাকাতে আমার নানার বাড়ী থেকে পড়াশুনা করি, আব্বা প্রতিমাসে আমাকে পাঁচশো টাকা মানি অর্ডার পাঠান। তখন সাতশো টাকা মানে অনেক টাকা। আম্মা আমার সাথে দর কষা-কষি শুরু করলেন। শেষমেষ পাঁচশো টাকায় দফা রফা হলো। ঢাকা থেকে চিটাগাং ট্রেনে যাবো, সেখান থেকে বাসে করে কক্সবাজার। বাসের কথা শুনে আমার সমুদ্রে যাবার ইচ্ছা এক নিমিষে উবে গেলো! আমার তখন মোশন-সিকনেস ছিলো। বাসে উঠলেই কেমন যেন গন্ধ-গন্ধ লাগতো, বমি হতো। আমি মিনমিন করে বললাম-'আম্মা, কক্সবাজার ট্রেনে যাবো। বাসে যাবো না।' কিন্তু ট্রেন কোথায় পাবো? ট্রেনলাইনই তো নেই, বাস ছাড়া অন্য কোন উপায়ও নেই। আম্মা বললেন-'অসুবিধা নেই, আমি তোকে ট্যাবলেট খাইয়ে নেবো। আর তুই বাসে উঠেই ঘুমিয়ে যাবি।' আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম-'তাহলে কিন্তু সাতশোই লাগবে।' আম্মা রাজী হলেন।

ঢাকা থেকে রাতের ট্রেনে আমরা চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। কি আনন্দ! ট্রেন জার্নি আমার কাছে সবসময়ই দারুন লাগে! কিছুক্ষন পর পর চা-কাটলেট-পাউরুটি-কলা, যতো ইচ্ছা খাও! সাথে ব্যাগ ভর্তি ৭/৮ টা গল্পের বই, যতো ইচ্ছা পড়ো! এখন আম্মা কিচ্ছু বলবে না। আম্মার সাথে ডাক্তারদের টিমের সবাই আমাকে খুব আদর করলেন। 'আঙ্কেল তো বড় হয়ে গেছে', 'আপা, আপনার আর কি চিন্তা?', 'আংকেল বড় হয়ে কি হবে?', 'আপা, আর যাই করেন, ডাক্তার বানিয়েন না কিন্তু...'-এইসব শুনতে শুনতে আর বই পড়তে পড়তে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভাঙ্গতে দেখি, ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে-আমরা চট্টগ্রাম চলে এসেছি। আমরা স্টেশনের কাছাকাছি একটা হোটেলে যেয়ে হাত-মুখ ধুয়ে সকালের নাস্তা করলাম। এবারে বাসে করে কক্সবাজার। কিন্তু বাসস্ট্যান্ডে যেয়ে বাসের চেহারা দেখা মাত্রই আমার পেটের ভিতরটা গুলিয়ে উঠলো! বিশাল প্রেস্টিজের ব্যাপার! এতোক্ষন যারা 'আঙ্কেল' 'আঙ্কেল' বলে আদর করছিলেন, তাদের সামনে কিভাবে বমি করবো? ইস, কি এমন অসুবিধা হতো চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেনলাইনটা থাকলে! আমি ফিসফিস করে আম্মাকে বললাম, 'আম্মা, আমাকে বমির ওষুধের সাথে ঘুমের ওষুধও দাও, আমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে যাই।' আম্মা আমার দিকে রাগতঃ দৃষ্টিতে তাকালেন। পালটা ফিসফিস করে বললেন-'তোকে জানালার পাশের সিট দেবো। জানালার বাইরে মুখ বের করে রাখবি। তাহলে গন্ধ নাকে লাগবে না।'
আমি জানালার পাশের সিটে বসলাম এবং ঘুমিয়ে যাবার প্রানান্ত চেষ্টা করতে করতে একসময় ঘুমিয়েও গেলাম। ঘন্টাখানেক পর আম্মার ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো-'জয় ওঠ ওঠ! পাহাড় দেখবি না?...ওই দেখ পাহাড়!' আমি চোখ খুলে পাহাড় দেখে চমকে গেলাম!

[
আমি এই প্রশ্নটা অনেককেই করেছি, এখনো সুযোগ পেলেই করি। কোনটা বেশী ভালো লাগে? পাহাড় নাকি সমুদ্র? আপনাদেরকেও করছি-বলুনতো কোনটা বেশী ভালো লাগে? পাহাড় নাকি সমুদ্র? কেন বেশী ভালো লাগে? আপনার উত্তর আপনার চরিত্রের একটা অংশ জাস্টিফাই করবে। এইচ,আর নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের বলছি, ইন্টারভিউ বোর্ডে মনস্তাত্বিক ক্যাটাগরিতে এই প্রশ্নটা করে দেখবেন, ফল পাবেন।
]

আমাদের বাস পাহাড়ের পাশ দিয়ে একেবেঁকে যাচ্ছে! কখনো কখনো দুই পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে! চোখের সামনে বিশাল বিশাল উঁচু সব পাহাড়! দৃষ্টি-দিগন্তে রহস্যময় সু-উচ্চ চূড়া! তাকিয়ে থাকতে থাকতে কেমন যেন গা শিউরে ওঠা অনুভূতি হয়! মনে হয়, কি আছে ওই উঁচু পাহাড়ের মধ্যে? পাহাড়ের শরীর ভর্তি রহস্য জাগানিয়া ঘন সবুজ জঙ্গল! দেখলেই দম আটকানো ভয় লাগে! কি আছে ওই জঙ্গলে?

আমি বমি করার কথা ভুলে গেলাম। ঠায় তাকিয়ে রইলাম পাহাড়ের দিকে। বাসের ভিতরে স্টেরিওতে তখন গান চলছে-পরিচিত সব গান। এই গান, পাহাড়, বাসের গতি-সব মিলিয়ে আমি কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেলাম! কেমন একটা নেশা নেশা লাগতে লাগলো! এটাই কি সৌন্দর্য্যের নেশা!
 

Users who are viewing this thread

Back
Top