What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made একাকীত্বের দীর্ঘ ছায়া 🚸➡🚸➡🚸 (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
"আন্টি আসসালামু আলাইকুম । কেমন আছেন আজ?" সত্তরোর্ধ নাসিমা খাতুনকে জিজ্ঞেস করলাম।

"এই তো আছি, যেমন থাকার কথা তেমনই আছি।তোমার কি খবর সিক্তা?"



আমি প্রতিদিন নদীর ধারে সকালে এক ঘন্টা হাঁটি। আমার সাথে হাঁটার জন্য কখনো দু'একজনকে পাই আবার কখনো পাই না। আমার বয়স এখন পঁয়তাল্লিশ বছর। এই বয়সে যে রোগগুলো হবার কথা তা এখনো হয়নি আমার।যেন রোগে ধরতে না পারে, শরীরটা ঠিক থাকে তাই হাঁটি। হঠাত ই কিছুদিন থেকে লক্ষ্য করছি এক মহিলা নদীর ধারে উদাস হয়ে বসে থাকেন। এক মনে নদীর দিকে চেয়ে থেকে নদীর পানি ঢেউ দেখেন।উনার চেহারা দেখলে হঠাত ই মনে হবে নদীর ঐ উথাল পাথাল ঢেউ এই মানুষটার বুকের মধ্যে আছড়ে পড়ছে! আমি অবশ্য কোনদিনও তাকে হাঁটতে দেখিনি। উনি চুপচাপ বসেই থাকেন একটা বেঞ্চিতে। কৌতুহল চাপতে না পেরে একদিন জিজ্ঞেস করলাম,



-আন্টি আপনি কোথায় থাকেন? আগে কখনো দেখিনি তো, তাই জিজ্ঞেস করলাম।



লক্ষ্য করলাম মুহূর্তেই মহিলার চোখ দুটোতে হাসি খেলে গেলো । মিষ্টি হেসে উনি উত্তর দিলেন,

-আমি নাসিমা খাতুন। এখানে পাশেই থাকি।বড় ছেলের কাছে। কি নাম মামনী তোমার? তোমার বাড়ি বা কোথায়? তুমি কিন্তু বেশ ভালোই হাঁটাহাঁটি করো। এটা অবশ্য ভালো। শরীর মন দুটোই ভালো থাকে এক্সারসাইজ করলে। একসময় আমিও রেগুলার হাঁটাহাঁটি করতাম !



-তো আপনি এখন হাঁটেন না কেন আন্টি? হাঁটলে কি কোন সমস্যা হয়? আই মিন শ্বাসের সমস্যা বা পা ফুলে যাওয়া এমন কিছু !



-না না তেমন কিছু না। আচ্ছা তোমার নামটা কিন্তু জানা হলো না। আমি কি প্রতিদিন তোমাকে পাবো এখানে? তোমার সাথে পরিচয় হয়ে ভালো লাগলো। অন্ততঃ কথা বলার মানুষ পেলাম একজন। হোক সে অল্প সময়ের জন্য। তবুও তো পেলাম !



কথাগুলো বলেই নাসিমা আন্টি দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। আমিও আর কথা বাড়ায় না। দ্রুত বাড়ির দিকে পা চালিয়ে হাঁটতে শুরু করি। আমার জন্য যে আমার দুই ছেলে মেয়ে আর স্বামী অপেক্ষা করে আছে। ওরা আবার আমাকে ছাড়া কিছু ভাবতেই পারে না। বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে তবেই ওদেরকে সাথে নিয়ে ব্রেকফাস্ট করি আমি।



রাতে বার বার নাসিমা আন্টির কথা মনে পড়তে লাগলো আমার। কেন যেন মনে হচ্ছে মানুষটার অনেক কথা জমে আছে বুকপাজরে। কিন্তু তার কথা শোনার কেউ নেই। তাই বা হবে কেন? বড় ছেলের কাছে থাকেন। নিশ্চয় নাতি নাতনী আছে! বউমা আছে। কাল জানবো সব।



আমি টানা পঁয়তাল্লিশ মিনিট হাঁটার পর হাঁপাতে হাঁপাতে যেয়ে আন্টির পাশে ধপাস করে বসলাম। বললাম,

-আন্টি চা খাবেন? এখানকার চা অনেক টেষ্টি!



-হ্যাঁ খাওয়া যায়। তবে লেবু চা হতে হবে মামনী।



-চায়ের সাথে কি নিবো আন্টি, বিস্কিট?



-নিতে পারো মামনী। এক সময় আমরাও মর্নিং ওয়াক বা ইভনিং ওয়াক করে কফি খেয়ে বাড়ি ফিরতাম।



আজ আমি ভালো ভাবে লক্ষ্য করে দেখলাম নাসিমা আন্টি ভীষণই সুন্দরী। মানুষটার সাথে কথা বলতে আমারো বেশ ভালো লাগছে। মহিলার চোখে মুখে পোষাকে আভিজাত্যের ছাপ স্পষ্ট। কথা বলার স্টাইলও সুন্দর। আমাকে মামনী মামনী বলেই কথা বলছেন উনি। বললাম,

-আন্টি বলেন আপনার কথা শুনি একটু। আপনি এত্ত সুন্দরী যে তাকিয়ে থাকতেই মন চাই শুধু।



নাসিমা আন্টি উদাস মনে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে কথা বলা শুরু করলেন।

-জানো মামনী এক সময় সুখের সংসার ছিলো আমারো। স্বামী আর দুই ছেলেকে নিয়ে ব্যস্ত জীবন আমারো ছিলো । তোমার আংকেল পেশায় একজন ব্যাংকার ছিলেন । উনি যখন মারা যান তখন আমার বয়স ছিলো মাত্র পঁয়ত্রিশ বছর ! আমার বাবা মা আবারো আমার বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু আমি করিনি। বলতো মামনী দুই ছেলেকে রেখে কিভাবে নতুন বউ সেজে অন্য ঘরে যেতাম!



"আহা! মাত্র পঁয়ত্রিশ বছর তখন আপনার!" আমার বুকের ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। কিছুক্ষণ কথা বলতে পারলাম না আন্টির সাথে।



লক্ষ্য করলাম নাসিমা আন্টির দু'চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আমি চাইলেই তা মুছে দিতে পারতাম কিন্তু মুছিনি। জানি উনি কাঁদলে হয়তো একটু হালকা হবেন। তাই চুপ করে উনার না বলা কথাগুলো শুনছি আমি। দেখলাম আন্টি উনার পার্স থেকে একটা টিস্যু পেপার বের করে চোখ মুছলেন নিজেই। তারপর আবারো বলতে শুরু করলেন,

-বর্তমানে দুই ছেলে, দুই ছেলের বউ আর তিনজন নাতি নাতনীকে নিয়ে জগত আমার। বড় ছেলে নাসিফ একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে বেশ বড় পদেই চাকরি করে। আর আমার বড় বউমা শিপ্রা, সেও একটা প্রাইভেট ব্যাংকে আছে।বউমা বড় ভালো মেয়ে ! বড় নাতি ভার্সিটিতে পড়ে আর নাতনী ক্লাস নাইনে। এইতো এদের নিয়েই আছি এখন।



আন্টির কথার মধ্যেই আমি বললাম,

-আর ছোট ছেলে ? ছোট ছেলে কোথায় থাকে ? কি করে?



-আমার ছোট ছেলের নাম নাফিজ। ও ডাক্তার। নাফিজ প্রায় সতেরো বছর যাবত আমেরিকায় আছে পরিবার নিয়ে। এখনতো পরিবার বলতে শুধু নাফিজ আর নিতু। ছোট ছেলের বউ নিতুও ডাক্তার। ছোট ছেলের ঘরে একটা নাতনী আছে আমার। ওর নাম সিমরিন। জানো সিক্তা আমার এই নাতনী আবার নিউ ইয়র্কে না, ও পড়াশোনা করে ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডে। দারুন মেধাবী আমার এই নাতনী।



মনে মনেই বললাম আমি, স্বামী বেঁচে ছিলেন না তবুও সন্তানদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নাসিমা আন্টি একাই। এমন কঠিন মনোবল আর এমন ত্যাগ এখনকার মানুষের মধ্যে একদমই দেখা যায় না। আন্টির গল্পগুলো শুনতে ইচ্ছা করলেও আমার হাতে এখন আর একটুও সময় নেই। বাড়িতে প্রচুর কাজ আছে আজ আমার। ছুটা কাজের বুয়াটা ছুটি ছুটি করে অস্থির করে মারছে। আমি হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললাম,


-আন্টি আজ আসি। আগামীকাল যদি বেঁচে থাকি তবে দেখা হবে। গল্প শুনবো আপনার।



-আচ্ছা মামনী এসো। আল্লাহ হাফেজ।



"আচ্ছা আমি যদি এখন মারা যায়, তবে তুমি কি করে থাকবে? আমার জন্য তোমার কষ্ট হবে না? শূন্য শূন্য লাগবে না আমাকে ছাড়া এই বাড়িটা? নাকি এখনই বিয়ে করে বউ আনবে?"



আমার এমন কথা শুনে শাফাত পুরোপুরি হকচকিয়ে গিয়েছে। শাফাত আমার স্বামী। এর আগে এমন কথা কখনো বলিনি আমি শাফাতকে। ও আমাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বলে,



-আর তোমার আগে যদি আমি মারা যায়, তবে তুমি কি করে থাকবে? আমাকে ছাড়া কেমন লাগবে তোমার? তখন কি আমাদের বাচ্চাদেরকে ফেলে রেখে তুমি বিয়ে করবে?



আমি আজই প্রথম নাসিমা আন্টির গল্প করলাম শাফাতকে। শাফাত সব শুনে সাফ জানিয়ে দিলো,

" তুমি হাঁটতে যাও ভালো কথা কিন্তু কে কি বললো না বললো সেসব নিয়ে বেশি মাথা ঘামিয়ো না সিক্তা। আমাদের ছেলে মেয়েরা এখনো ছোট। যে মানুষটা তার কষ্টের গল্প করছেন, উনি কিন্তু সন্তানদের জন্যই একটা জীবন একা একা পার করে দিলেন এবং উনি একজন সফল মা!"



নাসিমা আন্টি আজ একটু দেরি করে নদীর ধারে এসেছেন। উনি নিজ হাতে তালের পিঠা বানিয়ে নিয়ে এসেছেন আমার জন্য। কিন্তু আমার আসতে দেরি হওয়াতে উনি চিন্তার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন যে আজ আমি আসবো নাকি আসবো না। আন্টি যখন এসব ভাবছেন ঠিক তখনই দুর থেকে আন্টি বলে ডাকছি আমি। কাছে আসতেই লক্ষ্য করলাম আন্টির চিন্তিত মুখটা মূহুর্তেই ঝলমলে হয়ে উঠলো আমাকে কাছে পেয়ে। এটাকেই বুঝি ভালোবাসা বলে! বললাম,



-আন্টি আজ একটু বেশি হেঁটেছি। তাই দেরি হলো আসতে। তবে আজ থাকবো বেশি সময় আপনার সাথে। আপনার কথা সব সময় মনে পড়ে আমার। বাসায় আপনার গল্পও করি।



-মামনী তোমার জন্য তালের পিঠা বানিয়ে এনেছি। তুমি কি খাও এই পিঠা?



-তালের পিঠা ! খাই না মানে ? উফ আমার খুব পছন্দ ! আন্টি আমি হাতটা ধুয়ে আসি থামেন। তারপর খাই। আচ্ছা আন্টি আমি চায়ের অর্ডারও দিয়ে দেই, কি বলেন?



আমি পিঠা খাচ্ছি আর নাসিমা আন্টির গল্প শুনছি। হঠাতই দেখলাম আন্টির দু'চোখের কোনে পানি জমে আছে। আন্টি বললেন,



-জানো মামনী আমি সাত বছর আমেরিকায় ছিলাম। সাতটা বছর বেশ আনন্দে কেটেছে।



-আমেরিকায়? ছোট ছেলের কাছে তাইতো?



-হ্যাঁ ! আমি আর আমার বেয়ান আমরা একসাথে থাকতাম ছেলের বাসায়।



-বেয়ান থাকতেন মানে ?



-আমার ছোট বউমা নিতুর মা বেয়ান। আমার বেয়াই মারা যাবার পর বেয়ান একা হয়ে যায়। তখন নিতুই ওর মাকে আমেরিকায় নিয়ে যায়। ওদিকে আমাকেও তখন ছেলে আমেরিকায় নিয়ে যাবে। নিতুও জেদ শুরু করেছে। শেষে আমিও চলে যায় এক সময় আমেরিকায়।



-বাহ! বেশ মজা তো! দুই বেয়ান খুব মজা করতেন নিশ্চয়?



-হ্যাঁ মামনী খুব মজা করেছি। ছেলে বউমা বেয়ান সবাই অনেক সম্মান দিয়েছে আমাকে। আমাদের দুই বেয়ানকে আবার অনেকেই দুই বোন বলতো ওখানে। নাফিজ নিতু মেডিকেলে চলে গেলেই শুরু হতো আমাদের দুই বুড়ির কাজ কর্ম। ওদেরকে বিদায় দিয়েই প্রথমে আমি কফি বানাতাম। তারপর কফি খেতে খেতে দুজন মিলে অনেকক্ষণ গল্প করতাম। এত যে গল্প করি তবুও দুজনের গল্প শেষ হতো না।



-বাহ! মজা তো! বেয়ানে বেয়ানে এত্ত মিল প্রথম শুনলাম আমি। সবখানে তো কেবল রেশারেশি! বলেন বলেন আন্টি আর কি কি মজা করতেন? আমার শুনতে বেশ লাগছে।



-জানো সিক্তা আমি তরি তরকারী কাটা কুটি করতাম আর বেয়ান রান্না করতেন। আমি পুরো বাসাটা ঝাড়ু দিতাম, বেয়ান আবার তখন মুছে ফেলতেন বাসাটা। আমাদের দুজনের ভালোই লাগতো। এমন আনন্দ করেই সাতটা বছর চলেছি আমরা। আবার নাফিজ নিতুর ছুটির দিনে আমরা সবাই বেড়াতে যেতাম। তারপর রেস্টুরেন্টে ডিনার খেয়ে বাসায় আসতাম।ইশ! কি আনন্দের ছিলো সেসব সময়। দুই বেয়ান মিলে রোজ বিকালে কখনো সকালে হাঁটতে যেতাম। আজ সবই যে স্মৃতি ! তবে জানো মামনী অনেক কিছুই আছে সে দেশে দেখার মত।



-আপনি চলে আসলেন কেন দেশে ? বুঝেছি বড় ছেলের জন্য মন কেমন করছিলো তাই না আন্টি?



-আমি ঐ সাত বছরের প্রবাস জীবনেও চারবার দেশে এসেছি। হয়তো আরো ক'বছর থাকতাম আমেরিকায়। কিন্তু থাকা হলো না।



-কেন কি হলো? ভালোই তো ছিলেন।



-আমার বেয়ানের ক্যানসার ধরা পড়ার চার মাসের মাথায় উনি মারা গেলেন। আমার চোখের সামনে উনি চলে গেলেন, আমাকে একা করে দিয়ে। মনে হলো...মনে হলো আমার আপন বোন বুঝি চলে গেলো দুনিয়া থেকে। আমি বড্ড একা হয়ে গেলাম মামনী। তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম দেশে ফিরে যাবো। বেয়ানকে ছাড়া আমি একা কিছুতেই পারবো না থাকতে আমেরিকায়। ছেলে বউ কাজে যাচ্ছে কিন্তু আমি কি করবো? আমি তো বড্ড একা। কথা বলার জন্য আমার তো একটা সঙ্গী লাগবে,ছেলেকে বললাম একদিন। সে সময়ে মাঝে মধ্যেই বিকালে আমি বেয়ানের কবরের পাশে যেয়ে উনার জন্য দোয়া করতাম।



নাসিমা আন্টির কথা শুনে আমার দু'চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। মাথা নিচু করে নিজের চোখের পানি মুছি আমি। তারপর পরম মমতায় আন্টিকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে তারও চোখের পানি মুছিয়ে দিলাম।তবুও ঝরঝর করে চোখের পানি পড়ছে তো পড়ছেই আন্টির দুই গাল বেয়ে। কাঁদতে কাঁদতেই আন্টি বললেন,



-মামনী এখন এই বয়সে আর কি করবো বলো? বুড়ো বয়সে অনেক কষ্ট রে মা।আমাদের মত বয়স্ক মানুষের সাথে কেউ কথা বলতে পছন্দ করে না।বয়স্ক মনুষেরও মন আছে, কথা তাদেরও বলতে ইচ্ছা করে।এই জিনিসটা কেউ বুঝতে চায় না। অথচ হায়াত থাকলে সবাইকে বুড়ো হতে হবে । আর তাইতো দশ দিন বাঁচি বা বিশ দিন বাঁচি বা দু'বছর বাঁচি এই বড় ছেলের কাছেই থাকবো। একদিক থেকে আমার কপাল খুবই ভালো। ছেলেদের ভালো বউ পেয়েছি। বড় বউমা খুব ভালো বংশের মেয়ে। ওর মা বাবাও বড্ড ভালো মানুষ। মেয়েকে সব সময় বড় বেয়াই বলেন, শাশুড়ীর যত্ন নিয়ো।বউমা তাই ই করে।



-আন্টি আপনার নিজ দেশের বাড়ি জায়গা জমি সব কোথায়?



-এসব কিছুই এখন নাই মামনী। বিক্রমপুরে আমাদের আদি বাড়ি ছিলো।তোমার খালু সাহেবের মৃত্যুর পরই সব বিক্রী করে দু'ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছি।এখন ওরায় আমার সম্পদ, ওরায় আমার ঘরবাড়ি।



-আন্টি ও আন্টি আমার মনটা যে খুব খারাপ লাগছে!



-কেন মামনী? কি হলো তোমার?



-আমার নিজের কথা ভাবছি আন্টি। আমার বয়সও তো একেবারেই কম না। ভবিষ্যত এ কি অপেক্ষা করছে আমার জন্য, আমি তো জানি না। আপনার ছেলেরা ভালো বউমারা ভালো। আমার তেমনটা না ও হতে পারে। আর আর...!



-কি মামনী?



-আন্টি আমি যে খুব ভালোবাসি অামার স্বামীকে।উনিও খুব ভালোবাসেন আমাকে। আমাদের মধ্যে কে আগে চলে যাবো দুনিয়া থেকে তাও তো জানি না। কেমন হবে তখনকার জীবন আমার বা আমাদের !



-মাগো এত ভেবে চিন্তে কি জীবনে চলা যায়।জীবনের নিয়মে জীবন চলবে। নামাজ কালাম পড়বে। সন্তানদের সুশিক্ষা দিবে, এই তো ! তোমার এখন আসল কাজই হচ্ছে নিজ পরিবারকে সময় দেওয়া। সন্তানদেরকে মানুষের মত মানুষ করা।শুধু লেখাপড়া জানলেই হবে না। মানুষ হতে হবে মানুষ। ধর্মে কর্মে বড় মনের মানুষ!



বাড়ি ফিরেই আমি ঠিক করলাম যতদিন নাসিমা আন্টি এই শহরে থাকবেন ততদিনই আমি উনার সাথে এক ঘন্টা সময় নদীর ধারে গল্প করে কাটাবো। আন্টির সাথে যেয়ে একদিন উনাদের বাসাও চিনে আসবো। যেহেতু বড় ছেলের বউ খুব ভালো মেয়ে, নিশ্চয় উনিও খুশি হবেন। এমন

একজন নাসিমা আন্টির সাহচর্যে থাকলে অনেক কিছুই যে শেখা হয়ে যায়! তবে কেন এই বিষয়গুলো অনেক পরিবারই বোঝেন না? কেন তারা তাদের পরিবারের মা বাবা শ্বশুর শাশুড়ীকে বোঝা মনে করেন? কেনই বা বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে হয় এখনকার অনেক মা বাবাকে? একটু সময় বের করে কি এই বয়স্ক মানুষগুলোর সাথে হাসি মুখে একসাথে থাকা যায় না ? অথচ এই সব মুরুব্বীদের দয়া এবং দোয়াতেই সন্তানরা বড় হোন, তা ভুলে যান কেন কিছু সন্তান?


(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top