What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made প্রাক্তন 🎟🎫🎟🎫🎟🎫🎟🎫🎟🎫 (2 Viewers)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
তিন বছর দুই মাস পর হঠাৎ প্রাক্তনের ফোন কল। আমি কনফারেন্স টা হোল্ড করে বাইরে এসে ফোন রিসিভ করি।

মনের ভেতর চাপা একটা রাগ আর একগাদা অভিমান ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে।

-- কেনো ফোন দিছেন?

-- কেমন আছো?

-- প্রচন্ড ভালো থাকা বুঝেন? আমি প্রচন্ড ভালো আছি।

-- ওহ। তো…

-- তো কি? তাড়াতাড়ি বলেন, আমি অফিসের কাজে ব্যস্ত আছি।

-- ওহ, স্যরি। তোমার কাজে ডিস্টার্ব করলাম। রাখছি।

-- ফোন দেয়ার কারন টা বললে খুশি হতাম।

-- এমনিই। তেমন কিছুনা।

-- ওহ আচ্ছা।

-- ফ্রি হয়ে কল দিতে পারবা? কিছু জরুরী কথা ছিলো।



ব্রেকাপের তিন বছরেরও বেশি সময় পর আমার সাথে রাইসার কি জরুরী কথা থাকতে পারে সেটা মাথায় আসতেছিলোনা। ভাবনাটা বাদ দিতে চাইলাম। কনফারেন্স রুমে ঢুকে সবাইকে স্যরি বলে মিটিং শুরু করলাম আবার। কিন্তু কেনো জানি তিন বছরেরও বেশি সময় পরে আজকে রাইসার কথা আমাকে ভাবাচ্ছে খুব। মিটিং এ কনসেন্ট্রেট করতে পারছিনা। কোনভাবে মিটিং শেষ করে আমার চেম্বারে গিয়ে রাইসার নাম্বারে ডায়াল করলাম। ওয়েটিং এ আছে। একসময় ফোন ওয়েটিং এ থাকা নিয়ে অনেক ঝগড়া হতো আমাদের মাঝে। কিন্তু আজকে ব্যাপার টা আমার কাছে স্বাভাবিকই মনে হচ্ছে।

মিনিট পাচেক পর ও নিজেই কল দিলো।

-- ফ্রি আছো?

-- হ্যা, বলেন।

-- আপনি করে বলছো যে?

-- আমি অপরিচিত মানুষ কে আপনি করেই বলি। সমস্যা?

-- নাহ, সমস্যা নেই।

-- জরুরী কথাটা বলে ফেলেন। ভালো হয়।

-- জানিনা তুমি কথাটা কিভাবে নিবা, তবে খুব প্রব্লেমে পড়ে তোমার সাথে যোগাযোগ করতে বাধ্য হয়েছি।

-- যেভাবে নেয়ার মতো সেভাবেই নিবো৷ না পেচিয়ে বলে ফেলেন।

-- আমাকে একটা হেল্প করতে পারবা?

-- কি হেল্প?

-- আসলে আমার কিছু টাকা দরকার। খুব জরু….

-- হা হা হা হা, ইউজ করা শেষ হয়নাই এখনও? আরও ইউজ করতে চাচ্ছেন আমাকে? তিন বছর আগে তো কম করেন নাই। এখন আবার এসব করে নিজেকে রাস্তার মেয়ে হিসেবে প্রমান করছেন কেনো? প্লিজ, আপনার প্রতি আমার যে শ্রদ্ধাবোধটুকু অবশিষ্ট আছে সেটাও শেষ করে দিয়েন না!

-- স্যরি।



রাইসা ফোন কেটে দিছে। আমি এপাশ থেকে বুঝতে পারলাম ও কান্না করছে। এভাবে কথা বলা আমার উচিৎ হয়নি একদম। রাস্তার মেয়ে বলাটা আরও বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে। ওর প্রতি এতোদিন একটু একটু করে যে রাগ জমেছে সেটা দমিয়ে রাখতে চাইলেও পারিনি আমি।

আজ থেকে তিন বছর দুই মাস আগে আমাদের পাচঁ বছরের সম্পর্ক মুহুর্তেই শেষ হয়ে যায়। তখন আমি সদ্য অনার্স কমপ্লিট করে বেকার জীবনযাপন করছি।

রাইসার প্রভাব আমার জীবনে বেকারত্বের কষ্টটা বুঝতে দেয়নি। সারাদিনের কষ্টটা রাতে ওর সাথে কথা বললে নিমিষেই চলে যেতো। আমার সবকিছু, সকল চিন্তা ভাবনা তখন রাইসাকে ঘিরেই ছিলো।

খুব ভালোবাসতাম ওকে। হয়তো রাইসাও আমাকে ভালোবাসতো। কতোটুক ঠিক জানিনা সেটা। কারন বেকারত্বের কথা টেনে রিলেশনে ইতি টানা মেয়ের ভালোবাসার গভীরতা কতোটুকু সেটা আমার জানা নেই।

রাইসা চলে যাওয়ার বছর খানেক পর আমি একটা প্রডাকশন হাউজে জয়েন করি। আমার এতো ভালো চাকরিটা তখন থাকলে হয়তো আজ আমার জীবনে ভালোবাসা থাকতো। কিন্তু কিছুকিছু ভালোবাসা খারাপ সময়ে পড়লে ভালো সময় আসার অপেক্ষা করেনা। আমার টাও হয়তো সেরকমই ছিলো।

এখন আমি এই প্রডাকশন হাউজের এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হিসেবে আছি। বিলাসবহুল জীবন যাপনের সব কিছুই এখন আমার হাতের নাগালে।

শুনেছি আমার সাথে ব্রেকাপের পর অন্য একটা ছেলের সাথে রাইসার রিলেশন হয়েছিলো। ছেলেটার বাবা অনেক ধনী। রাইসাকে দামী দামী গিফট দিতে পারে, বড়বড় রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়ে ভালোমন্দ খাওয়াতে পারে। কিন্তু আমার সাথে থেকে রাইসা এসবের কিছুই পায়নি। পেয়েছে, একগুচ্ছ হতাশা আর অনিশ্চয়তা। সব মেয়েরই কিছু স্বপ্ন থাকে, আমি রাইসার কোন স্বপ্ন পূরন করতে সক্ষম ছিলাম না তখন।

মাঝেমাঝে ভাবতাম হয়তো রাইসা ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে। শুধুশুধু আমার সাথে থেকে নিজের লাইফটা নষ্ট করবে কেনো?

ব্রেকাপের পর ১ বছর লেগে গেছে নিজেকে স্বাভাবিক করে তুলতে। এখন আমার লাইফের একটাই টার্গেট। শুধু টাকা। আমার দৃঢ় বিশ্বাস টাকা থাকলে অন্য সবকিছু সহজেই পাওয়া যায়। এমনকি বালিকার ভালোবাসাও তখন কিনে নেয়া যায় সহজেই। আমি আমার টার্গেট পূরনের দ্বারপ্রান্তে প্রায়।



আজ যখন রাইসা আমাকে এই টাকার জন্য ফোন দিয়েছে কেনোজানি সেই আগের ক্ষোভ আমি কন্ট্রোল করতে পারিনি।

রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে বিছানায় শুয়ে ভাবছিলাম। ভাবছিলাম বলতে নিজে থেকেই ভাবনাগুলো আসছিলো।

রাইসা কি খুব বেশি প্রবলেমে আছে? ওর কিছু হইলে আমি খুব কষ্ট পাবো। আমি এখনও ওকে ভালোবাসি আগের মতোই। আমার থেকে দূরে থাকলেও আমি চাই ও ভালো থাকুক। আমার প্রথম ভালোবাসা এবং একমাত্র ভালোবাসার মানুষ রাইসা৷ হয়তো সেজন্যই ওর প্রতি তীব্র রাগ, অভিমান জমলেও ওর প্রতি ঘৃনা টা আমার মন তৈরী করতে পারেনি। ওর জন্য কেনো জানি টেনশন হচ্ছিলো খুব।

কোন কিছু না ভেবে নিজের অজান্তেই ফোন দিলাম ওকে। বেশ কিছুক্ষন রিং হওয়ার পর ওপাশ থেকে রাইসার কন্ঠ ভেসে আসলো,



-- হ্যালো!

-- ঘুমাচ্ছিলা?

-- হুমম।

-- তোমার ঘুমভাঙা কন্ঠ এখনও আগের মতোই আছে।

-- ওহ।

-- স্যরি, তখন মাথা ঠিক ছিলোনা। তাই অনেক উল্টাপাল্টা বলে ফেলছি।

-- সমস্যা নেই। আমি কিছু মনে করিনি।

-- তোমার হেল্প লাগবে বলছিলা! কতো টাকা লাগবে?

-- লাগবেনা। আমি ম্যানেজ করতে পারবো।

-- স্যরি বলছি তো।

-- আসলে নাহিদ আমাকে ব্লাকমেইল করতেছে। টাকা চাচ্ছে অনেক। আমার কাছে এতো টাকা নেই, আর তাছাড়া গতবছর বাবা মারা গেছে। বাবা মারা যাওয়ার পর জব খুজছি অনেক, কিন্তু এখনও হয়নি। তাই এতো টাকা কোথাথেকে পাবো বুঝতে না পেরে তোমার কাছে ফোন দিয়েছিলাম।

-- নাহিদ কে?

-- আমার বয়ফ্রেন্ড। ও আমার কিছু ভিডিও রেকর্ড করে এখন ব্লাকমেইল করতেছে। বুঝতেছিনা কি করবো আমি!

-- স্যরি, বুঝতে না পেরে তোমার সাথে তখন খারাপ ভাবে কথা বলছি অনেক। কতো টাকা চাচ্ছে?

-- দুই লাখ টাকা।

-- টেনশন করোনা৷ আমি কালকে টাকা পাঠিয়ে দিবো। আর তুমি চাইলে আমার অফিসে জয়েন করতে পারো। আমি জবের ব্যাবস্থা করে দিবো।

-- টাকা লাগবেনা আমার। কিছুই লাগবেনা।

-- তুমি এখনও রেগে আছো।

-- না না, আমি রেগে নেই। আসলে তোমার সাথে আমিই নিজের স্বার্থের জন্য ব্রেকাপ করেছি৷ অনেক কষ্ট দিছি তোমারে। তারপরেও তোমার কাছে হেল্প চাওয়াটা আমার ঠিক হয়নি। পারলে মাফ করে দিও।

-- এভাবে কেনো কথা বলছো?

-- ঘুম পাচ্ছে খুব। ঘুমাবো।

-- আচ্ছা, শুভরাত্রি।



ফোন রেখে দেয়ার পর তীব্র এক খারাপ লাগা আমাকে চেপে ধরে। রাইসার সাথে ওরকম বিহেভ করা একদমই ঠিক হয়নি আমার। অনেক্ষন ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করছি, ঘুম আসছেনা।

মাথায় পুরোনো নতুন চিন্তারা এসে ভীড় জমাচ্ছে। সেইসব চিন্তা আর ঘুমঘুম ভাব মিলে অন্যরকম একটা অনুভূতি সৃষ্টি করছে। মাতাল মতাল লাগছে খুব। জানালার ধারে গিয়ে সিগারেট জ্বালালাম একটা। গভীর রাত, বাইরে মাঝেমাঝে দু একজন নিশাচর হেটে চলে যাচ্ছে।

সকাল বেলা কলিং বেলের শব্দে আমার ঘুম ভাঙে। দরজা খুলে দেখলাম গোটা কয়েক পুলিশ আমার দরজার সামনে দাড়িয়ে।

আমি তাদের সামনে যেতেই একজন বললো,

-- আপনি মিস্টার সাজ্জাদ?

-- হ্যা। কি হয়েছে?

-- আপনাকে আমাদের সাথে থানায় যেতে হবে।

-- কি হইছে, বুঝিয়ে বলবেন প্লিজ?

-- গতকাল রাতে রাইসা নামের এক মেয়ে মারা গেছে। প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে আপনার নাম আসছে। তাই আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় যেতে হবে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top