What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made জলছাপ ❄❄❄❄❄❄ (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
#এক

আম্মু বিয়ে করবেন শুনে আমি অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ।



আম্মুর সাথে খুব সাধারণ বিষয়ে আলাপের এক পর্যায়ে তিনি বিয়ের প্রসঙ্গটা এমনভাবে তুললেন যেন বিয়ে নয়, আম্মু কোথাও বেড়াতে যাচ্ছেন ।



আমার দৃষ্টিতে রাগ ঘৃণা না কি অনুকম্পা খেলা করছে আমি জানিনা । কিন্তু আম্মু বাধ্য হয়ে চোখ নামিয়ে নিলেন ।



এই প্রথম আমি আম্মুকে পরাজিত হতে দেখলাম । কঠিন এই মহিলা সহজে মাথা নিচু করেন না ।



তিনি চোখ না তুলে অনেকটা জবাবদিহিতার সুরে বললেন ; দেখ মোনা, আমি অনেক ভাবনাচিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি ।



আব্বু মারা গেছেন ঠিক উনিশ মাস তেইশ দিন আগে । আমি আঙুলে হিসেব করে রাখিনি । আমার গোপন একটা ডায়েরি আছে । খুব নিয়মিত না হলেও সেখানে আমি দুই তিনদিন অন্তর অন্তর অনেককিছু লিখে রাখি । বেশিরভাগ লেখায় ঘুরেফিরে আব্বুর স্মৃতিটাই ফিরে আসে ।



আমার বয়স এবার চৌদ্দ ছাড়িয়েছে । আমি এখন অনেককিছু বুঝতে পারি এবং টের পাই । আমার আশপাশের অনেকে আমাকে বোকা ভাবায় আমার সুবিধা হয়েছে । আমি তাঁদের বোকামি আগ বাড়িয়ে ভেঙে দিতে চাইনি কখনো ।



মানুষ বোকা থাকলে অনেক সুবিধা । যদিও আমি আগে তেমন ছিলাম না ।



কিন্তু আম্মু যে বিয়ে করবেন, আমি ঘুনাক্ষরেও টের পাইনি । তিন বেডরুমের ফ্ল্যাটটাতে আমরা দুই ভাইবোন এক রুমে থাকি । মুনিমের বয়স মাত্র আট। আব্বু মারা যাওয়ার মাস ছয়েক পর থেকে সে আমার সাথে থাকে ।

আম্মু মাঝেমাঝে অনেক রাত জেগে আব্বুর কম্পিউটারে কীসব কাজ করেন । মুনিমের ভালো লাগেনা ।



আমার সাথে থাকায় তার একটা সুবিধা হয়েছে । আমার পুরোনো ল্যাপটপটা সে সচল রেখেছে । আব্বু যেদিন আমার জন্য ল্যাপটপটা কিনে এনেছিলেন, আমি সেই ল্যাপটপ নিয়ে চিৎকার করে পুরো বাসা মাথায় তুলে ফেলেছিলাম । ল্যাপটপ কিনে টাকা নষ্ট করার জন্য আম্মু প্রথমে আব্বুর সাথে একটু রাগারাগি করলেন ।



সেই সন্ধ্যা রাতের স্মৃতি আমার পরিষ্কার মনে আছে। আম্মু আব্বুর সাথে রাগ করছেন । আব্বু আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছেন । একসময় আম্মুর রাগ কমে এলে আমি আব্বুর কোলে ঝাঁপিয়ে পড়লাম ।



আব্বুর শরীরটা খুব ফিট ছিল । তিনি অনায়াসে আমাকে গলায় ঝুলিয়ে রাখলেন ।



আমাদের বাসায় ছোটখাটো কিছু কেনা হলে আমরা রাতে বাইরে খেতে যেতাম । সেইরাতেও ব্যতিক্রম হয়নি । চুরি হয়ে যাওয়ার ভয়ে আমি ল্যাপটপটা আমার বিছানার নিচে ময়লা একটা কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখেছিলাম ।



আমি জানি চোর ময়লা কাপড় দেখলে ভাববে এটা দামি কিছু নয় ।



আমরা মোটামুটি সাধারণ মানের একটা চায়নিজ রেস্টুরেন্টে খেতে গেলাম । আমি খুব তাড়াতাড়ি খাচ্ছিলাম দেখে আম্মু মৃদু ধমক দিয়েছিলেন ।

ল্যাপটপ নিয়ে আমার দুঃশ্চিন্তা তো আম্মু জানেনা।



আব্বু তাঁর দুজন বন্ধুর সাথে বায়িং হাউজের ব্যবসা করতেন । আব্বুর বোধহয় তেমন লাভ হচ্ছিল না । নইলে আব্বুও নিশ্চয় রাশেদ আংকেল আর জুবের আংকেলের মতো গাড়ি কিনতেন ।



আমাদের সংসারে টাকার জৌলুস ছিলনা । কিন্তু আমরা সুখী ছিলাম । আব্বু মাঝেমাঝে আমাদের নিয়ে বেড়াতে যেতেন । দিনেদিনেই ফিরে আসতাম আমরা । একবার কক্সবাজার গিয়ে তিনদিন ছিলাম। রাতে ফেরার সময় প্রায়ই বাইরে খাওয়া হতো ।



আমি খেয়াল করে দেখেছি আব্বু চায়নিজ কিংবা সাধারণ রেস্টুরেন্টের ওয়েটারদের সাথেও ভালো ব্যবহার করতেন । আমাকেও তাদের সামনে থ্যাংকস দিতে বলতেন ।



আব্বু আমাকে আধুনিক মনমানসিকতায় বেড়ে ওঠার পাশাপাশি বিনয়ী আর আর ভদ্র ব্যবহারের শিক্ষা দিতেন । আমি এগারো বছর বয়সে কোরান শরীফ পড়া শিখে ফেললাম ।



যে সপ্তাহে আমার কোরান শরীফ খতম হলো, সেই সপ্তাহের শুক্রবার বিকেলে আব্বু নিজে মাঝারি সাইজের বেশকিছু গোলগোল হালুয়া বানিয়ে আমাদের পাঁচতলা ফ্ল্যাটের সব বাসায় পাঠালেন । মাগরিবের নামাজের সময় মসজিদেও নিয়ে গেলেন।



আব্বুর খুশি দেখে আমার চোখ দিয়ে পানি আসছিল । বিকেলে আমার হুজুরের কাছে পড়তে ভালো লাগত না । আমি বরং ছাদে আমার বান্ধবীদের সাথে গল্প করতে পছন্দ করতাম । অবশেষে সপ্তাহে চারদিন করে দুই বছরে আমি কোরান শরীফ খতম করলাম ।



আমার কান্না আব্বু আম্মু কোনদিন দেখতে পাননি । আমার কান্নার জন্য প্রিয় ছিল বাথরুম । ট্যাপের পানি ছেড়ে দিয়ে কাঁদতাম আমি । বেশি কাঁদলে চোখ দুটো লাল হলে আম্মুর কাছে এসে বলতাম চোখে কী যেন কামড় দিয়েছে ।



আম্মু খুব একটা হাসতেন না । কিন্তু চোখে কামড় শুনলে মৃদু হেসে আঁচলে জোরে জোরে ফুঁ দিয়ে আঁচলটা চোখে চেপে ধরতেন ।



আব্বু যে রাতে মারা গেলেন, সেই রাতের কথা আমার আজীবন মনে থাকবে । খাওয়া শেষ হলে টেবিলে বসে আমরা গল্প করছিলাম ।



আব্বু হঠাৎ আম্মুকে ডেকে বললেন ; লায়লা, আমার শরীরটা ভালো লাগছেনা ।



আম্মু চোখ তুলে তাকালেন । ততক্ষণে আব্বুর চোখেমুখে বেদনার ছাপ পড়তে শুরু করেছে । আব্বু বুকটা খামচে ধরে আছেন । বাইরে তখন তুমুল বৃষ্টি ।



আম্মুর কাঁধে ভর দিয়ে আব্বু বিছানায় শুয়ে নিজের হাতের তালুর দিকে তাকালেন ।

আম্মু বড় মামাকে তাড়াতাড়ি আসার জন্য ফোন দিলেন । আমার বড় মামা এমনিতে রাগী মানুষ । কিন্তু খুব খারাপ পরিস্থিতিতে ওনার মাথা খুব ভালো কাজ করে ।

বড় মামা এম্বুলেন্স কল করে তুমুল বৃষ্টির মধ্যে বাইক নিয়ে রওয়ানা হলেন ।



আমি আব্বার পাশে বসে মুখস্থ সব দোয়া দুরুদ পড়ছি । আমার চোখ দিয়ে এই প্রথম আব্বুর সামনে পানি পড়ছিল ।



আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছিল । ভয় পাইনি কিন্তু প্রচন্ড হতাশা আর অবসাদ আমাকে গ্রাস করে নিচ্ছিল । কীভাবে যেন টের পাচ্ছিলাম আব্বু মারা যাচ্ছেন ।

হটাৎ করে আব্বু আমার দিকে তাকিয়ে বললেন ; কাঁদছিস কেন বোকা মেয়ে ? আমি কি মারা যাচ্ছি না কি ?



আব্বু প্রাণপণে হাসতে চেষ্টা করছেন । কয়েকদিন ধরে আমাদের কলিংবেল কাজ করছেনা । দরজায় জোরে জোরে আঘাতের শব্দ পেয়ে আমার ভেতর অদ্ভুত এক নিরাপত্তাবোধ কাজ শুরু করল ।



বড় মামা এসে গেছেন । আমি দরজা খোলার জন্য উঠতে গেলে আব্বু আমার বাঁহাত ধরে একটু কাছে টানলেন । আব্বুর চোখেমুখে অপার্থিব বেদনার ছাপ । তিনি সব কষ্ট উপেক্ষা করে আমাকে বুকে টেনে নিলেন ।



অনেকদিন পর আব্বুর বুকের ধুকধুক ধুকধুক শব্দ শোনার জন্য আমি জড়িয়ে ধরে আব্বুর বুকে কান পাতলাম । ক্ষীণ সেই শব্দটা ক্রমশ কমে যাচ্ছে । আব্বু আমাকে প্রাণপণে ধরতে চাইছেন ।



ওনার পেটানো শরীরের হাতদুটো সময়কালে বিশ্বস্ততার প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হলো । তিনি আমার কপালে ঠোঁট রাখলেন । ক্রমশ শীতল হয়ে আসা ঠোঁটের স্পর্শে আমি কেঁপে কেঁপে উঠছি ।



আব্বু শ্বাস টেনে টেনে বললেন ; আম্মু, তোমাদের বড় ভালোবাসিরে মা । আব্বুর জন্য সবসময় দোয়া কর । আব্বু না থাকলেও তোমাদের কষ্ট হবে না ।



কথার সাথে আব্বুর হেঁচকি উঠল । তিনি বড় মামার দিকে সকরুণ দৃষ্টিতে তাকালেন ।



বড় মামা আব্বুর বুকে এক হাতের উপর অন্যহাত রেখে জোরে জোরে চাপ দেওয়ার পাশাপাশি কলেমা পড়ছেন । সেইসাথে চিৎকার করে বললেন ; রাজু, স্টে উইথ আস ।



অনেকদিন পর আব্বুকে কেউ নাম ধরে ডাকলেন ।

আব্বু বিড়বিড় করে কী যেন বলতে বলতে আমার দিকে তাকালেন । আব্বুর চোখের ভেতর আমি অসীম এক শূণ্যতা দেখলাম ।



আমার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছিল ; আব্বু, তুমি ছাড়া আমার জীবন অচল হয়ে যাবে । আমি বলতে পারিনা ।

মানুষ কখনোই সময়মতো সঠিক কথা বলতে পারেনা ।

আমার মন বলছিল আব্বু পৃথিবীর কিছু দেখছেন না ।



একসময় এম্বুলেন্স এল । ততক্ষণে আব্বু ডানদিকে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন । ওনার চোখ দুটো একটু খোলা ছিল ।

নাটক সিনেমায় দেখা দৃশ্যের মতো বড় মামা চোখের পাতা দুটো আস্তে করে বুজিয়ে দিলেন ।



আমরা ঘন্টাদুয়েকের ভেতর ক্লিনিক থেকে আব্বুর লাশ নিয়ে ফিরে আসলাম ।



আব্বু মারা গেছেন বড়জোর বিশ মিনিটের ভেতর । অথচ আমার কাছে মনে হচ্ছিল আমরা অনন্তকাল আব্বুর সামনে ছিলাম ।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top