What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ইতালি বনাম অটোমান লিবিয়া: বিশ্বের সর্বপ্রথম বিমান হামলার গল্প (1 Viewer)

mastiguybd

Member
Joined
Oct 13, 2019
Threads
3
Messages
101
Credits
968
১৯১১ সালের ১ নভেম্বর। লিবিয়ার আকাশের বুক চিরে ছুটে যাচ্ছে ছোট একটি Etrich Taube মনোপ্লেন। পাইলটের নাম জুলিও গ্যাভোত্তি , তিনি ইতালিয়ান বিমান বাহিনীর একজন লেফটেন্যান্ট। তার সাথে একটি চামড়ার ব্যাগে আছে ৪টি হ্যান্ড গ্রেনেড। তার উদ্দেশ্য, ত্রিপলীর আইন জারাতে অবস্থিত অটোমান সেনাবাহিনীর একটি ঘাঁটিতে এই গ্রেনেডগুলো নিক্ষেপ করবেন।
সে সময় তিনি হয়তো জানতেন না, পরবর্তীতে তার দেখানো পথ ধরেই পৃথিবীর যুদ্ধের ইতিহাসের বর্বরতম ঘটনাগুলো ঘটবে। হিরোশিমা-নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ থেকে শুরু করে আফগানিস্থান-ইরাক-সিরিয়াতে প্রতিনিয়িত ড্রোন হামলার মতো ঘটনাগুলোর প্রথম উদাহরণ তিনিই সৃষ্টি করে গিয়েছিলেন।

গ্যাভোত্তি যখন লিবিয়াতে প্লেন থেকে বোমা নিক্ষেপ করছেন, তখনও নিচে অবস্থিত লিবিয়ানরা সহ বিশ্বের অনেকেই প্লেনের নামও শোনেনি। এর মাত্র আট বছর আগে, ১৯০৩ সালে রাইটস ভ্রাতৃদ্বয় বিশ্বের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সফলভাবে উড়োজাহাজে করে আকাশে উড়ে বিশ্বকে চমকে দিয়েছিলেন। রাইটস ভ্রাতৃদ্বয় উড়োজাহাজ আবিষ্কার করেছিলেন নিছকই তাদের অ্যাডভেঞ্চারের নেশা থেকে। কিন্তু খুব বেশিদিন তারা সেই নেশায় মত্ত ছিলেন না।
খুব দ্রুতই তারা আমেরিকা, ফ্রান্স, জার্মানি সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীর সাথে বিমান সরবরাহ এবং বিমান পরিচালনার ট্রেনিংয়ের চুক্তি করতে শুরু করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯০৯ সালে তারা যখন ইতালির রোমে তাদের উড়োজাহাজের প্রদর্শনী করতে যান, তখন ইতালিয়ানরা তাদের কাছে প্লেন চালানোর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। শীঘ্রই ঔপনিবেশিক ইতালিয়ানরা নিজেরাই প্লেন তৈরি করে এবং যুদ্ধক্ষেত্রে সেগুলোকে ব্যবহারের প্রস্তুতি নিতে থাকে।

সাম্রাজ্যবাদী ইতালি লিবিয়ার উপর আক্রমণ করে এর দু'বছর পরেই, ১৯১১ সালে। সেসময় লিবিয়া ছিল অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে থাকা তিনটি প্রদেশ- ত্রিপলীতানিয়া, সাইরেনাইকা ও ফেজ্জানের সমন্বয়ে গঠিত। দীর্ঘ সময় ধরে বিশাল এলাকা শাসন করার পর উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে অটোমান সাম্রাজ্য ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে আসছিল। রাশিয়া সহ বিভিন্ন ইউরোপীয় রাষ্ট্র বিভিন্ন দিক থেকে অটোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন প্রদেশ আক্রমণ করে দখল করে নিচ্ছিল। ক্ষয়িষ্ণু অটোমান সাম্রাজ্যের সমৃদ্ধশালী এলাকাগুলো দখলের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে থাকতে চাইল না ইতালিও।
১৯১১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সাম্রাজ্যবাদী ইতালি অটোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ইতিহাসে এই যুদ্ধ ইতালো-তার্কিশ যুদ্ধ, তার্কো-ইতালিয়ান যুদ্ধ, ত্রিপলিতানিয়ান যুদ্ধ, লিবিয়ান যুদ্ধ প্রভৃতি নামে পরিচিত। সেসময় মিসর ছিল ব্রিটিশদের দখলে। তাই অটোমানদের পক্ষে লিবিয়াকে রক্ষা করার জন্য তুরস্ক থেকে নতুন কোনো সৈন্য পাঠানো সম্ভব ছিল না।

অক্টোবরের ৪ তারিখে তারা লিবিয়াতে প্রায় বিনা বাধায় প্রবেশ করে এবং নভেম্বরের ৫ তারিখের মধ্যে ইতালি তৎকালীন ত্রিপলীতানিয়া (ত্রিপলী সহ লিবিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল) এবং সাইরেনাইকা (বেনগাজী সহ লিবিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চল) প্রদেশ দুটোর অধিকাংশ এলাকা দখল করে নেয়। তার্কিশরা বুঝতে পারে, শক্তিশালী ইতালিয়ান বাহিনীর বিরুদ্ধে টিকে থাকতে হলে তাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর দখল ধরে রাখতে হবে। তাই বিস্তীর্ণ অঞ্চল হারালেও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো, যেমন- বিভিন্ন পানির উৎস সম্বলিত মরুদ্যান এলাকাগুলো তার্কিশদের দখলে রয়ে যায়। এরকম দুটি গুরুত্বপূর্ণ মরুদ্যান ছিল ত্রিপলীর আইন জারা এবং তাজুরা।
সমসাময়িক অন্যান্য যুদ্ধের তুলনায় এই যুদ্ধের ব্যাপ্তিকাল অনেক কম ছিল- মাত্র এক বছর (২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯১১ থেকে ১৮ অক্টোবর, ১৯১২)। কিন্তু এই যুদ্ধে ইতালিয়ানদের বিজয় ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোকে জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হতে সাহায্য করেছিল, যেটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারণ। যুদ্ধে প্রযুক্তি ব্যবহারের দিক থেকেও এই যুদ্ধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ এই যুদ্ধের মধ্য দিয়েই সর্বপ্রথম যুদ্ধে বিমানের ব্যবহার শুরু হয়।

ঐ বছরের ১৫ অক্টোবর ইতালি তাদের সম্পূর্ণ বিমান বাহিনীকে লিবিয়াতে প্রেরণ করে। সে সময় তাদের বিমান বাহিনীতে ছিল ৯টি বিশেষ যুদ্ধ বিমান এবং ১১ জন পাইলট। এই পাইলটদের মধ্যে দুজন ছিলেন ক্যাপ্টেন কার্লো পিয়াজ্জা এবং লেফটেন্যান্ট জুলিও গ্যাভোত্তি। ২৩ অক্টোবর, ১৯১১ তারিখে কার্লো পিয়াজ্জা বিশ্বের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো যুদ্ধক্ষেত্রে বিমানে করে শত্রু ঘাঁটির উপর দিয়ে উড়ে বেড়ান তার্কিশ বাহিনীর অবস্থান সম্পর্কে তথ্য অনুসন্ধান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে। এর ক'দিন পরেই ১ নভেম্বর, জুলিও গ্যাভোত্তি প্রথমবারের মতো প্লেন থেকে শত্রু ঘাঁটির উপর বোমা নিক্ষেপ করেন।
জেরার্ড জে. ডি গ্রুট তার 'The Bomb' বইয়ে বর্ণনা করেন, গ্যাভোত্তি নিজেও একজন অনুসন্ধানী পাইলট ছিলেন, যার কাজ ছিল প্লেন থেকে নজরদারি করে লিবিয়ায় অবস্থিত অটোমান তার্কিশদের ঘাঁটিগুলো সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা। কিন্তু উচ্চাকাঙ্ক্ষী গ্যাভোত্তি শুধু নজরদারির কাজে নিজেকে আবদ্ধ না রেখে তার উপরস্থ কর্মকর্তাদের নির্দেশ ছাড়াই তার্কিশ ঘাঁটির উপর আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেন।

বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গ্যাভোত্তি তার বাবার কাছে লেখা এক চিঠিতে এই ঘটনার বর্ণনা করেন এভাবে-

"আজ আমি প্লেন থেকে বোমা নিক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরাই প্রথমবারের মতো এটা চেষ্টা করব এবং যদি আমি সফল হই, তাহলে খুবই খুশি হব যে, আমিই প্রথম ব্যক্তি হিসেবে এটা করেছি।"

চিঠিটি বিবিসির হস্তগত হয় তার দৌহিত্র পাওলো দি ভেচ্চির মাধ্যমে। এই চিঠিতে তিনি আরও লেখেন, ইতালি থেকে তাদের কাছে দুই বাক্স নতুন বোমা এসেছে। আশা করা হচ্ছে তারা এগুলোকে শত্রুবাহিনীর উপর নিক্ষেপ করবেন, যদিও তাদের উপরস্থ অফিসাররা তাদেরকে এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেননি।
গ্যাভোত্তি তার যাত্রা শুরু করেন আইন জারার মরুদ্যানে অবস্থিত তার্কিশ ঘাঁটির উদ্দেশ্যে। বর্তমানে এটি ত্রিপলীর পূর্বে অবস্থিত একটি শহর, কিন্তু সেসময় গ্যাভোত্তির ভাষায় এটি ছিল শুধু বিশাল মরুর বুকে এক টুকরা মরুদ্যান, যেখানে অটোমান তার্কিশ সেনাবাহিনীর একটি ঘাঁটি ছিল। গ্যাভোত্তি তার পায়ের কাছে একটি চামড়ার ব্যাগে করে বোমাগুলো নেন। তার ভাষায়, বোমাগুলো ছিল আকারে ছোট এবং গোলাকার, যেগুলোর প্রতিটির ওজন ছিল প্রায় দেড় কেজি।

গ্যাভোত্তি তিনটি বোমা রাখেন চামড়ার ব্যাগটির ভেতরে এবং চতুর্থ বোমাটি রাখেন তার জামার সামনের পকেটে। আইন জারার তার্কিশ ক্যাম্পের কাছাকাছি পৌঁছার পর তিনি এক হাতে স্টিয়ারিং হুইলের নিয়ন্ত্রণ নেন এবং অন্য হাতে পকেট থেকে বোমাটি বের করে তার কোলে রাখেন। এরপর তিনি একটি বিস্ফোরক বের করেন এবং সেটিকে গ্রেনেডের সাথে আটকে দেন।
এরপর ঘাঁটির ঠিক উপরে আসার পর তিনি বোমার উপর থেকে সাবধানে সিকিউরিটি ট্যাগটি তুলে ফেলেন। তারপর তিনি জানালা এড়িয়ে বোমাটি বাইরে নিক্ষেপ করেন। জানালা দিয়ে কয়েক সেকেন্ড ধরে বোমাটিকে পড়তে দেখেন গ্যাভোত্তি। এরপরই তার চোখে পড়ে ঘন কালো ধোঁয়া উপরের দিকে উঠে আসছে। তিনি বুঝতে পারেন, তার বোমাটি শত্রুঘাঁটিতে আঘাত করতে সক্ষম হয়েছে। এরপর তিনি বাকি দুটি বোমাও একই পদ্ধতিতে নিক্ষেপ করেন। সর্বশেষ বোমাটি নিয়ে তিনি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মরুদ্যান তাজুরার দিকে উড়ে যান এবং সেখানে নিক্ষেপ করেন।

সেদিনের বিশ্বের প্রথম এই বিমান আক্রমণে ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে অবশ্য ভিন্নমত আছে। কেউ দাবি করেন, বোমাগুলো লক্ষ্য অনুযায়ী আঘাত করতে পারেনি এবং এতে কোনো তার্কিশ সৈন্য আহত বা নিহত হয়নি। আবার কেউ দাবি করেন, বোমাগুলো নিক্ষেপ করা হয়েছিল আইন জারা হাসপাতালের উপর এবং সেখানে বেশ কিছু বেসামরিক জনগণও হতাহতের শিকার হয়েছিল।
তবে সেদিনের ফলাফল যাই হোক না কেন, দখলদার ইতালিয়ান বাহিনীর লেফটেন্যান্ট গ্যাভোত্তির শুরু করে যাওয়া এই নতুন যুদ্ধ কৌশলের মাধ্যমে বিশ্ব যে এক নতুন সহিংসতা, ভয়াবহতা আর অমানবিকতার নতুন যুগে প্রবেশ করে, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।
বিশ্বের প্রথম বিমান হামলার ইতিহাসের সাথে অবশ্য স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বের প্রথম বিমান ভূপাতিত করার ইতিহাসও জড়িয়ে আছে। এর কৃতিত্বের দাবিদার অটোমান তুর্কিরা। ২৫ অক্টোবর, ১৯১১ তারিখে যখন ইতালিয়ানরা অটোমান ঘাঁটিগুলোর উপর দিয়ে বারবার উড়ে যাচ্ছিল তথ্য সংগ্রহের জন্য, তখনই তার্কিশ সেনারা রাইফেলের গুলিতে একটি প্লেনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে সক্ষম হয়। পরে ১৯১২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, তবরুক্বের আকাশে রাইফেলের গুলিতে প্রথম বিমান ভূপাতিত করে তার্কিশরা।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top