What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made বড় ভাবী 🙍🙍🙍🙍🙍☍☍☍☍☍ (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
আজ আমার মিয়া ভাইয়ের দ্বিতীয় বার বিয়ে।সকাল থেকে মা তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন। মা বুদ্ধিমতী, রাগী, রাশভারী এবং একটু সেকেলে। মা'র উপরে কথা বলার সাধ্য আমাদের কারোরই নেই। বড়ো ভাবিকে মা ঘরে আটকিয়ে রেখেছেন কোন এক অজ্ঞাত কারণে ভাবি আজকে চিৎকার চেচাঁমেচি করছে না, জানালার গ্রিল ধরে ভাবি অবাক হয়ে সবার সাজগোজ দেখছে।আমার বড়ো ভাবি মানসিক ভারসাম্যহীন যা কে সহজ বাংলা কথায় বলে পাগলী।

বড়ো ভাবি ইশারায় আমাকে ডাক দিলো জানালার কাছে যেতেই বলে উঠলো এই রুমি বাড়িতে কি বিয়ে? কার বিয়ে? তোমার মিয়া ভাই পাগড়ি পরেছে কেন?

আমি কোন জবাব দিতে পারলাম না বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে চোখে পানি চলে আসছে, আমি দ্রুত সরে আসলাম।ভাবি সমান তালে রুমি রুমি করছে।

মাত্র দুইবছর আগে বড় ভাবি এই বাড়িতে বউ হয়ে আসে। ভাবি তখন সবেমাত্র এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে বাচ্চা একটা মেয়ে কি মায়াকাড়া চেহারা, বাবা মা বেঁচে নেই চাচার সংসারে আশ্রিতা।

আমার মা পুত্রবধু হিসেবে অল্প বয়সী মেয়ে খুঁজতেন, মায়ের বক্তব্য ছিলো অল্প বয়সী মেয়েরা হয় কাদার দলা যেমন খুশি গড়ে নেওয়া যায় আর বেশি বয়সী শিক্ষিত মেয়েরা হলো পোড়া মাটি এদের কোন আকার দেওয়া যায় না। তাই যখন সোমা নামে অল্প বয়সী মেয়ের কথা মা'র কানে এলো তখন এক মূহুর্ত দেরি না করে কোন দেনা পাওনা ছাড়াই মা, সোমা নামের মেয়েটির সাথে মিয়া ভাইয়ের বিয়ের কথা পাকা করলেন।

আমরা চার ভাইবোন, আমি যখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি তখন বাবা হঠাৎ স্ট্রোক করে মারা যান মিয়া ভাই তখন অনার্স ফাইনাল ইয়ারে আপা এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে আর ছোট ভাই এসএসসি পরীক্ষা দেবে।সে সময় মা শক্ত হাতে সংসার আগলে রাখেন।

মিয়া ভাই তার বান্ধবী চৈতি আপুকে খুব ভালবাসে। চৈতি আপুদের বাড়ি আমাদের বাড়ির পাশে।দু'জন একসাথে পড়াশোনা করে।

মিয়া ভাই পড়াশোনা শেষ করে যখন চাকরি পেলো তখন একদিন সাহস করে মাকে বলল, মা আমি চৈতি কে ভালবাসি আমি ওকে বিয়ে করতে চাই।

মা আঁতকে উঠে বললেন,অসম্ভব চৈতির সাথে তোমাকে আমি কোনদিনও বিয়ে দেবো না।একে ঐ মেয়ের বয়স বেশি শিক্ষিত তার উপর বাড়ির পাশে বাড়ি ঐ মেয়ে কোনদিনও আমাকে মানবে না, নিজের স্বাধীন মতো চলবে।এরপরও যদি তুমি আমার কথা অমান্য করে চৈতি কে বিয়ে করো তাহলে ঐ বউকে তো আমি কোনদিনও মেনে নেবো না উপরন্তু তোমাকে ত্যাজ্য পুত্র করতে দু'বার ভাববো না।

মিয়া ভাই কোন ভাবেই মা'কে রাজি করাতে পারিনি। এর কিছুদিন পর চৈতি আপুর বিয়ে হয়ে যায়। চৈতি আপুর বিয়ের পর থেকে মিয়া ভাই কেমন যেন কঠিন মানুষ হয়ে গেছে!

মিয়া ভাইয়ের অনেক জায়গার থেকে বিয়ের প্রস্তাব এসেছিলো কিন্তু মা এককথায় বলে দিতো আগে মেয়ের বিয়ে দেবো তারপর ছেলে বিয়ে দেওয়ার চিন্তা করবো।

আপা যখন অনার্স শেষ বর্ষে পড়ে তখন আপার বিয়ে হয়। আমাদের বাড়ি থেকে আপার শ্বশুরবাড়ি কাছে, রিকশায় করেই আসা যাওয়া করা যায়।আপা সপ্তাহে এক দুইবার বাড়ি আসে।আপা একটু অন্যধরনের মেয়ে, যেখানেই যাক না কেন তাকে প্রাধান্য দিতে হবে। কথা লাগা লাগিতে আপা উস্তাদ।

আপার বিয়ের দুই মাস পরেই মা'র এক পরিচিত, সোমা ভাবির সাথে মিয়া ভাইয়ের বিয়ের প্রস্তাব আনে।মা একবার মেয়ে দেখেই বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে বাড়ি ফেরে।

সোমা ভাবির চাচা দেখলেন বিনা খরচে এতিম মেয়ে পার হয়ে যাচ্ছে তিনি ছেলের বয়সের দিকে তাকালেন না, ভাবির সাথে মিয়া ভাইয়ের বয়সের পার্থক্য কম করে হলেও ১২ বছর।

মিয়া ভাইয়ের বিয়েতে আমরা ত্রিশ জন বরযাত্রী গিয়েছিলাম,কনে পক্ষরা আমাদের এতটুকু যত্ন আপ্যায়ন কিচ্ছু করেনি।আপা রাগে গজগজ করতে লাগলো, এ কোন ছোটলোক বাড়ি মা মিয়া ভাইয়ের বিয়ে দিচ্ছে! এর চেয়ে আমার মামা শ্বশুরের মেয়ের সাথে বিয়ে হলে ভাল হতো।

বড় ভাবি আমার থেকে মাত্র এক বছরের বড়, ভাবির সাথে আমার খুব ভাব হলো।একদিন রাতে মা আমাকে ডেকে বললেন, রুমি বৌমার সাথে তুমি বেশি গল্প করবে না, যা কথাবার্তা আমার সামনে বলবে।আমার আড়ালে তোমাদের কে একসাথে যেন না দেখি।

সাহসে ভর করে মা কে জিগ্যেস করলাম ভাবির সাথে বেশি গল্প করলে কি হবে মা?

তোমার পড়াশোনার ক্ষতি হবে তাছাড়া তুমি অবিবাহিত একটা মেয়ে আর বৌমা বিবাহিত,তোমরা যদি আমার আড়ালে গল্প করো তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই বৌমা তাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যেসব কথা হয় তার অনেক কথাই তোমাকে বলবে এতে তুমি এঁচোড়ে পেকে যাবে।আমি যেন কক্ষনোই তোমাদেরকে আড়ালে গল্প করতে না দেখি।

মিয়া ভাই চাকরি করে খুলনায় আর আমাদর বাড়ি যশোরে। প্রতি সপ্তাহে মিয়া ভাই বাড়ি আসে।বাড়ি এসেই মিয়া ভাই মা'র ঘরে ঢোকে, মা'র সাথে সংসারের নানা বিষয়ে কথা বলে বাজারে যায় সারা সপ্তাহের বাজার করে নিয়ে আসে।সন্ধ্যার পরে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে অনেক রাতে বাড়ি ফেরে, ভাবির সাথে মিয়া ভাই খুব কম কথা বলে।

মা খুবই রাশভারী, ভাবির সাথে সহজ ভাবে মিশতে পারে না। ভাবি ছোট মানুষ মা কে খুব ভয় পায়।মা সংসারের কোন কাজ করে না কিন্তু সংসার মা'র হাতের মুঠোয় মা যেভাবে বলে ভাবি কে সেভাবে কাজ করতে হয়। রাতে টিভি দেখারও সুযোগ নেই। মা'র ঘরে টিভি, ভাবি সাহস করে মা'র ঘরে টিভি দেখতে যেতে পারে না। ছোট ভাইয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে বাড়ি খুব কম আসে। আমার সামনে এসএসসি পরীক্ষা কোচিং আর পড়াশোনা নিয়ে ব্যাস্ত থাকি বাড়িতে মা আর ভাবিই বেশি সময় থাকে।সারাদিন ভাবি চুপচাপ মন মরা হয়ে কাজকর্ম করে, মাঝে মাঝে জানালা দিয়ে উদাস হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। ভাবি কে দেখে আমার খুব কষ্ট লাগে।ছোট বেলা থেকে মা বাবার আদর থেকে বঞ্চিত আবার শ্বশুরবাড়ি এসেও সেভাবে স্বামীকে কাছে পায় না, ভাবির জীবনে কোন আনন্দ নেই।

আপা একদমই ভাবি কে দেখতে পারে না। ভাবির বিপক্ষে মা'কে শুধু উস্কানি দেয়।ভাবি যে সব কথা আপাকে বলেনি আপা অবলীলায় ভাবির নামে মায়ের কাছে মিথ্যা নালিশ করে।ভাবির একটাই অপরাধ বিয়ের সময় ভাবির চাচারা আপাকে প্রাধান্য দেয়নি, আমাদেরকে ঠিকমতো আপ্যায়ন করেনি।ভাবিকে কোন রকম ফার্ণিচার জিনিস পত্র দেয়নি। মিয়া ভাই কে সামান্য একটা আংটি পর্যন্ত দেয়নি।

এসব কিছুর জন্য তো ভাবি দায়ী না। আপা ভাবির সাথে খারাপ ব্যবহার করলে আমার অনেক কষ্ট লাগে।একদিন আপা মায়ের কাছে ভাবির নামে মিথ্যা নালিশ করছে, আমার খুব খারাপ লাগলো সাহস করে মা'র সামনে যেয়ে আপাকে বললাম,তুমি এতো কুটনি কেন?এতো মিথ্যা কথা বলো কেন? আজ যদি তোমার ননদ তোমার সাথে এমন করতো তাহলে তোমার কেমন লাগতো?

আপা নাকি কেঁদে মাকে বলল,আপনার সামনে ঐটুকু মেয়ে আমাকে মিথ্যাবাদী বললো! আপনি যদি এর বিচার না করেন তাহলে আমি আর কোনদিনও এই বাড়িতে আসবো না।

মা এগিয়ে এসে আমার গালে সজোরে চড় মেরে বললেন, তোমার এতবড় সাহস বড় বোনকে অসম্মান কর! আমি যেন কোনদিনও তোমাকে বৌমার হয়ে কথা বলতে না দেখি।

আমি আর কোনদিনও ভাবির পক্ষ নিয়ে একটাও কথা বলিনি। আমাদের বাড়ির উঠানে বকুল গাছ আছে বকুল তলাটা খুব সুন্দর করে বাঁধানো। ভাবির হাতে যখন কাজ থাকে না তখন চুপচাপ বকুল তলায় বসে থাকে।

ভাবির চাচা মাত্র একবার আমাদের বাড়ি এসেছিলেন তারপর আর কোনদিন ভাবির খোঁজ খবর নেয়নি। ভাবিও চাচাদের বাড়ি যায় না।

বিয়ের ছয় মাস পর ভাবি অন্তঃসত্ত্বা হলো, ভাবি খুব খুশি হলেও মিয়া ভাই বাড়ি এসে খবরটা শুনে একদমই খুশি না। মিয়া ভাই খুলনায় চলে যাওয়ার পর , আমি ঘরে পড়ছি হঠাৎ ভাবি আমার কাছে এসে ফিসফিস করে বলল, রুমি তোমার সাথে কথা আছে।ভাবির গলার স্বর ভারী চোখদুটো ফোলা ফোলা।আমি চমকে উঠলাম। কি হয়েছে ভাবি?

রুমি, তোমার মিয়া ভাই এত তাড়াতাড়ি বাচ্চা নেওয়া পছন্দ করছে না খুব রাগারাগি করছে। বাচ্চা না নিয়ে কি করবো তুমিই বলো? সারাদিন একা একা চুপচাপ থাকি আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। তোমার মিয়া ভাই ইশারা ইঙ্গিতে বাচ্চা নষ্ট করার কথাও বলেছে, আমি কি করবো?

তোমাকে কিচ্ছু করতে হবে না যেমন আছ তেমনি থাকো, বাবু হয়ে গেলে মিয়া ভাই দেখো খুশিই হবে।

ভাবির মুখে হাসি ফুটে উঠলো। মাঝে মাঝে অবাক হয়ে দেখি ভাবি বকুল তলায় বসে বিড়বিড় করে কথা বলে।একদিন জিগ্যেস করলাম, ভাবি বিড়বিড় করে কি বলো?

লাজুক হেসে ভাবি উত্তর দিলো আর কয়েকদিন বাদে যে আসবে তার সাথে কথা বলি।

বাচ্চা গর্ভে থাকাকালীন ভাবির সেভাবে যত্ন হয়নি। ভাত খেতে পারত না বমি করতো তারপর ও না খেয়ে সংসারের কাজ করতো।

ভাবির বকুল তলায় বসা মা একদম পছন্দ করতেন না। ভাবিকে ডেকে বললেন,বৌমা তুমি একদম বকুল তলায় বসবে না পোয়াতি মেয়েদের অনেক সাবধানে চলাফেরা করতে হয় কখন কোন খারাপ বাতাস লাগবে তার ঠিক আছে?

মা'র ধারণা হাসাপাতালে ডেলিভারি হলে ইচ্ছা করে ডাক্তাররা সিজার করে।আর ভাবির তো অল্প বয়স সিজার তো অবশ্যই করবে।
মা বারবার বলছে বৌমা কে আমি হাসপাতালে নেবো না বাড়িতে ধাত্রী এনে ডেলিভারি হবে।

আমি সবসময় দোয়া করি ভাবির বাচ্চা যেন সুষ্ঠুভাবে ভাবির কোলে আসে।
আমার দোয়া কবুল হয় নি। নির্দিষ্ট দিনে বাড়িতে ধাত্রীর সহযোগিতায় ভাবি মরা বাচ্চা প্রসব করলো।

ভাবি মরা বাচ্চা কোলে নিয়ে পাথরের মূর্তির মতো বসে আছে। আশেপাশের লোকজন এবং কাছের আত্নীয় স্বজন আমাদের বাড়িতে এসেছে । সংবাদ পেয়ে মিয়া ভাই বাড়ি এসে ভাবির ঘরে যেমন ঢুকেছে হঠাৎ ভাবির হাতের কাছে পানি খাওয়ার কাচের মগ ছিল সেইটা ভাবি মিয়া ভাইয়ের কপাল লক্ষ করে ছুড়ে মেরে হিসহিসিয়ে বলল,এই কুত্তা আমার সন্তান আর আমার জীবন শেষ করে দিয়েছে।

মিয়া ভাইয়ের কপাল কেটে রক্ত ঝরছে, মা পুরোপুরি হতভম্ব। সবার মুখে একই কথা সন্তান হারানোর শোকে ভাবি পাগল হয়ে গেছে আর না হয় জিনের কুদৃষ্টি পড়েছে এজন্য স্বামীকে দেখতে পারছে না।

মা ক্ষিপ্ত মেজাজে বললেন, আমি বারবার বৌমাকে বকুল তলায় বসতে নিষেধ করেছি আমার কথা শুনিনি এখন ফল ভোগ করুক।

ভাবির অসুস্থতার খবর শুনে ভাবির চাচা আমাদের বাড়ি এসেছিলেন। মা কোনরকম ভনিতা না করে বললেন,বিয়াই সাহেব আপনার ভাইঝি পাগল হয়ে গেছে ওকে আপনাদের বাড়িতে নিয়ে যান।

ভাবির চাচাও মা'র চোখের দিকে তাকিয়ে স্পষ্ট গলায় বললেন, যখন আমার ভাইঝি কে আপনার ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছিলাম তখন কি পাগল ছিলো? সুস্থ মেয়েটাকে পাগল বানিয়ে এখন আমার ঘাড়ে চাপাতে চাইছেন? আমি তো মেনে নেবো না। আমার ভাই ঝি সুস্থ হলে খবর দেবেন তখন চিন্তা ভাবনা করে দেখবো।

পরবর্তী ছয়মাস বড় ভাবির জীন ভুতের চিকিৎসা সাথে সাথে পাগলের চিকিৎসাও
সমান তালে চলতে লাগলো, গলায় ছোট বড়ো অনেক মাদুলি, তেল পড়া, পানি পড়া সেই সাথে ডাক্তারের ওষুধ কোন কিছুতেই কাজ হচ্ছে না।

অন্য সময় ভাবি যাহোক একরকম থাকে কিন্তু মিয়া ভাই কে দেখলে ভাবি কেমন যেন হয়ে যায়,চিৎকার চেচাঁমেচি সেই সাথে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে।
অসুস্হতার জন্য ভাবি কোন কাজ করতে পারে না , মা'র অনেক কষ্ট হচ্ছে।

একদিন বিকেলে আপা এসে মা কে সাথে নিয়ে কোথায় যেন গেল! সন্ধ্যার পর দুই জন হাসি মুখে বাড়ি ফিরে আপা আমাকে ডাক দিয়ে বলল,রুমি আমি আর মা আমার মামাতো ননদের সাথে মিয়া ভাই এর বিয়ের কথা পাকা করে আসলাম এই শুক্রবারের পরের শুক্রবার বিয়ে।

আপার কথা শুনে আমি শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকলাম আমার গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বের হলো না।

শুক্রবারে মিয়া ভাই বাড়ি এসেই বলল, মা আমি ঠিক করেছি সোমাকে পাগলা গারদে রেখে আসবো।

এটা তুই খুব ভাল সিদ্ধান্ত নিয়েছিস বড় খোকা কিন্তু আপাতত তোর যাওয়া সম্ভব না। আমি তোর বিয়ে ঠিক করেছি আগামী শুক্রবার বিয়ে এখন অনেক কাজ। বিয়ের ঝামেলা মিটে গেলে তারপর বৌমা কে পাগলা গারদে রেখে আসিস।

আমার বুকের ভেতর ভেঙে গুঁড়োগুঁড়ো হয়ে যাচ্ছে ভাবিকে পাগলা গারদে রেখে আসবে! পাগলদের ভিতরে ভাবি থাকবে! ভাবির জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে।

মিয়া ভাই এর বিয়ে উপলক্ষে আপা বাড়ি এসেই ভাবিকে ঘর থেকে বের করে, আমাদের একটা পুরনো ঘর আছে বাতিল মালপত্র থাকে সেই ঘরে খাট পেতে ভাবির থাকার ব্যাবস্হা করলো।ভাবি কিছুতেই ঘর থেকে যাবে না কিন্তু আপা আর মা জোর করেই টেনে নিয়ে গেল।
ভাবি চিৎকার চেচাঁমেচি করে ঘর থেকে বের হয়ে আসে আপার বুদ্ধিতে মা প্রতিদিন সকালে ভাবির ঘরে বাইরে থেকে তালা আটকে দেয় আর সন্ধ্যার পর খুলে দেয়।

আজকে মিয়া ভাই এর বিয়ে আপা খুব সাজগোজ করেছে।মা অবাক হয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, রুমি তুমি এখনও তৈরি হওনি? তাড়াতাড়ি কর বরযাত্রী যাওয়ার সময় হলো।

মার চোখের দিকে তাকিয়ে শুধু বললাম আমি বরযাত্রী যাবো না মা আমাকে জোর করবেন না। কি ভেবে মা আর কিছু বললেন না।

ভাবি আমাকে দেখলে স্বাভাবিক আচরণ করে। দুপুরে ভাবির ঘরে ঢুকে খাবার দিতে গেছি, ভাবি ফিসফিস করে বলল, তোমার মিয়া ভাই বিয়ে করতে চলে গেছে?
আমি কোন উত্তর দিতে পারিনি চোখের জল আটকিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছি।

রাতে খাবার দিতে যেয়ে দেখি ভাবি দেয়াল হেলান দিয়ে চুপ করে বসে আছে।দুপুরের খাবার যেমন দিয়েছিলাম তেমনি পড়ে আছে!

ভাবি দুপুরে খাওনি কেন? তাড়াতাড়ি রাতের খাবারটা খেয়ে নাও।

ভাবি উদাস গলায় বললো,তোমার ভাই বিয়ে করে ফিরে এসেছে তাই না রুমি? নতুন বউ দেখতে সুন্দর হয়েছে? আজ থেকে তোমার মিয়া ভাই অন্য আরেকজনের হয়ে গেল!

আমার আর সহ্য হচ্ছে না ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে আসলাম।মাথার ভিতর একটাই ভাবনা চলছে।মেয়েদের মন এমন কেন? পাগল হয়ে গেছে তবুও স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে পারছে না, কষ্ট পাচ্ছে।

ভোরবেলা ঘুম ভেঙে গেল। ফজরের নামাজ পড়ে ভাবছি বকুল তলায় বসে ভোরের তাজা বাতাসে বুকভরে নিঃশ্বাস নেবো। দরজা খুলে বারান্দায় দাঁড়িয়ে বকুল তলায় চোখ পড়তেই আমি জমে বরফ হয়ে গেলাম চিৎকার করে উঠলাম কিন্তু গলা দিয়ে কোন স্বর বের হলো না। ছুটে ঘরে ঢুকতে চাইলাম কিন্তু মনে হচ্ছে আমার পা কেউ মেঝের সাথে গেঁথে দিয়েছে।আমি শুধু বিস্ফোরিত চোখে চেয়ে আছি, চারিদিক ফর্সা হয়ে আসছে বকুল তলায় আবছা অন্ধকারে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি শাড়ি পরা একজন মানুষ বকুলের ডালে ঝুলে আছে।

(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top