What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected ভয়ঙ্কর ভুতের গল্প (1 Viewer)

Mahadi_Pages

New Member
Joined
Mar 10, 2018
Threads
11
Messages
18
Credits
3,214
ভুতের গল্প এমনি একটা অংশ। বৃদ্ধ জোয়ান ছেলে মেয়ে সবারই পছন্দ। ছোট বেলায় যখন শুনতাম কতটা মনোযোগ দিয়ে শুনেছি। এতটা ভয় পেতাম যে রাতে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়তাম। আর যদি টয়লেট যেতে হতো তাহলে তো কথাই নেয়, ভয়ে শেষ। তখন কাউকে ঘুম থেকে ডেকে নিয়ে যেতাম। ভুতের গল্প যে কতটা আলোড়ন সৃষ্টি করে। গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যেত। তেমনি একটা গল্প আমি দিলাম। আমার খুব পছন্দ। যদি কারো এমনি সত্যিকার বা শোনা গল্প থাকে তাহলে শেয়ার করতে ভুলবেন না। অপেক্ষায় থাকবো আমি। আমার মতো অনেকে পছন্দ করে হয়তো আমার বা তাদের কথা ভেবে শেয়ার করবেন।আমরা সকলে পারি জমাবো আপনার দেয়া ভয়ঙ্কর জগতে।

গল্পের নাম লামিয়া


পুতুলটা কিনে আনার দিনই টিয়ে পাখিটা মরে গেল। অ্যাকুয়ারিয়াম –এর তিন জোড়া গোল্ডফিশ, দু জোড়া এ্যাঞ্জেল আর এক ঝাঁক ব্ল্যাক মলি মরে উলটো হয়ে ভাসতে লাগল। আর ঘোর জ্বরে পড়ল নাসিমা । এসবই হয়তো কোইন্সিডেন্স। তবু মোর্শেদ কেমন গম্ভীর হয়ে ওঠে। অদিতির ফরসা মুখেও মেঘ জমে উঠল। পুতুলটা অবশ্য ভারি সুন্দর । ছোট্ট, হলদে হলদে হাত-পা, লালচে চুল, বড় বড় চোখ, ঢেউ খেলানো বড় বড় পাঁপড়ি; মনির রং গাঢ় নীল। চোখের দৃষ্টি অবশ্য কেমন যেন শীতল, একটানা তাকিয়ে থাকলে শরীর কেমন হিম হয়ে যায় অদিতির ।
গুলশান- এর একটা শপিং মল থেকে পুতুলটা কিনেছিল মোর্শেদ। দিন কয়েক আগের কথা। বিকেলের দিকে অফিস থেকে বাড়ি ফিরছিল। কী মনে করে গাড়ি ঘুরিয়ে শপিংমলে ঢোকে। খেলনার দোকানটা দোতলায় । বাঁ দিকে । নাম: 'ম্যারিল্যান্ড গিফটশপ।' ভিতরে ছোটখাটো মঙ্গোলয়েড চেহারার এক টেকো লোক ছিল। পরনে চক্রাবক্রা শার্ট। চোখে কালো সানগ্লাস। পুতুলটা দেখাতেই গমগমে কন্ঠে সে বলল, ভেরি নাইস ডল স্যার। থাইল্যান্ডের লামিয়া কোম্পানীর মাল। দশটা এসেছে স্যার। সব বিক্রি হয়ে গেছে। একটাই পড়ে আছে। দাম বারো শ টাকা চাইল। পছন্দ হয়েছে বলে দরদাম করেনি মোর্শেদ। পুতুল দেখে মুনা খুশি হলেও কেমন যেন গুটিয়ে যায়। অদিতিও ব্যাপারটা লক্ষ করেছিল।
মোর্শেদ মেয়েকে বলেছিল, পুতুলের কী নাম দেবে মা?
তুমি দাও।
না, তুমি দাও। মোর্শেদ আদুরে কন্ঠে বলে।
লামিয়া। অদিতি ফস করে বলে। বলে স্তম্ভিত হয়ে যায়। নামটা ও বলতে চায়নি।
তাহলে কে বলল?
মোর্শেদ অবাক। অদিতি কীভাবে জানল পুতুলটা থাইল্যান্ডের লামিয়া কোম্পানীর?
পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল নাসিমা। ও বলে, মামী আমার জ্বর আসতেছে। যা, শুয়ে থাক।
মোর্শেদ একটা পলিথিনের ব্যাগে মরা টিয়া আর মরা মাছগুলি ভরে অ্যাপার্টমেন্টের বাইরে ফেলে । তারপর হাঁটতে হাঁটতে কাছের একটা ফার্মেসিতে যায় অষুধ কিনতে । নাসিমা বেশি দিন জ্বরে পড়ে থাকলে সমস্যা। আদিতির ওপর চাপ পড়বে। এমনিতেই অদিতির মাইগ্রেনের সমস্যা আছে। নাসিমা মেয়েটা ভালোই, দু'বছর ধরে কাজ করছে।
রাত আটটায় একটা দুঃসংবাদ পেল মোর্শেদ। এহসান গ্রুপের এমডি ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম ফোন করে জানালেন মগবাজারের প্রজেক্টটা ক্যান্সেল হয়ে গেছে। 'ইসমত টাওয়ার' নামে একটি বহুতল হওয়ার কথা ছিল মগবাজারে। প্রায় একশ কোটি টাকার প্রোজেক্ট। মোর্শেদ হতাশ হয়ে পড়ে। এমনিতেই বাংলাদেশের রিয়েল এসটেট মার্কেট ছোট এবং কমপিটিটিভ ।
এভাবে প্রোজেক্ট হাতছাড়া হয়ে গেছে তো আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা !
রাত্রে মোর্শেদ এর ঘুম আসে না। পাশে অদিতি ল্যাপটপ নিয়ে খুটখুট করছিল। ওপাশে মুনা ঘুমিয়ে। ছটফট করতে করতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়েছিল মোর্শেদ। অনেক রাতে তার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম চোখে বাথরুম যায়। মাথায় আবছা চিন্তা লামিয়া কি অশুভ? ওই পুতুলটা কেনার পরই টিয়ে পাখিটা মরে গেল, অ্যাকুয়ারিয়ামের মাছগুলিও মরে গেল;আর এত টাকার প্রোজেক্টটা প্রসপন হয়ে গেল? বাথরুম থেকে বেরিয়ে কী মনে করে বেডরুমের দরজা খুলে ড্রইংরুমে উঁকি দেয় মোর্শেদ । ওপাশের বারান্দায় আলো জ্বলে আছে। ওখানে কে যেন কথা বলছে। দ্রুত পায়ে ড্রইংরুম ক্রশ করে বারান্দায় চলে আসে মোর্শেদ। বারান্দার মেঝের ওপর মুনা বসে আছে। ওর সামনে লামিয়া। মুনা লামিয়াকে কি যেন বলছে।
এখানে কি করছ বাবা?
আমরা তো খেলছি ।
দেখছো না?
এখন?
হ্যাঁ। আমি তো আম্মুর পাশে ঘুমিয়ে ছিলাম।
লামিয়াই তো তখন আমাকে বলল- চল আমরা খেলি।
মোর্শেদ পিঠের ওপর শিরশিরে অনুভূতি টের পায়। ছ'তলার গ্রিলে দূরন্ত বাতাস আছড়ে পড়ে। বাতাসে পচা গন্ধ। কাছেই গুলশান লেইক। সে ঝুঁকে মুনাকে কোলে তুলে নিয়ে বলল, এখন খেলতে হবে না মা । চল,, এখন ঘুমাবে। চল।
রাতে ভালো ঘুম হল না। একবার মনে হল পুতুলটা গুলশান লেইক-এ ফেলে দিয়ে আসতে । এত রাতে কে দেখবে? একবার উঠে আলো জ্বালিয়ে পুতুলটা খুঁজল। পেল না। গেল কোথায়? তখন তো বারান্দায় ছিল। মোর্শেদের মনের মধ্যে কেমন এক আঠালো অস্বস্তি ছড়িয়ে পড়ে। তবে এসব কথা সে অদিতিকে জানাবে না ঠিক করে। সকালে গম্ভীর মুখে ব্রেকফাস্ট সারে মোর্শেদ ।
অদিতি বলে, শোন আজ কিন্তু টক দই এনো।
ওকে।
মোর্শেদ অফিসে বেরিয়ে যায়। অফিস কাছেই। গুলশান। অফিসে ফিসফিস। গুঞ্জন। 'ইসমত টাওয়ার' নিয়ে আলোচনা চলছে। এগারোটায় এমডির সঙ্গে মিটিং। মোর্শেদ যা বলার বলল। সে আশাবাদী। মগবাজারের কাজটা ক্যান্সেল হওয়ার ব্যাপারটা মোর্শেদ লাভ বা ক্ষতি হিসেবে দেখতে চায় না । লাঞ্চের পর অফিস থেকে বেড়িয়ে পড়ে। কিছু কেনাকাটা আছে। মোর্শেদ- এর বন্ধু আসবে রাতে । সাদী নিউজিল্যান্ডে থাকে । বউ-বাচ্চা নিয়ে মাসখানেকের জন্য দেশে এসেছিল। এ সপ্তাহেই আবার
নিউজিল্যান্ড ফিরে যাচ্ছে। সাদী মোর্শেদের ছোটবেলার বন্ধু। তবে দু'জনার সর্ম্পক মোটেও স্বচ্ছ না। দু'জনার
মধ্যে এক ধরনের রেষারেষি আছে। সাদী বেশিদূর পড়াশোনা করেনি। তবে মোটর পার্টস- এর ব্যবসা করে বেশ টাকা-
পয়সা করেছে। সেসব নিয়মিত 'শো' করে সাদী। মোর্শেদ আর্কিটেক্ট । তার মধ্যে রয়েছে শিক্ষাদীক্ষা আর পরিশীলিত মনের চাপা অহঙ্কার। নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটন শহরে সাদীর নিরিবিলি ছবির মতো বাড়ি। মুনা-অদিতি দের নিয়ে গত জুনে বেড়িয়ে এসেছিল মোর্শেদ । সাদ-এর বউ শায়লা। শায়লা দামী দামী গয়না দেখিয়ে চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছিল অদিতির। সেই থেকে শায়লার ওপর অদিতির ক্ষোভ।
অদিতি শায়লাকে বলে, যেন সর্দি লাগে, সেজন্য সুইমিংপুলে মুনাকে বেশিক্ষণ রেখেছিল শায়লা । এসব কারণে সাদী আর শায়লার মোর্শেদ- এর ক্ষোভও কম না। তবে মোর্শেদ চাপা স্বভাবের বলেই তা প্রকাশ করে না।
সাদী দেশে এলে ডিনারের ফর্মাল দাওয়াত দেয় ঠিকই, তবে মনে মনে প্রতিশোধের কথাও ভাবে। মোর্শেদের বিশ্বাস অদিতির সঙ্গে বিয়েটাও ভাঙতে চেয়েছিল সাদী ; সেই শপিং মলটা কাছেই। হেঁটেই যাওয়া যায়। মোর্শেদ কী মনে করে ঢুকে পড়ল। মঙ্গোলয়েড চেহারার সেই টেকো লোকটার সঙ্গে কথা বলা দরকার। লামিয়া সর্ম্পকে আরও তথ্য জানতে হবে। সে এক্সেলেটরে চড়ে দোতলায় উঠে এল। তারপর অবাক হয়ে যায়। দোতলায় 'ম্যারিল্যান্ড গিফটশপ' নামে কোনও দোকান নেই। কি ব্যাপার? আমার ভুল হয়নি তো? নাহ্, ভুল হবে কেন? দুপাশে সার সার মোবাইল, ঘড়ি আর জুয়েলারির দোকান। একটা দোকানে ঢুকে সেই গিফটশপের কথা জিগ্যেস করল। ওরা বলল, এই জিসান প্লাজায় তারা দু বছর ধরে আছে ।
'ম্যারিল্যান্ড গিফটশপ' নামে এখানে কোনও দোকান নেই। কখনও ছিলও না। আর এই শপিংমলে ছোটখাটো মঙ্গোলয়েড চেহারার টেকো লোকও নেই। তাহলে? হ্যালুসিনেশন? মোর্শেদ অবশ বোধ করে । ধীরেসুস্থে বেরিয়ে আসে শপিং মল থেকে। কথাটা অদিতিকে জানাবে না ঠিক করল মোর্শেদ। দুপুরে ল্যাপটপের সামনে বিছানার ওপর উপুর হয়ে শুয়েছিল অদিতি । একটা হিন্দি গানের ডাউনলোড লিঙ্ক খুঁজছিল। অনেক দিন আগে শুনেছিল। আজই হঠাৎ মনে পড়ল। সার্চ করতেই এমপিথ্রি ফাইলটা পেয়ে গেল। ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে অদিতি। ঠিক তখনই হঠাৎই কথাটা মনে পড়ে যায় ওর। মোবাইল তুলে নিয়ে একটা নাম্বারে ফোন করে।
হ্যালো।
ফৌজিয়া আপা?
আপনি কেমন আছেন?
এদিকে একেবারে আসেনই না। আমরা বড়লোক?
নাকি আপনি বড়লোক? আমাদের একদম ভুলে গেছেন। হ্যাঁ। মুনা কে এ বছরই স্কুল দিলাম। ওর একজন টিউটর লাগবে। তেমন কাউকে পেলে আমাকে একটু জানাবেন, প্লিজ।
ফৌজিয়া আপা বললেন, ইশরাত নামে একটা মেয়ে আছে। বিবিএ পড়ছে। ওকেই একদিন পাঠিয়ে দেব।
ঠিক আছে আপা। বলে আরও কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন অফ করে দেয় অদিতি।
ফৌজিয়া আপা মোর্শেদের কাজিন। মহিলা অ্যাডভোকেট। খুবই হেল্পফুল। বিয়েতে মোর্শেদের মা রাজি ছিলেন না।
কারা যেন ফোন করে অদিতির নামে যাতা বলেছিল। তখন ফৌজিয়া আপাই মোর্শেদের মা কে বুঝিয়ে- সুজিয়ে রাজি করিয়ে ছিলেন।
গানটা ডাউনলোড হয়ে গেছে। গানটা প্লে করতে যাবে- এমন সময় মোবাইল বেজে উঠল। মিস রিফাত। মুনার স্কুলের মিস।
অদিতির ভ্রু কুঁচকে যায়।
হ্যালো।
ওপ্রান্ত থেকে ভেসে আসে- মিসেস তানভীর?
হ্যাঁ। বলুন।
ম্যাডাম। আমরা তো স্কুলে স্টুডেন্টদের পার্সোনাল টয় এলাউ করি না। যদি হারিয়ে যায় ; সো?
আজ মুনার ব্যাগে একটা পুতুল ছিল।
ওহ!
প্লিজ, ফিউচারে এমন যেন আর না হয়।
ওকে আমি দেখব। থ্যাঙ্কস। বলে অদিতি ফোন অফ করে দেয়। ও রাগ টের পায়। মুনা কখন লামিয়াকে ব্যাগে ভরল? ব্যাগ তো আমি গুছিয়ে দিয়েছি। অদিতি বেডরুম থেকে ড্রইংরুমে আসে। নাসিমা কার্পেটের ওপর বসে চাদরমুড়ি দিয়ে সোফায় হেলান দিয়ে বসে ছিল। ওর জ্বর এখন কিছু কম। অদিতিই আজ মুনাকে স্কুলে নিয়ে গিয়েছিল। মুনা টিভি দেখছিল। অদিতি রিমোট তুলে টিভির ভলিউম কমিয়ে রাগ সামলে মেয়েকে জিগ্যেস করে,
তুমি স্কুলে লামিয়াকে নিয়ে গিয়েছিলে? সত্যি কথা বল।
মুনা মাথা নাড়ে। বলে, আমি তো, আমি তো লামিয়াকে ইশকুলে নিয়ে যাইইনি। ছত্তি। বলে অদ্ভূত ভঙ্গিতে দুহাত
তুলে নাড়ে মুনা। হাসে।
অদিতি পুতুলটা খুঁজতে থাকে। ওটা পেলে জানলা দিয়ে ফেলে দেবে। পেল না। মুনার ব্যাগে, ড্রইংরুমে। না, কোথাও নেই। অদিতি হতাশ বোধ করে।কি করবে বুঝতে পারে না। সন্ধ্যার পর গেস্ট আসবে। ও রান্নাঘরে ঢোকে । এখন রান্নার আয়োজন করলে মাথা ঠান্ডা হবে। সন্ধ্যার পর মোর্শেদ ফেরে। নাসিমা দরজা খুলে দেয়। মুনা সোফার ওপর ঘুমিয়ে ছিল। অদিতি কিচেনে ছিল। কলিংবেলের শব্দ শুনে ও কিচেন থেকে বেরিয়ে আসে। মোর্শেদের হাতে লামিয়াকে দেখে অবাক হয়।
অস্ফুটস্বরে বলে,ওমাঃ ওটা তুমি কই পেলে?
নীচে। গ্যারেজে। গাড়ি পার্ক করে লিফটে ওঠার সময় দেখলাম।
আর আমরা খুঁজে পাইনি।
ও। বলে পুতুলটা সোফায় রাখে মোর্শেদ ।
রাত আটটার মতো বাজে। অদিতি কিচেনে ফ্রাইপ্যানে কাবাব ভাজছিল । শশা আর টমাটো কাটছিল নাসিমা । বোরহানীটা মোর্শেদই বানাবে। এরই মধ্যে মসলা মিক্স করে ফেলেছে সে। মুনার ঘুম ভেঙেছে। ড্রইংরুমের সোফায় বসে পা দুলিয়ে দুলিয়ে চিপস খাচ্ছে। আর কার্টুন দেখছে। উলটো দিকে সোফার ওপর লামিয়া। মুনার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়েছিল। রাত নটার দিকে সাদীরা এল। ওদের একটাই ছেলে। সিয়াম। সিয়াম মুনারই সমবয়েসি। ড্রইংরুমের সোফার ওপর লামিয়াকে দেখেই 'আমি এটা নেব' 'আমি এটা নেব' বলে চেঁচাতে থাকে সিয়াম ।
ঠিক আছে সিয়াম। আমি এটা তোমায় গিফট করলাম। বলে মোর্শেদের দিকে তাকায় অদিতি । অদিতির চোখে চাপা কৌতূক।
শায়লা বলে, না, না অদিতি। ওটা তো মুনার।
ইটস ওকে। মুনার আরও আছে। এটা আমাদের সিয়াম সোনার। বলে মোর্শেদ
আড়চোখে অদিতির দিকে তাকায়। সমস্যার এত সহজ সমাধান ভাবতেও পারেনি সে। আজ যখন নীচের গ্যারেজে লামিয়াকে দেখল তখন একবার মনে হল ওটাকে গুলশান লেইক- এ ফেলে আসতে। তখন বড় টায়ার্ড লাগছিল বলে যায়নি। সিয়াম লামিয়াকে নিয়ে যাবে । এতে মুনা কে মোটেও ঈর্ষান্বিত মনে হল না। বরং মুনা হাসছিল। নাসিমাও খুশি বলে মনে হল। অদিতিও। পরদিনই মোর্শেদ নীলক্ষেত থেকে একটা টিয়া পাখি কিনে আনে। তার পরের দিন অ্যাকুয়ারিয়াম-এর জন্য মাছ কিনে আনে। গোল্ডফিশ, অ্যাঞ্জেল, ব্লু গোরামিন আর ব্ল্যাক মলি। মোর্শেদ আর অদিতির মুখ আনন্দে ঝলমল করে। ওদের একটা মেগা স্ক্রিনের প্লাজমা টিভি কেনার শখ ছিল। প্যানাসনিক-এর শোরুমে গিয়ে টাকা দিয়ে এল মোর্শেদ। মডেল অবশ্য অদিতিই পছন্দ করল । তারপর লোকজন এসে বিশাল জিনিসটা বেডরুমে ফিট করে দিয়ে গেল। ওদের আনন্দ দেখে কে! এহসান গ্রুপের এমডি ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম ফোন করে কক্সবাজারে দেড় শ কোটি টাকার একটা প্রোজেক্ট এর কথা জানালের। ইনানী বিচে হোটেল কমপ্লেক্স হবে। কথাটা অদিতিকে জানাতেই ও নেপালে ছোট্ট একটা ট্রিপের আবদার করে । অবশ্যই। ছোট্ট করে বলে মোর্শেদ। ফেসবুকে শায়লার সঙ্গে অনেক দিন ধরেই
চ্যাট করে আদিতি। গতকাল শায়লা লিখেছে ; আমার বাড়িতে ভূতের আছর হইছে জান। সকালে ফ্রিজ খুলে দেখি সারারাত কারেন্ট অফ ছিল। মাছ মাংস শাকসবজি সব পচে গেছে। এমন তো হওয়ার কথা না। শখ করে গত মাসে একটা ক্যানারি পাখি কিনছিলাম। পাখিটা মরে গেল। একুয়ারিয়ামের মাছগুলি মরে উলটে ভাসতে লাগল। সাদী ধুম জ্বরে পড়ল। চারিপাশে কি যে শুরু হইল অদিতি । সিয়াম আজকাল ঠিক মতো ঘুমায় না। খালি পুতুল নিয়ে খেলে।
অদিতি অবাক হলেও মুখ টিপে হাসে। এক ধরণের আনন্দ বোধ করে। শায়লার লেখা কপি করে মোর্শেদের মেইল এ পোস্ট করে 'সেন্ড' করে।সেদিন বিকেলে ল্যাপটপের সামনে বিছানার ওপর উপুর হয়ে শুয়েছিল অদিতি । একটা জাপানি হরর মুভির ডাউনলোড লিঙ্ক খুঁজছিল। অনেক দিন আগে দেখেছিল। আজ মনে পড়ল। টরেন্ট ফাইল পেল। এখনও টরেন্ট ফাইল ডাউনলোড করতে পারে না অদিতি। বুকমার্ক করে রাখল। রাতে মোর্শেদকে বলবে ডাউনলোড করে দিতে। নাসিমা লেবু চা নিয়ে ঘরে ঢুকল।
দে। অদিতি বলে।
নাসিমা বলে, মামী?
কি? দেশে ফোন করবি? কর।
না। তাহলে?
হেই পুতুলডা বাড়ি থেইকা যায় নাই মামী।
কি বলিস তুই। চায়ের কাপ রেখে ধড়মড় করে উঠে বসল অদিতি।
হ। যায় নাই।
যায় নাই মানে কী! ফাইজলামি করিস? যাঃ ভাগ। অদিতির ফরসা মুখটা গনগনে হয়ে উঠেছে। নাসিমা মুখ কালো করে চলে যায়। অদিতির শরীর শিরশির করতে থাকে। নাসিমা কি বলল? জ্বরের ঘোরে মাথা ঠিক নেই। হেই পুতুলডা বাড়ি থেইকা যায় নাই । এর মানে কি? আজকাল অবশ্য মুনার দিকে তাকালে শরীর কেমন হিম হয়ে যায়। মেয়েটার চোখের মনির রং বদলে যাচ্ছে। কথাবার্তাও কেমন কমে গেছে। তা বলে ; অদিতি কী করবে বুঝতে পারে না। অদিতির মোবাইল বেজে ওঠে। নকিয়াটা তুলে অদিতি বলে, হ্যালো।
হ্যালো। আমি ইশরাত ।
ফৌজিয়া আন্টি আমাকে আপনার সেলনম্বর দিয়েছেন।
ও হ্যাঁ।
আমি কখন আসব?
অদিতি বলে, কাল সকালে আসতে পারবে? কাল তো ফ্রাইডে। আমার হ্যাজব্যান্ড ঘরে থাকবে। ওই সব ফাইনাল করবে।
ওকে। আমি কাল সকাল নটার মধ্যেই চলে আসব।
ওকে। থ্যাঙ্কস।
ভালোই হল। ইশরাত মেয়েটা মুনাকে পড়াবে। মুনাকে নিয়ে পড়ানোর সময় হয় না অদিতির । টিভি, ফেসবুক আর রান্না নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তাছাড়া অদিতি ইদানীং একটা বাংলা ব্লগে 'বিষন্ন অনাদৃতা' নামে কবিতা লিখে প্রায়ই পোস্ট করে। এমন কিছু না, দূর্বল কবিতা, তবে মেয়ে বলেই সম্ভবত প্রচুর মন্তব্য পড়ে। মন্তব্য পড়ে শরীর আনন্দে শিরশির করে। যেমন জাপান প্রবাসী ব্লগার 'পথহারা পথিক ২' মন্তব্য করেছে: 'আপনার কবিতা আমার এই ধূসর প্রবাসজীবনের আলোর দিশারী'। এসব কারণে ব্লগ এখন প্রায় নেশার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে অদিতির । পরদিন সকালে ইশরাত এল। অদিতিই দরজা খুলে দিল। সবুজ ওড়না আর সাদা রঙের সালোয়ার-কামিজ পরা শ্যামলা সুশ্রী মেয়ে। দেখলেই ভালো লাগে। চোখে ছোট চারকোণা চশমা ।
এসো বস। ইশরাত সোফায় বসে। উলটো দিকে সোফায় মোর্শেদ বসে ছিল। এতক্ষণ খবরের কাগজ পড়ছিল সে । অন্যদিন সময় পায় না। শুক্রবার সকালেই যা একটু খবরের কাগজ পড়া হয়। সে ইশরাতকে দেখে মাথা নাড়ে। মিষ্টি করে হাসে। মুনা ওর বাবার গায়ে হেলান দিয়ে পা ছড়িয়ে বসে ছিল।
মুনাকে দেখিয়ে অদিতি বলে, এই হল তোমার ছাত্রী ।
ইশরাত বলে, বাহ্। কী কিউট!
তারপর হেসে জিগ্যেস করে, কি নাম তোমার? মুনা চুপ করে থাকে।
বল, নাম বল। অদিতি বলে।
আমার নাম লামিয়া।
মুনার কথা শুনে মোর্শেদ সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে ।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top