What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

শিক্ষনীয় উপদেশ ( জীবন থেকে নেওয়া) (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
আমি তখন ৩৫/৩৬ সপ্তাহের প্রেগন্যান্ট, আমার নানু আসেন ব্রিটেনে। ছয়মাসের টুরিস্ট ভিসা এবং কনফার্মড রিটার্ন টিকেট নিয়ে। নানুর রিটার্ন ডেট ছিল ভিসা শেষ হবার দশদিন আগের একটা তারিখ। বাংলাদেশ বিমানের একটা ফ্লাইট। আমার মেয়ের বয়স মাত্র পাঁচমাস প্লাস সেসময়, আমি জেদ ধরে বসলাম আমিও যাবো দেশে। এছাড়া দেশের সবাই ভীষণ আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় তখন আমার মেয়েকে দেখবে বলে।

টিকেট বুকিং দিতে গিয়ে জানলাম, নানুর সেই ফ্লাইটে আর সিট বাকি নাই। আমাদেরকে ভিন্ন ফ্লাইটে যেতে হবে। আর যদি একই ফ্লাইটে যেতেই হয় ফার্স্টক্লাসের টিকেট কিনতে হবে। এত ছোট বাচ্চা নিয়ে প্রথমবারের মতো দেশে যাচ্ছি, আরামদায়ক জার্নি হলে কষ্ট কম হবে, সাথে বাচ্চার ন্যাপি, দুধ, ফার্স্ট স্পুনফুড আরো অনেক কিছুই নিতে হবে, ফার্স্ট ক্লাসে গেলে অনেক বেশি লাগেজ নিতে পারবো, আরামও পাবো ...এসব কিছু ভেবে আমরা সবাই ফার্স্টক্লাসের টিকেট কিনে ফেল্লাম।

দুবাই এয়ারপোর্টে যাত্রাবিরতির পর আমরা সিটে উঠে বসেছি। দুবাই থেকে অনেক ঢাকাগামী যাত্রী উঠছেন। বেশীরভাগই মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী শ্রমিক ভাইয়েরা। ইকোনোমি ক্লাসের যাত্রীরা আমাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছে, চোখাচোখি হচ্ছে, মৃদু হাসি বিনিময় হচ্ছে, সবকিছুই স্বাভাবিক। কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ কেউ কেমন যেন একটা নির্লিপ্ত ব্যাঙ্গময় দৃষ্টি নিয়েও তাকাচ্ছে। আমি মনে করলাম সেটাও হয়তো স্বাভাবিক। হটাত করে আমি ভীষণ রকমের অবাক এবং আহত হলাম এক ঘটনায়! সরাসরি আমাদের দিকেই তাকিয়ে একজন আরেকজনকে বলছে,

"আমাদের রক্ত আর ঘামের পয়সায় ফুটানি করে! ফার্স্ট ক্লাসে যায়!! থুঃ এদের মুখে!!"

আমি এত বেশী অবাক হয়েছিলাম সেদিন, নির্বাক হয়ে গিয়েছিলাম কয়েক সেকেন্ডের জন্য! অবস্থা দেখে আমার হাজব্যান্ড আমাকে বলে,
"চিন্তা করে দেখ, কি পরিমাণ ঘৃণা জমে আছে এসব খেঁটে খাওয়া মানুষের বুকে ওইসব রক্তচোষা ধনীদের জন্য! কি পরিমাণ অভিশাপ পাচ্ছে তারা প্রতিনিয়ত দেশের সাধারণ জনগণের কাছ থেকে!"

আপনার কষ্টের পয়সায় আপনি হয়ত বিলাসিতা করবেন, সেই অধিকার আপনার অবশ্যই আছে। কিন্তু সেই বিলাসিতায় স্থান কাল পাত্র ভেদে অনেকেই আহত হন! অনেকের বুকের হাহাকার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে!
হ্যাঁ, এটা অতীব নির্মম সত্য একটা কথা।


বিদেশে এসে সংসার শুরু করি নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের একটা নির্জন পাহাড়ি এলাকায়। সেই গ্রামে শতভাগ অধিবাসীই আইরিশ/ব্রিটিশ। শুধু আমি আর আমার স্বামী ছিলাম বাঙ্গালী।

আমার স্বামীর একটা রেস্টুরেন্ট ছিল সেই গ্রাম টাইপ শহরে। আমি আসার পর সে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেয় সেখানেরই স্থায়ী এক বয়স্ক মহিলার সাথে। উনার নাম এলিজাবেথ। এলিজাবেথ ছিল নর্দার্ন আইরিশ আর ওর স্বামী স্কটিশ। ওরা পুরো পরিবারই আমার স্বামীর রেস্টুরেন্টে কাজ করত। খুব গভীর একটা পারিবারিক এবং বন্ধুত্বপূর্ণ বন্ধন গড়ে উঠে এলিজাবেথের সাথে আমাদের।

আমি নিজেকে অবশ্যই সৌভাগ্যবানদের একজন মনেকরি যে, আমার সাথে এইজীবনে এলিজাবেথের পরিচয় হয়েছে!
এলিজাবেথ আমাকে ভাষা থেকে শুরু করে কাপড় ধোয়ার টিপস অব্দি জীবনের অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ কিছু জিনিস শিক্ষা দিয়েছে! তাই আমি যতদিন বাঁচবো এলিজাবেথের কথা মনে রাখতে বাধ্য!

সংসারের শুরুতে আমার যা যা দরকার সব আমি আর এলিজাবেথ ঘুরে ঘুরে কিনতাম। কারণ আমার স্বামী তখন ভীষণ ব্যস্ত থাকতো তাঁর ব্যবসা নিয়ে।

একটা সংসার শুরু করতে অনেক অনেক জিনিস দরকার। কিন্তু প্রথমেই কি কি দরকার, কি কি না কিনলেই নয় সে সম্পর্কে আমার একেবারেই কোন ধারনা নাই!

প্রথমদিনের কথা, আগে থেকেই কনফার্ম করা ছিল আমি আর এলিজাবেথ সেদিন অনেক অনেক শপিং করবো। টোস্টার, কড়াইখুন্তি, সাবানশ্যাম্পু, থেকে শুরু করে আইসক্রিম পর্যন্ত কিনতে হবে। এলিজাবেথ সকাল সকাল আমার বাসায় চলে আসে। ডাইনিং টেবিলে বসে শব্দ করে করে লিস্ট করছে আর আমার মতামত নিচ্ছে।

লিস্ট করা শেষ হলে আমার স্বামী আমাকে টাকা দেয়। খুব সম্ভবত দুইশ পাউন্ড দিয়েছিল তাঁর মধ্যে একটা ছিল পঞ্চাশ পাউন্ডের নোট। এলিজাবেথের সামনেই দিয়েছিলো সে। এলিজাবেথ আমাকে বলে, "হাফ এমাউন্ট নাও আর বাকিটা বাসায় রেখে যাও।"
আমিতো অবাক! অনেক কিছু কিনতে হবে! সে আবারো আমাকে বলে, "আমি বলছি তুমি হাফ এমাউন্ট রেখে যাও, দরকার হলে আমরা কালকে আবারো যাবো।"

আমি আর বেশিকিছু না বলে একশো পাউন্ডের মতো ব্যাগে নিয়ে শপিংএ যাই। না কিনলেই নয় এমন জিনিসগুলো আগে ট্রলিতে নিই। আবার মনে রাখতে হয় আমার ব্যাগে একশো পাউন্ড, বাড়তি কিছু কেনা যাবেনা! সেই মুহূর্তের জন্য সবচে প্রয়োজনীয় সদাইগুলো ঠিকই কেনা হয়ে যায় সেদিন। একটা ব্যাগ খুব পছন্দ হয়েছিলো, একজোড়া স্যান্ডেলও। কিন্তু বেঁচে যাওয়া টাকাতে কুলোবেনা তাই আর কেনা হয়না। একটা উইন্টার কোট পছন্দ হয়, ঠিক করেছিলাম পরদিন আবার গিয়ে কিনে ফেলবো। পেমেন্ট কাউন্টারে আসার পর এলিজাবেথ আমাকে ৫০ পেন্স দিয়ে একটা কয়েনবক্স কিনে দেয়।
বলে, "এই ব্যাংকে বেঁচে যাওয়া একপাউন্ডের কয়েন ফেলবে শুধু। মনে থাকে যেন, শুধুই ওয়ান পাউন্ড কয়েন।"

বিয়ের পরের একবছর দেশে ছিলাম, সংসারের কোন চিন্তাই করতে হয়নি। হাত ভর্তি টাকা থাকতো, শপিংএ গিয়ে ইচ্ছেমতন শাড়ি চুরি কিনতাম, কিছু পরতাম কিছু তেমনটাই থেকে যেত আলমিরার তাকে তাকে। খরচ করতে করতে এক একসময় হাত খালি হয়ে যেত একদম। তখন পছন্দের কিছু কিনতে না পারলে মন খারাপ করতাম একটু হলেও!
কিন্তু সেদিন আমি অন্যরকম একটা তৃপ্তি অনুভব করি। বেঁচে যাওয়া কিছু কয়েন ব্যাংকে ফেলি আর নোটগুলো বাসায় রেখে যাওয়া এমাউন্টের সাথে রেখে দিই। পরেরবার আবার শপিংএ যাবার সময় আবারো একই কাজ করি আমরা দুজন। উইন্টার কোটটা আর কিনতে ইচ্ছে করেনি, মনে হয়েছে অলরেডি একটা আছেতো আমার!

বেশ কবার এরকমটা চলার পর একদিন হটাত করে শখের একটা জিনিস কিনি। হয়তো একটা ব্যাগ বা কিছু ব্রান্ডের মেকআপ!

আমার স্বামী আমাদের এই কর্মকাণ্ডের কথা জানতে পেরে হাসতে থাকে। আমাকে বলে তোমাকে এত ভাবতে হবেনা, যা ইচ্ছে কিনে নিও। কিন্তু আমার মনে ততদিনে সারাজীবনের জন্য গেঁথে যায় এলিজাবেথের দৃঢ়স্বরে বলা কিছু কথা!

"সীমিত সময় এবং সীমিত সাধ্যের মধ্যে মানিয়ে চলাটাই স্মার্টনেস! অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা, শোঅফ, আর ঋণগ্রস্ত জীবনযাপন ভীষণ অগোছালো আর সস্তা দেখতে হয়। সেসব মানুষের ব্যাক্তিত্বে কোন আকর্ষণ থাকেনা! সে কারণে পৃথিবীর উন্নত সবদেশের রাজপরিবারের অথবা শিক্ষিত পরিবারের বাচ্চাদেরকে এসব ব্যাপারে আলাদা করে গ্রুমিং করা হয়।"

২০০৪ সালে এলিজাবেথ মারা যান।

একসময় একা হাতে সংসারটা গুছানো শিখে যাই আমি। সবার অজান্তে নিজের মতন করে সঞ্চয় করি। একসময় দেখা যায় বিন্দু বিন্দু করে জমানো সেই সঞ্চয় আমাদের সংসারে সিন্ধু সমান আনন্দ নিয়ে হাজির হয়! সেই মুহূর্তটা যে কি স্বর্গীয়!! বলে বা লিখে বুঝানো যাবে না।

আমি নিজের হাতে সংসারের সব বাজার করি। চাহিদার লাগাম টেনে ধরাটাকে স্মার্টনেস মনেকরি। প্রতিনিয়ত মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, লোকদেখানো বিলাসিতা ভীষণ রকমের বিচ্ছিরি লাগে দেখতে। বিশ্বাস করেন, কেউ মুখ ফুটে বলেনা কিন্তু খুবই বাজে লাগে দেখতে এসব।

এখনো পর্যন্ত আমার সন্তুষ্টি, দোকানে গেলে আমার ছেলেমেয়ে কোনমতেই মনে করেনা যে চাইলেই আমি তাদের সবচে পছন্দের জিনিসটা কিনে ফেলতে পারি! আমার সবসময় চেষ্টা থাকে, আমার সন্তানরা যাতে কোনভাবেই এই ধারনা নিয়ে বড় না হয়,
"আমার বাবার টাকা আমি যেমন ইচ্ছে খরচ করবো তাতে কার কি!"

প্রতিটা মা বাবাই কষ্ট করে ইনকাম করে সন্তানের মুখের তৃপ্তির জন্য, সন্তুষ্টির জন্য। তাই আমার আহবান, আপনার সন্তানদের স্মার্ট বানান। খুব কম চাহিদায় কিভাবে সন্তুষ্ট হওয়া যায় শিখতে দিন। বুঝিয়ে দিন, অহংকার, বিলাসিতা, শোওফ এসব দেখতে খুবই কুৎসিত, খুবই।
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top