What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made একটি প্রেমের গল্প 💕💕💕💕💕 (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
দিনগুলো কত দ্রুত চলে যায়! মনে হচ্ছে এইতো সেদিন রানার সাথে আমার সম্পর্ক হলো, মানে প্রেম হলো! চুপি চুপি দেখা, বাড়িতে বানিয়ে বানিয়ে কতশত মিথ্যা কথা বলা! একটা ঘটনা যা এখনো মনে হলে নিজের অজান্তেই হাহা করে হাসতে থাকি আমি। আমি আমার মাকে রান্নার কাজে সাহায্য করছিলাম। আমার খুব শখ মাছ কাটার, জেদ শুরু করেছি তেলাপিয়া মাছগুলো আমি নিজ হাতে কাটবো। মাছ কাটাও শেষ, অমনি আমাদের পাড়ার একটা মেয়ে( বিউটি নাম) আমাদের বাসায় এসে আমার কানে কানে চুপি চুপি বললো রানা ভাই এসেছে পাড়ার মোড়ে। আমিতো বেজায় খুশি। হ্যাঁ আমি এখন রানার সাথে পাড়ার মোড়ে না, পাশের একটা গলিতে দেখা করবো, কি মজা!

আমি সাবান দিয়ে হাত ধুয়েই চলেছি কিন্তু মাছের আঁশটে গন্ধ হাত থেকে যাচ্ছেই না। এখন সে আঁশটে গন্ধটা মনে হচ্ছে আমার শরীরেও ছড়িয়ে পড়ছে। ওরে আল্লাহ্! এই গন্ধ কখন যাবে? কিন্তু রানারতো বাসায় ফেরার সময় হয়ে যাচ্ছে। আমি প্রায় দৌড়ে যেয়ে যেমনি বলেছি রানাকে, কেমন আছো? ও বলছে কি ব্যাপার এমন আঁশটে একটা গন্ধ কোথা থেকে আসছে? আমরাতো কোন পঁচা ড্রেনের পাশে দাঁড়িয়ে নেই! সে যে কি লজ্জা পেলাম আমি!

যাহোক বিয়ের পর আমি, রানা বড় হচ্ছি। বড় হচ্ছি কেন বলছি? কারন আমার বয়স তখন একুশ আর রানার ছাব্বিশ। দু'জনের খুব মজার সংসার। ঢাকায় আমাদের যে বাড়ীওয়ালি আন্টি তাঁর কাছেইতো আমি পোলাও রান্না শিখেছি। আরো অনেক রান্না ঐ আন্টির কাছে শিখেছি। আন্টি, আংকেল আর উনাদের একমাত্র ছেলে লিমনকে নিয়ে উনাদের সুখের সংসার।

আমি পড়ি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সে যুগে দু'দলের মারামারির কারনে প্রায় সময়ই বন্ধ থাকতো বিশ্ববিদ্যালয়। যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে গন্ডগোল শুরু হতো, তখন আমার খুশি ধরে না। কি মজা! ঢাকা যাবো। রাজশাহী থেকে ঢাকাতে কথা বলবো ফোনে, লাইন পাওয়া যে কি কষ্টকর! চিঠিই ভরসা। একবার চিঠি লিখলাম আমার যাবার কথা জানিয়ে। রানা সময় মত পেলো না চিঠি।তাই জানতেও পারছে না লিপি আসবে কবে ঢাকা। তারচেও বড় কথা কে নিয়ে যাবে আমাকে ঢাকা।

বান্ধবীর ছোট ভাই ক্লাস নাইনের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে ঘরে বসে আছে। ওদের দাদাবাড়ী ঢাকা,জিগাতলা। আমি খালাম্মাকে বললাম ঢাকা যাবো, কার সাথে যে যাবো! আমার আব্বা নিয়ে যেতে চেয়েছেন, কিন্তু আমারতো তর সইছে না। কখন আবার ফট করে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে যাবে কে জানে! ওরে সর্বনাশ! এরই মাঝে বাসের ধর্মঘট শুরু হলো! মরণ!! শুধু বি আর টি সি চলছে। তাই সই। অনেক কষ্টে পেছনের দুটো সিট পাওয়া গেলো।

আমার মা, চাচীরা হাসছে এত কষ্ট করে পেছনের সিটে বসে ঢাকা যাবো বলে। আর সে যুগে তো যমুনা সেতু হয়নি। আমি ১৯৯২ সালের কথা বলছি। সে সময় রাজশাহী থেকে ঢাকা যেতে বারো/তেরো ঘন্টা সময় লাগতো।

বহু কষ্টে ঢাকায় পৌঁছেই ঐ ছোট ভাইকে তার দাদুবাড়ী দিয়ে আমি মোহাম্মদপুরে বাসায় আসলাম। যখন বাসায় পৌঁছালাম তখন সন্ধ্যা। সোজা বাড়ীওয়ালি আন্টির কাছে গেলাম। আন্টি আংকেল কি যে খুশি! আন্টি বললেন, তুই আইছোস মা, খুব ভালো লাগতাসে এখন। রানাডা কেমন একা একা থাকে! ওরে দেইখ্যা আমাগোর মনডাই খারাপ অইয়া যায়।

আন্টিদের বাসায় রাতে খেতে হবে আন্টি সেটাও বললেন। তারপরই একটা অদ্ভুত প্রস্তাব দিলেন আন্টি। বললেন, হুনছোস মা, তরে আইজকা লুকাইয়া রাখমু। রানা ট্যারও পাবেনা তুই ঢাহা আইছোস। আচমকা দেইখা কি করবো রানা, হেইডা দ্যাকতেও মজা। আন্টিদের কাছে আমাদের একসেট চাবি থাকতো। আর একটা রানার কাছে। আমরা নিচ তলায় থাকতাম আর আন্টিরা দোতলায়। ব্যস মুহূর্তের মধ্যে আমাকে নিচতলায় নিয়ে এসে আমাদের বেড রুমের খাটের তলায় শুয়ে পড়তে বললেন আন্টি। এদিকে শীতকাল। আমার আবার শ্বাসকস্টের ব্যারাম আছে। কিন্তু আমিও যে খুব মজা পাচ্ছি। একবারতো প্রেমের সময় এমনও হয়েছিলো রানাকে কথা দিয়ে জায়গামত আমি যেতেই পারিনি। পারবো কি করে, আমার যে হাঁপানির টান উঠে হাসপাতালে তখন আমি।

যাহোক এখনতো আগে শুয়ে পড়ি খাটের তলায়। ওমাগো! হায়রে ঠান্ডা! আন্টি আর তাঁর সহকারী( যার নাম ছিলো মনু, বয়স ১২/১৩) রাস্তায় পায়চারি করছে। হ্যাঁ, রানা এসেই পড়েছে। পরিস্কার শুনতে পাচ্ছি রানা আন্টিকে বলছে, দেখেছেন আন্টি কেমন ভুলো মন হয়েছে আমার। আমাদের রুমের লাইট জ্বালিয়েই অফিসে চলে গিয়েছি।

রানার সাথে সাথে আন্টি আর উপর থেকে আংকেলও নিচে নেমে এসেছেন। লক্ষ্য করলাম আমার থেকে আনন্দ উনাদেরই বেশি।

আমিতো শীতে জমেই গিয়েছি। মনে মনে বলছি যদি শ্বাসকষ্ট হয়, তাহলেতো ঢাকা মেডিকেলে যেতে হবে। নিতে হবে ইনজেকশন, অক্সিজেন! মেডিকেলে কাটাতে হবে দু'টো দিন। এরপরেই জোরে জোরে বলছি আমি, আর কতক্ষন থাকবো মেঝেতে আমি? এই কথা যেমন বলেছি, রানা বলছে এতো লিপির গলা! আর তখন আমি নিজে নিজেই খাটের তলা থেকে বের হয়ে দাড়িয়ে গেলাম। ওরে আল্লাহ্! আন্টি আংকেলের চোখেও যে হাসি দেখতে পাচ্ছি আমি। আর রানা!

আমাদের দুজনেরই বয়স কম, আমরা আবার ভয়ও পাই খুব। জ্বিনের ভয়! পারলে আমাদের রুমে কাউকে নিয়েই থাকি। কিন্তু সেটাতো সম্ভব না।

একবার গরমের সময় এক রাতে একটা শব্দে ঘুম ভাঙলো আমার, রানারও। কেউই নড়াচড়া করছি না। দুজন দুজনকে ধরে বসে আছি। কতবার বলছি রানা লাইট জ্বালাও, খুব ভয় লাগছে, পানি খাবো। সে বলছে, এইতো আমি আছি। বললাম লাইট দাও। উত্তর একটাই। হায়রে ভয় পেয়েছি দুজন! প্রায় ঘন্টা দুয়েক ঐভাবেই বসা দুজন। ফজরের আজান যখন হয় তখন রানা আস্তে আস্তে উঠে রুমের লাইট জ্বালালো। যা দেখলাম তাতে ভয়ে দুজনেরই প্রাণ যায় যায়! দেখি একটা কবুতর আমাদের মেঝেতে পড়ে আছে,নিথর দেহ। আর মেঝেতে অনেকটাই রক্ত। কি ভয়ঙ্কর সে দৃশ্য! বুঝেই পাই না কিভাবে এটা হলো? পরে লক্ষ্য করে দেখি রুমের দুটো জানালাই খোলা ছিলো। গরমকাল, জানালা খোলা। তখনতো আর আমাদের এসি ছিলো না। ঐ রাতে কবুতরটা জানালা দিয়ে ঢুকে ফ্যানের সাথে ধাক্কা খেয়ে কেটেকুটে পড়ে আছে। পরে আমরা দুজন বলছি ভাগ্যিস রাতেই লাইট জ্বালায়নি। তাইলে দুজনের যে কি দশা হতো ঐ দৃশ্য দেখে! গলা, শরীরের অংশ কাটা কবুতর!

রানার সরকারী চাকুরি হবার পর পোষ্টিং হলো নওগাঁতে। আমরা সরকারী কোয়ার্টারে উঠলাম। চমৎকার পরিবেশ। তবে রানার অফিসের ভেতরে রানার নামে বরাদ্দ যে কোয়ার্টার সেটাতে উঠলাম না। কারন ঐ ভয়! প্রচুর গাছপালা সেখানে, মস্ত বড় দিঘীও আছে। ৯ বিঘা জুড়ে ক্যাম্পাস। রাতে রীতিমত ভূতুড়ে পরিবেশ।তাই প্রথম শ্রেনীর অফিসারদের জন্য সরকারী অন্য যে কোয়ার্টার সেখানেই উঠলাম। ক্যাম্পাস এ কত মানুষ! অনেক নতুন নতুন ভাবী, ভাই, বাচ্চাদেরকে পেলাম। বিকাল হলেই ভাবীরা মিলে সেজেগুজে ক্যাম্পাসের মধ্যেই বেড়াতাম। তারপর কোন একটা বাসায় যেয়ে মাগরিবের নামাজের পর চা, নাস্তা খাওয়া। ইশ্! কি আনন্দের ছিলো সেসব দিন। বৃহস্পতিবারে সব ভাবীরা মিলে একসাথে লেডিস ক্লাবে যাওয়া হতো। প্রত্যেকেই কিছু না কিছু আইটেম বানিয়ে নিয়ে যেতাম। ঐ দিনগুলি ছিলো আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় দিন।

যেহেতু আমি ভয় পাই, এত বড় কোয়ার্টারে একা একা সারাদিন কাটানো খুব সমস্যা আমার জন্য। শুধু দিন! রাতেওতো ভয় পাই রানা, আমি। কাজের ছুটা বুয়া, সেতো কাজ করেই চলে যায়। শেষে আমার শাশুড়ী বললেন, আমার দুই খালাতো দেবর আরিফ, সাদিক এখন থেকে আমার সাথেই থাকবে। ওরা দুজনই আমার সাথেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো। ওদের সাবজেক্ট ছিলো আলাদা। মজার ব্যাপার বিশ্ববিদ্যালয় যখনই ছুটি হতো তখনই তিনজন মিলে আমার সংসারে চলে যেতাম। তখন আমার হেভি ভাবসাব! দুই দেবর বাসায় আছে, অতএব, রাতে আরাম করে ঘুমাই। জানিতো বাড়ীতে আরো লোক আছে, তাই আমরা দুজন নিশ্চিন্ত। একটুও ভয় পাই না আমরা আর। দুই দেবর আমাকে বাড়ীর কাজে খুব সাহায্য করে। কিন্তু আমাকে ভয় দেখানো শুরু করলো দেবরদ্বয় ই! হুটহাট বলে বুড়ী ( ওরা ভাবী ডাকে না, ভালবেসে বুড়ী ডাকে। আবার এও বলে বুড়ী মেয়ের আল্লাদ দেখে বাঁচি না। কতদিন তোর সাথে আমরা থাকবো?) আমরা বাড়ী যাবো রাজশাহী। দু'দিন থেকেই চলে আসবো। আমি কান্না জুড়েদি। যাসনা তোরা, আমি একা কি করে থাকবোরে!

একদিন সকালে দু'জনই বলছে রাজশাহী যাবো, দু'দিন পরেই ফিরবো। ওদেরকে আটকাতে পারছি না। শেষে ২০০ টাকা দিয়ে কেঁদে কেঁদে ওদেরকে বিদায় দিলাম। সিঁড়িতে দাড়িয়ে কাঁদছি। আবার এক ছুট্টে আমার বেডরুমের বারান্দায় গেলাম, যতদুর চোখ যায়, ওদেরকে দেখি। এক সময় ওরা মিলিয়ে গেলো। বিছানায় শুয়ে জোরে জোরে চিৎকার করে কাঁদছি। হঠাৎ দেখি কলবেল বাজছে। এখনতো দরজা খোলার মানুষও নাই। চোখ মুছে দরজা খুলে দেখি দেবরদ্বয় দাড়িয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসছে।এত খুশি হলাম! কেঁদে কেঁদেই বললাম কিরে তোরা? ওরা যা বললো তা শুনে আকাশ থেকে পড়লাম। বললো বুঝলি বুড়ী, এই বাসা থেকে সোজা ভাইয়ার অফিসে গেলাম। ভাইয়ার থেকেও বিদায় নিলাম আর বললাম দু'দিন বাদেই আবারো আসবো আমরা। ভাইয়া দু'জনকে ২০০ টাকা দিলো। সব মিলিয়ে ৪০০ টাকা হলো আজকের ইনকাম! কি যে দুষ্টু ওরা!

দেবরদ্বয়কে আটকে রাখার জন্য ভিসিপি কিনলাম। রাতদিন দুটোতে মিলে হিন্দি ছবি দেখে, মাঝে মধ্যে আমিও দেখি। দিনগুলো বড়ই আনন্দে কাটছে। সময়মতো তিনজনই পড়তেও বসি। দিনরাতের বিভিন্ন সময়ে তিনজনে মিলে স্পেকট্রামও খেলি। ওরা বলে ঐ বুড়ী তুইতো আবার ব্রীজ খেলতে পারবি না। আস্ত বুড়ী একটা!

এদিকে ক্যাম্পাসের ভাবীরা হিংসায় জ্বলছে। ভাবীরা বলছে, আপনারই কপাল! পেয়েছেন দুটো দেবর, রাজ্যের কাজ করে দেয়। সত্যিতো, খিচুড়ি করা শিখলাম সাদিকের কাছে। কারন ওদের মেসে মাঝে মাঝে সে রান্না করে। আরিফ তেমন কাজ পারে না। একটু আলসে টাইপ। বুয়া না আসলে সাদিক ঘর ঝাড় দেওয়া থেকে শুরু করে মুছেও দেয়। বড় রুই মাছ, আড়াই কেজি ওজনের, আমিতো কাটতেই পারবো না। সাদিকই কাটে, সুন্দর করে পিস করে, আরিফ ওকে হেল্প করে। আবার একসাথে বেশি করে মোরগ নিয়ে আসি। আমাদের কোয়ার্টারের নিচে মাঠে বসে ওরা দুজন মোরগ জবাই করে, পরিস্কার করে তারপর উপরে নিয়ে আসে। ওদিকে ক্যাম্পাসের ভাবীরা বারান্দা থেকে চিৎকার করে করে বলে, ও সাদিক ভাই, আমাদেরও মাছ, মুরগী আনছে, এসে কেটে কুটে দিয়ে যানতো!

বছর খানেক পর রানা বদলি হয়ে আসলো চাঁপাই নবাবগন্জের ভোলাহাটে। ১৯৯৬ সাল হবে সময়টা। দেড় বিঘা জায়গার ওপর এ্যাসিস্টেন্ট ইন্জিনিয়ারের কোয়ার্টার। তিন তলায় থাকি আমরা ( সহকারী প্রোকৌশলীর বাসা) নিচ তলায় রানার সাব অর্ডিনেট দুজন ছেলে অফিস করে। আর রানা অর্থাৎ সহকারী প্রোকৌশলীর অফিস দোতলায়। দেড় বিঘা জায়গায় সব রকম ফল সব্জি এবং ফুলের গাছ আছে। দুজন মালি সারাক্ষন ওসবের চর্চা করেই চলেছে। হ্যাঁ, সাদিক, আরিফ ওরা দুজনেই এসেছে আমাদের সাথে। বাসায় ফার্নিচার সাজানো থেকে শোকেসে জিনিস পত্র ওরা দুটিতে মিলে সাজায়। বাসার গেটে পোষাকধারী দুজন দারোয়ান সব সময়ই থাকে। রাতে আবার অন্য দুজন থাকে। অল্প কদিন ভালই লাগলো। তারপর আবার সেই ভয়!! এবার দেবরদ্বয়ও ভয় পেয়েছে। খুব লক্ষ্য করে দেখছি আমরা গভীর রাতে একজন মেয়ে মানুষের কান্নার আওয়াজ পাওয়া যায়। কেমন যেনো সে আওয়াজটা! খুব খুবই ভয় লাগে আমাদের। প্রতি রাতে একই ঘটনা।

একদিন মালি, দারোয়ানদের জিজ্ঞাসা করলাম, আচ্ছা প্রতিরাতে খুব কাছেই কেউ একজন কান্না করে, অনরকম শব্দ করে, কে সে? আপনারা কি জানেন বিষয়টা? কান্নার আওয়াজ কি পান আপনারা দুজন? (দারোয়ান) ওরা মুখ চাওয়া চাওয়ি করে বললো, জ্বি পায় শুনতে আমরাও। হ্যাঁতো কে উনি? ওরা বললো আমরা শুনেছি কবরস্থান থেকে ঐ কান্নার আওয়াজ আসে। চোখে দেখিনি কোনদিনও কাউকে! ক-ব-র স্থা-ন.....!! ( তখন ছোট ছিলাম বলে ভয় পেতাম, এখন কবরস্থান আমার কাছে সবচে নিরাপদ, স্বাভাবিক বাসস্থান) কোন ভাবেই সাদিক, আরিফকে আমি ছাড়তে চাই না আমরা। আর এদিকে ওরা পালাতে চায়। ভয় পেয়েছে ছেলে দুটি।

এরই মাঝে শাশুড়ী ফোনে বললেন, তাঁরা আসবেন(শশুর+ শাশুড়ী)। আমরা যে কি পরিমান খুশি হলাম! মেপে দেখানোর মত হলে দাড়ী পাল্লায় মেপেই দেখাতাম! এমন খুশি ! বাবা, মা এলেন। সাথে মাঝারি সাইজ জন্মদিনের কেক, যেখানে লেখা "শুভ জন্মদিন লিপি"। আর রাজশাহীর আমার পছন্দের মিষ্টি এবং সুন্দর একটা থ্রীপিস! বাবা মায়ের পছন্দের সব রান্নায় করেছি আমি। আমিতো অনেক রান্না শিখে গিয়েছি। রাত হলো গভীর রাত হলো, মেয়েলি কন্ঠের কান্নাও বাড়তে থাকলো। প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে, পাল্লা দিয়ে কান্নার আওয়াজও বাড়ছে। শাশুড়ি মা বললেন কালই বাড়ী চলে যাবো। রানা তুই তোর স্যারকে বল অন্যখানে তোকে বদলি করুক। সত্যি সত্যি মা, বাবা চলেও গেলেন( আমার শাশুড়ী খুব ভিতু টাইপ মানুষ) আমি দেবরদ্বয়কে আটকে রেখেছি।

এবার ঘটলো আরেক ঘটনা। রাত যতই গভীর হতে শুরু করে রান্না ঘরে থালা বাসনের ঝনঝন আওয়াজ ততই বাড়তে থাকে। আরো ভয়ঙ্কর হেঁসে বটি ধার দেবার আওয়াজ পাওয়া গেলো। থালা বাসনের ধনঝনানি, সাথে বটি ধার!! হায়রে ভয় পেলাম! আমাদের রুম থেকে গেষ্ট রুম দুরে। আরিফ সাদিক তো গেষ্টরুমে আছে। আর একটা রুম ফাঁকা কারন ওটা বাচ্চার রুম। আমারতো তখনও বাচ্চায় হয়নি। ড্রইংরুমও অনেক বড়। রাতে ঐসব ভঁতুড়ে শব্দে জেগেই কাটাতে হলো রাতটা। সাত সকালে উঠেই সাদিক, আরিফ বললো তারা আজই এক্ষুনি রাজশাহীত চলে যাবে। আর পারলাম না রাখতে ওদেরকে।

এরই মাঝে আমার সবচে ছোট বোনটার এইচ এস সি পরীক্ষা শেষ হলো। আমার মা, বোন আর চাচাতো বোন( চাচাতো বোনও এইচ এস সি দিলো) একসাথে এলো বেড়াতে। কি খুশি লাগছিলো! ওদেরকে ঐসব ভয়ের গল্প বলিনি। বললেইতো পালাবে সব! শুধু আমি পারি না পালাতে! রানাও পারেনা! চাকুরী, যখন যেখানে পাঠাবে সেখানেই যেতে হবে। আমার মা বোনেরা থাকাতে আনন্দ হচ্ছে খুব। ওরা যা দেখছে তাতেই মজা পাচ্ছে। বোন দুটো গাছে উঠছে, টাটকা তাজা ফল পেড়ে খাচ্ছে। ফুলের বাগান ঘুরে ঘুরে দেখছে। মা আমি সারাক্ষন গল্প করি। অদ্ভুত ব্যাপার তো! থালা বাসনের ঝনঝনানি নেই, হেঁসে বটিও ধার দিচ্ছে না কেউ! শুধু আছে কবরস্থানের ঐ মরা কান্না! মা বোনদের বললাম কোন বুড়ী নাকি তাঁর ছেলে মারা যাবার পর রোজ রাতে ওভাবেই কাঁদেন।

যাঁদের বাড়ী ভোলাহাট, আশাকরি তারা জানবেন এবং মানবেন সেখানে প্রচুর বৃষ্টি হয়। সে সময় হতো। পুরো এলাকা আমের বাগানে ভর্তি। একটু দুর থেকে দেখলে মনে হয় সবুজ উঁচু উঁচু পাহাড়। আমার বাসার ছাদটা অসম্ভব সুন্দর ছিলো। ছাদের অর্ধেকটা জুড়ে কৃষ্ণচূড়া গাছের পাতা ফুলে ভরে থাকতো। আমি মনে হয় ৩/৪ বার উঠেছি। ছাদ থেকে চারিপাশটা পুরোই পাহাড় মনে হতো।

একদিন দুপুরে ঠিক করলাম আজই মহানন্দা নদীতে নৌকা ভ্রমন করবো। মা বোনেরা বেজায় খুশি। অফিসের লোকেরা সব আয়োজন করলো। স্যারের শ্যালিকাদ্বয় নৌকায় ঘুরবে বলে কথা! আমি হায়রে সাজলাম! নীল রংয়ের সিল্কের শাড়ী, কপালে লাল টিপ, ঠোঁটে মেরুন লিপস্টিক আর চুলটা ছেড়েই রাখলাম। বড় চুল বিয়ের পরই কেটে ফেলেছি। এখন চুল কাঁধ পর্যন্ত। আর হ্যাঁ, পায়ের তলায় শাশুড়ীর কথামতো কালো টিপ এঁকেছি। আমার আব্বার বাসার সবাই ঐ কালো টিপ নিয়ে খুব হাসাহাসি করতো। কেবল হাসতেন না আমার শাশুড়ী। উনিই বরং সবাইকে বলতেন লিপিকে বড্ড নজর লাগে! যাহোক মা সহ তিন বোন অফিসের গাড়ীতে করে নদীর ঘাটে গেলাম। কি মজা ঐ তো নৌকা! তিন বোন খুশিতে সমানে চিৎকার। ঘুরতে ঘুরতে মাগরিবের আজানও দিয়ে দিলো। মা তাড়া দিচ্ছে বাড়ী চল। ভালোইতো কাটছে সময়গুলো। এসব জায়গায় ৬/৭ দিন বেড়াতে খুব ভালো লাগে। কিন্তু একেবারে থাকতে ভালো লাগে না। ওখানে বিকালে পটল পাতার চপের(পেঁয়াজু টাইপ)মত পাওয়া যেতো। নদীর ধারে বসে টাটকা পটল পাতার গরম গরম চপ আর চা দারুন লাগতো খেতে। কলিজা সিঙাড়াও খুব ভালো পাওয়া যেতো সেখানে। সবচে ভালো গরুর মাংসটা শুধুই ৪০/৫০ টাকা কেজি। বয়স কম হওয়াতে খেয়েছিও তখন। যাহোক মা বোনেরা চলে গেলো। রইলাম শুধু দু'জন। আমি আর রানা।

দেবরদ্বয়তো কবেই ভয়ে পালিয়েছে। ওদিকে ঐযে আমার শাশুড়ী একরাত থেকে পালালেন ঠিকই, কিন্তু উনিও স্বস্তিতে নেই। ফোনে তাঁর ছেলেকে বলতেই থাকেন তোর স্যারকে বল অন্য কোথাও বদলি করুক তোকে। যথারীতি আবারো শুরু হলো হেঁসে বটি ধার দেওয়া এবং থালাবাসনের ঝনঝনানি। ওরে আল্লাহ্!! আবারো!! রানাতো রুমের লাইট জ্বালাবেই না। তখন যে ওর বয়স ২৯/৩০, তবুও সেই ভয়! নাহ্! এতো ভারি যন্ত্রনা! রাত মেলা। আমরা জানি নিচে গেটে দু'জন দারোয়ান আছে এবং তারা গল্প করছে শুনতেও পাচ্ছি। এবার আমি সাহস করে আমার রুমের বারান্দার দরজা খুলে বললাম মাতাজুল ভাই, হালিম ভাই কি জেগে আছেন? হ্যাঁ ম্যাডাম। শোনেন এক্ষুনি দু'জন উপরে আসেন। এবার ওরা উপরে আসলো, কলবেল বাজালো। কিন্তু দরজা খুলবে কে? ঐ অতবড় বাড়ী পার হয়ে মেইন দরজা ঐ সময় খোলা, উফ! সে ভারি ভয়ের ব্যাপার। মনে হচ্ছে কে যেনো কাঁধের কাছে নিশ্বাস নিচ্ছে। আমরা দু'জন দু'জনকে শক্ত করে ধরে আল্লাহ্ আল্লাহ্ করতে করতে দরজা খুললাম। দারোয়ানেরা বাসায় ঢুকলো। কি হয়েছে স্যার, কি হয়েছে ম্যাডাম? বললাম বাকি রাতটা ড্রইংরুমে কাটান দু'জন। সকালে কথা হবে। রান্নাঘরে চলছেই থালা বাসনের ঝনঝনানি। আমরা যখন শুনছি, নিশ্চয় ওরাও শুনছে। প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে, বৃষ্টির শব্দকে ছাপিয়ে বুড়ীর কান্নার আওয়াজ শুনছি।

সকালেই দারোয়ান দু'জন বললো এই বাসায় জ্বিন আছে। বাজে ধরনের জ্বিন আছে। আমরা সবই জানি কিন্তু বলি না স্যার আপনাদেরকে। আগের স্যারও জানতেন। কিন্তু উনার ফ্যামিলি বড় হওয়াতে সব রুমে রুমে লোক থাকাতে উনারা ভয় পেতেন না। এসব শুনে বেহুশ হওয়ার জোগাড় আমার! জ্বিন!! হু আছেতো! জ্বিন আর ইনসান আছেতো! মনে মনে বলি আমি।

দারোয়ানদের নিয়েই রাতে ঘুমায় আমরা। যে মালিরা সারাদিন বাগানে কাজ করে, ওরাও আসে। ওরা সবাই মিলেই আমাদের দুই অধমকে দেখে রাখে। একদিন রানা বললো, তাঁর স্যার ভাবী বাচ্চাসহ এখানে আসবেন। রানার সাইট ভিজিট করতে। আমি মহা খুশি। আসুক উনারা, আমি এই সমস্যাগুলোর কথা ভাই, ভাবীকে বলবো। আল্লাহ্ সহায় থাকলে অন্য কোথাও রানাকে বদলি করতেওতো পারে! অপেক্ষায় আছি উনাদের আসার। অনেক কিছু রান্না করলাম। এখানকার খাবার পানিটা একটু হলদে রংয়ের। কিন্তু স্বাদটা ঠিকই আছে।

রানার স্যার পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসলেন। এগুলোকে আমি বেড়ানোই বলি। সাইট ভিজিটতো বেড়ানোই! সাথে কাজ বা কাজের অগ্রগতি দেখা। যাহোক বেশ কিছু হাতে বানানো খাবার দিয়ে সকালে উনাদের আপ্যায়ন করলাম। মজার ব্যাপার, রানার স্যার বলছেন আগে আমি শরবতটা খায়, যা গরম পড়েছে! মনে মনে বললাম খান ভাই খান। উনি শরবত ভেবে পানিতে চুমুক দিয়েই মুখটা কেমন যেন করলেন। বললাম শরবত নয় ওটা পানি। দেখতে শরবতের মতই। আরো বললাম এখান থেকে আমাদের শিগগির বিদায় করেন। যেকোন জায়গায় পাঠান রানাকে, এখান থেকে সরান ভাই। এই পানি মোটেও খেতে পারি না আমরা। আমিতো আসলে পানিটা ফুটিয়ে পান করি, সেটা আর বললাম না। বললাম রাতে দারোয়ানদের নিয়ে ঘুমাই। এভাবে কি থাকা যায় ভাই বলেন? ভাবী আপনিই বলেন? দারোয়ান নিয়ে ঘুম!! কেন কেন?? সব তাঁদের খুলে বললাম। এও বললাম এখন নিশ্চয় আপনাদের গা ছমছম করছে? আপনারাতো সন্ধ্যায় চলে যাবেন রাজশাহী, আমাদের কি হবে?

মাত্র এক সপ্তাহের মাঝেই রানার পোষ্টিং হলো সেই নওগাঁয়। কি আনন্দ! কি যে আনন্দ! পুরনো জায়গা আমাদের। সবাই চেনে আমাদেরকে। নওগাঁ যাবার ৫/৬ মাসের মাথায়ই আমি কনসিভ করলাম। এই সময়তো সাদিক, আরিফকে খুব দরকার আমার! হু.... আমার শাশুড়ী ঐ দুটোকে পাঠিয়ে দিলেন।

তখন অবশ্য আর ভয় পাই না আমি, রানা।আমরা অনেকটাই বড় হয়েছি ( ১৯৯৭ ) খুব শিঘ্রই মা বাবা হবো আমরা! কি যে আনন্দ! লক্ষ্য করছি দেবরদ্বয় আমাকে "পটলের মা" বলে ডাকছে! ভালোই তো!

(সমাপ্ত)
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top