What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made বদলে যাওয়া দিনগুলো (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
বিয়ের ছয়মাস পর আমার মনেহলো,
আর না। অনেক হয়েছে, আমি আমার শাশুড়িকে আর সহ্য করতে পারবো না। এই সংসারে হয়ত আমি থাকবো, নয়ত আমার শাশুড়ি থাকবে। এই মহিলার সাথে এক ঘরে, এক ছাদের নিচে থাকা আমার পক্ষে আর সম্ভব না।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আমি আমার স্বামী রুপমকে এসব কথা কোনমতেই বলতে পারছিলাম না।
রুপমের বাবা নাই, ছোট ভাইটা এখনো স্কুলে আর বোনটা কলেজে পড়ছে। রুপম পড়াশুনার সাথে সাথে সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে। বাবার রেখে যাওয়া ব্যবসা আর পড়াশুনা একসাথে চালিয়ে এসেছে বেচারা। মায়ের প্রতি, ছোট ভাইবোনগুলোর প্রতি সে প্রচণ্ড দ্বায়িত্ববান। বিয়ের মাত্র ছয়মাসের মাথায় ঠাশ করে তাঁকে কিভাবে বলি, আমি তার মায়ের সাথে এক সংসারে থাকবো না!

আমার শাশুড়ির অদ্ভুত সব আচার আচরণ আর কথাবার্তা নিয়ে নিজের বোন আর মায়ের সাথেও আলোচনা করতে পারিনা আমি। কারণ রুপমকে আমি নিজের পছন্দে বিয়ে করেছি। বাবা মার তেমন একটা পছন্দ ছিলনা রুপম। অনেক ভালো ভালো বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে, আমার জোরাজুরি আর জেদের কারণে রাজি হতে বাধ্য হয়েছেন আব্বা আম্মা। এখন যদি আমার এসব মন খারাপের কথা বলতে যাই, মা ঠিকই খোঁচা দিতে ভুলবে না। আমার ছোটবোনও ঠোঁট বাঁকিয়ে বলবে, "মাত্র ছয়মাসেই মন উঠে গেল! এত গভীর প্রেম ছয়মাসেই শেষ!"
এসব কারণে বাসায়ও কিছু শেয়ার করতে পারছিনা ।

দিন দিন আমার মনমেজাজ প্রচণ্ড খারাপ হতে থাকে। একবার মেজাজ খারাপ হলে টানা কয়েকদিন কোন কাজে মন বসাতে পারিনা। মাথাটা ধরে থাকে, ঘরে রুপমের সাথে আর স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের সাথে অকারণে মেজাজ খারাপ করি। কলিগদের সাথে হাসিমুখে কথা বলতে পারিনা। এমনও হয়েছে, শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে অঝোরে কেঁদে কেঁদে নিজেকে হালকা করার চেষ্টা করেছি।

ঘটনার শুরু আমার বিয়ের দিনই। অনুষ্ঠান সেরে কমিউনিটি সেন্টার থেকে বাসায় আসার পর, আমার শাশুড়িআম্মা আমাকে উনার ঘরে টেনে নিয়ে নিচু গলায় বলে, "শোন বউমা, আজ থেকে আমার ছেলেকে আর নাম ধরে ডাকতে পারবে না। তুই তোকারিও করতে পারবেনা। আর আরেকটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা সবসময় মনে রাখবে, আমার সংসার আমারই থাকবে। সবসময়ই আমার কথামত চলতে হবে।"

ব্যস, উনার এতটুকু কথাতেই আমার মেজাজটা খিঁচে গেল প্রথমদিনই। বাসররাতে থমথমে মুখে রুপমকে বল্লাম, "ওই রুপুর বাচ্চা শোন, তর মা যে একটা রানি সরকার আগে বল্লিনা কেন?"

শয়তানটা হে হে হাসতে হাসতে আমাকে বলে, "তুই কি ডলি জহুর? শোন, যে যেমন তার কপালে আল্লাহ তেমনটাই মিলায়। নিজে ভালোতো, জগত ভাল।"

সেই রাতেই শয়তানটারে ইচ্ছে করছিল গলা টিপে মেরে ফেলতে। জ্বলজ্বলে চোখে তার বিচ্ছিরি রকমের হাসির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনে মনে ভাবছিলাম, "তুই আমাকে চিনস নাই বাপধন! ছয়মাস শুধুই দেখে যাবো, তারপর শুরু হবে আমার কর্মকাণ্ড।"

বলে রাখা ভালো, রুপম কিন্তু আমার বেস্টফ্রেন্ড। এবং সবচেয়ে ভয়ংকর একটা কথা হচ্ছে, স্বামী হবার পর বেস্টফ্রেন্ডরা কিন্তু অনেকটাই প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে উঠে! তারা তখন আগের জীবনের বিভিন্ন কথা মনে করে স্বামিত্ব ফলাতে চায়। কিন্তু আমি যে কোন জঙ্গলের বাঘ সে জানে না।

বিয়ের পরদিন সকালে নাস্তার টেবিলে বসেছি মাত্র সবাই, আমার শাশুড়িআম্মা আমাকে বলে,
"বৌমা, তুমি কিন্তু ঘিয়ে ভাঁজা পরটা খাইয়োনা। পাউরুটি খাও চায়ে ডুবিয়ে। নয়তো অল্পদিনেই মোটা হয়ে যাবা। মোটা হলে মেয়েদের বাচ্চা হইতে সমস্যা হয়।"

বিয়ের পরদিন সকালেই শাশুড়ির মুখ থেকে বাচ্চাকাচ্চার কথা শুনে আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠল। আমি দেখি, দেবর ননদ আর আমার শ্রদ্ধেয় স্বামী পরটা মুরগীর ঝোলে ডুবোতে ডুবোতে মিট মিট করে হাসছে! সবার সামনে আমি চায়ে পাউরুটি ভিজিয়ে নাস্তা সারলাম।

নাস্তার টেবিলেই রুপম তার মাকে বলে, "মা, মিতু খুব ভালো করলাভাজি করে। করলা ওর খুব প্রিয় সবজি। আজ থেকে ওকে রান্না করতে দাও।"

আমি অসহায় চোখে রুপমের দিকে তাকিয়ে থাকি। করলা যে আমার দুই চোখের বিষ সে ভাল করেই জানে। এমন নিষ্ঠুর প্রতিশোধ নেবার উদ্দেশ্যটা কি!

কিন্তু নিজেকে নিজে বলি, "না মিতু তুমি এখন সম্মুখ যুদ্ধে নেমেছো। এত সহজে হেরে গেলে হবে না। সময় আর মাত্র ছয় মাস! লক্ষ্যে তোমাকে পৌঁছুতেই হবে।"
আমি লম্বা করে শ্বাসটেনে সম্মুখ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হলাম।
আমার শাশুড়ি আমার দিকে তাকিয়ে বলে, "তাই বুঝি বৌমা! তিতা করলাতো আমারো খুব পছন্দের সবজি! তা আমার ছেলে এত প্রশংসা করছে, তুমি কিভাবে ভাজিটা কর বলত?"

আমিও রুপমের দিকে একবার তাকিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথেই শাশুড়িকে বল্লাম, "তেমন কিছুনা মা, করলাটা নরম হয়ে আসলে গুণে গুণে চারচামচ চিনি দিতে হয়। মনেকরেন এক কাপ করলা কুচি হলে, চার চা চামচ চিনি দিলেই হবে।"

সাথে সাথেই আমি দেখি, রুপমের বিষম উঠেছে। ওর নাক থেকে চা বের হচ্ছে, আমার শাশুড়িআম্মা আর ওর ছোটবোন রুনু রুপমের পিঠ চাপড়ে দিচ্ছে। রুপমের পিঠ চাপড়াতে চাপড়াতেই আমার শাশুড়ি আমাকে বলে, "করলার মধ্যে চিনি !! থাক থাক। তোমাকে এখনি কিছু রান্না করতে হবে না। আমার ঘর ভার্সিটির হোস্টেল না। আমি তোমাকে রান্না শিখাবো ধীরেসুস্থে।"

আমি বাধ্য মেয়ের মত মাথা নেড়ে বলি, "জি আম্মা"।

তারপর থেকে প্রতিদিন একটা না একটা কিছু নিয়ে শাশুড়ি আম্মার সাথে আমার ঝামেলা লেগেই আছে। কথায় কথায় উনি আমাকে খোঁচা দিয়ে আহত করতে চান আর আমি খুব যত্ন করেই সবকয়টা খোঁচাকে হজম করতে থাকি।

আমি একটা স্কুলে জব করি। সকালে আমি আর রুপম দুজন মিলে গল্প করতে করতে নাস্তা রেডি করি। আমি রুটি বানাই, রুপম পেঁয়াজটা কাটে বা ডিমটা ভাঁজে অথবা চায়ে দুধ চিনি মেশায় ...এসব আমার শাশুড়ি একদম পছন্দ করেনা।

রুপম আমাকে সংসারের টুকিটাকি কাজে সাহায্য করে। কাপড় গুছিয়ে দেয়, মাঝেমাঝে মাথাব্যাথা করলে মাথা টিপে দেয় বা কারণে অকারণে ফুল আর চকলেট হাতে করে নিয়ে আসে ...এসব দেখে শাশুড়ি আম্মা যে ভীষণ রকমের বিরক্ত হয় আমি বুঝতে পারি। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে উনি এসব নিয়ে আমাকে কথা শুনাতে ভুলেননা।

আমার ভীষণ রকমের মনখারাপ হতে থাকে। আমি রুপমকে কিছু বলিনা। আমার পরিবার এবং বন্ধুদের সাথেও কিছু শেয়ার করিনা কিন্তু নিজে মনে মনে ভীষণ রকমের ভেঙ্গে পরতে থাকি। একসময় এমন পর্যন্ত ভাবতে বাধ্য হই, এই সংসারে আমার আর থাকা সম্ভব নয়। আমাকে বের হতে হবে এই অশান্তি থেকে। কিন্তু আবার ভাবি, আমার স্বামীর সাথেতো আমার কোন ধরনের জটিলতা নাই! একজনের জন্য অন্যজনকে কেন সাজা পেতে হবে!

এক দুপুরে আমি কি যেন একটা কাজ করছি।
আমার শাশুড়ি আমার রুমে এসে বলে,

"বৌমা, তোমাকে একটা কথা বলি কিছু মনে কইরোনা" ।

- না না মা , কিছু মনে করব না । বলেন ।

--আচ্ছা বৌমা , তুমি আর রুপম তো সমবয়সী।

- জ্বি আম্মা। আমরা একই ক্লাসে পড়তাম এবং আমরা বেস্টফ্রেন্ড।

-- আচ্ছা বৌমা , মনেকর তোমার বয়স হয়ে গেলে যদি রুপম আর তোমাকে পছন্দ না করে? না মানে, ছেলেরাতো দেরীতে বুড়ো হয়! মেয়েদের নানা কারণে তাড়াতাড়ি শরীর ভেঙ্গে পরে। একসময় যদি রুপম তোমাকে বলে যে তুমি বুড়ি হয়ে গেছ! তোমাকে আর ওর ভাল লাগছে না! তখন তুমি কি করবে?

আমি হা করে আমার শাশুড়ির মুখের দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে ছিলাম উনার মুখের এই কথাগুলো শুনার পর। আমার মাথা প্রথমে রাগে ঝিম ঝিম করে উঠলো। বলে কি এই হিংসুটে বদমহিলা! আমার মাথায় তখন আগুন ধরে গিয়েছিল।

ঠিক ওই মুহূর্তে আমি মনে মনে ভাবছিলাম এই মহিলার সাথে একঘরে, এক ছাদের নিচে, এক সংসারে থাকা আমার পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। উনি দেখি তখনো আমার উত্তরের অপেক্ষায় আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি প্রাণপণে নিজের রাগটুকু চেপে রেখে শান্তভাবে হাসার চেষ্টা করলাম।

আমি হেসেই উনাকে বল্লাম,
- ' মা শোনেন, সংসারটা দুইজনেরই। আমি যথেষ্ট শিক্ষিত এবং আত্মনির্ভরশীল একজন মেয়ে। আমিও জানি কিভাবে কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। কিভাবে কোন রাস্তায় হাঁটতে হয়। এমন কোন সিচুয়েশন কোনদিন আসলে আমি নিজেই সরে যাব। আমি আপনার ছেলেকে ভালবাসি বলে তার সব অন্যায়ই মেনে নিতে বাধ্য নই, নিজের অপমানতো কখনোই না। বেস্টফ্রেন্ড বা স্বামী বলে সে আমার আত্মসন্মান কিনে নেয়নি '।

আমি অবাক হয়ে দেখলাম, আমার শাশুড়ি কাঁদছে! উনার দুইচোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পরছে! আমি পাশে বসে উনার দুইহাত নিজের দুইহাতের মুঠোয় নিলাম।
মায়াভরা গলায় বল্লাম,
" মা , আপনার মনে কি গভীর কোন দুঃখ বা হতাশা আছে? আমার কেন জানি মনেহয়, আপনি দিনের পর দিন অবহেলা পেয়েছেন। নিজের অধিকার, নিজের চাওয়াপাওয়াগুলো ভুলে থেকেছেন। অন্যের ইচ্ছেয় বাধ্য হয়ে উঠাবসা করেছেন! অপমান আর অবহেলা সইতে না পেরে নিজে নিজে কেঁদেছেন, নিজেকে নিজে কষ্ট দিয়েছেন। আপনার মনের ভিতরে গভীর এক না পাওয়ার ক্ষত রয়ে গেছে। এখন আমার আত্মবিশ্বাস আর সাবলীল জীবনযাপন, রুপমের সাথে আমার বন্ধুত্বপূর্ণ বোঝাপড়া দেখে আপনার সেই গভীর ক্ষতটি আবারো টনটন করছে।"

আমার শাশুড়ি আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে। আমতা আমতা করে আমাকে বলে,
"বৌমা, তুমি কি অনেক কষ্ট পেয়েছ আমার ব্যবহারে এতদিন? আমি কি করব! আমার যে অনেক হিংসে হয় তোমাকে। আমার জীবনটাওতো তোমার মত হতে পারতো! কেন যুগেযুগে একদল শুধু কষ্ট পেয়েই যাবে আর অন্যদল সেসব কষ্টের ধারে কাছেও যাবেনা! আমি তা মেনে নিতে পারছিলাম না। কিন্তু তুমি এমনভাবে আমার দেয়া সব অপমান আর অবহেলা ফু দিয়ে উড়িয়ে দিতে দেখে ভাবলাম, এভাবে কেন আমিও একসময় করলাম না!"

শাশুড়িআম্মা বলেই যাচ্ছিলেন, "আমি কষ্ট পেয়েছি বলেই যে তোমাকেও কষ্ট পেতে হবে সেটা কি ঠিক বৌমা! দিনতো একসময় বদলাতেই হবে কি বল? আমরাই নাহয় বদলে দিই। তুমি যদি আমার সময়ের বউ না হও, আমিওতো তাহলে সেই আগের শাশুড়ি না! সেই আগের কষ্ট মনে না রেখে এখন দুইজন মিলে নতুন ভাবে ভাল থাকি, কি বল বউমা?"

বোকা মেয়েটা হাসছে আর চোখ দিয়ে তখনো টপটপ করে পানি পরছে।

আমি দুইহাতে চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বল্লাম, "হ্যাঁ, আজ থেকেতো দেখছি নতুন এক স্টাইলেও মানুষ হাসবে! চোখের পানি ফেলতে ফেলতে!"

আমি তখনই ভাবলাম, এই মানুষটাকে ছাড়া আমি এই ঘরে থাকতে পারবোনা। এই মানুষটা ছাড়া আমার এই সংসার একদম অসম্পূর্ণ।

(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top