What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made প্রাপ্তি ❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤ (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
আমার মায়ের একটি মাত্র ভালো শাড়ী ছিল, গতরাতে সেটা চুরি হয়ে গেল।



আজ আমার কলেজে প্রোগ্রাম, আমরা যারা ভালো রেজাল্ট করেছি তাদেরকে কলেজের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেয়া হবে। বাবা-মা সাথে যেতে পারবেন। শনিবার হওয়াতে বাবার অফিস তাই বাবা যেতে পারবেন না। মা আমার সাথে যাবেন। অনেক নামকরা গেষ্ট আসবেন। ঢালাওভাবে কলেজ সাজানো হয়েছে। মা আলমারী থেকে তার সেই একটি মাত্র ভালো শাড়ী, হাস্কা বেগুনী রঙের মিরপুরী কাতানটা বের করে বললেন,

-সাবা, দেখতো শাড়ীটাতে কেমন ভ্যাপসা গন্ধ করছে। ম্যালা দিন আলমারীতে আটকে আছে তো!

-সমস্যা নেই, মা। সারারাত বারান্দায় মেলে রাখো, বাতাসে গন্ধ চলে যাবে। সকালে আমি আয়রন করে হাল্কা একটু পাউডার ছিটিয়ে দেবো। দেখবা কোন গন্ধ থাকবে না।



আমার সহজ সরল মা। আমার কথামত বারান্দার রশিতে শাড়ীটা মেলে দিয়ে রাখলেন। সকালে ফজরের নামাজের পর বারান্দায় গিয়ে দেখলেন, শাড়ীটা নেই! মা প্রথমে ভেবেছিলেন, আমি হয়তো রাতে কোন একসময় শাড়ীটা তুলে এনে ঘরে রেখেছি। মা আমার মাথায় আস্তে করে হাত দিয়ে ডাকলেন,

-সাবামনি, তুই কি আমার শাড়ীটা তুলেছিস?

-না তো, মা! কেন?

-বারান্দায় যে নেই!



আমরা একতলা বাসায় থাকি। ছিঁচকে চোরের উৎপাতের কথা গতরাতে মা-মেয়ে কেন ভুলে গেলাম কি জানি!



আমার বুক ভেঙে কান্না আসছে। সত্যিই আমার মায়ের এই একটাই ভালো শাড়ী ছিল। তিন বছর আগে বড়খালার মেয়ের বিয়েতে পনের'শ টাকায় এটা খালা কিনেছিলেন মায়ের জন্য। আমি সাথে ছিলাম। আমার অন্য খালাদের শাড়ীগুলোর দাম ছিল সাত/আট হাজার টাকার মধ্যে। আমার মায়েরটা পনের'শ, মানে দেড় হাজার। এই বৈষম্যে আমার চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছিল। যেহেতু আমার মা বড় অফিসারের বৌ না, তেমন কোন পার্টি-টার্টিতে তো মাকে এ্যাটেন্ড করতে হয়না, সুতরাং একদিনের বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য এই যথেষ্ট!



মা আমাদের দুইবোনকে পায়ে হেঁটে স্কুলে দিয়ে আসেন, নিয়ে আসেন। আমরা একই স্কুলে। বাসা থেকে অবশ্য বেশী দূর না, মাইল খানেকের মধ্যে। গুটিগুটি পায়ে যেদিন বাবার হাত ধরে এই নামকরা স্কুলটাতে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি পরীক্ষা দিতে গেলাম, তখন পরীক্ষা, প্রতিযোগীতা এই ব্যাপারগুলো বুঝতে শিখিনি। মা সন্ধ্যার পর কাছে নিয়ে বসে খেলার ছলে যেটুকু পড়াতেন, সেটুকুই। ভর্তির জন্য আলাদা কোন কোচিং বা শিক্ষকের কথা আমাদের মাথায়ই আসেনি।



সেই যে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হলাম, আর কোনদিন দ্বিতীয় হইনি কোন ক্লাসে। স্কলারশীপ পেলাম দু'বার। বাবা-মা জায়নামাজে বসে শোকরানা করেন আল্লাহর কাছে। ছোট বোন দীবাও আমার মত। সব ক্লাসে প্রথম। ও এবার ক্লাস নাইনে।



আমার বাবা-মার ধ্যান,জ্ঞান সবটুকই ছিল আমাদের দু'বোনের লেখাপড়া নিয়ে। বাবা আমাদের দু'চোখ ভরে স্বপ্ন দেখাতেন। মা ছায়া হয়ে আগলে রাখতেন সবসময়। যার জন্য বাবার খুব সামান্য বেতনেও আমরা গুছিয়ে চলতাম। বাইরের চাকচিক্য থেকে চোখ সরিয়ে নিতাম। ওগুলো আমাদের জন্য নয়। মা মাঝেমধ্যে পাঁচ-দশটাকা আমার হাতে গুঁজে দিতেন, আমড়া, বাদাম এগুলো খাবার জন্য। আমি সেই টাকা ব্যাগের গোপন পকেটে জমিয়ে রাখতাম। মাস শেষে মাকে দিয়ে বলতাম, বাইরের খাবারে অনেক জীবানু থাকে, তাই ওসব না খাওয়াই ভালো। আমি জানতাম এই টাকাগুলো দিয়ে আমাদের অন্ততঃ তিন কেজি চালের ব্যবস্থা হবে!



দশটার মধ্যে কলেজে যেতে হবে। নয়টা বাজে। আমাদের মা-মেয়ের গোসল শেষ। আমাকে যেহেতু কলেজ ড্রেসেই যেতে হবে তাই কলেজ ড্রেস পরে নিলাম। কিন্তু মা? মা'র যে এতো বড় আয়োজনে পরার মত আর কোন শাড়ী নেই! একটা রাজশাহী সিল্ক খুঁজে বের করে দেখি জায়গায় জায়গায় ফেঁসে গেছে! পরা যাবে না।



মা সেই ফেঁসে যাওয়া রাজশাহী সিল্ক খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সুঁই সুতা দিয়ে রিপু করতে শুরু করলেন।

-সাবা, পাশের বাসায় যা তো, মা। আন্টিকে বল উনার বোরখাটা আমি চেয়েছি।

-বোরখা কেন, মা? আর আমি চাইতে পারবো না, লজ্জা করবে!

-আচ্ছা, আমিই যাচ্ছি।



সময়ের ঘুঁনে খাওয়া একটা মলিন শাড়ী ঢাকতে মা আরেকজনের বোরখা গায়ে চাপিয়ে নিলেন।

-বুঝলি সাবামনি, তুই হয়তো ভাবছিস আমি শাড়ীই তো চেয়ে পরতে পারতাম, বোরখা কেন? শোন্ না, সবকিছু চাওয়া যায় না, বোরখা চাওয়ার পিছনে আমি একটা যুক্তি দাড় করালাম। তোর আন্টিকে বললাম, মন্ত্রী-মিনিষ্টার, সচিব কতশত মানুষের মধ্যে যেতে খুব অস্বস্তি লাগছে, ভাবী আপনার বোরখাটা দেন পরে যায়। উনি খুশীমনেই দিলেন। যা মা, চোখ মুখ ধুয়ে আয়। কেঁদে তো লাল করে ফেলেছিস!!!



অনুষ্ঠান শুরু। আমার মা প্রথম সারিতে বসে আছেন। অন্যান্য সব আন্টিরা আজ অনেক সুন্দর করে সেজে এসেছেন। কত দামী শাড়ী, ম্যাচিং গয়না, চকচকে হাতব্যাগ! আমার মা একটা কালো বোরখার আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে গুটিশুটি মেরে বসে আছেন।আমি নিজের অজান্তে বারবার চোখ মুচ্ছি!



সকল ক্লাসে রেকর্ড সংখ্যাক নাম্বার নিয়ে পাশ করা মেয়েটিকে মঞ্চে ডাকা হলো। সাবরিনা আসাদ সাবা। প্রিন্সিপ্যাল স্যার আমার হাতে ক্রেস্ট দিলেন, শিক্ষা সচিব মহাদয় পরিয়ে দিলেন মেডেল! ভাইস-প্রিন্সিপ্যাল ম্যাডাম আমার মাকে মঞ্চে ওঠার অনুরোধ জানালেন।



আমার মা ধীর পায়ে মঞ্চে উঠে এলেন। সকল অতিথিবৃন্দ দাড়িয়ে হাততালি দিয়ে মাকে অভিবাদন জানালেন। ফুলের তোড়া মায়ের হাতে দিয়ে ভাইস-প্রিন্সিপ্যাল ম্যাডাম বললেন, আমরা এই রত্নগর্ভা জননীর মুখ থেকে কিছু শুনতে চাই।



আমার মা তেমন কিছু গুছিয়ে বলতে পারলেন না। তবু সবচেয়ে সত্য এবং দামী কথাটা বললেন,

-আপনারা সন্তানকে স্বপ্ন দেখতে শেখান, সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলতে শেখান!



মুখরিত হলরুম, চারিদিকে হাত তালি! একজন সফল মায়ের গৌরব বুকে নিয়ে সবচেয়ে সাধারণ পোশাকের একজন মা তার সন্তানকে বুকের ভেতর টেনে নিলেন। কপালে চুমু দিয়ে কানেকানে বললেন, মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার, সবচেয়ে দামী উপহার হলো, সু-সন্তান!


( সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top