What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made পরম ছায়া ❤❤❤ (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
নীলা শশুরবাড়ীতে এসে প্রথমেই ধাক্কা খেলো চারদিকে টিনসেডের ঘর দেখে। বাথরুমও বাহিরে। শুধু শিক্ষিত দেখেই এই ছেলের সাথে বাবা মা বিয়ে ঠিক করেছে। নীলা বিয়ের আগে কখনো দেখেনি রানাকে, কবুল বলার দিনই চার চক্ষু এক হয়। নীলার বড়মামা ঘটকালীটা করেছে। নীলার বাবা রিটায়ারমেন্টে চলে গেছে বলে এই ছেলে আর হাতছাড়া করেনি বড়মামা।

মোটামুটি স্বচ্ছল অবস্থাতেই বড় হয়েছে নীলা। খুব ঠান্ডা স্বভাবের নীলা, তিন ভাই বোনের মধ্যে মেঝো। বড় ভাই একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরী করে, ছোট বোন নীরা কেবল এসএসসি পাশ করল। বাবার রিটায়ারমেন্টের টাকা খরচ হয়ে যাবার ভয়ে মেয়ের বিয়ের জন্য উঠে পড়ে লাগে। অতঃপর আজ সেই শুভক্ষণ।

আজ নীলার বিয়ে। চারপাশের অনেক লোকের সমাগম। অপরিচিত সব মুখ। ভয়াবহ এক কন্ঠস্বরে সকলের হাসি থেমে যায়। ওরে, গোলামের ঘরে গোলাম, মাগীর ঘরে মাগীরা ঘর থাইকা বাহির হ "" বলে ঘরে প্রবেশ করেন শ্রীমাতা (শাশুড়ী)। বউটারে কি তরা আরাম করতে দিবিনা?। সুর সুর করে বেড়িয়ে যায় সবাই। শাশুমার পিছু পিছু রানা এগিয়ে এসে বলে, "মাকে সালাম কর।" নীলা বিছানা থেকে নেমে সালাম করে। মহিলা নীলার দিকে তাকিয়ে বলে, তোমারে দেওনের মত কিছু নাই, তবে যারে দিলাম, সে লাখে একখান। আমার বুক থাইকা তারে কখনও সরানোর চেষ্টা কইরো না। বিধবা এই মহিলা কেমনে দুইটা পোলারে মানুষ করছে, তা একমাত্র আল্লাহই জানেন। লও, অহন শুইয়া পড়ো, বউ হইয়া আইছো যখন, হগলতি শুনতে পাইবা।" কথা গুলো বলে দ্রুত প্রস্থান করেন শ্রীমাতা।

রানা নীলার ঘোমটা সরিয়ে বলে, আমাদের এই ছোট্ট ঘরে তোমার কষ্ট হবে জানি, যদি মানিয়ে গুছিয়ে চলতে পারো, তবে তুমি সবচেয়ে সুখী হবে এই পৃথিবীতে।

কাকভোরে উঠে পুরো বাড়ীটা একনজরে দেখে নেয়। নীলার শাশুড়ী বাবার সূত্রে এ জায়গা পেয়েছে। জায়গার অর্ধেকটাই ভাড়া দিয়েছে, ছেলেদের পড়ালেখার খরচ জোগার জন্য। বাকি অর্ধেকটায় কোন রকমে মাথা গুজার ঠাই করেছে। দু ছেলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেছে। রানা, ফরেনারের ক্যামিকেল কোম্পানিতে চাকুরীরত একজন ক্যামিষ্ট।

নীলা, সকালে বাথরুমের লাইন দেখে মনে হচ্ছে, সে বস্তিতে উঠে এসেছে। সে লাইনে না দাড়িয়ে তার শাশুড়ীর ঘরের দিকে এগোতে থাকে। হতবাক হয়ে যায় শাশুড়ীকে দেখে। ব্লাউজ আর পেটিকোট পড়ে অনায়াসে হাটাহাটি করছে, ভদ্রমহিলা। সামনে উপবিষ্ট দুছেলেকে কিছু নির্দেশনা দিচ্ছেন। আমায় দেখে উচু গলায় বলে, কিছু কইবা নাকি বৌ? নীলা অস্বস্তির সাথে বলে, জী না। , গোসল করছ? জী না। কও কি? নতুন বউ গোসল ছাড়া ঘুরতাছো, এইটা কেমুন কথা? ঘরে তো অমঙ্গল হইব। কিছু ছুইবা না মেয়ে। নীলার কান গরম হয়ে গেল, একি বলে মহিলা? বাথরুমের সামনে গালিগালাজ করে সবাইকে বের করে শাশুড়ী নীলাকে গোসল করতে ডাকে।নীলার অস্বস্তি লাগে টয়লেটে যেতে বদনা হাতে নিয়ে। উফফ! কি ভয়ঙ্কর! চিন্তা করতে গেলেই ভয়ে শেষ।

সেদিন রাতে নীলার বড় ভাই নিপুন আর নীরা এলো নীলাকে দেখতে, নীলা আবেগে কেদে ফেলল, ভাইয়া, কোন জায়গায় আমায় বিয়ে দিয়েছো? ভাই, নীলার চোঁখ মুছে দিয়ে বলে, এভাবে বলতে নেই, অনেক সুখী হবি একদিন।

রান্নাঘরে এসে নীলা দেখে, ভাড়াটিয়া দুই মহিলাকে নিয়ে অনেক রান্না করে ফেলেছেন তার শাশুড়ী। নীলাকে দেখে বলে, এখানে কি চাও, যাও, ভাই বোনে একলগে গপসপ করো। "

নীলার ছোট্ট রুমে তেমন কোন কাজ থাকেনা। রানা কাজ থেকে ফিরে মায়ের কাছে ঘন্টা খানিক থাকার পর নীলাকে সঙ্গ দেয়।

নীলা বাবার বাসায় নাইয়রে গেছে রানাকে নিয়ে। নিজের রুমে নিজের বিছানায় লম্বা একটানা ঘুম দেয়, অনেক বেলা করে উঠে। অনেকক্ষন ধরে সাওয়ার নেয়। মনে হল কতদিন ভালো করে গোসল হয়নি!

রানার খুব অস্বস্তি লাগছে, নীলার বাসায়। কিন্তু নীলার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারছেনা। নীলার চোখে মুখে আনন্দ যা দেখতে রানার ভালো লাগছে আবার কষ্টও লাগছে। নীলাকে একটা সুন্দর পরিবেশ দেয়া দরকার, ওরকম একটা পরিবেশে সে সত্যি বেমানান।

নীলা যাবার দিন খুব কান্নাকাটি করছে, সে যাবেনা কিছুতেই। ওখানে নীলার বড় ভাই আর বাবা দুজনে মিলে রাজি করিয়ে রানার সাথে স্কুটারে উঠিয়ে দিল। রানা সারাপথ নীলাকে বুঝাতে বুঝাতে এসেছে।

নীলার ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখে, তার দেবর আলমারী খুলে কি যেন পেপারস বের করছে। নীলা এত অবাক হল যে, তার পারমিশন ছাড়া, এ কি করে সম্ভব? নীলা বেশ রেগে গিয়ে রোমেলকে বকাঝকা করে। রোমেল লজ্জা পেয়ে সরি বলে চলে যায়।

নীলার অসম্ভব মন খারাপ হয়। দুপুরেও ভাত খায়না। রুম থেকেও বের হয়না। রাতে রানা অনেক বুঝিয়ে ভাত খাওয়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারেনা। অবশেষে শাশুড়ী এসে বলে, কি গো ভাত খাইবা না কেন? রোমেল তোমার ঘরে ঢুকছে দেইখা? মাগীর ঘরে মাগী, তুই শুইয়া ন্যাংটা হইয়া শুইয়া থাকলেও আমার পোলা তোর দিক চাইব না। বস্তি ভাড়া দিয়া সন্তান গো মানুষ করছি, বিশ্ববিদ্যালয় তন মানুষ করছি। স্বভাব খারাপ কেমনে হইব? পড়াশুনা করলেই মানুষ হয়না রে বউ, আমি দুই পোলারে আসলেই মানুষ করছি। ছোট পোলা, তোর আলমারী থেকে কিছু চুরি করতে খুলেনি, খুলেছে, তোর সুখের জন্য। তোর এখানে অসুবিধা হইতাছে, বাড়ীর দলিল এই আলমারীতে। পাঁচ কাঠা জমি বেচব তোর জন্য। একটা ফেলাট কিনব তোর জন্য। আর তুই কিনা ----- নীলা শাশুড়ীকে জড়িয়ে কেঁদে ফেলে। মাফ করে দিন মা, আমি বুঝতে পারিনি।

নীলা এখন তার নতুন ফ্লাটে। সারাদিন ঘর সাজা নিয়ে ব্যস্ত। রোমেলকে বিয়ে দিয়েছে। নীলা চার বছরের ছেলেকে স্কুলে দিবে, এ নিয়ে মহা ব্যস্ত।রানার এখন চাকরি ছেরে ব্যবসা করছে ক্যামিকেলের।শুধু শাশুড়ীর কোন পরিবর্তন হয়নি। ব্লাউজ পেটিকোট পড়ে এখনও নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে ঘোরাফেরা করে। গরম লাগে তার। নীলা এসি লাগিয়ে দেবে তা শুনে সে কি চেচামেচি। দরজা জানালা আটকানো থাকলে নাকি দম বন্ধ লাগে। সারাদিন ছোট বউকে বকাঝকা করে, রুপচর্চার করার জন্য।মাগীর ঘরের মাগী, বাপের বাড়ী থাইকা কি ডাইল আনছস? ডাইল ত মুখে মাইখা সব শেষ করলি। নীলা জানে, এগুলো তার মুখের কথা নয়। সে, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শাশুড়ীদের একজন। দুই ছেলের মত দুই বউও তার চোখের মনি। আর নাতিটা তার শক্তি। এদের ভাল রাখার জন্য সে সব করতে পারে।

বেঁচে থাক এই মুরব্বীগুলো। চিৎকার চেঁচামেচি করুক, কি যায় আসে।

তাদের পরম ছোঁয়াটুকু যেন পড়ে আমাদের সবার গায়ে।



বিঃদ্রঃ এখানে শাশুড়ী র ভাষা কেউ খারাপ ভাবে নিবেন না, কোন ভাষার গালি কোন ভাষার বুলি, এখানে শাশুড়ী ভাষা বুলি... 🙏🙏

(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top