What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made ভালোবাসার গল্প (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
ফাতেমা। আমার স্ত্রী। আমার মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বোকা, সহজ সরল আর অপদার্থ মেয়েটাকে আমি বিয়ে করেছি। এতটা বোকা মেয়ে দিয়ে কি আর এই ঢাকা শহরে সংসার হয়। এই সব দোষ আমার বড় মামার। আমাকে ফোন দিয়ে বলে কি, মোজাম্মেল বাজান তোমার জন্য তো দুধে আলতা একখান মাইয়্যা ঠিক করা হয়েছে। মাইয়্যার চর্তুমূখী গুন। বেশি সময় নেওয়া যাবেনা। তুমি চট জলদি গাড়িত উইট্যা পরো।
লোকটাকে আমি বিশ্বাস করে ভীষণ ঠকেছি। এতটা অন্যায় আমার সাথে তিনি করতে পারলেন!
শুক্রবার বিয়ে হল। আমার হাতে ছুটি কম। ছাপাখানার সুপারভাইজারের চাকরি। ছুটি ছাটাও কম। মালিককে বলে কয়ে মাত্র তিনদিন ছুটি নিলাম। বিয়ের পরদিন ফাতেমাকে নিয়ে রওনা দিলাম। ঢাকায় আসার পথে সারাটা পথ কেদেঁছে মেয়েটা। এতটা কাঁদতে পারে মানুষ। আমার খুব বিরক্ত লাগছে।
আমি বললাম, এত কাঁদছো কেন?
ফাতেমা চোখ মুছতে মুছতে বলল, আমাদের লাল বাছুরটার কথা খুব মনে পড়ছে। গত পরশু রাত থেকে তার খাওয়া দাওয়া বন্ধ। বাছুরটার শরীর খুব খারাপ।
ফাতেমার কথা শুনে আমার রাগ আরো বেড়ে গেল। আমি কিছু বললাম না।
বড় মামা ফাতেমাকে নিয়ে এত ভালো ভালো কথা বলল রাজি না হয়ে উপায় ছিলনা। মামার কথা শুনে আম্মা বললেল, লাখে একখান মাইয়্যা। এই মাইয়্যা হাত ছাড়া করা যাইবো না। তুমি বাজান আর না কইরো না।
ফাতেমার পড়ালেখা ক্লাস টেন। ফাইনাল পরীক্ষার সময় টাইফয়েড জ্বর হলে আর পরীক্ষা দিতে পারেনি। পড়ালেখা এখানেই শেষ। দেখতে মোটামুটি সুন্দরী। কপালের দিকে একটা কাঁটা দাগ আছে। বড় মামা বললেন, ও কিছু না। ছোট বেলায় চালতা গাছ থেকে পরে গিয়ে কাটছে। মাইয়্যা মানুষের শরীরের একটু দাগ থাকা ভালা। নিখুঁত হইলে অহংকারী হয়।
গাবতলী নামলাম গাড়ী থেকে। গাবতলী নেমে ফাতেমার কান্না মোটামুটি থেমে গেল। এত এত মানুষ আর গাড়ী দেখে সে মনে হয় খুব ভয় পাচ্ছে। আমার শার্টের পেছনের একটা অংশ আকড়ে ধরে আছে। আমার খুব বিরক্ত লাগছে। এখন যেতে হবে সেই যাত্রাবাড়ি। যাত্রাবাড়ি শহীদ মুন্সীর টিন শেড লাইনে আমার বাসা।
বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে অনেক রাত হয়ে গেল। ছোট্ট দুই রুমের একটা বাসা। ছাপাখানার অল্প বেতনের চাকরি। এই বেতনে এর চেয়ে ভালো বাসা নেওয়া ভীষণ কঠিন। আমি নিশ্চিত ছিলাম এই বাসা ফাতেমার পছন্দ হবে না। কিন্তু এই বাসা দেখে ফাতেমা ভীষণ খুশি। আমি মনে মনে ভাবি, বোকা বলেই হয়তো মেয়েটা এত খুশি হয়েছে। এই বাসা দেখে খুশি হওয়ার কিছু নাই।
ভোরের দিক হঠাৎ করে ফাতেমার খুব জ্বর হলো। ভীষণ জ্বর। জ্বরের ঘোরে ফাতেমা কি সব আবোল তাবোল বকছে। এসব দেখে আমার ভয় ধরে গেল। বিরক্তিও বাড়ছে। আমি ফাতেমার মাথায় জলপট্টি দিলাম। জ্বর একটু কমতেই ফাতেমা উঠে বসলো। ফাতেমা কাঁদছে। ফুঁফিয়ে কাঁদছে। হঠাৎ এভাবে কাঁদতে দেখে আমার বিরক্তি আরো বেড়ে গেল। আমি জানতে চাইলাম কি হয়েছে। ফাতেমা কিছু বলছে না। আমি আর কথা বাড়ালাম না। যা ইচ্ছে করুক মেয়েটা।
ফাতেমাকে নিয়ে আমার সংসার মাস খানেক পেরিয়েছে। এই মাস খানেকের মধ্যে আমি বুঝে গেলাম এমন বোকা মেয়েকে নিয়ে আমার সংসার করা ভীষণ কঠিন হবে। মাঝে মাঝে বড় মামাকে ফোন দিয়ে বকাঝকা করি। বড় মামা চুপ থাকেন। আমার কোন কথার উত্তর দেন না। তার শুধু একটাই কথা আল্লাহ তোমার জন্য এই মাইয়্যা হুকুম করছে, তুমি কেমনে তারে অবহেলা করবা।
মামার কথা শুনে আমার রাগ আরো বেড়ে যায়। আমি রাগ করে মামার ফোন কেটে দিই।
মুগ ডাল দিয়ে ছাগলের মাথা রান্না আমার খুব পছন্দের। ছাপাখানা থেকে ফেরার পথে যাত্রাবাড়ির মোড় থেকে একটা ছাগলের মাথা নিয়ে আসলাম। আসার সময় মোল্লার দোকান থেকে মুগডাল নিলাম। ফাতেমারে বললাম মুগডাল দিয়ে ছাগলের মাথা রাধতে।
শরীর ভীষণ ক্লান্ত। প্রায় ঘুমিয়ে পরেছি। এমন সময় ফাতেমা ঘুম ভাঙ্গালো। ছাগলের মাথা রান্না হয়েছে। আমি খাওয়ার লোভে তড়িঘড়ি করে বসলাম খেতে। মুখে দিতেই আমার খাওয়ার স্বাদ শেষ হয়ে গেল। এত বিশ্রী। ভাত রেখেই উঠে গেলাম খাওয়া থেকে।
আমি বুঝতে পারছি আমার এভাবে ভাত রেখে উঠে যাওয়া দেখে ফাতেমা কষ্ট পেয়েছে ভীষণ। সারা রাত কেঁদেছে মেয়েটা। আমার খুব মায়া হলো। এত বোকা হলে কেমন করে হয়।
ফাতেমার সাথে আমার সংসার আরো তিন মাস পেরুলো। রোজ রোজ এই মেয়ে এমন সব কান্ড কান্ড কারখানা করছে মাঝে মাঝে মনে হয় গ্রামে রেখে আসি। আমি একা মানুষ। কি করে আমি তার এসব বোকামি কান্ড কারখানা সামলাবো বুঝতে পারিনা।
সেদিন ছিল মঙ্গলবার। অফিসের বড় সাহেবের একটা কাজে গেলাম গাজীপুর। আসার পথে টঙ্গীতে মারাত্নক একটা এক্সিডেন্ট হলো আমার। বাম পা ভেঙ্গে গেলো। শরীরের আরো জখম। অজ্ঞান হয়ে পরে থাকলাম রাস্তায়। লোকজন নিয়ে ভর্তি করালো পিজি হাসপাতালে। রাতে জ্ঞান ফিরলে ফাতেমাকে জানালাম। আমি জানি ফাতেমার করার কিছু নেই। ফাতেমা বসে বসে কাঁদবে। এই হাসপাতাল পর্যন্তও আসার সাহসটুকু তার নেই। তারপরও কেনজানি ফাতেমাকে জানাতে ইচ্ছে করল।
ঠিক মাঝ রাতে ফাতেমা হাসপাতালে এসে হাজির। ফাতেমা কাঁদছে। হাউমাউ করে কাঁদছে। ফাতেমার কান্না দেখে আমার ভীষণ মায়া হচ্ছে। এই প্রথম ফাতেমাকে দেখে আমার মনে হলো মেয়েটা একটুও বোকা না। এই মাঝ রাতে যে মেয়ে একা একা যাত্রাবাড়ি থেকে পিজি হাসপাতালে আসতে পারে সে কখনো বোকা হতে পারেনা।
প্রায় মাস খানেক ছিলাম হাসপাতালে। ফাতেমা রোজ সেই ভোরে যাত্রাবাড়ি থেকে খাবার দাবার রান্নাবান্না করে নিয়ে আসত হাসপাতালে। সারাদিন হাসপাতালে থেকে রাতে ফিরে যেত যাত্রাবাড়ি। এভাবেই চললো। প্রায় মাসখানেক পর বাসায় ফিরলাম। আরো বেশ কিছুদিন আমাকে বিছানায় থাকতে হবে। জমানো সব টাকা শেষ হতে চললো। ফাতেমা কেমন করে জানি সবকিছু চালিয়ে নিচ্ছে। ফাতেমা তার বাবাকে বলে দিয়েছে। তিনি মাঝে মাঝে বস্তায় করে ঢাকার বাসে চাল ডাল নানা জিনিস পাঠায়। ফাতেমা গাবতলী গিয়ে সেই চাল ডালের বস্তা নিয়ে আবার বাসে করে যাত্রাবাড়ি আসে।
একদিন দেখি ফাতেমা বাসায় কাঁথা সেলাইয়ের কাজ শুরু করেছে। নানা রং বেরং কাঁথা সেলাইয়ের কাজ। আমি বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফাতেমার কাঁথা সেলাই দেখি। নকশি কাঁথা। এত সুন্দর করে কেউ কাঁথা সেলাই করতে পারে আমার জানা ছিলোনা। ফুল, পাখি, নদী কত কি এঁকে ফেলে মেয়েটা বুঝতেই পারিনা। চোখের সামনে সাধারণ একটা কাপড় ফাতেমার হাতের ছোঁয়ায় এত সুন্দর হয়ে উঠে। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়।
আমার আশে পাশের প্রায় সব ঘরের লোকজন দেখি ফাতেমাকে ভীষণ ভালোবাসে। মাত্র কয়েক মাস আগে আসা গ্রামের খুব সাধারণ একটা মেয়ে কেমন করে জানি সবার প্রিয় হয়ে গেল। রোজ দিনই কেউ না কেউ তাদের বাসায় ভালো কিছু রান্না করলে একটু করে ফাতেমার জন্য নিয়ে আসে। ফাতেমা খুব না করে তারপরও তারা এটা ওটা আনে। শুক্রবার পাশের বাড়ির সুফিয়া খালা বিশাল এক কাতল মাছের মাথা নিয়ে হাজির। তার খুব শখ হয়েছে এই মাথা ফাতেমাকে খাওয়াবেন। খালার এমন আদর পেয়ে ফাতেমা কেঁদে ফেলল। ফাতেমার কান্না দেখে খালাও কাঁদছে। আমি শুধু অবাক হয়ে দেখে আছি। কয়েকদিনের পরিচয়ে একটা মানুষ আরেকটা মানুষয়ের জন্য কাঁদতে পারে।
ফাতেমা অনেক পাল্টে গেছে। প্রথম দিন ঢাকায় নেমে যে মেয়ে আমার শার্ট আঁকড়ে ধরে ছিল সে মেয়ে শুধু প্রয়োজনে কতটা পাল্টে গেল। সময়ের প্রয়োজনে মেয়েটার পাল্টে যাওয়া আমি দেখেছি। গ্রামের সহজ সরল শান্ত মেয়েটি আমাকে জীবনের সর্বশক্তি দিয়ে আগলে রেখেছে। আমি ফাতেমার সেলাই করা রঙিন ফুলে ভরা কাঁথাটার দিকে থাকিয়ে থাকি। আমার ভীষণ কান্না পায়। কেনজানি ফাতেমাকে দেখে আমার ভীষণ মায়া হচ্ছে। আমি ভীষণ অন্যায় করেছি। আমার ঠিক মনে পড়ে গেল সেদিনের ভাত না খেয়ে উঠে যাওয়ার কথা। কথাটা মনে পড়তেই আমি ফাতেমাকে বললাম, আমার উপর তোমার অনেক রাগ তাই না?
ফাতেমা আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বলল, রাগ করব কেন?
আমি বললাম, তোমাকে কত অবহেলা করলাম।
ফাতেমা সুঁইটা কাঁথায় গুঁজে রেখে আমার পাশে এসে বসল। তারপর কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, আমি খুব ভীতু মেয়ে। আমার খুব ইচ্ছে ছিল মেট্রিক পরীক্ষা দিব। মেট্রিক দিয়ে মকসুদপুর কলেজে ভর্তি হব। কি সুন্দর কলেজ ! কলেজের উত্তর পাড়ে একটা পুকুর আছে। কলেজে ছুটির পর আমি সেই পুকুর ঘাটে বসে থাকব। আমি রোজ সেই ঘাটে বসে আব্বার জন্য অপেক্ষা করব। আব্বা গিয়ে আমাকে কলেজ থেকে নিয়ে আসবেন। আমাদের গ্রামের মোতালেব কাকার মেয়ে রোকসানা আপাকে তার বাবা রোজ কলেজ থেকে নিয়ে আসেন। স্কুলে যাওয়ার সময় আমি তাদের দিকে তাকিয়ে থাকি। আমার ভীষণ ভালো লাগে।
কথাগুলো বলে ফাতেমা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর আবার বলে, মেট্রিক পরীক্ষার আগে আগে আমার জ্বর হল। ভীষণ জ্বর। টাইফয়েড ধরা পড়ল। আমার আর পরীক্ষা দেওয়া হলো না। তারপর সব শেষ। আব্বা বললেন, পরীক্ষা দিয়ে আর কি হবে। তাছাড়া তোমার অসুখে অনেক টাকা পয়সা খরচ হল। এখন আবার পরীক্ষা দিতে অত টাকা পয়সা খরচ করার সামর্থ্য আমার নাই। আব্বার কথা শুনে আমি অনেক কাঁদলাম। কোন কাজ হলনা। কেনজানি সেদিন থেকে আমার ভয় শুরু। সবকিছুতে আমার মনে হয় এই বুঝি সব শেষ। বিশ্বাস করেন আমার আর কোন স্বপ্ন ছিলনা ঐ কলেজে ভর্তি হওয়া ছাড়া। এটা শেষ হয়ে যাওয়ার পর আমার কি হলো জানিনা। আমার সবকিছুতেই ভয়। কোন কিছু আমি আর সাহস নিয়ে করতে পারিনা। তবে আপনার এক্সিডেন্টের পর ঐ রাতে আপনার একটা ফোন আমার সবকিছু পাল্টে দিয়েছে। একটা মানুষ কিঞ্চিৎ হলেও আমাকে ভরসা করে ফোন দিয়েছে। তাছাড়া এই মানুষটা আমার স্বামী। শুধু এই ভয়, শংকার কারণে আমার স্বামী হাসপাতালে একা একা বিপদে থাকুক তা আমি চাই না। যে করেই হোক আমার স্বামীর পাশে আমি দাড়াবো।
শেষের কথাগুলো বলতে বলতে ফাতেমা কাঁদছে। তার চোখ বেয়ে অঝর ধারায় পানি ঝরছে। কেনজানি ফাতেমার সাথে আমিও কাঁদছি। বুকের ভেতরটা চিন চিন করছে। আমি ফাতেমার হাত দুটো মুঠো করে ধরে আছি। আমার ভীষণ ইচ্ছে করছে ফাতেমাকে নিয়ে মকসুদপুর কলেজের সেই পুকুরটার ঘাটে গিয়ে তার হাত ধরে বসে থাকি। ফাতেমাকে আমার অনেককিছু বলতে ইচ্ছে করছে। অনেককিছু। আমি কিছুই বলতে পারিনা। আমি বুঝতে পারি, কিছু কিছু জিনিস কখনো মুখে বলতে হয়না। পালন করে বুঝিয়ে দিতে হয়। যেটা ফাতেমা দেখিয়েছে। আমি ফাতেমার হাতটা আরো শক্ত করে ধরলাম।
সেদিন রাতে ঘুমের মধ্যে একটা স্বপ্ন দেখলাম। আমি ফাতেমার হাত ধরে বসে আছি মকসুদপুর কলেজের পুকুর ঘাটে। ফাতেমা কাঁদছে। ফাতেমার কান্না দেখে আমার একটুও বিরক্ত লাগছে না। আমারও কান্না পাচ্ছে। আমি কান্না লুকিয়ে রাখতে চেষ্টা করছি। আমার কান্না দেখে ফাতেমা হাসছে। হাসলেও ফাতেমার দুচোখ বেয়ে গড়িয়ে পরছে অশ্রু। আমি জানি ফাতেমার এই অশ্রু নির্ভরতার, আস্থার এবং ভালোবাসার।
(সমাপ্ত)
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top