নীলয় অফিস যাবে তাই রেডি হচ্ছে আর রিমি শাওয়ার নিচ্ছে। ওর প্রতিদিন সকালে গোসলের অভ্যাস। নিলয় তার ফোনটা খোঁজে পাচ্ছিলনা কোথাও। রিমির ফোনটা ছিল ফ্রিজের উপরে রাখা। নিলয় বউয়ের মোবাইল হাতে নিয়ে নিজের নাম্বারটায় ডায়াল করবে তখনি একটা এস এম এস এসে ঢুকল আর নিলয়ের আংগুলের চাপে সেটা খোলেও গেল। এস এম এসে যে কয়টা লাইন লেখা ছিল তা নিলয়কে মৃত্যূর আগপর্যন্ত তাড়িয়ে বেড়াবে।
"তোমার কপাল ভাল এত ভালো একটা স্বামী পেয়েছ। তোমাকে সন্দেহ করেনা। যাই হোক আজ কিন্তু তাড়াতাড়ি চলে এস। তোমার জামাই অফিসের জন্য বেরোলেই চলে এস। "
মাথাটা ঝিম মেরে উঠল নিলয়ের। নিজের চোখে দেখছে কিন্তু বিশ্বাস করতে পারছেনা। নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে নিল। অন্য চিন্তা তখন মাথায়। এস এম এসটা যে সে পড়ে ফেলেছে এটা যাতে রিমি বুঝতে না পারে। কিন্তু উপায় কি? একবার ইনবক্সের খোলা চিঠি আর তো নতুন করে রাখা যায়না। চট করে একটা বুদ্ধি এল নিলয়ের মাথায়।
"নীলয় বাসায়। আর তোমার এস এম এস টা প্রেস পরে কেটে গেছে। এম এস টা আবার দাও তো প্লীজ" এই কথা গুলো লিখে পাঠিয়ে দিল সেই নাম্বারে আর নতুন দেয়া নিজের আর পুরাতন এস এম এস টা ইরাজ করে দিল। প্রায় সাথে সাথে একটা মেসেজ আসল। নীলয় ভাবল নিশ্চই সেন্ট আইটেম থেকে ফরওয়ার্ড করে পাঠিয়েছে অপ্রান্তের লোকটা। দোয়া করল মনে মনে যেন তার ধারণা সত্যি হয়। কারণ তার মাথায় একটা খেলার প্লান। যে খেলার রেফারির দায়িত্বে থাকবে সে নিজে। রিমি বাথরুম থেকে বের হয়ার খানিক বাদেই নীলয় অফিসে চলে গেল। নীলয় বাসা থেকে আসার আগে রিমি তাকে বলল, "আমি একটু আম্মুকে দেখতে যাব"। নীলয় ঠিক আছে বলেই বেরিয়ে এল। রিমি দেখলনা নীলয়ের মুখয়বে একটা ক্রোধে ভরা রহস্যময় হাসি লেপটে আছে।
♦♦♦♦
আধা ঘন্টা পর রিমি বাসা থেকে বের হয়ে একটা সিএনজি ডেকে উঠে বসলো। রিমি ঘুণাক্ষরেও টের পেলনা কিছু দূরে আরেকটা সিএনজিতে বসে নীলয় তাকে ফলো করছে। রিমির সিএনজি অবশেষে এসে থামলো মিরপুরের দশের একটা চারতলা বিল্ডিংয়ের সামনে। রিমি এমনিতেই খুব সুন্দর। আর সে যখন পিংক কালারের কোন জামা পরে তখন আরো সুন্দর লাগে। নীলয় দূর থেকে নিজের বউয়ের দিকে তাকিয়ে একটা করুণ দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
ড্রাইভারকে ভাড়া দেয়ার সময় নীলয়কে জিজ্ঞেস করেই ফেলল, স্যার উনি কি আপনার বউ?
প্রশ্নটা নীলয়ের কানে যেতেই সে এক সেকেন্ডের জন্য স্তম্ভিত হয়ে গেল।
কোন রকম উত্তর দিলনা। কিন্তু নীলয়ের ভেতর থেকে কেউ যেন তিরষ্কার করে বলল, মিথ্যা বলছিস কেন, তোর বউই তো।
রিমি ততক্ষনে বিল্ডিংটায় প্রবেশ করেছে। প্রায় দৌড়ে গিয়ে ঢুকল সেও। ঢুকে রিমিকে কোথাও পেলনা সে। এতবড় দালানের কোথায় কোন ফ্লাটে খোঁজবে। সে প্রতিটা ফ্লাটের দরোজায় কান পাতা শুরু করল। বিষয়টা যদিও রিস্কি। এই অবস্থায় কেউ দেখলে সোজা থানায় না হয় গনধোলাই। দ্বিতীয় তলার ডানপাশের ফ্লাটে আসতেই নীলয়ের নাকে একটা পরিচিত পারফিউমের ঘ্রাণ আসল। নিশ্চিত হল এটা রিমির পারফিউম। কীহোলে চোখ রাখল সে। নাহ কিছুই দেখা যায়না। এমন সময় একটা পুরুষ কণ্ঠ শোনা গেল। যদিও খুব ধীরে। সম্ভবত দরোজার লাগোয়া রুম থেকে নয়। যাই হোক পুরুষ কণ্ঠটা যখন বললো"পিংকে তোমাকে দারুণ মানায় রিমি। আমার মাথা ঘুরে গেছে দেখে" তখন নীলয় নিশ্চিত হল এখানেই এসেছে রিমি।তার কাজ শেষ। সে শুধু দেখতে এসেছিল জায়গাটা। সিড়ি বেয়ে আবার নীচে নেমে আসল সে। সিড়ির একেকটা ধাপ তার কাছে মনে হয়েছে অনন্তকালের পথ।
♣♣
এরপর দুই দিন খুব স্বাভাবিক আচরন করল নীলয় বাসায়। রিমি টেরই পেলনা কিছু। শুধু রাতের বেলা কেউ কার সংস্পর্শ পেলনা। দুটো রাত নীলয়ের অসম্ভব কস্টে কেটেছে। রিমির পাশে শুতে ঘৃণায় তার সারা শরীর রিরি করেছে। রিমি ঘুমিয়ে গেলে সে বেলকনিতে গিয়ে অনেক্ষন সিগারেট টেনেছে আর পায়চারি করেছে। তৃতীয় দিন সকালে অফিস যাবার আগে সুযোগ পেয়ে রিমির ফোনের সব ইনকামিং বন্ধ করে দিল নীলয়।
♦♦♦♦
সকাল সাড়ে এগারোটা।
নীলয় মিরপুরের সেই বিল্ডিংটার তিনতলার ফ্লাটের বেল বাজাচ্ছে। তার হাতে একটা কোকের বোতল। দেখে মনে হচ্ছে বোতলে কয়েকটা চুমুক দেয়া হয়েছে। দরজা খোলে একটা লোক জানতে চাইল কাকে চাই?
-রিমি পাঠিয়েছে আমাকে।
লোকটা খুব অবাক হল। ভয়ও পেয়েছে চেহারা দেখে বুঝা যাচ্ছে। কথা খোঁজে পাচ্ছেনা কি বলবে। নীলয়ই কথা শুরু করল।
-রিমি আমাকে পাঠিয়েছে বললাম তো। ভেতরে আসতে দেবেন না।
নীলয় মনে মনে খুশী হল লোকটা তাকে চিনেনা বলে।
অনিচ্ছা থাকলেও ভদ্রতার খাতিরে দরজার একপাশে সরে দাঁড়ালো লোকটা, বলল-আসুন ভেতরে আসুন।
ভেতরে গিয়েই নীলয় ড্রইং রুমের সোফায় গা এলিয়ে বসলো। কোকের বোতলটা রাখলো সামনের টেবিলে।
লোকটাও বসল সামনের সোফায়, চোখে অনেক জিজ্ঞাসা।
অবশেষে প্রশ্ন করল-তা আপনাকে কেন পাঠিয়েছে রিমি?
-আপনাকে খুন করতে।
লোকটার চোখের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল নীলয়।
তড়াক করে উঠে দাড়ালো মানুষটা। রক্তশুণ্য হয়ে গেছে চেহারাটা।
নীলয় হাহাহাহা করে হাসতে শুরু করল।
-ধুর মিয়া ফাজলামো করলাম, বসেন। নেন কোক খান।
ভরসা পাচ্ছেনা লোকটা। বসবে কি বসবেনা ভাবছে।
-আরে ভাই বসেন। আচ্ছা আপনার নামটা রিমি কি যেন বলেছিল ভুলে গেছি।
-আয়াজ।
নিজের নামটা বলতে বলতে বসল আয়াজ।
-আচ্ছা শুনেন আয়াজ সাহেব, রিমির আপনার যে রিলেশন আমারও তাই। আমি ওর হাজবেন্ড এর কলিগ। রিমি বলল আপাতত যাতে আপনি ওকে ফোন না দেন। ওর স্বামী আচমকা ওর ফোন নিয়ে রেখে দিয়েছে।
-অহ, তা আপনি জানেন কিভাবে?
-আমি তো বললাম আমি ওর স্বামীর কলিগ। আজ সকালে বাসায় গিয়েছিলাম। আমাকে বলল আপনাকে সাবধান করতে।
আয়াজের চেহারায় চিন্তার রেখা ফুটে উঠছে। সেই সাথে দেখা দিয়েছে ঘাম। অথচ ফুল স্পীডে ফ্যান চলছে রুমে। টেবিল থেকে কোকের বোতলটা নিয়ে ঢকঢক করে কয়েক চুমুক পেটে চালান করে নীলিয়ের দিকে এগিয়ে দিল।
নীলয় তার সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করতে করতে বললো-আপনি গিলে ফেলুন পুরোটা। আমি আর খাবনা, গলায় দেখছি সমস্যা করছে। সিগারেট চলে?
-চলেনা মানে? খুব চলে। আমার কাছে আছে।
আয়াজ কোকের বাকিটুকুও শেষ করলো কয়েক চুমুকে।
-তা রিমিকে আপনি কিভাবে পটালেন,আমি না হয় ওর স্বামীর কলিগ। আপনার সাথে কিভাবে পরিচয়?
আয়াজ আয়েশি ভংগিতে সিগারেট টানতে টানতে বললো-আসলে একটা শপিং মলে ওর সাথে পরিচয় মাস কয়েক আগে। ওকে দেখে মাথা নস্ট হয়ে গিয়েছিল আমার। অনেক কায়দা কসরত করে ওকে বাগে এনেছি।
-তাই বুঝি!তা আপনি বিবাহিত?
-হে। বউ আর একটা ছেলে তিন বছরের। ওরা রংপুর থাকে।
-বউ বাচ্চা দূরে রেখে অন্য মানুষ দিয়ে চাহিদার যোগান নিচ্ছেন।
-হুমমম। চাহিদা থাকলে যোগান তো আসবেই।
আয়াজের কথা শুনে নীলয়ের ইচ্ছে করছিল তার টুঁটি চেপে ধরতে। কিন্তু সামলে রেখেছে নিজেকে।
-আচ্ছা কেমন যেন একটা ঘোরের মত লাগছে আমার। অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি মনে হয়।
নীলয়ের দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো আয়াজ।
-আপনি আসলে অসুস্থ না, কিছুক্ষণের ভেতরে মরতে চলেছেন আয়াজ সাহেব।
খুব ঠাণ্ডা স্বরে কথাগুলো বললো নীলয়।
আয়াজ চোখ পিটপিট করে তাকাচ্ছে নীলয়ের দিকে।
-কি!!!
-ইয়েস। ইউ আর ভেরি নিয়ার টু ডাই।
আয়াজ স্থিরদৃষ্টিতে নীলয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলো। বুঝার চেষ্টা করছে নীলয়ের কথা সত্যি না ফান।
-কি বলছেন?
-হে, আমি কোকের সাথে একধরণের বিষাক্ত বিষ ভরে দিয়েছি। আগামী ১০ মিনিটের মধ্যে সারা শরীরে এই বিষ ছড়িয়ে যাবে মৃত্যুটা তরান্বিত করতে। আর আমি চেয়ে চেয়ে দেখব তোর মৃত্যুর যন্ত্রণা।
আয়াজ লাফ দিয়ে উঠল চেয়ার থেকে।
আতংকে মুখ ফ্যাকাসে হয়ে হয়ে গেছে। লাফ দিয়ে উঠে আবার ধপাস করে বসে গেল। পৃথিবীটা যেন দোলছে। কোনরকম নীলয়কে জিজ্ঞেস করলো-কে তুই, সত্যিই কি কোকে বিষ দিয়েছিলি?
নীলয় দাত কিড়িমিড়ি খেয়ে বললো-এতক্ষন তো চিনার কথা। আমি রিমির স্বামী। আর কোকে বিষ দিয়ে মারার জন্যইতো নিয়ে এলাম। তোর কেমন যন্ত্রণা হবে মরার সময় সেটা জানিনা তবে যেদিন শুনেছি বা দেখেছি আমার বউয়ের সাথে তোর রিলেশন সেদিন থেকে এর চাইতে তীব্র যন্ত্রণায় আমি পুড়ছি প্রতিনিয়ত। আর শুন তোর বউটা যখন জানবে তুই অন্য একটা মেয়ের সাথে নোংরা রিলেশন গড়ে তুলেছিস তখন সেও মৃত্যুর চাইতে বেশী যন্ত্রণা উপলব্ধি করবে তবে তুই মরে গেছিস শুনলে হয়তো কিছুটা মানসিক প্রশান্তি লাভ করবে। তোদের মত নোংরা মানুষগুলির মৃত্যুদণ্ডই হওয়া উচিৎ। তোদের বাঁচিয়ে রাখাটাই বরং পাপ।
আয়াজ নীলয়ের কথাগুলো সব শুনল কিনা বুঝা গেলনা কারণ সে সোফায় হেলে পড়ে আছে স্থির হয়ে।
♦♦♦♦
ডাইনীং টেবিলে বসে রাতের খাবার খাচ্ছে নীলয় আর রিমি।
-জান রিমি আজ একটা ঘটনার কথা শুনে খুব খারাপ লাগছে।
-কি ঘটনা?
-আমাদের অফিসের এক কলিগ তার ওয়াইফকে খুন করে ফেলেছে।
-কি বলছ! কেন?
-বউটার নাকি পরকীয়া ছিল। হাতেনাতে ধরেছে গতপরশু।
পরকীয়া শব্দটা শুনার পর থেকেই রিমির কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা শুরু হয়েছে। খাওয়ার গতি কমে গেছে। নীলয় আড়চোখে সব লক্ষ্য করছিল সেসব।
সে আবার শুরু করল- কিভাবে খুনটা করেছে জানলেতো ভয়েই মারা যাবে তুমি।
রিমির সারা শরীর শক্ত হয়ে গেছে, ভয়ে গলা কাঠ একেবারে। গ্লাস টেনে এনে ঢক ঢক করে পানি খেল। তারপর জানতে চাইল- খুনটা কিভাবে করেছে। রিমির চেহারা দেখেই বুঝ যাচ্ছে এই গল্পে তার কোন আগ্রহ নেই।
কিন্তু নীলয়কেতো বলতেই হবে।
নীলয়ের ভাত খাওয়া শেষ। সে বেসিনে হাত ধুতে ধুয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে বলা শুরু করলো।
-আমার কলিগ তার বউকে প্রথমে জিজ্ঞেস করেছিল বিষয়টা নিয়ে। আসলে সে জানত সবকিছু। কিন্তু তার ওয়াইফ স্বীকার না করে উল্টো তাকে বকাঝকা শুরু করে। চোরের মায়ের বড় গলা জানইতো। গতকাল রাতে নাকি তর্কাতর্কি করে দুজন আলাদা ঘুমিয়েছিল। ভোররাতে জামিল উঠে গিয়ে বউয়ের গলাটা কেটে ঘাড় থেকে একদম আলাদা করে ফেলেছে। তারপর পুলিশকে ফোন দিয়ে বলেছে"আমি আমার বউকে খুন করেছি, আপনারা আসুন। আমার বউয়ের লাশটা বিছানায় পড়ে আছে। লাশটার একটা ব্যবস্থা করুন আর আমাকেও নিয়ে যান। আমি আর ওকে স্পর্শ করতে চাইনা। পুলিশ প্রথমে ভেবেছিল কোন পাগল কিন্তু নিশ্চিত হবার জন্য এসে দেখে জামিল তাদের বেডরুমে বসে সিগারেট টানছে আর তার বউয়ের লাশটা বিছানায়। রক্তে ভরা বিছানা-বালিশ। মাথাটা নাকি বালিশেই ছিল আর ঘাড় থেকে নীচের শরীরটা বালিশের নিচে। দেখে নাকি মনে হয়েছে একটা ডামি সাজানো।
রিমি তার প্লেটের অবশিষ্ট খাবারে পানি ঢেলে দিল। ওর হাত-পা কাঁপছে। চোখ তুলে নীলয়ের দিকে তাকাতে পারছেনা। ভয়ে আর সংশয়ে সে যে জমে গেছে।
-কি হল রিমি খাবারে পানি ঢেলে দিলে যে!
-এমন গল্প শুনলে খাওয়ার রুচি থাকে!!!
-অহ আচ্ছা। তাহলে চল ছাদে যাই। অনেক দিন তোমাকে নিয়ে ছাদে যাওয়া হয়না।
-আজ না। অন্যদিন।
নীলয় দেখল তার বউয়ের চেহারায় কোন প্রাণ নেই। খুব বেশী শকড হয়েছে গল্প শুনে।
-আচ্ছা বাদ দাও। ছাদে যাওয়ার দরকার নেই। তবে তোমাকে এমন চিন্তিত লাগছে কেন। কি, আছে নাকি জামিলের বউয়ের মত কোন চক্কর?
হাসতে হাসতে নীলয় জিজ্ঞেস করল যেন এটা ফান।
রিমি নীলয়ের দিকে না তাকিয়েই বলল-কি যে বল তুমি।
নীলয় আবার হাসিমুখে বলল, এমন কিছু থাকলে আমি তোমাকে পিস পিস করে কেটে ফ্রীজে রেখে দেব। তারপর গলির কুকুরকে দিয়ে সেই পিছপিছ মাংস খাওয়াব। এভাবে পৃথিবীর বুক থেকে আমি তোমাকে নিশ্চিহ্ন করে দেব। হাহাহাহাহা।
রিমি নীলয়ের কথা শেষ হওয়ার আগেই বমি শুরু করে দিয়েছে।
নীলয় অবাক হলনা একটুও। এমন খুনের বর্ণনা শুনে যে কেউ এমন করতে পারে।
নিজের বানানো গল্পে সে নিজেই তৃপ্তির ঢেকুর দিচ্ছে।
♦♦♦♦
এদিকে রিমির রাতে প্রচণ্ড জ্বর উঠলো ভয়ে। কিন্তু কিছুতেই চোখের পাতা এক করেনা। চোখ বন্ধ করলেই সে দেখে 'নীলয় কুকুরকে মাংস খাওয়াচ্ছে, রিমির মাংস। কুকুরটা মহা আনন্দে সেসব খাচ্ছে। নীলয় কুকুরটাকে বলছে 'পেট ভরে খা, আরো আছে। আগামী এক সপ্তাহ তুই আমার বাসায় ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনার করবি'।
রিমির জ্বর আরো বাড়তে থাকল।
নীলয় কোন সেবা যত্নে এগিয়ে গেলনা। তার খুব ঘৃণা করছে। সে দূরে বসে একটার পর একটা সিগ্রেট টেনেই চলেছে। সে জানে রিমির কি পরিণতি ঘটবে। এ জ্বর ভয়ের জ্বর, সহজে নামবেনা। কিছুক্ষণ পর রান্নাঘর থেকে ধারালো একটা ছুরি নিয়ে এসে নীলয় নাড়াচাড়া করতে লাগলো আর এমন ভান ধরে থাকলো যে রিমিকে খেয়ালই করছেনা। রিমি কিন্তু নীলয়ের প্রতিটা মুভমেন্ট গভীর মনোযোগে খেয়াল করছে আর ভয়ে জমছে।
(সমাপ্ত)
"তোমার কপাল ভাল এত ভালো একটা স্বামী পেয়েছ। তোমাকে সন্দেহ করেনা। যাই হোক আজ কিন্তু তাড়াতাড়ি চলে এস। তোমার জামাই অফিসের জন্য বেরোলেই চলে এস। "
মাথাটা ঝিম মেরে উঠল নিলয়ের। নিজের চোখে দেখছে কিন্তু বিশ্বাস করতে পারছেনা। নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে নিল। অন্য চিন্তা তখন মাথায়। এস এম এসটা যে সে পড়ে ফেলেছে এটা যাতে রিমি বুঝতে না পারে। কিন্তু উপায় কি? একবার ইনবক্সের খোলা চিঠি আর তো নতুন করে রাখা যায়না। চট করে একটা বুদ্ধি এল নিলয়ের মাথায়।
"নীলয় বাসায়। আর তোমার এস এম এস টা প্রেস পরে কেটে গেছে। এম এস টা আবার দাও তো প্লীজ" এই কথা গুলো লিখে পাঠিয়ে দিল সেই নাম্বারে আর নতুন দেয়া নিজের আর পুরাতন এস এম এস টা ইরাজ করে দিল। প্রায় সাথে সাথে একটা মেসেজ আসল। নীলয় ভাবল নিশ্চই সেন্ট আইটেম থেকে ফরওয়ার্ড করে পাঠিয়েছে অপ্রান্তের লোকটা। দোয়া করল মনে মনে যেন তার ধারণা সত্যি হয়। কারণ তার মাথায় একটা খেলার প্লান। যে খেলার রেফারির দায়িত্বে থাকবে সে নিজে। রিমি বাথরুম থেকে বের হয়ার খানিক বাদেই নীলয় অফিসে চলে গেল। নীলয় বাসা থেকে আসার আগে রিমি তাকে বলল, "আমি একটু আম্মুকে দেখতে যাব"। নীলয় ঠিক আছে বলেই বেরিয়ে এল। রিমি দেখলনা নীলয়ের মুখয়বে একটা ক্রোধে ভরা রহস্যময় হাসি লেপটে আছে।
♦♦♦♦
আধা ঘন্টা পর রিমি বাসা থেকে বের হয়ে একটা সিএনজি ডেকে উঠে বসলো। রিমি ঘুণাক্ষরেও টের পেলনা কিছু দূরে আরেকটা সিএনজিতে বসে নীলয় তাকে ফলো করছে। রিমির সিএনজি অবশেষে এসে থামলো মিরপুরের দশের একটা চারতলা বিল্ডিংয়ের সামনে। রিমি এমনিতেই খুব সুন্দর। আর সে যখন পিংক কালারের কোন জামা পরে তখন আরো সুন্দর লাগে। নীলয় দূর থেকে নিজের বউয়ের দিকে তাকিয়ে একটা করুণ দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
ড্রাইভারকে ভাড়া দেয়ার সময় নীলয়কে জিজ্ঞেস করেই ফেলল, স্যার উনি কি আপনার বউ?
প্রশ্নটা নীলয়ের কানে যেতেই সে এক সেকেন্ডের জন্য স্তম্ভিত হয়ে গেল।
কোন রকম উত্তর দিলনা। কিন্তু নীলয়ের ভেতর থেকে কেউ যেন তিরষ্কার করে বলল, মিথ্যা বলছিস কেন, তোর বউই তো।
রিমি ততক্ষনে বিল্ডিংটায় প্রবেশ করেছে। প্রায় দৌড়ে গিয়ে ঢুকল সেও। ঢুকে রিমিকে কোথাও পেলনা সে। এতবড় দালানের কোথায় কোন ফ্লাটে খোঁজবে। সে প্রতিটা ফ্লাটের দরোজায় কান পাতা শুরু করল। বিষয়টা যদিও রিস্কি। এই অবস্থায় কেউ দেখলে সোজা থানায় না হয় গনধোলাই। দ্বিতীয় তলার ডানপাশের ফ্লাটে আসতেই নীলয়ের নাকে একটা পরিচিত পারফিউমের ঘ্রাণ আসল। নিশ্চিত হল এটা রিমির পারফিউম। কীহোলে চোখ রাখল সে। নাহ কিছুই দেখা যায়না। এমন সময় একটা পুরুষ কণ্ঠ শোনা গেল। যদিও খুব ধীরে। সম্ভবত দরোজার লাগোয়া রুম থেকে নয়। যাই হোক পুরুষ কণ্ঠটা যখন বললো"পিংকে তোমাকে দারুণ মানায় রিমি। আমার মাথা ঘুরে গেছে দেখে" তখন নীলয় নিশ্চিত হল এখানেই এসেছে রিমি।তার কাজ শেষ। সে শুধু দেখতে এসেছিল জায়গাটা। সিড়ি বেয়ে আবার নীচে নেমে আসল সে। সিড়ির একেকটা ধাপ তার কাছে মনে হয়েছে অনন্তকালের পথ।
♣♣
এরপর দুই দিন খুব স্বাভাবিক আচরন করল নীলয় বাসায়। রিমি টেরই পেলনা কিছু। শুধু রাতের বেলা কেউ কার সংস্পর্শ পেলনা। দুটো রাত নীলয়ের অসম্ভব কস্টে কেটেছে। রিমির পাশে শুতে ঘৃণায় তার সারা শরীর রিরি করেছে। রিমি ঘুমিয়ে গেলে সে বেলকনিতে গিয়ে অনেক্ষন সিগারেট টেনেছে আর পায়চারি করেছে। তৃতীয় দিন সকালে অফিস যাবার আগে সুযোগ পেয়ে রিমির ফোনের সব ইনকামিং বন্ধ করে দিল নীলয়।
♦♦♦♦
সকাল সাড়ে এগারোটা।
নীলয় মিরপুরের সেই বিল্ডিংটার তিনতলার ফ্লাটের বেল বাজাচ্ছে। তার হাতে একটা কোকের বোতল। দেখে মনে হচ্ছে বোতলে কয়েকটা চুমুক দেয়া হয়েছে। দরজা খোলে একটা লোক জানতে চাইল কাকে চাই?
-রিমি পাঠিয়েছে আমাকে।
লোকটা খুব অবাক হল। ভয়ও পেয়েছে চেহারা দেখে বুঝা যাচ্ছে। কথা খোঁজে পাচ্ছেনা কি বলবে। নীলয়ই কথা শুরু করল।
-রিমি আমাকে পাঠিয়েছে বললাম তো। ভেতরে আসতে দেবেন না।
নীলয় মনে মনে খুশী হল লোকটা তাকে চিনেনা বলে।
অনিচ্ছা থাকলেও ভদ্রতার খাতিরে দরজার একপাশে সরে দাঁড়ালো লোকটা, বলল-আসুন ভেতরে আসুন।
ভেতরে গিয়েই নীলয় ড্রইং রুমের সোফায় গা এলিয়ে বসলো। কোকের বোতলটা রাখলো সামনের টেবিলে।
লোকটাও বসল সামনের সোফায়, চোখে অনেক জিজ্ঞাসা।
অবশেষে প্রশ্ন করল-তা আপনাকে কেন পাঠিয়েছে রিমি?
-আপনাকে খুন করতে।
লোকটার চোখের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল নীলয়।
তড়াক করে উঠে দাড়ালো মানুষটা। রক্তশুণ্য হয়ে গেছে চেহারাটা।
নীলয় হাহাহাহা করে হাসতে শুরু করল।
-ধুর মিয়া ফাজলামো করলাম, বসেন। নেন কোক খান।
ভরসা পাচ্ছেনা লোকটা। বসবে কি বসবেনা ভাবছে।
-আরে ভাই বসেন। আচ্ছা আপনার নামটা রিমি কি যেন বলেছিল ভুলে গেছি।
-আয়াজ।
নিজের নামটা বলতে বলতে বসল আয়াজ।
-আচ্ছা শুনেন আয়াজ সাহেব, রিমির আপনার যে রিলেশন আমারও তাই। আমি ওর হাজবেন্ড এর কলিগ। রিমি বলল আপাতত যাতে আপনি ওকে ফোন না দেন। ওর স্বামী আচমকা ওর ফোন নিয়ে রেখে দিয়েছে।
-অহ, তা আপনি জানেন কিভাবে?
-আমি তো বললাম আমি ওর স্বামীর কলিগ। আজ সকালে বাসায় গিয়েছিলাম। আমাকে বলল আপনাকে সাবধান করতে।
আয়াজের চেহারায় চিন্তার রেখা ফুটে উঠছে। সেই সাথে দেখা দিয়েছে ঘাম। অথচ ফুল স্পীডে ফ্যান চলছে রুমে। টেবিল থেকে কোকের বোতলটা নিয়ে ঢকঢক করে কয়েক চুমুক পেটে চালান করে নীলিয়ের দিকে এগিয়ে দিল।
নীলয় তার সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করতে করতে বললো-আপনি গিলে ফেলুন পুরোটা। আমি আর খাবনা, গলায় দেখছি সমস্যা করছে। সিগারেট চলে?
-চলেনা মানে? খুব চলে। আমার কাছে আছে।
আয়াজ কোকের বাকিটুকুও শেষ করলো কয়েক চুমুকে।
-তা রিমিকে আপনি কিভাবে পটালেন,আমি না হয় ওর স্বামীর কলিগ। আপনার সাথে কিভাবে পরিচয়?
আয়াজ আয়েশি ভংগিতে সিগারেট টানতে টানতে বললো-আসলে একটা শপিং মলে ওর সাথে পরিচয় মাস কয়েক আগে। ওকে দেখে মাথা নস্ট হয়ে গিয়েছিল আমার। অনেক কায়দা কসরত করে ওকে বাগে এনেছি।
-তাই বুঝি!তা আপনি বিবাহিত?
-হে। বউ আর একটা ছেলে তিন বছরের। ওরা রংপুর থাকে।
-বউ বাচ্চা দূরে রেখে অন্য মানুষ দিয়ে চাহিদার যোগান নিচ্ছেন।
-হুমমম। চাহিদা থাকলে যোগান তো আসবেই।
আয়াজের কথা শুনে নীলয়ের ইচ্ছে করছিল তার টুঁটি চেপে ধরতে। কিন্তু সামলে রেখেছে নিজেকে।
-আচ্ছা কেমন যেন একটা ঘোরের মত লাগছে আমার। অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি মনে হয়।
নীলয়ের দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো আয়াজ।
-আপনি আসলে অসুস্থ না, কিছুক্ষণের ভেতরে মরতে চলেছেন আয়াজ সাহেব।
খুব ঠাণ্ডা স্বরে কথাগুলো বললো নীলয়।
আয়াজ চোখ পিটপিট করে তাকাচ্ছে নীলয়ের দিকে।
-কি!!!
-ইয়েস। ইউ আর ভেরি নিয়ার টু ডাই।
আয়াজ স্থিরদৃষ্টিতে নীলয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলো। বুঝার চেষ্টা করছে নীলয়ের কথা সত্যি না ফান।
-কি বলছেন?
-হে, আমি কোকের সাথে একধরণের বিষাক্ত বিষ ভরে দিয়েছি। আগামী ১০ মিনিটের মধ্যে সারা শরীরে এই বিষ ছড়িয়ে যাবে মৃত্যুটা তরান্বিত করতে। আর আমি চেয়ে চেয়ে দেখব তোর মৃত্যুর যন্ত্রণা।
আয়াজ লাফ দিয়ে উঠল চেয়ার থেকে।
আতংকে মুখ ফ্যাকাসে হয়ে হয়ে গেছে। লাফ দিয়ে উঠে আবার ধপাস করে বসে গেল। পৃথিবীটা যেন দোলছে। কোনরকম নীলয়কে জিজ্ঞেস করলো-কে তুই, সত্যিই কি কোকে বিষ দিয়েছিলি?
নীলয় দাত কিড়িমিড়ি খেয়ে বললো-এতক্ষন তো চিনার কথা। আমি রিমির স্বামী। আর কোকে বিষ দিয়ে মারার জন্যইতো নিয়ে এলাম। তোর কেমন যন্ত্রণা হবে মরার সময় সেটা জানিনা তবে যেদিন শুনেছি বা দেখেছি আমার বউয়ের সাথে তোর রিলেশন সেদিন থেকে এর চাইতে তীব্র যন্ত্রণায় আমি পুড়ছি প্রতিনিয়ত। আর শুন তোর বউটা যখন জানবে তুই অন্য একটা মেয়ের সাথে নোংরা রিলেশন গড়ে তুলেছিস তখন সেও মৃত্যুর চাইতে বেশী যন্ত্রণা উপলব্ধি করবে তবে তুই মরে গেছিস শুনলে হয়তো কিছুটা মানসিক প্রশান্তি লাভ করবে। তোদের মত নোংরা মানুষগুলির মৃত্যুদণ্ডই হওয়া উচিৎ। তোদের বাঁচিয়ে রাখাটাই বরং পাপ।
আয়াজ নীলয়ের কথাগুলো সব শুনল কিনা বুঝা গেলনা কারণ সে সোফায় হেলে পড়ে আছে স্থির হয়ে।
♦♦♦♦
ডাইনীং টেবিলে বসে রাতের খাবার খাচ্ছে নীলয় আর রিমি।
-জান রিমি আজ একটা ঘটনার কথা শুনে খুব খারাপ লাগছে।
-কি ঘটনা?
-আমাদের অফিসের এক কলিগ তার ওয়াইফকে খুন করে ফেলেছে।
-কি বলছ! কেন?
-বউটার নাকি পরকীয়া ছিল। হাতেনাতে ধরেছে গতপরশু।
পরকীয়া শব্দটা শুনার পর থেকেই রিমির কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা শুরু হয়েছে। খাওয়ার গতি কমে গেছে। নীলয় আড়চোখে সব লক্ষ্য করছিল সেসব।
সে আবার শুরু করল- কিভাবে খুনটা করেছে জানলেতো ভয়েই মারা যাবে তুমি।
রিমির সারা শরীর শক্ত হয়ে গেছে, ভয়ে গলা কাঠ একেবারে। গ্লাস টেনে এনে ঢক ঢক করে পানি খেল। তারপর জানতে চাইল- খুনটা কিভাবে করেছে। রিমির চেহারা দেখেই বুঝ যাচ্ছে এই গল্পে তার কোন আগ্রহ নেই।
কিন্তু নীলয়কেতো বলতেই হবে।
নীলয়ের ভাত খাওয়া শেষ। সে বেসিনে হাত ধুতে ধুয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে বলা শুরু করলো।
-আমার কলিগ তার বউকে প্রথমে জিজ্ঞেস করেছিল বিষয়টা নিয়ে। আসলে সে জানত সবকিছু। কিন্তু তার ওয়াইফ স্বীকার না করে উল্টো তাকে বকাঝকা শুরু করে। চোরের মায়ের বড় গলা জানইতো। গতকাল রাতে নাকি তর্কাতর্কি করে দুজন আলাদা ঘুমিয়েছিল। ভোররাতে জামিল উঠে গিয়ে বউয়ের গলাটা কেটে ঘাড় থেকে একদম আলাদা করে ফেলেছে। তারপর পুলিশকে ফোন দিয়ে বলেছে"আমি আমার বউকে খুন করেছি, আপনারা আসুন। আমার বউয়ের লাশটা বিছানায় পড়ে আছে। লাশটার একটা ব্যবস্থা করুন আর আমাকেও নিয়ে যান। আমি আর ওকে স্পর্শ করতে চাইনা। পুলিশ প্রথমে ভেবেছিল কোন পাগল কিন্তু নিশ্চিত হবার জন্য এসে দেখে জামিল তাদের বেডরুমে বসে সিগারেট টানছে আর তার বউয়ের লাশটা বিছানায়। রক্তে ভরা বিছানা-বালিশ। মাথাটা নাকি বালিশেই ছিল আর ঘাড় থেকে নীচের শরীরটা বালিশের নিচে। দেখে নাকি মনে হয়েছে একটা ডামি সাজানো।
রিমি তার প্লেটের অবশিষ্ট খাবারে পানি ঢেলে দিল। ওর হাত-পা কাঁপছে। চোখ তুলে নীলয়ের দিকে তাকাতে পারছেনা। ভয়ে আর সংশয়ে সে যে জমে গেছে।
-কি হল রিমি খাবারে পানি ঢেলে দিলে যে!
-এমন গল্প শুনলে খাওয়ার রুচি থাকে!!!
-অহ আচ্ছা। তাহলে চল ছাদে যাই। অনেক দিন তোমাকে নিয়ে ছাদে যাওয়া হয়না।
-আজ না। অন্যদিন।
নীলয় দেখল তার বউয়ের চেহারায় কোন প্রাণ নেই। খুব বেশী শকড হয়েছে গল্প শুনে।
-আচ্ছা বাদ দাও। ছাদে যাওয়ার দরকার নেই। তবে তোমাকে এমন চিন্তিত লাগছে কেন। কি, আছে নাকি জামিলের বউয়ের মত কোন চক্কর?
হাসতে হাসতে নীলয় জিজ্ঞেস করল যেন এটা ফান।
রিমি নীলয়ের দিকে না তাকিয়েই বলল-কি যে বল তুমি।
নীলয় আবার হাসিমুখে বলল, এমন কিছু থাকলে আমি তোমাকে পিস পিস করে কেটে ফ্রীজে রেখে দেব। তারপর গলির কুকুরকে দিয়ে সেই পিছপিছ মাংস খাওয়াব। এভাবে পৃথিবীর বুক থেকে আমি তোমাকে নিশ্চিহ্ন করে দেব। হাহাহাহাহা।
রিমি নীলয়ের কথা শেষ হওয়ার আগেই বমি শুরু করে দিয়েছে।
নীলয় অবাক হলনা একটুও। এমন খুনের বর্ণনা শুনে যে কেউ এমন করতে পারে।
নিজের বানানো গল্পে সে নিজেই তৃপ্তির ঢেকুর দিচ্ছে।
♦♦♦♦
এদিকে রিমির রাতে প্রচণ্ড জ্বর উঠলো ভয়ে। কিন্তু কিছুতেই চোখের পাতা এক করেনা। চোখ বন্ধ করলেই সে দেখে 'নীলয় কুকুরকে মাংস খাওয়াচ্ছে, রিমির মাংস। কুকুরটা মহা আনন্দে সেসব খাচ্ছে। নীলয় কুকুরটাকে বলছে 'পেট ভরে খা, আরো আছে। আগামী এক সপ্তাহ তুই আমার বাসায় ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনার করবি'।
রিমির জ্বর আরো বাড়তে থাকল।
নীলয় কোন সেবা যত্নে এগিয়ে গেলনা। তার খুব ঘৃণা করছে। সে দূরে বসে একটার পর একটা সিগ্রেট টেনেই চলেছে। সে জানে রিমির কি পরিণতি ঘটবে। এ জ্বর ভয়ের জ্বর, সহজে নামবেনা। কিছুক্ষণ পর রান্নাঘর থেকে ধারালো একটা ছুরি নিয়ে এসে নীলয় নাড়াচাড়া করতে লাগলো আর এমন ভান ধরে থাকলো যে রিমিকে খেয়ালই করছেনা। রিমি কিন্তু নীলয়ের প্রতিটা মুভমেন্ট গভীর মনোযোগে খেয়াল করছে আর ভয়ে জমছে।
(সমাপ্ত)