What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made প্রথা বিরোধী (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
শাড়িখানা জুলেখার পছন্দ হয় নি। গাড় নীল রঙের জমিন, তারমাঝে ছোট ছোট হলুদ। সস্তা তাঁতের শাড়ি৷ এক ধোয়ায় রঙ উঠে ত্যানাত্যানা হয়ে যাবে।

-কি দরকার আছিল শাড়ি কেনার, ঘরে চাউল নাই!

-আগের মাসে না চাউল কিনা দিয়া গেলাম! ভাত কি গরুরে খাওয়াস!

জুলেখা জবাব না দিয়ে জিনিসপত্র নেড়েচেড়ে দেখে।মেয়েদের জন্যে একই প্রিন্টের সুতি গজ কাপড়, চিরুনী, ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি স্নো আর বার্মিজ স্যান্ডেল।

-আরেকটা জিনিস আনছি। ক দেহি কি?

-কি?

সুলেমান শেখ পাঞ্জাবির পকেট থেকে বড় একটা ফোন বের করে। যাকে বলে টাচ মোবাইল।

-সস্তায় পাইলাম, সেকেন্ডহ্যান্ড মাল। ১২০০ টাকায় দিল।
তয় কাজ করে ভালো। কি সুন্দর ছবি উঠে।মাইয়ারা আইলে কমু তোমার একখান ভালো ছবি তুইল্লা দিতে।
জুলেখার মুখ থেকে মেঘ সরে না।

-বাজার সদাই করবেন কিছু? নাকি আমিই যোগাড়যন্ত্র করমু?

-থাউক! গরদের পাঞ্জাবি বাইর কর। আমগোর তো ইজ্জত আছে। যেনতেন ভাবে বাজারে যাওন চলে না।

সুলেমান শেখ পাঞ্জাবি গায়ে চড়িয়ে সুগন্ধি মাখে। কায়দা করে চুল আঁচড়িয়ে নিজের মুখটা আয়না খুঁটিয়ে দেখে। পিছনে বসা জুলেখা স্বামীর কাণ্ডকারখানা চেয়ে চেয়ে দেখে।
লোকটা বাড়ি এল আড়াই মাস পর। যাদের ঘরে চাল আছে,ফ্রীজ ভরা মাছ-মাংস আছে তাদের কাছে আড়াই মাস কিছুই না।দেখতে দেখতে চলে যায়। আড়াই মাস আগে ২৫ কেজি চালের বস্তা আর কিছু কাঁচা তরকারি বাজার সদাই করে সুলেমান শেখের ঠোঁটে ছিল বিগলিত হাসি।

-চাইয়া দেখো বউ, পুরা বাজারখানা উঠাইয়া আনছি।
কতবড় কাতল মাছ দেখছ?
এক হাজার টাকা চাইয়া দাম চাইয়া সাড়ে ছয়শ টাকা দিয়া দিল। পরিচিত জেলে, আমারে বিরাট খাতির করে।

-তেল আনছেন?

জুলেখা বিরস মুখে জিজ্ঞেস করে,

সুলেমান শেখ জিহ্বা দাঁতে কেটে এমন ভঙ্গি করে যেমন বাচ্চা ছেলেরা দুষ্টামি করতে গিয়ে ভুল হয়ে গেছে।

-ইশ! মনে নাই বউ।আজকা কাম চালাইতে পারবা না?

-হ পারুম।
জুলেখা চুলা ধরায়। সেদিন রাতে মেয়েদুটো অনেক দিন পর মাছ দিয়ে ভাত খায়। বিরাট কাতল মাছের মাথাটা জুলেখা স্বামীর পাতে তুলে দেয়। সুলেমান শেখ ভেঙে দুই কন্যার প্লেটে ভাগ করে দেয়।

-তুমিও খাইতে বহো। কতদিন পর আইলাম একলগে কয়ডা ভাত খাই।

-খামু নে।আপনেরা খান।

জুলেখা চেয়ে চেয়ে মেয়ে দুটোর খাওয়া দেখে।
পরদিন সকালে সুলেমান শেখ আতর মেখে খদ্দরেে পাঞ্জাবি গায়ে রেডি হয়।

-কই যান?

-কারখানায়।

-এই না আইলেন।

-দুইদিনে ছুটি পাইছি। আর থাকন যাবে না

-যাইতাছেন যান।মাইয়া দুইডার স্কুলে বেতন দিতে হইব। ঘরে তেল-ডাল,মসলা পাতি কিছুই নাই।

সুলেমান শেখ চকচকে পাঁচশ টাকার নোট হাতে গুঁজে দেয়।

-এইটা রাখো। এই সপ্তাহটা কাটাইয়া দাও। পরের সপ্তায় আইতাছি আমি।

জুলেখাকে আর কোনো কথা বলবার সুযোগ না দিয়ে লোকটা বেরিয়ে যায়।এই যে গেল ফিরল আড়াই মাস পর।

জুলেখার বিয়ের সময় পাড়ার বউঝিরা বলেছিল,

-আসগর আলীর মাইয়ার কপাল দেখ, বিয়া হইতাছে বড় ঘরে। রঙিন টিনের ঘর, নিজেগোরে টিউবওয়েল আছে আবার জামাই জুতার কারখানার ম্যানেজার।

বিয়ের দিন পাত্রের চেহারা ছবি দেখে মায়ের খুশি আর ধরে না। ফোকলা দাঁতে হেসে দাদী বলেছিলেন,

-জামাই পাইছত নায়ক রাজ্জাকের লাহান।দেইখা শুইনা রাখিস কোন মাগী কোনখান দিয়া টান দেয়।

যতদিন না হাতের মেহেদী রঙ ফিকে হয় ততদিন জুলেখা সুখেই ছিল। বড় মেয়ে সুমী পেটের আসার পর থেকে ভদ্রলোক নিরুদ্দেশ হয়৷ এক মাস,দুই মাস কখনও ছয় মাস। প্রথম প্রথম চিন্তা হত খুব। তারে রেখে কই যায়! পাশের বাড়ির কুলসুম ঠেস মেরে বলেছিল,

-দেখ গা,তোর জামাই গঞ্জে আরেকখান সংসার পাতছে।

জুলেখা উঠোনে গড়াগড়ি দিয়ে কেঁদেছিল। তার শ্বশুর আব্বাস শেখ চোখের পানি মুছিয়ে শান্ত করেছিল,

-আম্মাজান,কাইন্দো না। আমার পোলাডা ছোড থিকাই এমন ঘরে মন টেকে না। তয় যতদিন আমি আছি তোমার চিন্তা নাই।

ছোট মেয়ে তুলির যখন দুই বছর শ্বশুরমশায় মারা গেল। তারপর থেকে সুলেমান শেখ বাড়ি আসত ঘন ঘন। খেতি জমি বিক্রি হল, দুধেল গাই বিক্রি হল। গাঁটের টাকা ফুরিয়ে গেলে সুলেমান শেখও নিরুদ্দেশ। জুলেখা এখন আর ঝগড়া করে না। যে কয়দিন লোকটা বাড়ি থাকে মেয়ে দুটো ভালো-মন্দ খেতে পারে, বাবার গলা জড়িয়ে ধরে শখ-আহ্লাদ করে,এই অনেক। ঝগড় করলে চাল-ডাল যোগান টাও বন্ধ হয়ে যাবে। জুলেখা এই ভয়ে থাকে।

সুলেমান শেখ রান্নাঘরে পিঁড়ি পেতে বসে সিগারেট ধরায়।
-মাইয়ারা স্কুল থিকা ফিরব কখন?

-ওগো আইতে বিকাল হয়৷ চারটার স্কুল ছুটি।

-ও। ওগোরে খবর দাও। দুপুরে একলগে খানা খাইতাম।

-রাতে খাইয়েন নে৷ সুমীর সামনে পরীক্ষা।স্কুল কামাই করন যাইব না।

- মাইয়া মাইনষের অত পড়াশোনা ভালো না। হেসে কপালে লুলা-বয়রা জোটে।

জুলেখা জবাব দেয় না

-বাজারে হাশেম ব্যাপারীর লগে দেখা। কত কথা কইল। ডাইক্কা বহাইয়া চা খাওয়াইল।

-এত খাতির কেন?

-খাতির করব না? কত বড় বংশ মর্যাদা আমগো জানো? কব্যাপারীর ছোট পোলার লেগা আমগো সুমীরে চায়।

জুলেখা অবাক হয়,

-সুমীরে কেন?

-আহ! কচি ভাব ধইরো না। তাগোরে পোলারে বিয়া করাইব। সুমীরে দেখে পছন্দ করছে এইতো আমগো সাত কপালের ভাগ্য। ওগোর ২৫ বিঘা জমি, বাজারে কত দোকানপাট। চাইলে চেয়ারম্যান -মেম্বারের মাইয়াগো বউ কইরা আনতে পারত। সুমী নামী বংশের মাইয়া তাই তেনারা এতকিছু ভাবেন নাই।

-সুমী তো ছোট। এইবার এইটে উঠছে।

- আহা! বাল্লক হবার পর মাইয়ারা আবার ছোড থাকে নাকি।দুইডা সেয়ানা সেয়ানা মাইয়া,দেশের অবস্থা ভালো না। যত তাড়াতাড়ি বিদায় করন যায় ততই মঙ্গল।

-হাশেম ব্যাপারীর পোলায় ফেনসিডিল খায় এই খবর রাখেন কিছু? কয়দিন আগে ওর ফুপাতো বইন বেড়াইতে আইছিল! কি অঘটন ঘটাইল এমন পোলার লগে মাইয়া বিয়া দিমু?

-আহা! বিয়ার আগে পোলা মাইনষের টুকটাক বদ অভ্যাস থাকবই। হাশেম ব্যাপারী নিজে ডাইক্কা বহাইয়া সুমীরে তাগোর বাড়ি বউ কইরা নিতে চাইল, আমি না করি কেমনে?

-আপনে পাকা কথা দিয়া আইছেন?

-তেমন কিছু কই নাই। কইছি তোমার লগে বুইঝ্ঝা কমু আর কি।

জুলেখা চুলা থেকে ফুলকপির তরকারি নামিয়ে আঁচলে ঘাম মুছে।

- হাতমুখ ধুইয়া আহেন। ভাত বাড়ি।

রাতে মেয়ে দুটো জামা-জুতো পেয়ে লাফালাফি শুরু করে। সুলেমান শেখ বড় মেয়ের পিঠে হাত বুলিয়ে বলে,

-প্রতিদিন ঘুমানোর আগে স্নো মাইখা ঘুমাবি৷ দেখবি দুধে আলতার রঙ হয়া যাইব।

সুমী সত্যি স্নো মেখে ঘুমাতে যায়। জুলেখার চোখ জ্বলজ্বল করে। রাতে মেয়েদের ঘরে শুইয়ে বারান্দায় স্বামী-স্ত্রী বালিশ পেতে শোয়।
-বউ ঘুমাইছ?
-জ্বী না।কন।
-আগামী শুক্রবার জুম্মা বাদ সুমীরে দেখতে আইব। মেয়েরে দেখে শুনে রাইখো।
জুলেখা উঠে বসে।
-হুনেন, আমি মাইয়া বিয়া দিমু না।
-আমার মাইয়া আমি বিয়া দিমু। তোরে জিগাইয়া দিমু?
-তিন মাস ছয় মাস পর বাড়ি আহেন। কেমনে সংসার চালাই সেই খবর রাখেন?
মেয়ের সম্বন্ধ নিয়া আসছেন? কোনদিন স্কুলের এক পয়সা বেতন দিছেন?
-বড় বড় কথা কস মাগী! বেতন কি তোর বাপের বাড়ি থিকা আইন্না দেস! মাইয়ার বিয়া এইখানেই দিমু।দেখমু, তুই কি করস?

মেয়েরা বড় হবার পর জুলেখা বালিশের পাশে বটি নিয়ে ঘুমায়৷ গ্রামে চিল-শকুনের অভাব নাই। জুলেখা বটি বের করে শান্ত গলায় বলে,
-মাইয়া দুইডা ঘুমাইছে। জোর গলায় কথা কইয়েন না চুপচাপ ঘুমান যান।

সুলেমান শেখ পিছন ঘিরে শুয়ে পড়ে।

-আর হুনেন। কালকা সকালে যাওনের সময় স্নো লইয়া যাইয়েন। আমার মাইয়ার সুন্দর হওন লাগব না মানুষ হইলেই চলবে।

(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top