টিয়ারা তাঁর বাবার কাণ্ডে অবাক হয়ে গেলো। বাবা আজকে অফিস বাদ দিয়ে তাকে পার্কে নিয়ে এসেছে সকাল দশ টায়। সেটা বড় ব্যাপার না, বড় ব্যাপার হল বাবা তাকে যেভাবে এনেছে সেটা মোটেও স্বাভাবিক নয়। এখন তার বাবা পার্কের একটা দোলনায় বসে চেক করে দেখছে ঠিক আছে কিনা। মনে হয় ঠিক আছে কারণ কিছুক্ষণ বসে নাজমুল সিগনাল দিল,
"অল সেট টিয়ারা, আয় বস"
নাজমুলের এখনো বুক ধড়ফড় করছে। সে বসে বসে গত এক ঘণ্টার সব কাহিনী মনে করার চেষ্টা করছে৷
অফিসে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছিল সে। এমনতিই একটু দেরী হয়ে গেছে। দীপা খাবার রেডি করে টেবিলে দিয়েছে। রুটি ডিম, আর চিচিঙ্গা ভাজি। খেতে গিয়ে তাড়াহুড়ায় চিচিংগা ভাজির একটু শার্টে পরে গেলো। ধবধবে সাদা শার্টটাতে হলুদ রঙের দাগ লেগে গেলো।মেজাজ খারাপ হল নাজমুলের, রাগ টা সে ঝাড়ল দীপার উপর।
" সব কিছুতে এত হলুদ দাও কেন? সকালের নাস্তার ভাজিতেও হলুদ। এতদিনেও রান্না শিখলেনা। কই আমার মা ও তো রাঁধে এত হলুদ তো দেয়না"
দীপা কিছুক্ষণ চোখমুখ শক্ত করে তাকিয়ে থেকে বলল,
"আমার বাবাও তো খায়, গায়ে ফেলেনা"
লেগে গেলো ঝগড়া। একথা ওকথায় ঝগড়া যখন চরমে তখন দীপা ঘরে গিয়ে তার ব্যাগ বের করল।
এই নীল রঙের ছোট্ট ব্যাগ টা নাজমুলের খুব অপছন্দ। একটু উনিশ বিশ হলেই দীপা এই ব্যাগ বের করে বাপের বাড়ি চলে যায়৷ নাজমুলের অনেকদিনের পরিকল্পনা ব্যাগ টা সে ফেলে দিবে৷কিন্তু এবারো ফেলতে মনে নেই।
টিয়ারা ঘুম থেকে উঠে দেখল মা ব্যাগ গোছাচ্ছে।তারমানে নানুর বাড়ি যাবে । টিয়ারা অনেক বুদ্ধিমান, স্কুলে ভর্তি হবে সামনের মাসে। সে দ্রুত হাত মুখ ধুয়ে ভালো জামা পরে নেয়।
নাজমুলের সামনে দিয়ে মা মেয়ে বের হয়ে যায়। নাজমুল রাগে ফুঁসতে থাকে কিন্তু কিছুই বলতে পারেনা।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখে মা মেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে রিকশা খুঁজছে। দীপার চেয়ে মেয়ের প্রতি তার রাগ বেশি।মেয়েটাকে সে কত ভালোবাসে,অথচ মেয়েটা একবার কিছু বলেও গেলোনা।মেয়েটাকে ছাড়া সে ঘুমাতেও পারেনা। অদ্ভুত নিষ্ঠুর মেয়ে জাতির সদস্য সে। এরচেয়ে ছেলে হলেও ভালো ছিল। ঘুম থেকে উঠেই সাজু করে কোন কিছু না বুঝে রওনা হতো না, সত্যি কথা বলতে ঘুম থেকে উঠতেই চাইতো না মনে হয়।
নাজমুল কি মনে করে দৌড়ে দোতলা থেকে নিচে নেমে এলো। ততক্ষণে দীপা একটা রিকশা পেয়ে গেছে। ওরা তখনো নাজমুল কে দেখেনি। দীপা আগে টিয়ারা কে উঠিয়ে দিয়ে যেই ব্যাগ উঠানোর জন্য নিচু হয়েছে ওমনি নাজমুল টিয়ারাকে বগলদাবা করে দৌড় দিল।
কোনদিকে না তাকিয়ে সে শুধু ছুটছে।কি মনে করে ছুটছে সে নিজেও জানেনা। তার মনে শুধু টিয়ারাকে নিজের দখলে নেবার চিন্তা। একবার অবশ্য মনে ভয় হচ্ছে, দেশের যে অবস্থা তাতে তাকে ছেলেধরা ভেবে লোকে মেরে ফেলতেও পারে।
বাসার কাছাকাছি একটা পার্কে এসে নাজমুল নিশ্চিন্ত হল যে সে নিরাপদ দূরত্বে এসেছে।
এখন অবশ্য নিজেরই হাসি পাচ্ছে।এভাবে দৌড় না দিয়ে কথাও তো বলা যেত দীপার সাথে। ক্ষমাও চাওয়া যেত।
টিয়ারা বাবার পাশে দোলনায় বসে বাবাকে বলল,
"বাবা, আইসক্রিম খাব"
"টাকা আনি নাই তো মা"
টিয়ারা বড়দের মত করে বলল,
"কি বিপদ!"
"বড় বিপদের কথা তো বলাই হয়নি"
"কি বাবা?"
"বাসায় তো তালা দিয়ে আসিনাই রে"
"আমাকে নিয়ে দৌড় দিয়েছ কেন বাবা?"
"তুই চলে যাচ্ছিলি কেন?"
"আমি তো চলেই আসতাম বোকা ছেলে"
নাজমুল হেসে ফেলল।
" হুম, কি বুঝে যে দৌড় দিলাম "
" তুমি কিছুই বোঝনা৷ সারাদিন শুধু চাকরি আর চাকরি। জীবন টা নষ্ট করে দিলে আমার"
কথাগুলো দীপার। টিয়ারা ঠিক দীপার মত করেই বলল। নাজমুল খুব মজা পেল।
"মায়ের কথা মনে পড়ছে না টিয়ারা?"
" নাহ, সেও কি কম নষ্ট করেছে আমার জীবন! প্রতিদিন এক রান্না, কাহাতক সহ্য করা যায়"
এবার নাজমুলের কণ্ঠে বলল টিয়ারা।
দুজন হাসতে হাসতে দোলনায় দোল খাচ্ছিল।নাজমুলের ফোনে তখন একটা টেক্সট এলো। হাতে নিয়ে দেখে দীপার টেক্সট,
" আমাকেও তো বগলদাবা করে নিয়ে যেতে পারতে?আরেকটা বগল তো ফাঁকাই ছিল "
নাজমুল উত্তর দিলো।
" হ্যাঁ তাই ভালো হত। দুইজন কে দুই পাশে নিয়ে দৌড় দিতাম। আর হতচ্ছাড়া নীল ব্যাগটা পরে থাকত রিকশায়। রিকশাওয়ালা ব্যাটা বুঝত মজা! "
( সমাপ্ত)
"অল সেট টিয়ারা, আয় বস"
নাজমুলের এখনো বুক ধড়ফড় করছে। সে বসে বসে গত এক ঘণ্টার সব কাহিনী মনে করার চেষ্টা করছে৷
অফিসে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছিল সে। এমনতিই একটু দেরী হয়ে গেছে। দীপা খাবার রেডি করে টেবিলে দিয়েছে। রুটি ডিম, আর চিচিঙ্গা ভাজি। খেতে গিয়ে তাড়াহুড়ায় চিচিংগা ভাজির একটু শার্টে পরে গেলো। ধবধবে সাদা শার্টটাতে হলুদ রঙের দাগ লেগে গেলো।মেজাজ খারাপ হল নাজমুলের, রাগ টা সে ঝাড়ল দীপার উপর।
" সব কিছুতে এত হলুদ দাও কেন? সকালের নাস্তার ভাজিতেও হলুদ। এতদিনেও রান্না শিখলেনা। কই আমার মা ও তো রাঁধে এত হলুদ তো দেয়না"
দীপা কিছুক্ষণ চোখমুখ শক্ত করে তাকিয়ে থেকে বলল,
"আমার বাবাও তো খায়, গায়ে ফেলেনা"
লেগে গেলো ঝগড়া। একথা ওকথায় ঝগড়া যখন চরমে তখন দীপা ঘরে গিয়ে তার ব্যাগ বের করল।
এই নীল রঙের ছোট্ট ব্যাগ টা নাজমুলের খুব অপছন্দ। একটু উনিশ বিশ হলেই দীপা এই ব্যাগ বের করে বাপের বাড়ি চলে যায়৷ নাজমুলের অনেকদিনের পরিকল্পনা ব্যাগ টা সে ফেলে দিবে৷কিন্তু এবারো ফেলতে মনে নেই।
টিয়ারা ঘুম থেকে উঠে দেখল মা ব্যাগ গোছাচ্ছে।তারমানে নানুর বাড়ি যাবে । টিয়ারা অনেক বুদ্ধিমান, স্কুলে ভর্তি হবে সামনের মাসে। সে দ্রুত হাত মুখ ধুয়ে ভালো জামা পরে নেয়।
নাজমুলের সামনে দিয়ে মা মেয়ে বের হয়ে যায়। নাজমুল রাগে ফুঁসতে থাকে কিন্তু কিছুই বলতে পারেনা।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখে মা মেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে রিকশা খুঁজছে। দীপার চেয়ে মেয়ের প্রতি তার রাগ বেশি।মেয়েটাকে সে কত ভালোবাসে,অথচ মেয়েটা একবার কিছু বলেও গেলোনা।মেয়েটাকে ছাড়া সে ঘুমাতেও পারেনা। অদ্ভুত নিষ্ঠুর মেয়ে জাতির সদস্য সে। এরচেয়ে ছেলে হলেও ভালো ছিল। ঘুম থেকে উঠেই সাজু করে কোন কিছু না বুঝে রওনা হতো না, সত্যি কথা বলতে ঘুম থেকে উঠতেই চাইতো না মনে হয়।
নাজমুল কি মনে করে দৌড়ে দোতলা থেকে নিচে নেমে এলো। ততক্ষণে দীপা একটা রিকশা পেয়ে গেছে। ওরা তখনো নাজমুল কে দেখেনি। দীপা আগে টিয়ারা কে উঠিয়ে দিয়ে যেই ব্যাগ উঠানোর জন্য নিচু হয়েছে ওমনি নাজমুল টিয়ারাকে বগলদাবা করে দৌড় দিল।
কোনদিকে না তাকিয়ে সে শুধু ছুটছে।কি মনে করে ছুটছে সে নিজেও জানেনা। তার মনে শুধু টিয়ারাকে নিজের দখলে নেবার চিন্তা। একবার অবশ্য মনে ভয় হচ্ছে, দেশের যে অবস্থা তাতে তাকে ছেলেধরা ভেবে লোকে মেরে ফেলতেও পারে।
বাসার কাছাকাছি একটা পার্কে এসে নাজমুল নিশ্চিন্ত হল যে সে নিরাপদ দূরত্বে এসেছে।
এখন অবশ্য নিজেরই হাসি পাচ্ছে।এভাবে দৌড় না দিয়ে কথাও তো বলা যেত দীপার সাথে। ক্ষমাও চাওয়া যেত।
টিয়ারা বাবার পাশে দোলনায় বসে বাবাকে বলল,
"বাবা, আইসক্রিম খাব"
"টাকা আনি নাই তো মা"
টিয়ারা বড়দের মত করে বলল,
"কি বিপদ!"
"বড় বিপদের কথা তো বলাই হয়নি"
"কি বাবা?"
"বাসায় তো তালা দিয়ে আসিনাই রে"
"আমাকে নিয়ে দৌড় দিয়েছ কেন বাবা?"
"তুই চলে যাচ্ছিলি কেন?"
"আমি তো চলেই আসতাম বোকা ছেলে"
নাজমুল হেসে ফেলল।
" হুম, কি বুঝে যে দৌড় দিলাম "
" তুমি কিছুই বোঝনা৷ সারাদিন শুধু চাকরি আর চাকরি। জীবন টা নষ্ট করে দিলে আমার"
কথাগুলো দীপার। টিয়ারা ঠিক দীপার মত করেই বলল। নাজমুল খুব মজা পেল।
"মায়ের কথা মনে পড়ছে না টিয়ারা?"
" নাহ, সেও কি কম নষ্ট করেছে আমার জীবন! প্রতিদিন এক রান্না, কাহাতক সহ্য করা যায়"
এবার নাজমুলের কণ্ঠে বলল টিয়ারা।
দুজন হাসতে হাসতে দোলনায় দোল খাচ্ছিল।নাজমুলের ফোনে তখন একটা টেক্সট এলো। হাতে নিয়ে দেখে দীপার টেক্সট,
" আমাকেও তো বগলদাবা করে নিয়ে যেতে পারতে?আরেকটা বগল তো ফাঁকাই ছিল "
নাজমুল উত্তর দিলো।
" হ্যাঁ তাই ভালো হত। দুইজন কে দুই পাশে নিয়ে দৌড় দিতাম। আর হতচ্ছাড়া নীল ব্যাগটা পরে থাকত রিকশায়। রিকশাওয়ালা ব্যাটা বুঝত মজা! "
( সমাপ্ত)