What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made ১০০ গোলাপ 🌷🌷🌷🌷🌷 (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
বাসর ঘরে আমি আমার বরের অপেক্ষায়। আধা ঘণ্টা ধরে আমি একা বসে আছি। আমার বরের বড় বোন আমাকে খাটে না বসিয়ে মুখোমুখি রাখা দুটো চেয়ারের একটিতে বসিয়ে দিয়ে গেল। আমি আমার সামনের টেবিলে রাখা গোলাপগুলোর দিকে তাকিয়ে ভাবছি, এখানে নিশ্চয়ই ১০০ গোলাপ আছে। হিসেব অনুযায়ী তাই হওয়ার কথা। পুরো একটি গোলটেবিল ভর্তি গোলাপ।খুব ইচ্ছে করছে গুনে দেখতে। কিন্তু যদি গুনতে থাকার মধ্যে লোকটা এসে পড়ে? তখন খুব লজ্জায় পড়বো আমি। তবে আমি নিশ্চিত এখানে ১০০ গোলাপ।



সবেমাত্র এইচএসসি পাস করে বের হয়েছি।এরমধ্যে এই লোকের সাথে আমাকে বিয়ে ঠিক করলেন আব্বু।

এনারা আমার আব্বুর পূর্ব পরিচিত। ছেলে মাস্টার্স শেষ করে চাকরিতে ঢুকেছে সবে। এক ভাই এক বোন। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। একমাত্র ছেলের বৌ আনার জন্য পরিবারের সবাই তাই খুব অস্থির। আমারও কোন আপত্তি ছিল না বিয়েতে। আব্বু আম্মু যা ভালো মনে করবেন তাতেই আমি রাজি।

একটা কথা আমি আমার এই ছোট জীবনে খুব ভালো ভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি, সেটা হলো বাবা-মা'র সিদ্ধান্তে ছেলেমেয়েরা খুশি থাকলে জীবনেও যাই ঘটুক না কেন অপরাধবোধ বা অনুশোচনা নিয়ে জীবন কাটাতে হয় না।



ভদ্রলোক এর নাম মুরাদ হোসেন। যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। এনগেজমেন্ট এর দিন আমি বান্ধবীদের নিয়ে আমার ঘরেই বসে আছি। হঠাৎ আমার ছোট খালার ছেলে এসে আমার হাতে একগুচ্ছ গোলাপ ধরিয়ে দিয়ে বললো, আপু! মুরাদ ভাই তোমার জন্য পাঠিয়েছে, উনি আসেনি। উনার বোন আমার হাতে ফুলগুলো দিয়ে তোমাকে দিতে বললো।

আমি গোলাপগুলো নিয়ে বসে আছি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে। গোলাপের তোড়ায় একটি চিরকুট, "তোমার জন্য ২৫ টি তাজা গোলাপ "।



মুরাদ এর সাথে আমার প্রথম দেখা হয় একটি রেস্টুরেন্ট এ। আমি আমার ছোট খালার সাথে গিয়েছি। আর মুরাদ তার এক বন্ধুকে নিয়ে এসেছিলো আমাকে দেখতে।শুরু থেকেই মুরাদের বন্ধুটি কথা বলে যাচ্ছিলো। সাথে আমার খালাও। আমি চুপ। ওদিকে মুরাদও ভ্রু কুচকে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। ওকে দেখে মনে হচ্ছিল জোর করে নিয়ে এসেছে। বন্ধুর কাছ থেকে আমরা জানতে পারলাম, মুরাদ মেয়েদের এড়িয়ে চলে। বন্ধু মহলে তারনাম হলো, সুপুরুষ মুরাদ। কারন যারা মেয়েদের কথায় উঠা বসা করে তাদেরকে সে কাপুরুষ মনে করে। তাই তার নাম সুপুরুষ মুরাদ। গান- বাজনা, আড্ডা তার খুব প্রিয়।বন্ধুটি গড়গড়িয়ে সব বলে যাচ্ছে। আর মুরাদ একবারও আমার দিকে তাকালো কিনা বুঝতে পারলাম না। কারণ আমি সুযোগ বুঝে যতবার তাকিয়েছি মুরাদের দিকে ততবারই দেখেছি সে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। আমার খালার দু'একটা প্রশ্নের উত্তর হু- হা দিয়ে তারা একটু পরেই চলে যায়।

কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তার পরের দিনই ঐ বাড়ি থেকে খবর আসে যে, মুরাদের নাকি আমাকে খুব পছন্দ হয়েছে।

আমার এনগেজমেন্ট হয়ে গেল। ঠিক হয়ে গেল আকদ এর দিন আর আকদের পর ক্রমান্বয়ে হবে হলুদ আর বিয়ের অনুষ্ঠান। মসজিদে আকদ এর অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর কাজী সাহেব এলেন আমার সিগনেচার নিতে আর তার হাতে করে মুরাদ আমার জন্য পাঠালো ৫০টি গোলাপ।



আমি গোলাপ হাতে তার বন্ধুর কথা এবং আমার দেখা মুরাদের স্বভাব আর চরিত্র মেলানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে যাই।

আমি জানি, এ পৃথিবীতে খুব কঠিন চরিত্রের মানুষগুলো তাদের আবেগ বা ভালোবাসা ঠিকমতো প্রকাশ করতে পারে না। তারা যতই কথা বলে তাদের ভীতরের ভাব প্রকাশ করতে চায়, ততই কঠিন ভাষা বের হয়ে আসে। মুরাদও হয়তো সেরকম।

হলুদের দিন এলো ৭৫ টি তাজা গোলাপ সাথে যথারীতি চিরকুট " তোমার জন্য ৭৫ টি তাজা গোলাপ"..

এভাবে ক্রমান্বয়ে গোলাপ এর সংখ্যা বাড়িয়ে যে আমাকে আমার প্রতি তার ভালোবাসা বোঝাচ্ছে সে আসলে মানুষটা কেমন, আমি বুঝে উঠতে পারিনি এখনও। আকদ্ হয়ে যাওয়ার পরও যে একবারও আমাকে একটা ফোনও দেয়নি। এখন এই ঘরে টেবিলে রাখা গোলাপ আমাকে আর মুগ্ধ করছে না। বরং সময়ের সাথে সাথে আমি তার প্রতি ভয়ে ভীত হচ্ছি।



অপেক্ষায় থাকতে থাকতে আমি যখন ঝিমচ্ছিলাম তখন দরজা লক করার শব্দে আমার তন্দ্রা ভাঙলো। খুব তটস্থ এবং জড়োসড়ো হয়ে আমি নিজেকে শক্ত করে চেয়ারের মধ্যে আটকে ফেললাম।নিজেকে ফাঁসির আসামির মতো মনে হতে লাগলো, গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। রেস্টুরেন্টে একবার দেখা লোকটার সাথে বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরও দেখা তো দূরে থাক একবার কথাও হয়নি। আসলে সে কতোটা ভয়ংকর তা আমি আল্লাহ খোদার নামে তার উপরই ছেড়ে দিলাম।

ভয়ংকর লোকটা এসে আমার সামনের চেয়ারে বসলো। তারপর আবার উঠে গিয়ে ঘরের লাইটটা নিভিয়ে দিয়ে হাল্কা পাওয়ারের একটা নীল বাতি জ্বালালো।আমি ততোক্ষণে বিপদ মুক্তির দোয়াগুলো মনে মনে আওড়াচ্ছি। এরপর এসে সে আমার মুখোমুখি বসলো। আমি সোজাসুজি মুরাদের দিকে তাকালাম এই প্রথম।

মুরাদই প্রথম কথা বলে উঠলো, তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছিল, লিপি। তবে এখন খুব নিস্প্রভ আর টেনসড লাগছে। তুমি কি তোমার এই ভারী গয়না আর শাড়ি প্লাটে নরমাল পোশাকে আসবে, প্লিজ?

আমি এতোগুলা কথা একনাগাড়ে শুনে কোনটার উত্তর দিবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। সে আবার বললো, তুমি কি ওয়াশরুমে গিয়ে একটু ফ্রেস হয়ে আসবে? রাত যতটুকু বাকী আছে আমরা গল্প করে কাটিয়ে দিবো।

শেষের কথাটা আমাকে অনেকটা স্বাভাবিক করলো আর আমি উঠে গিয়ে চেন্স করে ফ্রেস হয়ে ফিরে এসে আবার চেয়ারটাতে বসলাম মুখোমুখি। এই ফাঁকে মুরাদও নরমাল একটা টি-শার্ট পড়ে নিয়েছিলো।

এবার তোমাকে ফ্রেস লাগছে, লিপি। ভীত মুখটাও নেই আর। হেসে বললো,মুরাদ।

কিভাবে বুঝলেন, আমি ভয় পেয়েছি?

তুমি যেভাবে চেয়ারের হাতলটা চেপে ধরে বসে ছিলে, মনে হচ্ছিলো তোমাকে পুলিশ রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

কিছুক্ষণ নিরবতার পর মুরাদ একটু ফিসফিসিয়ে জানতে চায়, আমার দেওয়া গোলাপ পেয়ে তোমার কেমন লেগেছিলো, লিপি?

ঘরের ঐ নীল আলোয় গোলাপ ফুলের সুবাসে মুরাদের গাঢ় স্বরে করা প্রশ্নটা আমাকে অন্য এক জগতে নিয়ে যায় মুহুর্তে। আমি সেদিনের সে ক্ষন টুকু চুপ করে অসম্ভব ভালো লাগায় অনুভব করছিলাম চোখ বন্ধ করে নিজের অজান্তে। হঠাৎ মুরাদ এসে আমার হাত ধরলো। আমি যেন একটু কেঁপে উঠলাম। পকেট থেকে একটা আংটি বের করে পরিয়ে দিলো মুরাদ। তারপর আবার গিয়ে চেয়ারে বসলো।

লিপি! আজ এই মুহুর্তে আমি যদি তোমাকে এক জায়গায় নিয়ে যাই, তুমি যাবে আমার সাথে?

কোথায়?

নদীর পাড়ে...



মুরাদ আর লিপি নদীর পাড়ে কাটিয়ে দিলো তাদের বাসররাত.....


(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top