What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made নিমুর আম্মু (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
আজ কোর্টের রায় হবে, আমার নিমুকে ওর জন্মদাত্রী হয়তো চিরদিনের জন্য আমার কোল থেকে ছিনিয়ে নেবে। আমি কিচ্ছুটি করতে পারবোনা, কি করেই বা পারবো আমিতো নিমুকে জন্ম দিইনি, আমি যে ওর সৎ মা।



আচ্ছা সৎ মা হলেই কি তার কোনও অধিকার থাকতে নেই সন্তানের প্রতি! কেন আমার বুকের ধনকে আমি জোর করে নিজের কাছে রাখতে পারবোনা! আমি ওর জন্মদাত্রী মা নই বলে!



চোখের সামনে ভেসে উঠছে দশ বছর আগের সেই দিনটি, যেদিন আমি এ বাড়ীর বৌ হয়ে আসি আমার স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রী হয়ে। রিফাত বেশ ধনী ফ্যামিলির ছেলে, ওর মতো যোগ্য আর এতো হাই ফ্যামিলি আমি ডিসার্ভ করতামনা কিন্তু হয়তো দ্বিতীয় বিয়ে বলেই আমার মতো সাধারণ ফ্যামিলির একটা মেয়েকে রিফাত বিয়ে করে এনেছিল। সেদিন যখন শুনেছিলাম আমার বিয়ে কোনও বিবাহিত পুরুষের সাথে হচ্ছে শুধু তাই নয় তার সাড়ে তিন বছরের এক সন্তানও আছে সেদিন খুব কেঁদেছিলাম যে আমি এই বিয়েটা করতে চাইনা। সবে মাত্র ইন্টারমিডিয়েট পাশ করি আমি আর সেই মুহূর্তেই বিয়ে তাও কিনা এক সন্তানের জনককে! গরীব ঘরের মেয়েদের নিজের বিয়ের ব্যাপারে কোনও মতামত থাকতে নেই তাই আমারও মতামতের গুরুত্ব সেদিন ছিলনা।



বাসর রাতে রিফাত তার কন্যা নিমরাকে আমার কোলে তুলে দিয়ে বললো, পারলে ওর মা হয়ে থেকো, ওর জন্যই তোমাকে বিয়ে করে আনা। নিজের মা তো সুখের টানে ওকে রেখেই চলে গিয়ে আমেরিকাতে সুখের জীবন কাটাচ্ছে কিন্তু আমার মেয়েটা বড্ডো বেশী মা ঘেঁষা ছিল, গত একটি বছর অনেক কষ্টে ওকে আমি সামলাচ্ছি। আম্মুরও বয়স হয়েছে তাই শেষ পর্যন্ত তোমাকে এনেছি।



ওর মা বেঁচে আছেন! কিন্তু আমি তো শুনেছিলাম তিনি ..



হুম তোমার শোনায় ভুল ছিলনা তবে আমার বলায় মিথ্যে ছিল। কি করে বলবো বলতো যে আমার সন্তানের মা আমাকে আর আমার নিমুকে রেখে অন্য একজনের হাত ধরে চলে গেছে! হ্যাঁ এখন তুমি আমার স্ত্রী তাই তোমার কাছে আমার না বলার কিছুই নেই, তুমি যাই চাও তাই পাবে শুধু আমার মেয়েটাকে একটু মায়ের আদরটুকু দিও। খুব অনুনয় করে বলছিল রিফাত।



খানিকটা রাগ হলো রিফাতের উপর, শুধুমাত্র নিজের সন্তানের মায়ের অভাব পূরণের জন্য আমাকে বিয়ে করেছে! আনমনে ভাবছি হঠাৎই হুশ ফিরে এলো একটি বাচ্চামেয়ের কণ্ঠে, তুমি কি আমার আম্মু হবে! তুমিও কি আমার আম্মুর মতো আমাকে ছেড়ে চলে যাবে! প্লিজ আম্মু তুমি যেওনা কখনও আমাকে ছেড়ে, আমি তোমাকে ছেড়ে থাকতেই পারবনা। বলেই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে মেয়েটা।



ওর কথায় এই প্রথমবার ওর মুখের দিকে ফিরে তাকাই আমি. কি করে সম্ভব এমন মায়াভরা, এতো মিষ্টি একটা বাচ্চাকে তাও নিজের নাড়িছেঁড়া ধন ছেড়ে সুখের আশায় অন্য কারও হাত ধরে চলে যেতে! কি সুন্দর বাচ্চাটা আর তার কথায় কত টান। আমি এক নিমিশে পাগল হয়ে গেলাম। ভুলেই গেলাম যে আমি ওর আপন মা নই। কি করে এক মুহূর্তেই এক কিশোরী মেয়ে নিজের সতীনের সন্তানের মা হতে পারে আমি নিজেই বুঝলামনা। আব্বা,আম্মা আর রিফাতের উপর হওয়া রাগও মুহূর্তেই যেন পানি হয়ে গেল। জোরে আঁকড়ে ধরলাম নিমুকে আর বললাম আজ থেকে শুধু আমিই তোর্ আম্মু, এ জীবন থাকা পর্যন্ত তোকে ছেড়ে আমি কক্ষনো যাবোনা।



সেই রাতে আমাদের মা মেয়ের ভালোবাসা দেখে রিফাত মুখ লুকিয়ে কেঁদেছিলো, হয়তো ভেবেছিল কেউ ওর সেই কান্না দেখেনি কিন্তু আমার চোখ সেটা এড়ায়নি। সেদিনের পর থেকে নিমুর ব্যাপারে সকল সিদ্ধান্ত আমার ছিল আর আমার মেয়েটাও আমি না বলা পর্যন্ত এক পা ও ফেলতোনা।



এরই মধ্যে আমার দুই ছেলেরও জন্ম হয় কিন্তু আমার নিমুর জায়গা এতটুকু ফাঁকা হয়নি এক মুহূর্তের জন্য। আমার জন্মদাত্রী মা তো প্রায়ই বলেন আমি নাকি নিশান আর নীরব কে ততোটা ভালোবাসিনা যতটা আমার নিমরাকে ভালোবাসি। কি জানি হয়তো তাই। প্রথম মা ডাক তো আমি আমার নিমুর মুখ থেকেই পাই.।



খুব শান্তিতে কাটছিল আমার তিন সন্তান, স্বামী, শ্বশুর, শ্বাশুড়ীকে নিয়ে সংসার। হঠাৎই এক সন্ধ্যায় এক মহিলা বাড়ীতে হাজির। আমার তাকে দেখে চিনতে কষ্ট হয়নি কারণ তার ছবিতো আমি দেখেছিলাম তবে ছবির চেয়ে এখন স্ব্যাস্থ কিছুটা ভাল। তাকে দেখেই আমার কলিজার ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো। অজানা আশঙ্কায় বুকের ভেতর কম্পন শুরু হলো। তবু কষ্ট আর ভয় চেপে রেখে তাকে বসতে বললাম। তিনি বেশ কিছুক্ষন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আমাকে দেখলেন। কি জানি কি ভাবলেন! এরই মধ্যে রিফাতও অফিস থেকে ফিরে এলো তবে রিফাতের কথার ধরণে বুঝলাম এই মহিলার সাথে অনেকদিন ধরেই কথা হচ্ছে রিফাতের আর কথা বলতে হয়তো ঝগড়া।



শোনো রিফাত তোমার চাওয়া না চাওয়াতে আমার কিছু যায় আসেনা, আমি আমার মেয়েকে আমার কাছে নিয়ে যাবো। তুমি হয়তো তোমার স্ত্রীকে কিছুই বলোনি আমার দেশে আসার ব্যাপারে তবে সেটা একমাত্র তোমাদের ব্যাপার। আমি এসেছি আমার নিমরাকে নিয়ে যেতে। তোমরা এমনিতে রাজী হলে ভাল তা না হলে আমি আইনের আশ্রয় নিবো। আরও কি সব বললেন জানিনা, আসলে কোনও কথাই যে আমার মাথায় ঢুকছিলনা। শুধু বুঝতে পারছিলাম আমি আমার মেয়েটাকে হারিয়ে ফেলছি।



রেবা মানে নিমুর জন্মদাত্রী রিফাতকে ছেড়ে বিয়ে করেন অন্য একজনকে কিন্তু এতো বছরেও সেই ঘরে কোনও বাচ্চা হয়নি আর হবেওনা, সেকারণেই রেবা এসেছেন আমার নিমুকে নিয়ে যেতে। আজ আমার নিমুর বলা একটি সেন্টেন্সেই হয়তো আমার জীবন তোলপাড় হয়ে যাবে, শুধু কি আমার! রিফাতের জান হলো আমাদের এই মেয়েটা। কি করে বাঁচবো আমরা নিমুকে ছাড়া!



অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই আদালতের কাজ শুরু হবে। ধুকধুক করে কাঁপছে , বুকের ভেতর সব চুরমার হয়ে যাচ্ছে, কি হতে চলেছে! গত তিনদিন ধরে আমার মেয়েটা একটিবারের জন্যও আমার কাছে আসেনি। আমি সারারাত ওর রুমের দরজার সামনে মেঝেতে বসে কাটিয়েছি কিন্তু একবারের জন্য যেতে পারিনি আমার কলিজার টুকরার কাছে, বলতে পারিনি, মা রে তুই যাসনে আমাকে ছেড়ে, আমি যে তোকে ছাড়া বাঁচতে পারবোনা।



হ্যাঁ, ওই তো আমার নিমু সাক্ষ্য দিবে, কি বলবে! নিশ্চয়ই বলবে ও ওর জন্মদাত্রী মায়ের কাছে ফিরে যাবে। কানের কাছে ভেসে উঠছে সেই বাসর ঘরে রিফাতের মুখে শোনা সেন্টেন্সটা, আমার মেয়েটা বড্ডো মা ঘেঁষা। তবে কি আজ সেই মা ঘেঁষা মেয়েটি তার মায়ের কাছেই চলে যাবে!



যাবেই তো, আমি তো আর ওকে জন্ম দিইনি, এমনকি ও ছিল বলেই তো রিফাতকে আমি বিয়ে করতে রাজী হইনি। এটাই আমার প্রাপ্য শাস্তি। আমি যেমন একদিন ওকে পর ভেবেছিলাম আজ তার উপযুক্ত শাস্তি পাবো।



আমি আমার আম্মুর কাছেই থাকবো, আমার আম্মু একজনই। আদালতে বলছে নিমু।



এবার আর চোখের পানি আটকে রাখতে পারলামনা, হ্যাঁ ওই তো বলছে ওর আম্মু শুধু একজনই। আমার মেয়েটা আমাকে ছেড়ে চলেই যাচ্ছে।



জ্বী, আমার আম্মু একজনই আর আমি আমার সেই আম্মুর কাছেই থাকবো, অন্য কারও কাছেই না। ঐটা আমার আম্মু বলেই ওর ডান হাতের তর্জনীটা আমার দিকে তাক করলো। মুহূর্তেই যেন সব নিস্তব্দ হয়ে গেল। কত বড় হয়ে গেছে আমার মেয়েটা। এই কটা দিনে একটিবারও বুঝতে দেয়নি ওর ইচ্ছা। দেবেই বা কেন! আমি কি একবারও আমার কলিজার টুকরাকে বলেছি যে, মা তুই আমাকে ছেড়ে কোথাও কোনওদিন যাসনে, আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবনা যেমনটা ও প্রথমদিন আমাকে বলেছিল! আমি হ্যাঁ আমিই নিমুর আম্মু।

(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top