What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made ডিভোর্স (তালাক) (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
হুমায়রা রিক্সা থেকে নেমে একটু হেঁটে সামনে গেল। ছোট একটা অফিসের সামনে এসে থামল। এটা তার স্বামী মাসুমের অফিস। গটগট করে সে অফিসে ঢুকে গেল।



হুমায়রা আধুনিক মেয়ে। লুকোছাপা পছন্দ করে না। সে সরাসরি যা বলার মাসুমকে বলে দিয়েছে। মাসুমের সাথে থাকা তার পক্ষে সম্ভব না। ডির্ভোস নিতে চায়। এতদিন মাসুম রাজী হয়নি। কিন্তু এখন রাজী হয়েছে।



অফিসে ঢুকে মাসুমের কক্ষের দিকে এগোতেই হুমায়রা বেশ হাসির শব্দ শুনতে পেল। মাসুমের আর আর একজন মহিলার হাসির শব্দ। বাহিরে কয়েক সেকেন্ড থমকে দাঁড়িয়ে গেল। তারপর লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে দরজা ঠেলে তারপর ঘরে ঢুকল।



মাসুম তাকে দেখে একটুও অপ্রস্তুত না হয়ে বলে উঠল,"আরে তুমি!" যেন সে জানত যে হুমায়রা আসবে।



হুমায়রা দেখতে পেল একটি সুন্দর মহিলা মাসুমের টেবিলের উল্টো দিকের চেয়ারে বসে আছে। পরিচয় করিয়ে দিল। নাম মিতা। মিতা হুমায়রাকে দেখে একটা হাসি দিল। হুমায়রা না পারতে সৌজন্য হাসি দিল। মিতা এ সময় উঠে দাঁড়ায়।



তারপর মাসুমের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,"আমি তাহলে আজ যাই।"

মাসুমও তার দিকে একটা হাসি দিয়ে বলল,"আচ্ছা।"



মিতা হুমায়রার দিকে ফিরে একবার হাসি দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। সেদিকে তাকিয়ে হুমায়রার কেন জানি রাগ লাগল। অথচ মাসুম এই নামটাই তাকে বলেছে। সে বলে মিতাকে পছন্দ করে। হুমায়রা আগে এই বিষয় নিয়ে তেমন একটা চিন্তা করেনি। কিন্তু আজ অকারণেই কেন যেন তার রাগ লাগতে লাগল। অথচ মাসুমকে তার পছন্দ না। সেই তার সাথে থাকতে চাচ্ছে না। তাই মাসুম আগে থেকেই একজন পছন্দ করে রেখেছে। যাতে ডির্ভোস হলে তাড়াতাড়ি কাউকে বিয়ে করে ফেলতে পারে।

মাসুম নিজে হুমায়রাকে এসব বলেছে। ডির্ভোসের পরে মাসুম কাকে বিয়ে করল না করল তা দিয়ে তার দরকার কি! সে এই ঝামেলা থেকে মুক্তি পেলেই হল।



গেঁয়ো ভুত কোথাকার!



"চল আমরা যাই।" মাসুম বলল।

হুমায়রা গম্ভীর মুখে বলল,"হু, চল।"



রাস্তায় গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে মাসুম জিজ্ঞেস করল,"তা, মিতাকে কেমন দেখলে?"

-সুন্দর।



-শুধু সুন্দর না! মাথায় বুদ্ধিও আছে বেশ। তবে তোমার মত অত সুন্দরী না। কিন্তু বুদ্ধিতে তার কাছে হেরে যাবে।



হুমায়রা অগ্নি চোখে মাসুমের দিকে তাকাল। মনে হল এখুনি চোখের আগুনে ভস্ম করে দিবে। মাসুম সেদিকে তাকিয়ে একটা মধুর হাসি দিয়ে একটা গান গুণ গুণ করে গাইতে লাগল।



হুমায়রা মনে মনে বলতে লাগল,"বেটার মনে বেশ ফুর্তি মনে হচ্ছে! মিতা কি এমন আহামরি! তুই বেটা তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস! আমার কি! আমি এই আপদ থেকে বেঁচে যাব সেটাই বড় কথা!"



তবুও হুমায়রা মনে তৃপ্তি পেল না। কোথায় যেন একটা বেদনা টন টন করতে লাগল।



মাসুম আসলে মা বাবা হারানো ছেলে। একমাত্র মামা অনেক কষ্ট করে তাকে পড়িয়েছে। মাসুম শহরে এসে ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পর টিউশনি করে নিজের খরচ নিজেই চালিয়েছে। এরপর হতদরিদ্র মামাও একদিন মারা যান। সহায় সম্পত্তি বলতে কিছুই মাসুমের নাই। ভার্সিটি থেকে পাস করার পর চাকরির জন্য নানা জায়গায় পরীক্ষা ইন্টারভিউ দিতে লাগল।



এরকমই একদিন দুপুরে ছোট একটা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল দেখে একজন মধ্যবয়স্ক লোক রিক্সা থেকে পড়ে গেছে। তার মাথা ফেটে গেছে। রক্ত পড়ছে। জ্ঞান ছিল। রিক্সাওয়ালা বেচারা কি করবে! বুঝে উঠতে পারছিল না। আশেপাশে তখন কোন মানুষ দেখা যাচ্ছে না। মাসুমই সেই রিক্সা দিয়ে ভদ্রলোককে হাসপাতালে নিয়ে যায়।



পরে জানতে পারে ভদ্রলোকের নাম আজমল সাহেব। মোটামুটি ভালো একজন ব্যবসায়ী। মাসুমের সাহায্যের কথা শুনে তাকে অনেক ধন্যবাদ দেয়। কেননা তখন মাসুম না থাকলে আজমল সাহেব বেশ বিপদে পড়ে যেতেন। মাসুমকে টাকা দিতে চাইলে মাসুম সাথে সাথে তা প্রত্যাখ্যান করে। আজমল সাহেব বেশ অবাক হন। যার কোন চাকরি নেই, টাকা নেই সে এই অবস্থায় এত টাকার অফার কিভাবে প্রত্যাখ্যান করতে পারে!



এরপর আজমল সাহেব মানুষ লাগিয়ে মাসুমের খোঁজ নেন। জানতে পারেন ছেলে সৎ এবং ভালো। তখন আজমল সাহেব চিন্তা করলেন মাসুমকে অন্যভাবে সাহায্য করা যায় কিনা! কেননা ছেলেটা তাকে এত বড় বিপদে সাহায্য করেছে। তাই একদিন ডেকে তাকে বললেন যে তাকে কোন ব্যবসা শুরু করতে। ফিন্যান্স যা লাগে তিনি দিবেন। যেহেতু জানেন মাসুম শুধু শুধু তার কাছ থেকে টাকা নিতে আপত্তি করবেন তাই ঠিক করে রেখেছিলেন যে এটা ধার হিসেবে মাসুম নিবে। পরে আস্তে আস্তে শোধ করে দিবে। মাসুম ঠিকই আপত্তি করেছিল। কিন্তু আজমল সাহেব যখন তাকে ধারের কথাটা বলল তখন রাজী হল। আসলে আজমল সাহেব এর উদ্দেশ্য ছিল ছেলেটিকে দাঁড় করিয়ে দেয়া।



অবশ্য আরেকটি গোপন ইচ্ছেও তার ছিল। মাসুমকে তার বেশ পছন্দ হয়েছে। তার এক ছেলে দুই মেয়ে। ছেলে আর বড় মেয়ে দুটি বাহিরে থাকে। শুধু ছোট মেয়েটি তার কাছে আছে। তার অন্য ছেলেমেয়ে দুটি তার আর স্ত্রীর মত ঠান্ডা স্বভাবের। কিন্তু ছোট মেয়েটি একটু হইচই প্রিয়। সারাক্ষণ হইচই করবে। আবার মেজাজও আছে। আজ এখানে দাওয়াত কাল ওখানে দাওয়াত এই করে ঘুরাঘুরির মধ্যে থাকে। তবে উগ্র নয়। এখনও বাবার কথা শুনে। মা মারা গেছে বলে আজমল সাহেব বেশি শাসনও করেন না।



তিনি মনে মনে মাসুমকে হুমায়রার জন্য ঠিক করলেন। একবার যদি এই ছেলেটার সাথে হুমায়রার বিয়ে হয় তবে হুমায়রা একজন ভালো স্বামী পাবে। তিনি অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে অনেক ঝামেলা এড়িয়ে এই বিয়েটা দিয়েছেন।



আর এদিকে মাসুমও তার ছোট ব্যবসাটাকে বেশ দাঁড় করিয়ে ফেলেছে।



কিন্তু আজমল সাহেব জানেন না হুমায়রা মাসুমকে বিয়ে করলেও তাকে একটুও পছন্দ করে নাই। বিয়ের রাতেই স্পষ্ট করে মাসুমকে সে একথা বলে দিয়েছে। আর বলেছে বাবার জন্য বাধ্য হয়ে তাকে এই বিয়েটা করতে হয়ছে। নাহলে তার মত গেঁয়োকে সে কখনও বিয়ে করত না! এরপর কয়েকমাস পরেই হুমায়রা বলল যে সে তাকে ডির্ভোস দিতে চায়।



মাসুম কিছু বলে নাই চুপচাপ শুনেছে। বেশ দুঃখ পেয়েছে। কিন্তু কিছু বলে নাই। হুমায়রাকে তার পছন্দ হয়েছিল। একটু রাগী কিন্তু মানুষ হিসেবে খারাপ না। তবে মাসুম একটা বিষয় ভেবে পাচ্ছিল না যে সে কোন দিক থেকে গেঁয়ো!! সবাই তো তাকে দেখতে ভালো আর গোছানো মানুষ বলে! তাহলে!



সে এক মাস চুপচাপ থাকে। তারপর একদিন খুশি হয়ে হুমায়রাকে মিতার কথা বলে। বলে যে মিতা মেয়েটা ভালো। হুমায়রার সাথে ডির্ভোস হলে সে মিতাকে বিয়ে করবে। হুমায়রা প্রথমে অবাক হল। পরে চিন্তা করল যাক তার সমস্যার সমাধান তো হবে। তবে কেন জানি এই মিতাকে তার বেশ দেখতে ইচ্ছে হল। এজন্য আজ মাসুমের এখানে আসা।



হঠাৎ গাড়ি এক জায়গায় থামতে হুমায়রার চিন্তা বন্ধ হল। দেখে মাসুম গুণ গুণ করে গান গাইতে গাইতে নেমে ফুলের দোকান থেকে বেলী ফুলের মালা কিনে আনল।



"বেটার মনে এত্ত আনন্দ! আমাকে তো কোনদিন কোন ফুল কিনে দেয় নাই। আজ দেখি আনন্দের বন্যা বইছে!" রাগে হুমায়রা মনে মনে গজগজ করে চিন্তা করছে।



বাসায় আসার পর মাসুম ঘরে ঢুকে ফুলের মালাটা হাতে নিয়ে গন্ধ শুকল। বেশ সুন্দর গন্ধ। হুমায়রা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল। মাসুমের খুশি দেখে তার কেন জানি কষ্ট হতে লাগল! অথচ এই মানুষটাকে সে পছন্দ করে নাই! কিন্তু যখন থেকে মাসুম বলছে মিতাকে বিয়ে করবে তখন থেকেই হুমায়রার মনটা কেমন করতে লাগল! তার কিছু ভালো লাগছিল না। খালি মনে হচ্ছে সে কোন ভুল করছে না তো! বাবাও সেদিন এ ধরনের অনেক কিছু আকারে ইঙ্গিতে তাকে বলছিল। সে জানে বাবাও তার ভালো চায়। তার মনটা কেমন বিষন্ন লাগছে।



হুমায়রা দেখতে সুন্দর। আজ আবার কি মনে করে শাড়ি পড়েছে। হালকা কলাপাতার শাড়িতে তাকে বেশ সুন্দর লাগছে।

কোমরে হাত দিয়ে সে দাঁড়িয়ে মাসুমের কান্ড দেখতে লাগল।

মাসুম হুমায়রার দিকে একটা হাসি দিল।



তারপর জিজ্ঞেস করল,"তা আমাকে কবে ডির্ভোস দিবে বলে চিন্তা করছ?"



-কেন!



-না তাহলে মিতার সাথে বসে বিয়ের ডেটটা ঠিক করে ফেলতাম। তারপর মিতার সাথে সুখে শান্তিতে বসবাস করতাম। তুমি তো আর আমাকে কোন শান্তি দিলে না!



- ও তোমার শান্তি দরকার! আমি তোমাকে ডির্ভোস দিলে তুমি শান্তি পাও!



-আরে তুমিই তো আমার সাথে থাকতে চাইলে না! ডির্ভোস দিবে বললে। তাই তো আমি মিতাকে খুঁজে বের করলাম। এখন মনপ্রাণ শুধু মিতার!



- কি!!! নিজের স্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে অন্য মেয়েকে ভালোবাসার কথা বলছ! কত্ত বড় সাহস তোমার! তোমার মাথা আমি ফাটিয়ে দেব!



মাসুম অবাক হয়ে বলল,"কিন্তু জানু! তুমি তো আমাকে ডির্ভোস দিতে চাও! আর এটাই তো সব সময় বলে এসেছ!"



-জানু! কোনদিন তো জানু ডাকনি! আজ জানু ডাকা হচ্ছে!



- না মানে, মিতাকে পরে ডাকতে হবে তো! তাই আগে থেকেই তোমাকে ডেকে প্র্যাকটিস করছি, আরকি!



- খবরদার! কোন প্র্যাকটিসের দরকার নেই! অন্য কাউকে জানু ডাকা যাবে না! আর তোমাকে ডির্ভোস দিয়ে দিব! এই চিন্তা বাদ দাও! জানু। সুখে শান্তিতে থাকার পরিকল্পনা বাদ দাও। এত সহজে তোমাকে রেহাই দেয়া হবে না!



- মানে কি! তুমি আমাকে ডির্ভোস দিবে না!



-না। আবার যদি ডির্ভোস দেবার কথা বল! তাহলে ঐযে ঘরের কোনায় একটা লাঠি আছে সেটা দিয়ে তোমার মাথায় বাড়ি দিব।



- কিন্তু গেঁয়ো ভুতের সাথে থাকবে!



- গেঁয়ো ভুতের গুষ্টি কিলাই!



মাসুম অসহায় মুখ করে বলল,"তাহলে এই বেলী ফুলের মালা কি করব!"



-কেন! আমার মাথায় কি খোঁপা নাই!



-আরে তাই তো! তোমার মাথায় দেখি একটা খোঁপা দেখা যাচ্ছে!

তাহলে এস। তোমার খোঁপায় এই বেলী ফুলের মালা পড়িয়ে দেই। তোমাকে সুন্দর মানাবে।



এতক্ষণ হুমকি ধামকি দিলেও এখন হুমায়রা একটু লজ্জা পেল। তবে মনে বেশ শান্তি লাগছে। কেন জানি তার মনে হচ্ছে সে ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ডিভোর্স হয়ে গেলে তার বড় ভুল হয়ে যেত। কিছু না বলে সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। মাসুমই ফুল হাতে হাসতে হাসতে এগিয়ে গেল।



মাসুম হুমায়রার খোঁপায় ফুল পড়িয়ে দিতে দিতে চিন্তা করল। যাক! তার পরিকল্পনা কাজে দিয়েছে। মাসুম আসলে চিন্তা করে "মিতার" মিথ্যা নাটক সাজিয়েছে যেন হুমায়রা তার কাছে আসে। সে এক মাস হুমায়রাকে অবজার করে বের করেছে যে হুমায়রা মেয়ে হিসেব বেশ ভালো। আর আজমল সাহেব মানে তার শ্বশুরকে কথা দিয়েছে। হুমায়রাকে সে কখনও ছেড়ে যাবে না। এজন্য হুমায়রা যেন কোন ভাবেই তাকে ডির্ভোস না দেয় তাই এই নাটক!



- বাহ! তোমাকে তো সবুজ পরীর মতো লাগছে!

- হু, বলেছে তোমাকে!

দুজনেই হেসে উঠল।

(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top