What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Kaptan Jacksparoow

Community Team
Elite Leader
Joined
Apr 6, 2019
Threads
328
Messages
5,981
Credits
45,360
Profile Music
Recipe sushi
Rocket
Euro Banknote
Butterfly
Logitech Mouse
Photo_talks_16268064119121a39fb829978d482.jpg


আমি দোলনচাঁপা সরকার। আজ আমার বয়স এখন পাঁচের ঘর পেরিয়ে বার্দ্ধক্যের পথে।আজ আমি যৌবনাতিক্রান্ত একদিন আমারও রূপ ছিল, ভরা যৌবন ছিল,মধু ছিল মৌচাকে,মৌমাছির আনাগোনা ছিল।আজ আমি বড় একা,আমার নিজের ছেলে থাকলেও অনেকদুরে।সহায় সম্বলহীন পুরানো স্মৃতির জাবর কাটতে কাটতে একদিন জীর্ণ বৃন্ত চাঁপা ফুলের মত খসে পড়বে এ জীবন।
বড় বেশী করে মনে পড়ছে বাবা মায়ের কথা।বাবা মায়ের মত এত আপন কেউ হয়না আজ বুঝতে পারছি মর্মে মর্মে।আজ আপনাদের অভাগীর কিছু কথা শোনাতে ইচ্ছে করছে--না, সহানুভুতির জন্য নয়।কৃতকর্মের প্রায়শ্চিত্ত বলতে পারেন।আমার এই পরিনতির জন্য কাউকে দায়ী করতে চাই না,আমি নিজেই দায়ী।বাবা কত বুঝিয়েছে মা কান্নাকাটি করেছে কোনো কিছুতেই কিছু হয়নি,আমাকে ভুতে পেয়েছিল তখন।বাবার কথা বড় বেশি করে মনে পড়ে আজ।বাবা বলতেন,জীবন বড় মূল্যবান,জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেললে তার খেসারত দিতে হয়।ভাবছেন সেইসব পুরানো কথা আজ বললে তো সেই জীবনকে ফিরে পাওয়া যাবে না।জানি,তবু যদি আমার কথা শুনে একজনও যদি কিছু শেখে সেই আমার পরম প্রাপ্তি।
আমার বাবা সরকারি কর্মচারি।আমি বাপ মায়ের একমাত্র সন্তান।কন্যা সন্তান হলেও বাবার কোনো আক্ষেপ ছিল না।বাবার ইচ্ছে ছিল মেয়ে তার জীবনে এমন কিছু করুক যাতে বুক ফুলিয়ে বলা যায় পাঁচ জনকে।কিন্তু বিধাতার ইচ্ছে বোধহয় আমাকে নিয়ে অন্যরকম খেলা।তখন সবে আমি বারো ক্লাসের ছাত্রী,একদিন স্কুল থেকে বাবাকে ডেকে পাঠানো হল।বড়দি বাবার হাতে তুলে দিলেন একটি চিঠি।চিঠিতে চোখ বুলিয়ে বাবা হতবাক।বাড়ি ফিরে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ঈশান কে?
মাথা নীচু করে বললাম,আমি চিনি না।
--এই চিঠি তোমার কাছে এল কি করে?
--স্কুলে যাবার পথে আমার ব্যাগে গুজে দিয়েছে,আমি কি করবো?
--এমনি-এমনি তোমার ব্যাগে গুজে দিল?
কি বলবো ভাবছি,মা বলল, তুমি ওকে বকছো কেন? ওকি বলেছে চিঠি গুজে দিতে?
--তুমি চুপ করতো।যা জানো না তা নিয়ে কথা বলতে এসো না।বাবা বললেন।
মা দমবার পাত্রী নয় বলল,করো তোমরা বাপ-বেটিতে ঝগড়া, আমার হয়েছে যত জ্বালা।
--আমি তো বুঝতে পারছি না তোমার আবার কিসের জ্বালা।
--তুমি তো অফিস চলে যাও,আমাকে সব সামলাতে হয়।শোন দোলা বুবাইকে একদম পাত্তা দিবি না।ছেলেটা ভাল নয়।
তার মানে ঈশানের নাম বুবাই মা জানে?কিন্তু ভাল নয় কেন বলল?মনে পড়ল ঘটনাটা, যাতায়াতের পথে দাঁড়িয়ে থাকে, বাইকে হেলান দিয়ে ড্যাবডেবিয়ে তাকিয়ে ওকে লক্ষ্য করে।কেমন ক্যাবলা-ক্যাবলা মনে হত।কোনো মেয়েকে কেউ গুরুত্ব দিয়ে দেখলে তার ভাল লাগবেই,আমারও ভাল লাগত। স্কুলে বেরোবার আগে বুবাইয়ের জন্য একটু সেজেগুজে বেরোতাম।চন্দ্রা আমার সঙ্গে পড়ে ওর লাভার আছে,ঐ বলেছে একদিন লাভারের সঙ্গে নাকি সিনেমায় গেছিল।বুবাইয়ের কথা ভেবে মনে হল আমিও চন্দ্রার মত একধাপ উপরে উঠলাম।স্কুলে যেতে যেতে আড়চোখে দেখলাম বুবাই নেই।ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক-ওদিক দেখলাম বুবাইকে নজরে পড়ল না।মন খারাপ হয়ে গেল,তা হলে কি আশা ছেড়ে দিয়ে অন্য মেয়ের পিছনে লাইন দিয়েছে? দিল তো বয়ে গেল ওর চেয়ে ভালছেলে আছে। স্কুলের কাছাকাছি আসতে চমকে দিয়ে একটা মোটর বাইক আমার কাছ ঘেষে দাড়াল।আমি সরে যেতে গিয়ে দেখলাম বুবাই একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে বলল,ধরো।
কেউ দেখে ফেলার আগেই কাগজটা নিয়ে বুকের মধ্যে গুজে দ্রুত চলতে থাকি। পিছন থেকে বুবাইয়ের গলা শুনতে পেলাম,উত্তর চাই।
আমি আর পিছন দিকে তাকালাম না।চারদিকে ভাল করে লক্ষ্য করি কেউ দেখেনি তো?মক্কেলের কি সাহস বলে কিনা ধরো,যেন আমি ওকে চিঠি দিতে বলেছি।কি লিখেছে কে জানে?
কৃষ্ণাদির ক্লাস,কি পড়াচ্ছেন কিছু কানে ঢুকছে না।মনে হচ্ছে বুকের মধ্যে চিঠিটা নড়ছে।এদিক-ওদিক তাকিয়ে সন্তর্পনে চিঠিটা বের করলাম।হাতের লেখার কি ছিরি।ইংরেজিতে উপরে লিখেছে,My Dear Dolon তারপর বাংলায়।চন্দ্রা বলল, কার চিঠি দেখি।আমি হাত সরিয়ে নিলাম।খেয়াল করিনি কখন কৃষ্ণাদি এসে দাড়িয়েছেন।তিনি দ্রুত হাত থেকে চিঠিটা নিয়ে নিলেন।হাতে পায়ে ধরেও কিছু হল না।চিঠিটা বড়দির কাছে জমা দিলেন।
মানুষ অনেক সময় কোনো কিছু না ভেবেই কথা বলে কিন্তু কখনো তা গভীর ভাবনার জন্ম দেয়।বুবাই ছেলেটা ভাল নয়।মায়ের এই কথা আমার মনে গভীর দাগ কাটে।বুবাই কেন ভাল নয় এই চিন্তা আমাকে পেয়ে বসে।বুবাই কেন খারাপ? দেখতে শুনতে ভাল,বাইক চালিয়ে ফটফটিয়ে যায় যখন ফুরফুরিয়ে চুল গূলো উড়তে থাকে বাতাসে দেখলে মনে হয় যেন ফিলমি নায়ক চলেছে,আমার দেখতে ভালই লাগে। কি করেছে বেচারি,কেন মায়ের ওর প্রতি বিরূপতা?
একদিন রাস্তায় দেখা হতে জিজ্ঞেস করল,তুমি তো চিঠির উত্তর দিলে না?
--তুমি চিঠি দিলেই আমাকে উত্তর দিতে হবে?
বুবাই অপ্রস্তুত,মুখখানা করুণ হয়ে গেল।তারপর দাত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে বলল,না মানে আমি তোমার মনোভাবটা বুঝতে চেয়েছিলাম।আমার হয়তো ভুল হয়ে থাকতে পারে---ওকে?
আমার কেমন মায়া হল বেচারির ম্লান মুখ দেখে।ঠোটে হাসি ফুটিয়ে বললাম,লিখে না জানালে বুঝতে পারো না?
চোখ তুলে তাকালো যেন একটা পাথরের মুর্তি প্রাণবন্ত হয়ে উঠল।আমি দ্রুত বাড়ির দিকে চলতে শুরু করি।পিছন ফিরে দেখলাম,দু-হাত শুন্যে ছুড়ে দিয়ে বুবাই এমন ভঙ্গী করছে যেন বিপরীতে দাঁড়ানো ব্যাটসম্যানকে বোল্ড আউট করে দিয়েছে। আমি আর হাসি চেপে রাখতে পারিনা।বুঝতে পারি না ওর মধ্যে মা কি এমন খারাপ দেখল?
আমাদের প্রেম ক্রমশ গাঢ় হতে থাকে।একদিন আচমকা বুবাই বলল,সোনা তুমি কিছুদিন আমার সঙ্গে দেখা কোর না।
অবাক হলাম।যে বলে একদিন দেখা না হলে ঘুমোতে পারে না,এর মধ্যে কি এমন হল?বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করি,বুঝলাম না তাহলে কি--।
কথা শেষ হবার আগেই বুবাই বলল,আমার কষ্ট হবে জানি কিন্তু তোমার পরীক্ষা আমার কাছে আরো বেশি গুরুত্বপুর্ণ।কদিন পর পরীক্ষা,মাসীমা মেশোমশায় অনেক আশা করে আছে---ভাল করে পরীক্ষা দাও--।
ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়লো।বুবাই আমার জন্য এতভাবে?মা বাবার জন্য এত সম্মান অথচ মা বলে ছেলেটা ভাল নয়।আমার চোখে জল এসে যায় প্রায়।আমি পরীক্ষার জন্য তৈরী হতে থাকি।পড়তে পড়তে বুবাইয়ের মুখটা ভেসে ওঠে।তন্ন তন্ন করে বুবাইয়ের মধ্যে খারাপ খুজতে থাকি,এই খোজা নেশার মত আমাকে পেয়ে বসে। যেত খারাপ খুজি তত ভাল ওর মধ্যে আবিষ্কার করি।এক চিন্তা কবে পরীক্ষা শেষ হবে,কবে আবার বুবাইয়ের সঙ্গে দেখা হবে?
একদিন অফিস থেকে বাড়ি ফিরে অসিতবাবু দেখলেন মেয়ে বাড়ি নেই।পরীক্ষা হয়ে গেছে কোচিং নেই তাহলে মেয়ে গেল কোথায়?দোলা নাকি কার বাইকের পিছনে বসে কোথায় যাচ্ছিল কথাটা অসিতবাবুর কানে এসেছে।হেকে উঠলেন, কমলা-আআ?
বুক কেপে ওঠে,এই আশঙ্কাই করছিলেন কমলা।রান্না ঘর থেকে নিরীহ মুখে বেরিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন,তোমাকে চা দেব?
--আমাকে বিষ দাও।দোলা কোথায়?গর্জে উঠলেন অসিতবাবু।
--এসেই আরম্ভ করলে?তুমি কি একটু শান্তি দেবে না?
--আমি বাড়ি এলেই অশান্তি? থাকো তুমি তোমার মেয়েকে নিয়ে,আমি চললুম।
অসিতবাবু বেরিয়ে যেতে উদ্যোগ করলে স্বামীকে জড়িয়ে ধরেন কমলা।ঠিক সেই সময়ে বাড়ি ঢুকলাম আমি।বাবা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেন,এত রাত অবধি কোথা ছিলে?
--চন্দ্রার সঙ্গে সিনেমা গেছিলাম,মা তো জানে।
--এত রাত অবধি কিসের সিনেমা?ধাড়ি মেয়ে লজ্জা করে না?কমলা মেয়েকে ভর্ৎসনা করেন।
আমি দ্রুত আমার ঘরে ঢুকে গেলাম।সারাদিনের মজাটাই মাটি হয়ে যাবার জোগাড়।কানে এল বাবা বলছেন,শোনো কমলা তোমাকে বোলে দিচ্ছি সাতটার পর বাড়ি ফিরলে সেদিন খাওয়া বন্ধ।
--ঠিক আছে মেয়েটাকে না খাইয়ে মারলে যদি তোমার শান্তি হয় আমি কিছু বলতে চাই না।রোজ রোজ ভাল লাগে না অশান্তি।
সংসারে অশান্তি লেগে আছে।বুবাইকে বলি,ও পালটা আমাকেই বোঝায়,ছিঃ সোনা ওরকম বলে না,মেশোমশাই তোমার ভালর জন্যই বলেন।
বুবাইয়ের প্রতি আমার শ্রদ্ধা বেড়ে যায়।ছিঃ বুবাইকে কি করে মা এরকম বলে? এক এক সময় ইচ্ছে হয় মাকে বলি,কাকে তোমরা খারাপ ছেলে বলো? জানো বুবাই আমাকে কি বলেছে?
বুবাই হয়তো লেখাপড়া বেশি করেনি কিন্তু ওর মনটা অনেকের চেয়ে বড়।বড়লোকের ছেলে গ্রামের জমিদারী ছেড়ে পিসির আশ্রয়ে পড়ে আছে এতেই বোঝা যায় বুবাই কত উদার মনের মানুষ।
বাবার জন্য কষ্ট হয় কিন্তু কি করে বোঝাবো বাবাকে, বুবাইকে ছাড়া আমি বাঁচবো না।
 
Last edited:
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top