আমি নাস্রিন, ইরাকের এক প্রত্যন্ত ছোটো গ্রাম দ্বেলাহতে থাকি। পাশে বয়ে চলেছে একটা ছোটো নদী নাম দিয়ালা, গ্রীষ্ম কালে সেই নদীতে পানি থাকে না বললেই চলে। যে টুকু থাকে সে টুকু কোন রকমে বাঁধ দিয়ে জমা করে পানের উপযোগী করা হয়। কিছু দুরে শুরু হয়ে যায় মরুভুমি, তপ্ত বালুচর। আল্লাহ্* আমাদের প্রতি অতটা সদয় নয়। আব্বাজান উঠপাখীর একটা ফার্মে কাজ করে, আর তাতে যা রোজগার হয় কোনোরকমে বাড়ির সবার পেটে রুটি যোগাড় হয়। বেশির ভাগ রাতে আম্মু শুধু পানি খেয়ে, পেটের ওপরে ভিজে কাপড় বেঁধে শুয়ে পরে। আব্বাজান কোনদিন কোন পাতা চিবিয়ে, বা একটু আলু পুড়িয়ে খেয়ে থাকতেন, কিন্তু আমাদের জন্য রোজ রুটি কিনে আনত। আব্বু আর আম্মু ছাড়া বাড়িতে আমরা চার ভাই বোন, আমার পরের ভাই জামাল, ছোটো ভাই মাজিদ, আর ছোটো বোন আবিদা। আমাদের বাড়িতে বিজলি বাতি ছিলনা, আধুনিক সুখের থেকে আমরা বঞ্চিত ছিলাম। চিত্তবিনোদনের জন্য আমি ভাই বোনেদের সাথে খেলতাম। অন্ধকার নামলে আব্বাজানের মুখে গল্প শোনা আর লন্ঠনের আলোতে উঠের লোমের গালিচা বোনা ছাড়া কোন কাজ ছিল না।
আমার বারন্ত দেহ, পরনের কাপড় এঁটে বসে থাকে আমার তরুণী দেহের ওপরে। মাঝে মাঝে আরশিতে নিজেকে দেখে বড় ভালো লাগত। আরশি আমাকে বলত যে আমি নাকি বেশ সুন্দরী দেখতে, ডিম্বাকৃতি মুখবয়াব, মাথা লম্বা চুল, মাখনের মতন মসৃণ আর ফর্সা ত্বক, বুকের ওপরে দুটি ছোটো উঠপাখীর ডিম যেন বাঁধা। মাঝে মাঝে নিজের অজান্তেই হাত চলে যেত নিজের দেহের ওপরে। কোনোরকমে পরনের কাপড় পরে বেড়িয়ে আসতাম বাথরুম থেকে। মাঝে মাঝে মনে হত যেন নিজের চোখে আমার তন্বী দেহটিকে খুবলে দিচ্ছে, হেসে ফেলতাম আরশি দেখে।
প্রায় রাতেই ভাই বোনেদের ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে আমি ছাদে চলে যেতাম। মাথার ওপরে খোলা আকাশ, দেখতাম। ঘন কালো আকাশের বুকে শত সহস্র তারা যেন আমাকে ডাকত, আমি হাত বাড়িয়ে তাদের ডাকের উত্তর দিতাম। শুধু মাত্র রাতের বেলায় আমি স্বাধীনতার বাতাসের শ্বাস নিতে সক্ষম হতাম। ছেলেরা দূর মাদ্রাসায় পড়তে যেতে পারত, কিন্তু মেয়েরা সেখানে পড়তে যেতে পারেনা। আমি বড় ভাই, জামালের বই উলটে পালটে দেখতাম। জামাল আমাকে এই চার দেয়ালের বাইরের গল্প বলত। এইভাবে অন্তত হাসি কান্না মাখিয়ে আমাদের দিন চলছিল।
একদিন জামাল স্কুল থেকে এসে আমার পাশে বসে আমাকে বলল যে ও নাকি বিশাল একটা লোহার গাড়ি দেখেছে, সেই গাড়ির সামনে নাকি একটা লম্বা নল। গাড়ির চাকাও নাকি লোহার চেনে বাঁধা, ঘরঘর আওয়াজ করে বালির ওপরে দিয়ে, পাথরের ওপর দিয়ে নাকি সেই গাড়ি চলতে পারে। আমি অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকি, জামাল বলল, যে সেই গাড়ির পেছনে অনেক লোক ছিল, সবার হাতে বন্দুক, সবার মাথায় লোহার টুপি, পিঠে বস্তা বাঁধা। সেদিনের পর থেকে বাড়ির মেয়েদের বাইরে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল।
আব্বু জামাল আর মাজিদকে মাদ্রাসা থেকে ছাড়িয়ে উঠপাখীর ফার্মে কাজে লাগিয়ে দিল। আম্মু বাধা দিতে চেষ্টা করলে বলে, দেশে নাকি যুদ্ধ লেগেছে, টাকার প্রয়োজন বেশি, বেঁচে থাকলে ভবিষ্যতে অনেক পড়াশুনা করা যাবে। চোখের জল ফেলতে ফেলতে জামাল আর মাজিদ গেল আব্বুর সাথে। আমি সেদিন জানালা দিয়ে ওদের কান্না ভরা চোখ দেখি, কিন্তু নিরুপায় এক মেয়ে আমি, কিছুতেই ভাইদের জন্য কিছু করতে পারলাম না। রাতে আমি ছাদের উপরে উঠে দেখি যে আব্বু এক কোনায় বসে কাঁদছে, আমি জিজ্ঞেস করাতে বললেন পেটের রুটি যোগাড় করতে ভাইদের কাজে লাগাতে হয়, ইচ্ছে করে জামালকে মাজিদকে মাদ্রাসা থেকে ছাড়ায় নি। আমার চাচাজান খালেদের কাছে আব্বু গিয়েছিল কিছু দিনার ধার চাইতে। খালেদ চাচা আব্বুর দিকে বেশ কিছু ফিলা ছুঁড়ে দিয়ে বলে উঠের ফার্মে যদি ছেলেদের কাজ করায় তাহলে কিছু দিনার আগাম দেবে।
মাঝে মাঝেই রাতের অন্ধকার আর নিস্তবধতা খানখান করে দূর থেকে গুলির আওয়াজ বম্ব পড়ার আওয়াজ পেতাম। আমি তিন ভাইবোনের মাথা বুকের মধ্যে নিয়ে কান চেপে ধরতাম, যাতে ওই আওয়াজ ওদের কানে পৌঁছাতে না পারে। আবিদা কেঁদে উঠত, ওকে কোলে করে বাকি ভাইদের নিয়ে রান্নাঘরের এককোনায় চলে যেতাম, সেখানে বাইরের আওয়াজ একটু কম আসত। গান গেয়ে, গল্প বলে ওদের কোন রকমে ঘুম পাড়িয়ে দিতাম।
জামাল আমার গলা জড়িয়ে ধরে বলত, “আপু আমি বড় হলে তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাব।”
আমি ওর কোঁকড়ানো চুলের ওপরে বিলিকেটে জিজ্ঞেস করতাম, “কোথায় নিয়ে যাবি।”
জামাল বলত, “আপু আমি ছবিতে দেখেছি, ওই নদীর ওই পারে অনেক বড় একটা শহর আছে, সেখানে ছেলে মেয়ে সবাই রাস্তায় বেড়াতে পারে, সবাই পড়াশুনা করতে পারে, সেখানে ওই রকম লোহার গাড়ি রাস্তায় চলে না। সেই রকম এক সহরে আমি নিয়ে যাব, তোমাকে, মাজিদকে, আবিদাকে।”
আমি ওর গালে চুমু খেয়ে বলি, “আম্মুকে নিয়ে যাবি না?”
জামাল বলে, “আম্মু যে আব্বুকে ছেড়ে যাবে না আপু। আর আব্বুকে নিয়ে যাবো না আমাকে পড়তে দেয়নি।”
আমি কি করে জামালকে বুঝাই, যে আব্বুর বুকের পাঁজর কেটে তোদের মাদ্রাসা থেকে ছাড়িয়ে এনেছে।
একদিন উঠের ফার্মে কিছু উগ্রপন্থী হামলা করে, টাকা পয়সা দিয়ে দিতে বলে। সেই গোলমালের মধ্যে খালেদ চাচা অফিস ঘর থেকে চুপিচুপি দিনারের বাক্স নিয়ে পেছনের পথ দিয়ে পালাতে যায় আর তখন এক উগ্রপন্থীর গুলিতে মৃত্যু হয়। খালেদ চাচার ইন্তেকাল হবার পরে আব্বাজান নায়েলা চাচিকে বাড়িতে নিয়ে এসেছিল। আম্মু প্রথমে নায়েলা চাচিকে বাড়িতে ঢুকতে দিতে চায়নি। সেদিন শুনলাম যে খালেদ চাচা নাকি আমাকে একরাতের জন্য ওর বাড়িতে যেতে বলেছিল। আব্বুজান আম্মিকে অনেক বুঝিয়ে বললেন যে নায়েলা একা ছোটো হামিদকে নিয়ে কি করে থাকবে, বাইরের শূয়র কুকুর নায়েলা চাচিকে ছিঁড়ে খাবে। নায়েলা চাচি, খুব সুন্দরী ফর্সা গোলগাল, ঠিক জন্নতের হুর যেন আসমান থেকে মাটিতে নেমে এসেছে। হামিদ কোলে, জুলু জুলু চোখে সবার দিকে তাকিয়ে থাকে আর ফোকলা মুখে হাসে। হামিদের হাসি দেখে আম্মিজানের দিল গলে যায়। আম্মি হামিদকে কোলে নিয়ে নায়েলা চাচিকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে আসে। আব্বুর কাঁধের ওপরে বোঝা আরও বেড়ে যায়। আমি সারা রাত জেগে বেশ কয়েকটা গালিচা বানাতে শুরু করে দিলাম। একদিন রাতে বাইরে গিয়ে দেখি আব্বু চুপ করে বসে ফিলা গুনছে আর হিসাব কসছে। আমি জিজ্ঞেস করাতে উত্তর দিলেন, হামিদের জন্য একটু দুধ কিনতে পারলে বড় ভালো হত।
ফজরের আজান তখন বাজেনি, এমন সময়ে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে বাড়ির কাছেই খুব জোরে বম্ব পড়ার আওয়াজ হল। সবাই চমকে উঠে পরে। হামিদ তাঁর স্বরে কেঁদে ওঠে সাথে সাথে আবিদা। নায়েলা চাচি হামিদকে বুকের কাছে চেপে ধরে, আবিদা আম্মির বুকে মুখ লুকিয়ে থাকে। জামাল আর মাজিদ আমাকে জড়িয়ে ধরে। আব্বুজান আমাদের রান্নাঘরের মধ্যে বন্ধ করে বাইরে বেড়িয়ে দেখতে যায় কি হয়েছে। আমি আব্বুজানের পেছন পেছন বেড়িয়ে আসি, দেখতে। আমাদের বাড়ির বেশ কাছেই বন্দুক ধারি বেশ কয়েকটা লোক বাড়ির লোকেদের ওপরে চড়াও হয়ে টেনে টেনে বাড়ি থেকে বের করে মারছে আর টাকা পয়সা চাইছে। যাদের বাড়িতে বিজলিবাতি ছিল, তাদের বাড়ি থেকে টিভি আর বাকি সব জিনিস বাইরে টেনে ফেলে দিচ্ছে। ভোরের আলো ফোটার আগেই, আজানের সুর বাজার আগে আকাশ বাতাস মেয়েদের কান্নার সুরে ছেলেদের আরত চিৎকারে ভরে যায়। র*্যাট ট্যাট আওয়াজে বন্দুকের গুলি এলোপাথাড়ি বেড়িয়ে এসে এক জন লোককে আমাদের সামনে মাটিতে শুইয়ে দিল।
আব্বু পেছনে তাকিয়ে আমাকে দেখতে পেয়ে বকে ভেতরে ঢুকিয়ে দিল। আমি আব্বুকে একা বাইরে যেতে বারন করি। আমি ভেতরে চলে আসি। কিছু পরে দেখলাম যে আব্বুর কলার চেপে ধরে বেশ কয়েকটা বন্দুক ধারি আতঙ্কবাদী আমাদের বাড়িতে ঢুকে পড়ল। আব্বুকে উঠানের ওপরে হাঁটু গেড়ে বসিয়ে দিল আর মাথার ওপরে বন্দুক তাগ করে বাড়ির সবাইকে বেড়িয়ে আসতে বলে।
আব্বুকে ওই রকম অসহায় দেখে আমি বেড়িয়ে আসলাম, আমাকে দেখে ওদের চোখ চকচক করে উঠল যেন। একজন আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল যে বাড়ির মধ্যে আর যারা আছে তাদের বের করে আনতে। আমি উত্তর দিলাম যে বাড়িতে আমি আর আব্বু ছাড়া আর কেউ থাকেনা। মানল না, ওরা, আমার চুলের মুঠি ধরে পেটের ওপরে বন্দুকের বাটের গুত মেরে মাটিতে ফেলে দিল। আমি আব্বুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম, আব্বুর মাথা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে, একটা চোখ রক্তের ফলে বন্ধ হয়ে গেছে। আব্বু আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই একটা বন্দুক ধারি আব্বুজানের মাথায় এত জোরে বন্দুকের বাট দিয়ে মারল যে আমার আব্বুজান আমার চোখের সামনে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল আর উঠল না।
ওদিকে উগ্রপন্থীরা বাড়ির মধ্যে ঢুকে পরে আম্মুজান আর নায়েলা চাচির ওপরে অত্যাচার শুরু করে দিল। আমার কানে ভেসে আসে ভাই বোনেদের কান্না। বাচ্চাদের বাড়ির বাইরে বের করে দিল। জামাল, মাজিদ আর আবিদা আমাকে জড়িয়ে ধরে থাকে। আমি কোন রকমে মাথা উঠিয়ে দেখলাম যে নায়েলা চাচির ওপরে একটা লোক চেপে বসে আর নায়েলা চাচির কাপড় ছিঁড়ে ফেলে করে কামনার অবসান করছে, পাশে আম্মুর উপরে আরও একজন। লোক চারটে আম্মু আর নায়েলা চাচির ওপরে অকথ্য অত্যাচার করে চলেছে।
হামিদ তাঁর স্বরে কাঁদছে, একজন হামিদকে ধরে ঘরের বাইরে ছুঁড়ে দেয়। আমি কোনোরকমে নিজেকে টেনে হামিদকে লুফে নিলাম, বুকের মাঝে চেপে ওর কান্না বন্ধ করতে চেষ্টা করলাম। একটা লোক আমার পরনের কাপড় টেনে খুলতে চেষ্টা করে। জামাল লোকটার পায়ে কামড় বসিয়ে দেয়। সেই উগ্রপন্থী জামালকে বন্দুকের বাট দিয়ে ঘাড়ে মারে, সেই দেখে আমার মাথায় রক্ত চড়ে যায়। আমি কোনোরকমে শরীরের শক্তি জুটিয়ে উগ্রপন্থীর পায়ের মাঝে সজোরে এক লাথি মারলাম। উগ্রপন্থী বন্দুক ছেড়ে জানুসন্ধি ধরে বসে পড়ল, সঙ্গে সঙ্গে জামাল ওর ঘাড় কামড়ে ধরে আর এল পাথারি চর লাথি মারতে শুরু করে দেয়।
আমি বন্দুক হাতে নিজেকে টানতে টানতে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়লাম আর সামনে যাকে পেলাম তার ওপরে পাগলের মতন গুলি চালাতে শুরু করে দিলাম। বুঝতে পারিনি যে আমার গুলিতে আমার আম্মু আর নায়েলা চাচি কেও গ্রাস করবে। আমি তখন পাগল, ঘর ভর্তি রক্তাক্ত লাশে ভরে উঠল। আমি তাকিয়ে দেখলাম, ওই কুকুর গুলো নায়েলা চাচি আর আম্মুর শরীরে আঁচরে খুবলে খেয়ে নিয়েছে।
আম্মুর শরীরে একটু যান তখন বাকি ছিল, আমাকে কাছে ডেকে বলল, “নাস্রিন, বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো। তুই আমাদের মেরে ভালোই করেছিস। তুই বাচ্চাদের নিয়ে চলে যা।”
আমার চোখে কান্নার মতন জল ছিল না, উঠানে আব্বুর মৃত দেহ, ঘরের মধ্যে আম্মুর আর নায়েলা চাচির নগ্ন ক্ষত বিক্ষত দেহ। চারপাশে ছড়িয়ে জনা চারেক উগ্রপন্থীদের মৃত দেহ।
আমি বুঝে গেছিলাম যে গুলির আওয়াজ শুনে কিছুক্ষণের মধ্যে আরও উগ্রপন্থী আমাদের বাড়ি চড়াও হবে। আমি কাঁধে বন্দুক ঝুলিয়ে নিলাম আর একটা বড় ছুরি কোমরে বেঁধে নিলাম। আমি হামিদকে বুকের কাছে বেঁধে নিলাম আর আবিদাকে পিঠে বেঁধে নিলাম। মাজিদ আর জামালের হাত ধরে বাড়ির পেছনের দরজা খুলে দৌড়াতে শুরু করে দিলাম। পায়ের নিচে তপ্ত বালুচর, মাথার ওপরে নীল আকাশ, পুব দিক থেকে সূর্য উঁকি মারছে। পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি আমাদের বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে, দাউদাউ করে জ্বলছে আমার আম্মুর আর আব্বুর দেহ আর তাদের সুখের নীড়। জামাল কেঁদে উঠল, আমি ওর মুখের ওপরে হাত চেপে ধরে ওর কান্না থামিয়ে দিলাম। আমার বুকের ভেতর হুহু করে উঠল কিন্তু আপুর চোখে জল দেখলে ভাইবোনেরা কি করে থাকবে, সেই ভেবে নিজের কান্না গিলে নিলাম।
আমি ওদের হাত ধরে মরুভুমির মধ্যে হাঁটতে শুরু করে দিলাম। খাওয়ার জন্য এক টুকরো রুটি নেই, গলা ভেজানোর জন্য এক ফোঁটা পানি নসিবে নেই। হাঁটতে হাঁটতে সূর্য মাথার ওপরে চলে এল, আমার শরীর ভেঙ্গে পরে, বুকের কাছে হামিদ জুলুজুলু চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে, পিঠের ওপরে আবিদা কখন ঘুমিয়ে পড়েছে খেয়াল নেই। আমি জামাল আর মাজিদ কে টানতে টানতে হেঁটে চললাম অজানার পানে। পা আর চলে না, পায়ের নিচে ফস্কা পরে গেছে। কিছুদূর চলার পরে মাজিদ লুটিয়ে পরে বালির ওপরে।
আমি কোনোরকমে বালির ওপরে বসে ওর মাথা কোলে নিয়ে কানেকানে বললাম, “মাজিদ আর একটু হাঁটলেই গেলেই পানি পেয়ে যাবো, ওঠ ভাই।”
ও জানে ওর দিদি কোনদিন মিথ্যে বলেনা, প্রান বাঁচানোর জন্য সেই প্রথম বার মাজিদকে মিথ্যে বলতে হয়েছিল। চোখের সামনে যে শুধু ধুধু বালুচর ছাড়া আর কিছু নেই। ওদিকে চেয়ে দেখলাম হামিদের মুখ চোখ শুকিয়ে গেছে, একটু জলের প্রয়োজন না হলে হামিদ কে বাচান যাবে না। পিঠ থেকে আবিদাকে নামিয়ে দেখলাম যে তাঁর অবস্থাও এক রকমের। আকাশের দিকে তাকিয়ে উপরয়ালার কাছে রেহমের ভিক্ষা চাইলাম, কিন্তু কেউ আমার কথা শুনল না। আমি নিরুপায় ওদের ওখানে রেখে কিছু দুরে গিয়ে একটা কাপরে প্রস্রাব করলাম আর ভিজে কাপড় এনে শেষ পর্যন্ত ওদের ঠোঁটে ছুঁইয়ে পানির কিছুটা তৃষ্ণা নিবারন করতে চেষ্টা করলাম। আমার বুক ভেঙ্গে গেছিল নিজের প্রস্রাব খাওয়ানোর সময়ে, কিন্তু চোখে জল ছিল না, না হলে আমি সেই জল ওদের খাইয়ে দিতাম। কোনোরকমে আবার ওদের বুকে পিঠে বেঁধে হাঁটতে শুরু করেদিলাম। কিছু দুরে গিয়ে দেখলাম যে একটা কুকুর মরে পরে আছে, খিদের জ্বালায় পেটের নারিভুরি মোচর দিচ্ছে। আমি আবার ওদের নামিয়ে সেই মরা কুকুরের পা থেকে একটু মাংস কেটে ওদের চিবাতে বললাম। কি করব, এক বার মনে হয়েছিল যে বুকের থেকে মাংস কেটে ওদের খেতে দিলাম। জামাল আর মাজিদ শুধু আমার মুখ দেখে সেদিন ওই কুকুরের মাংস চিবিয়েছিল।
সারাদিন কোনোরকমে হাঁটতে হাঁটতে দুরে একটা গ্রামের দেখা পেলাম। সারাদিন কিছু খাওয়া হয়নি, আমার পা আর চলছিল না। আমি গ্রামে পা রাখার আগেই লুটিয়ে পড়লাম বালির ওপরে। জামাল আমাকে টেনে তুলতে চেষ্টা করে, কিন্তু ওর গায়ে সেই শক্তি ছিলনা যে আপুকে টানতে টানতে ওই গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছায়। আমি জামালকে বললাম যে আমাকে ছেড়ে দিয়ে সবাইকে নিয়ে গ্রামে চলে যেতে। জামাল আমার পাশ কিছুতেই ছারবে না। আমি নিরুপায় হয়ে জামালের গালে একটা জোর থাপ্পর মেরে বললাম চলে যেতে। থাপ্পর টা মারার সময়ে আমার বুক ফেটে গেছিল, কিন্তু আমার আর কোন উপায় ছিল না তখন। জামাল আমার থাপ্পর খেয়ে কিছু দুরে গিয়ে কাঁদতে শুরু করে, কিছুতেই আমাকে ছেড়ে যাবে না জামাল। শেষ পর্যন্ত আমি কোনরকম হামাগুরি দিয়ে গ্রামের দিকে চলতে শুরু করে দিলাম।
একটা বাড়ির সামনে পৌঁছে আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম। জামাল আমার মুখে জলের ছিটে দিতে আমার জ্ঞান ফিরে এল। জামাল আমাকে জানাল যে বাড়ির মধ্যে কয়েকটা মৃতদেহ ছাড়া কোন লোক নেই। বেশির ভাগ বাড়ি খালি, কয়েকটা বাড়িতে শুধু লাশ পরে আছে। আমি বুঝে গেলাম যে উগ্রপন্থীরা এই গ্রামটাকেও ছারেনি। আমি একটু খানি বিশ্রাম নিয়ে বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়লাম। একটা ঘরে দুটি লোক আর দুটি মহিলার রক্তাক্ত লাশ পরে। বেশ কয়েদিন আগেই মরেছে মনে হল, মাছি ভনভন করছে। রান্না ঘরে গিয়ে দেখলাম যে কিছু রুটি আর জল আছে। আমি সেই গুলো নিয়ে সবাইকে খেতে দিলাম আর নিজেও একটু খেলাম। বাড়ির ভেতরে লাশ পচার গন্ধে থাকা যাচ্ছিল না। আমি একটা পুঁটলিতে খাবার আর গুএরবেতে (ছাগলের চামড়ার তৈরি জলের ব্যাগ) জল নিয়ে নিলাম। আমার জামাকাপড় ছিঁড়ে গিয়েছিল, তাই সেই বাড়ির মধ্যে খুঁজে একটা মেলহফা (খুব লম্বা কাপড় মেয়েরা সারা শরীরে জড়িয়ে পরে) পরে নিলাম। আমি ভাই বোনেদের নিয়ে আবার বেড়িয়ে পড়লাম। জামাল আর মাজিদ কাঁদতে শুরু করে দেয়, ওরা আর হাঁটতে পারছে না। আমি কি করি, শেষ পর্যন্ত গ্রাম থেকে বেড়িয়ে এসে খোলা আকাশের তলায় ওদের ঘুম পাড়িয়ে দিলাম। সারাদিন হেঁটে হেঁটে আমার পা খুব ব্যাথা করছিল, কিন্তু আমি কিছুতেই চোখের পাতা এক করতে পারছিলাম না। এই বুঝি কোথা থেকে কেউ এসে গেল, ভর রাতের দিকে, বন্দুকের নলির ওপরে ঠেস দিয়ে একটু চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নিলাম। মরুভুমির ওপর দিয়ে দিনে হাটা অনেক কষ্ট কর, আবার ফিরে গেলাম ওই গ্রামে, খুঁজে খুঁজে একটা খালি বাড়ির মধ্যে আশ্রয় নিলাম। সারাদিন বাড়ির মধ্যে বিশ্রাম নিয়ে শরীরের শক্তি সঞ্চয় করলাম। হামিদের জন্য রুটি চিবিয়ে চিবিয়ে একদম পাতলা করে খাইয়ে দিলাম, বেচারার দাঁত ওঠেনি, সে খাবে কি করে। আবিদা আর মাজিদের মুখ দেখে বড় কষ্ট হয়, শুধু রুটি চিবায়, একটু খেজুর বাঁ দুধ নেই। জামাল বাড়ির রান্না ঘর খুঁজে পেতে মেঝে থেকে কয়েক দানা চিনি উঠিয়ে নিয়ে আসে। শেষ পর্যন্ত ভাই বোনেদের মুখে সেই মাটি মাখা চিনি আর রুটি তুলে ধরি।
রাত পড়লে আবার হামিদ আর আবিদাকে পিঠে বুকে বেঁধে বেড়িয়ে পড়লাম, যেদিকে দু চোখ যায়। অনেকক্ষণ না অল্পক্ষণ জানিনা, চলতে চলতে সেই মরুভুমির মাঝে একটা ছোটো কবিলা দেখতে পেলাম। ওদের দেখে প্রথমে খুব ভয় করল, যে ওরা উগ্রপন্থি নয়ত?
আমি জামালকে বললাম, “যা একবার লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে আয় ওদের, যদি ভালো লোক দেখিস তবে আমাদের ডাক দিস।”
জামাল রাতের অন্ধকারে মিশে সেই তাঁবুর দিকে এগিয়ে গেল। আমি চুপ করে বাকিদের নিয়ে দুরে বসে থাকলাম। ভয়ে বুকের হৃদপিণ্ডটা বেড়িয়ে আসার যোগাড়, যদি ওরা উগ্রপন্থী হয় আর জামালকে ধরে ফেলে? কিছু পরে জামাল এসে জানাল যে ওরা উঠের বনিক। আমি বুকের মাঝে সাহস জুগিয়ে সবাইকে নিয়ে ওদের কাছে গেলাম। ওই দলের সর্দার আমাদের দেখে অবাক হয়ে প্রশ্ন করল আমরা কোথা থেকে এসেছি, কোথায় যাচ্ছি, এত রাতে ফাঁকা মরুভুমিতে কি করছি? আমি ওদের বললাম যে আগে একটু দুধ হবে? হামিদ আর আবিদাকে একটু দুধ খাওয়াতে পারলে বড় ভালো হয়। একজন আমাকে দুধ এনে দিল, আমি হামিদ আর আবিদাকে দুধ খাইয়ে শান্ত করলাম। তারপরে ওদের সব কথা খুলে বললাম। ওদের সর্দার আলি আল মুস্তাফা আমাকে জানাল যে ওরা সুলেমানিয়াহ যাবে, আমাদের সাথে নিয়ে যেতে ওদের আপত্তি নেই। আমাদের জন্য ওরা একটা তাবু ছেড়ে দিল। দুই দিন কঠিন হাঁটার ফলে, আমার শরীর ভেঙ্গে গিয়েছিল। বুকের কাছে হামিদ আর আবিদাকে জড়িয়ে ধরে উঠের চামড়ার বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে পড়লাম আমি।
জানিনা ঠিক কোন সময়ে তবে কাঁধে এক আলতো হাতের পরশ পেয়ে আমি জেগে উঠি। আমি প্রথমে ভাবলাম যে জামাল বাঁ মাজিদ হয়ত ঘুমের ঘোরে আমাকে ডাকছে, কিন্তু চোখ খুলে দেখতে পেলাম আল মুস্তাফাকে। আমি ওকে দেখে চমকে উঠে পড়লাম। মুস্তাফা আমার মুখের ওপরে হাত চেপে ইশারা করল তাবু থেকে বাইরে আসতে। আমি কোমরে হাত দিয়ে দেখে নিলাম যে ছুরিটা আছে কি না, যদি আমার শরীরের ওপরে চড়াও হয় তাহলে গলা কেটে নামিয়ে দিতে পিছপা হব না। আব্বু আম্মুর চোখের মনি নাস্রিন, কঠিন নাস্রিনে পরিনত হয়ে গেছে।
মুস্তাফা আমাকে বাইরে ডেকে বলে, “দেখ আমি তোমার ওপরে জোর করতে চাই না। আমরা সবাই অনেক দিন থেকে বাড়ির বাইরে, বুঝতেই পারছ যে নারীসঙ্গ হয়ে উঠতে পারেনি। একটু যদি আমার সাথে রাত কাটাও, তাহলে তোমাদের ভার আমি নিতে রাজি আছি।”
আমি তাঁবুর ভেতরে ভাই বোনেদের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম একবার। ক্লান্তি কেটে সবাই নিরাপদে ঘুমাচ্ছে, ওদের মুখের শান্তির ছায়া দেখে ভাবলাম যে এই শরীর যদি দিতে হয় তাহলেও আমি দিয়ে দেব। আমি চোখ বন্ধ করে আব্বুজান আর আম্মুজানের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলাম, “আব্বু ক্ষমা করে দাও, ওদের মুখ দেখে আমাকে এই দেহ বিক্রি করতে হবে।”
আমি মুস্তাফা কে বললাম, “দেখুন, সবার সাথে শুতে আমার একটু আপত্তি আছে।”
মুস্তাফা বলল, “না না, শুধু মাত্র আমার বাঁদি হয়ে থাক, আমি তোমাকে কোথা দিচ্ছি সে সুলেমানিয়াহ পর্যন্ত আমি তোমাকে নিরাপদে পৌঁছে দেব।”
আমি বললাম ঠিক আছে, আমি ওর তাবুতে যেতে রাজি। আমি হামিদের আর আবিদার কপালে চুমু খেয়ে চোখের জল মুছে মুস্তাফার তাবুতে চলে গেলাম। আমি সেদিন পর্যন্ত অক্ষতাযোনি ছিলাম, মুস্তাফার কামতৃষ্ণা নিবারন করার জন্য সতীত্ব বিসর্জন দিলাম। মুস্তাফা আমার নধর দেহ নিয়ে উলটে পালটে খেলে গেল সারা রাত, নিজের কাম তৃষ্ণা নিবারন করে নিল। আমি চুপ করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকা ভাই বোনেদের কথা ভেবে ওর সাথে রাত কাটিয়ে দিলাম। ফজরের আগেই নিজের তাঁবুতে ফিরে এসে, হামিদ আর আবিদাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লাম।
পরেরদিন সকালে ওরা আমাদের নিয়ে রওনা দিল সুলেমানিয়াহর দিকে। একটা উঠের পিঠে আমি হামিদ আর আবিদাকে নিয়ে উঠে পড়লাম, অন্য এক উঠের পিঠে জামাল আর মাজিদ। মাজিদ কিছুতেই আমাকে ছেড়ে যাবে না, আমি ওকে বুঝিয়ে বললাম যে একটা উঠ সবার ভার নিতে পারবে না, তাই অন্য উঠের পিঠে ওকে বসতে হবে।
প্রতি রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়ার পরে মুস্তাফা আমাকে ডেকে নিয়ে যেত ওর তাঁবুতে, ওর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হবার জন্য। আশায় বুক বেঁধে, মুখ বন্ধ করে সেই যাতনা সহ্য করে যাই। ভাই বোনেদের মুখে একটু খাবার আর জল ত দিতে পারছি। আমার দেহের দাম দিয়ে মুস্তাফা আমাদের সুলেমানিয়াহ পৌঁছে দেবে।
পর পর তিন দিন চলার পরে আমরা সুলেমানিয়াহ শহর পৌঁছে গেলাম। মুস্তাফা আমাকে বলল যে ওর জানাশুনা একজন বড় লোক উঠের ব্যাবসায়ি এই সহরে থাকে, তাঁর বাড়িতে আমি কাজ পেয়ে যেতে পারি, কিন্তু মুশকিল হচ্ছে হামিদ আর আবিদাকে নিয়ে। মুস্তাফা বলল যে আবিদা আর হামিদকে কোন অনাথালয়ে দিয়ে দিতে। জামাল আর মাজিদ কে মুস্তাফা অন্য কোন কাজে লাগিয়ে দিতে পারবে। আমি কোলের কাছে চেপে ধরা হামিদের মুখের দিকে তাকালাম, হামিদ জুলুজুলু চোখে আমার দিকে তাকিয়ে হাসে। সেই হাসি দেখে আমি মুস্তাফাকে জানিয়ে দিলাম যে, মুস্তাফা আমাদের জন্য অনেক করেছে, বাকি পথ আমি খুঁজে নেব, কিন্তু আমি কাউকে ফেলতে পারব না। মুস্তাফা আমাকে একটা হস্পিটালের সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল। যাবার আগে আমার হাতের মধ্যে একটা টাকার থলে ধরিয়ে দিল, বলল যে জীবনে অনেক মেয়ে দেখেছে মুস্তাফা কিন্তু আমার মতন কাউকে পায়নি।
সেই হসপিটালে আমার দেখা হল নার্স ভিভিয়ানের সাথে। ভিভিয়ান রেডক্রসের তরফ থেকে ওই হসপিটালে কাজ করতে এসেছে। আমাকে দেখে ভিভিয়ান জিজ্ঞেস করে যে আমি কোথা থেকে এসেছি। আমি ওকে সব কথা জানালাম। আমি জানালাম যে আমাদের গ্রাম, পাশের বেশ কয়েকটা গ্রাম উগ্রপন্থীরা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। সবাই কে মেরে ফেলেছে। আমার যাবার কোথাও জায়গা নেই। ভিভিয়ান আমাকে ওদের বাড়িতে নিয়ে গেল। অবশেষে আমি মাথার ওপরে একটা ছাদ খুঁজে পেলাম। ভিভিয়ানের বাড়ি ইংল্যান্ডের মারগেট সহরে। ভিভিয়ান রেডক্রসকে আর ইংল্যান্ডের দুতাবাসের সাথে কথা বলে আমাদের মারগেট নিয়ে যাবার ব্যাবস্থা করে। একমাস পরে আমি ভিভিয়ানের সাথে হামিদ আর আবিদাকে বুকে করে, জামাল আর মাজিদের হাত ধরে ইরাক ছেড়ে চিরতরে দূর সমুদ্র পারে পারি দিলাম। মারগেটে পৌঁছে ভিভিয়ান আমাকে পরাশুনার সাথে সাথে নার্সিং সেখাল। আমি বুরখা ছেড়ে এক অন্য নারী নাস্রিন হয়ে গেলাম।
আজ ছয় বছর পেরিয়ে গেছে, বুকের মাঝে আম্মুর কান্না আর আব্বুর কান্না বাজে। চোখ বন্ধ করলে দেখতে পাই আমাদের বাড়ি জ্বলছে, আব্বু, আম্মি আর নায়েলা চাচির দেহ পুড়ে ভস্মীভূত। হামিদ বড় হয়েছে, পাশের একটা স্কুলে পড়তে যায়, ও জানে আমি ওর আম্মু আর ওর আব্বু অনেক আগে মারা গেছে। আবিদা আর মাজিদ স্কুলে পড়ে, জামাল ডাক্তারি পড়া শুরু করেছে। ওদের মুখ দেখে আমি জীবনে আর শাদী করলাম না। হামিদ একটু বড় হলে আর জামাল ডাক্তারি পাশ করার পরে, আমি ফিরে যাব ইরাকে, আমাদের গ্রাম দ্বেলাহতে। আমি আবার দিয়ালা নদী দেখতে চাই, আবার সেই ফজরের আজানের সাথে জাগতে চাই।