What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected অতি চালাকের গলায় দড়ি (1 Viewer)

dukhopakhi

Global Moderator
Staff member
Global Mod
Joined
Mar 3, 2018
Threads
98
Messages
10,972
Credits
103,712
LittleRed Car
LittleRed Car
Camera photo
T-Shirt
Thermometer
Glasses sunglasses
"সংগৃহীত"

অতি চালাকের গলায় দড়ি
(সত্য ঘটনা – রম্য রচনা)

মূল লেখকঃ ডাঃ জনাব আফতাব হোসেন


যতদূর মনে পড়ে, তখন মেডিকেলে থার্ড ইয়ারে পড়ি। চুরাশি সালের কথা। ঢাকা মেডিকেলে পড়লেও কাপড়চোপড় তখনও খুলনা থেকেই কিনতাম। খুলনা নিউ মার্কেটে তখন তনু বাহার নামে একটা দোকান ছিল। ওজন করে কাট পিস কাপড় বিক্রি করত। আমি, সেলিম, ফারুক, সবাই সেই দোকান থেকেই ওজন দরে কাট পিস কিনে চিত্রালী ড্রেস কর্নারে রিন্টু ভাইকে দিয়ে প্যান্ট শার্ট বানাতাম। লুঙ্গী, গামছা, বিছানার চাদর, বালিশের ওয়ার ইত্যাদি আব্বাই কিনে দিতেন। সে হিসেবে আমার কাপড় কেনার অভিজ্ঞতা খুলনার তনু বাহার পর্যন্তই। একবার কি এক কাজে গুলিস্তান গিয়েছি। সম্ভবত স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে। খেলা শেষ হতে হতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়। স্টেডিয়াম থেকে সাধারণত হেটেই হোস্টেলে ফিরতাম। আর পকেটে খুচরা পয়সা থাকলে স্টেডিয়াম থেকে হেঁটে ফুলবাড়িয়া, সেখান থেকে গাবতলির বাসে চার আনা দিয়ে বকসী বাজার নামতাম।

যা বলছিলাম। স্টেডিয়ামের পশ্চিম গেট দিয়ে বেরিয়ে, রমনা ভবনের পাশের ফুটপাথ দিয়ে গুলিস্তান সিনেমা হলের দিকে যাচ্ছিলাম। অর্ধেক ডাক্তার হলেও আমার ভেতরের অতি চালাক ছেলেমানুষটি তখনও ছোটাছুটি করত। রাস্তায় দাঁড়িয়ে দোকানের ভেতরের সাজানো সম্ভারের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকা, কিংবা ফুটপাথে চলতে চলতে এটা সেটা ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখা আমার এক ধরনের মুদ্রা দোষ ছিল। সেদিনও ফুটপাথ জুড়ে হকাররা তাঁদের পসরা সাজিয়ে বসেছে। আমিও যেতে যেতে দাঁড়িয়ে পড়ে এটা সেটা ধরে ধরে দেখছি। দেখি এক হকার বাহারি রঙের সব বিছানার চাদর সাজিয়ে বসে আছে। আমিও মুদ্রা দোষে একটা চাদর একটু উলটে পালটে দেখি। দেখা শেষে যথারীতি সামনে যেই পা বাড়িয়েছি, অমনি শুনি,
- এই যে মিয়াবাই, হুনেন।
পিছন ফিরে দেখি সেই চাদরের হকার হাত ইশারায় ডাকছে আমাকে। একটু অবাক হবার ভান করতেই সে আবার বলে,
- হ, আপনেরেই কইতাছি। এই দিকে আহেন।

বছর তিরিশেক বয়স দোকানির। চোয়াল দুটো ভাঙ্গা। ভাঙ্গা চোয়ালে সপ্তাহ খানেক পুরনো থোক থোক দাড়ি। চোখদুটো গর্তে বসা। নেশা ভাঙ্গ করে কিনা কে জানে। একটু ভরকে গেলাম। গুলিস্তানের হকারদের নিয়ে নানা রকম গল্প শুনেছি। কখনও কেনা হয়নি কিছু ওদের কাছ থেকে। কেনার ইচ্ছেও নেই। তবু অনিচ্ছা স্বত্বে ফিরে এসে বলি,
- কিছু বলবেন?
- হ, এই যে চাদর দ্যাকলেন, কেমুন দ্যাকলেন?
- ভালো।
আনমনে বলে ফেলি। তখনও বুঝিনি, কি ফাঁদ পাতছে দোকানি। সে জিজ্ঞেস করে,
- তা জিনিষ পছন্দ হইছে নি?
আড় চোখে চাদরটা আবার দেখি। সাদা ক্যারোলিন জাতীয় কাপড়ের উপর টকটকে লাল গোলাপ ফুল। বেশ বড় বড়। আমার আবার লাল সাদা খুব পছন্দ। যদিও কিনব না, তবু সত্যি কথাটাই বলে ফেলি,
- হুম, পছন্দ হয়েছে।
- পছন্দ হইলে দাম জিগান।
এবার সতর্ক হয়ে যাই। দাম জিজ্ঞেস করে বিপদে পড়ব না তো? পকেটে বেশী টাকাও নেই। গলা নরম করে বলি,
- কিনব না ভাই।
- না কিনেন, অসুবিদা নাইক্কা। তয় দাম তো জিগাইবেন। আমার চাদরের একটা ইজ্জত আছে না?

চাদরের আবার ইজ্জত? বাপের জন্মেও শুনিনি। গলায় এবার একটু জোর এনে বলি,
- না কিনলেও দাম জিজ্ঞেস করতে হবে?
দোকানিও সুর বদলায়। এবার সে নরম গলায় বলে,
- মিয়াবাই, আপনে হইলেন গিয়া বওনির কাস্টোমার। দাম না জিগাইলে দোকানির কুফা লাগে। দাম না জিগাইয়া আপনে আমার খেতি করবেন?
বলে কী ব্যাটা? সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে। এখনও আমিই তাঁর বওনির কাস্টোমার? ভাবি, ব্যাটা আমার জন্য কোনো ফাঁদ পাতছে না তো? তবে শুধু দাম জিজ্ঞেস করে যদি পার পাওয়া যায়, ক্ষতি কী? আমাকে তো আর জোর করে কেনাতে পারবে না। বাধ্য হয়ে জিজ্ঞেস করি,
- তা, বলেন, দাম কত?
- একশো বিশ ট্যাকা।

যাক বাবা, বাঁচা গেলো। দাম তো জিজ্ঞেস করা হল। এবার পালাই। হাঁটা দিতেই দোকানি আবার শুনি,
- যাইতাছেন যে? একটা দাম কইবেন না?
এ তো ভারি ফ্যাসাদে পড়া গেলো! দাম বলতে হবে কেন? তাছাড়া চাদর কেনার মতো টাকা পকেটেও নেই। বাপ মোটে চারশো টাকা মাসে পাঠায়। মেস খরচ, নাস্তা টাস্তা করে যা বাঁচে, বিড়ি টিড়ি ফুঁকে উড়িয়ে দেই। মাস শেষে পকেট গড়ের মাঠ। আমার হল মাসে পাই, মাসে খাই, অবস্থা। মাসের শেষের দিক। পকেটে অবশ্য গোটা তিরিশেক টাকা আছে এখনও। কিন্তু তা দিয়ে তো আর এই চাদরের দাম হবে না। আবার সত্যি কথাটাই বলি,
- ভাই, অত টাকা পকেটে নাই। কিনতে পারব না।
- কিনোন লাগবো না মিয়াবাই। আমি একটা দাম কইছি। আপনেও একটা দাম কন। ব্যাস, খাল্লাছ। আমার জিনিষের দাম এক টাকা হইলেও তো হইবো। বিছমিল্লা বইলা যা মনে লয়, কইয়া ফালান মিয়াবাই।
এবার বেশ রাগ হয় আমার। ব্যাটা পাইছে কী? এটা কি মগে মুল্লুক নাকি? জোর করে দাম বলাবে? আমি সমর্থনের আশায় এদিক ওদিক তাকাই। দেখি আশেপাশের দোকানিরা মজা দেখছে আর মিটিমিটি হাসছে। বেশ কিছু পথচারীও জড় হয়েছে। যেন বিনে পয়সায় সার্কাস দেখছে। আর আমি যেন সেই সার্কাসের ক্লাউন! এমন অবস্থায় পড়িনি জীবনে। খুব অসহায় লাগে। হঠাৎ কান্না পায় আমার। এমন সময় বুকের ভেতর হতে আমার ছোটবেলার গুরু, আমার ছোট চাচা, বলে ওঠেন, - ব্যাডা ডরাও ক্যা? তুই বয়াতি বারির পোলা। কলিম বয়াতির বাইপো। এমন দাম কবি যে দোহান্দারে কইবে, ছাইর‍্যা দে মা কাইন্দা বাছি।

কলিম চাচার কথায় বুকে সাহস চলে আসে। তাইতো? ভয় পাবার কী আছে? মুখে আমার অতি চালাকের মিচকেল হাসি চলে আসে। ভাবি, কত বললে ব্যাটাকে উচিত শিক্ষা দেয়া যায়? শুনেছি, গুলিস্তানে যা দাম চায়, তার অর্ধেক বলতে হয়। আমি চার দিয়ে ভাগ করে ফেলি,
- ত্রিশ টাকা।
- এইটা একটা দাম কইলেন মিয়াবাই? এই দাম দিয়া তো একটা গামছাও হইবো না। তয় একটু সামনে যান। পাইলে পাইতেও পারেন। নাইবার ভি পারবেন, পিনবার ভি পারবেন, মগার চাইলে বিছাইবার ভি পারবেন।
বেশ বুঝতে পারছি, ব্যাটা আমাকে অপমানজনক কথা বলে দরাদরিতে নামাতে চাইছে। কিন্তু ততক্ষণে আমি সাবধান হয়ে গেছি। অপমান গায়ে না মেখে তাচ্ছিল্যের সুরে বলি,
- দিলে দেন, নাইলে নাই।
- এইটা কিমুন কতা মিয়াবাই? ফুটপাতে বসি বইল্যা আমাগো কি কুনো মান ইজ্জত নাই? যা মুখে আহে, তাই কইবেন?
মনে মনে বলি, এবার বোঝ ঠ্যালা। ব্যাটা ঘুঘু দেখেছিস, ঘুঘুর ফাঁদ দেখিসনি। আমিও বরিশাইল্যা পোলা। এবার তার ভাষায় বলি,
- দাম কইতে কইছেন, কইছি। না পোষাইলে দিয়েন না।
বলেই হাঁটা দিই। আবার পিছন হতে ডাক আসে,
- হুনেন মিয়াবাই। পরথম কাস্টোমার। কিছু বাড়াইয়া দিয়া লইয়া যান।
এবার মিনতি তার গলায়। মনটা কেমন করে ওঠে। সত্যিই কি আমি তার প্রথম কাস্টোমার? কিন্তু সাধ থাকলেও যে সাধ্য নেই আমার। পকেটে ত্রিশ টাকাই আছে। অসহায় ভাবে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলি,
- এরচে বেশী টাকা পকেটে নাই।
- আচ্ছা, দ্যান। আপনে ভি মনে রাখবেন। কি এক খান চিজ কিনছিলেন তিরিশ ট্যাকায়।

শুনে তাজ্জব বনে যাই। ঠিক শুনছি তো? একশ বিশ টাকার চাদর মাত্র ত্রিশ টাকায়? যদিও এর আগে আমি গামছা, চাদর কিছুই কিনিনি, তবে আমারও ধারণা, ত্রিশ টাকায় একটা ভালো গামছাও হবে না। হঠাৎ পেটের ভেতর এক পুলকিত ময়ূরী পেখম মেলে নাচা শুরু করে দেয়। বিছানার চাদর দুটো পুরনো হয়ে গেছে। এত অল্প টাকায় চাদর হয়ে যাবে, স্বপ্নেও ভাবিনি। মাসের বাকি ক'দিন বিড়ি ফোঁকা বন্ধ। দাম মিটিয়ে খুশির ঠ্যালায়, চাদরটিকে বগলদাবা করে, হেঁটেই হস্টেলে চলে আসি। একবারে মেসে খেয়ে তারপর রুমে।

রুমে ফিরেই এক টানে পুরনো চাদরটাকে টেনে নীচে ফেলে দেই। নতুন চাদরটিকে যত্নের সাথে পরিপাটি করে বিছাই। বহুদিন পর বিছানাটা আমার ঝলমলিয়ে ওঠে। দেখে রুমমেট আকরাম বলে,
- দুস্তো, সুন্দর চাদর তো, কত দিয়া কিনলা?
ত্রিশ টাকা বললে বয়াতি বংশের ইজ্জত থাকে না। বাড়িয়ে বলি,
- একশ।
- ভালো কিনছ। কই থেইকা কিনলা?
- গুলিস্তান।
- পরের বার গ্যালে আমার লাইগাও একটা আইনো।
- আচ্ছা।

ব্যাটা বেকুব, একশ টাকাই বিশ্বাস করছে। তার মানে আমি ঠকি নাই। এতক্ষণে শরীর জানান দেয়, অতদূর হেঁটে এসেছি। তারপর ভরপেট খেয়েছি। খুব টায়ার্ড লাগছে। এদিকে গোলাপ ছড়ানো বিছানা ডাকছে আমায়। পড়া বাদ দিয়ে সটান শুয়ে পড়ি। ক্যারোলিন কাপড়ের ঠাণ্ডা ছোঁয়া আমাকে নিমেষে ঘুমের দেশে নিয়ে যায়।

বেশ বেলা করে ঘুম ভাঙ্গে। ছুটির দিন। কলেজে যাবার তাড়া নেই। তাই কাল রাতে ঘোড়া বেঁচে ঘুমিয়েছি। উঠে দেখি আকরাম আমার দিকে তাকিয়ে খিক খিক করে হাসছে। সাত সকালে ওর ওই শিয়াল মার্কা হাসি দেখে মেজাজ বিগড়ে যায় আমার। বলি,
- ওই ব্যাটা, হাসোস ক্যান?
- কাইল রাইতে কোতাও গেছিলা নাকি?
- মানে?
- মানে, কারও লগে গুমাইতে টুমাইতে গেছিলা কিনা শুনতাছি।
- মানে কী?
- মানে একটু নীচের দিকে তাকাইলেই বুঝতে পারবা।

নীচের দিকে তাকাতেই আমার চোখ ভুতুম পেঁচা হয়ে যায়। গায়ের সাদা গেঞ্জিটা পুরা লাল। যেন কেউ আলতায় চুবিয়ে এনেছে। আরও নীচে সাদা চেক লুঙ্গীটার এখানে সেখানে ছোপ ছোপ লাল। যেন রক্ত লেগে আছে। এতক্ষণে ওর ঘিরিঙ্গি হাসির অর্থ বুঝতে পারি। বিছানায় তাকিয়ে দেখি, আমার সাধের বাসর সজ্জার গোলাপ পাপড়িগুলো কেউ যেন দলে, পিষে, লেপটে দিয়েছে। যেন কাল সারা রাত এই বিছানায় সুমো কুস্তি চলেছে। দৌড়ে বাথরুমে যাই। আয়নায় দেখি সমস্ত মুখ কারও আদরে আদরে লাল হয়ে আছে। হাতের অবস্থাও তথৈবচ। আমি হাসব না কাঁদব, বুঝতে পারি না।

রাগে, দুঃখে, একটা নতুন লাক্স সাবানের প্রায় পুরোটা ঘষে ঘষে মুখ, হাত, পায়ে, আমার অতি চালাকির দাগ তুলি। রুমে ফিরে প্রথমেই থেঁৎলে যাওয়া গোলাপ ফুলে ভরা শখের চাদরটা এক টানে তুলে সোজা বাইরে ফেলে দেই। আমার পুরনো মলিন চাদরটা তার জায়গায় ফিরে আসে। চেয়ারে বসে মাথায় হাত দিয়ে ভাবি, গেঞ্জি ত্রিশ টাকা, লুঙ্গী পঞ্চাশ টাকা, লাক্স সাবান দশ টাকা, আর দোকানিকে দিয়েছিলাম ত্রিশ টাকা, চাদরের দাম তো মোট একশ বিশ টাকাই পড়ল!

একেই বলে, অতি চালাকের গলায় দড়ি!

"সংগৃহীত"
 

Users who are viewing this thread

Back
Top