এস,এস,সি পরীক্ষা দেয়ার পর তখন হাতে অফুরন্ত অবসর হৈহুল্লোড় করে দিনগুলো বেশ আমোদেই কাটছে, দুচোখ ভরা স্বপ্ন ভালো রেজাল্ট নিয়ে পাশ করবো ভালো কলেজে এ্যাডমিশন হবে আরো কত কি। একদিন আম্মা বললো
-বাবু যা না রিমাকে দেখে আয়। কতদিন হলো মেয়েটা আসেনা আর আমরাও কেউ যেতে পারিনা। তোর তো এখন ছুটি কিছুদিনের জন্য রিমার ওখান থেকে ঘুরে আয়না বাবা। তোকে দেখলে অনেক খুশী হবে।
আমি আম্মার কথায় রাজী হয়ে গেলাম। রড়পাকে কতদিন হলো দেখিনা তা প্রায় বছর খানেক তো হবেই, টুনি এই এক বছরে না জানি আরো কত বড় হয়ে গেছে। শেষবার আপা যখন এসেছিল তখন টুনি সাত মাসের ছিল, কি সুন্দর নাদুসনুদুস দেখতে। আম্মাকে দেখলাম চোখ মুছতে মুছতে কিচেনের দিকে চলে গেলো, মেয়েকে আর নাতনীকে মিস করছে সেটাই স্বাভাবিক। আমরা তিন ভাইবোন, আপা বড় তারপরে আমি আর আমার ছোট সীমা ক্লাস এইটে পড়ে। আব্বা ব্যাংকে চাকরী করে, আম্মা পুরোদস্তুর গৃহিনী। আমি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি তখন আপা সবে এস,এস,সি পাশ করেছে এরইমধ্যে আমাদের এক দুঃসম্পর্কের ফুফুর মাধ্যমে আপার জন্য একটা বিয়ের প্রস্তাব এলো, দুলাভাই তখন একটা ঔষধ কোম্পানিতে ভালো জব করতেন দেখতে শুনতে স্মার্ট, বংশ ভালো, বাড়ীর অবস্হাও সচ্ছল তাই আব্বা আম্মা রাজী হয়ে গেলেন। সমস্যা শুধু একটাই ছিল তা হলো দুলাভাইয়ের বাড়ী সিলেটে। চট্রগ্রাম থেকে সিলেট যেতে ট্রেনেই সাত আট ঘন্টা লাগে তাই কিছুটা দোটানায় ছিলেন কিন্তু এতো ভালো সম্বন্ধ পেয়ে তারা আর অমত করলেন না। আপার বিয়ে হবার পর বছর খানেক ওরা চট্রগ্রামেই ছিল দুলাভাইয়ের চাকরীর সুত্রে তখন তো প্রায়ই আপা দুলাভাইকে নিয়ে বাসায় আসতো। দুলাভাই মানুষ হিসেবে অত্যন্ত চমৎকার সর্বদা হাসিখুশি মুখ, লম্বা চওড়া সুদর্শন মানুষ আমাদের খুব আদর করে উনার অমায়িক ব্যবহারে আমরা আমাদের আত্মীয় স্বজন সবাই মুগ্ধ। আপার বিয়ের বছর খানেক পরে দুলাভাইকে কোম্পানি থেকে ঢাকায় পোস্টিং দিল তখন তারা ঢাকায় চলে যেতে হলো। ঢাকায় যাবার পর আপারা মাস দুমাসে একবার হলেও আসতো আমরাও যেতাম মাঝেমধ্যে। সবকিছু ভালোই চলছিল তারমধ্যেই দুলাভাই মোটর সাইকেল এ্যাকসিডেন্ট করে হাসপাতালে ছিল অনেকদিন। একটা ট্রাক পেছন থেকে ধাক্কা মারায় উনি মোটর সাইকেল সহ খাদে পড়ে গিয়ে ডানপাটা মারাত্মকভাবে জখম হয়ে গিয়েছিল, মাথায়ও আঘাত লেগেছিল সিরিয়াস টাইপের তাই ট্রিটমেট চলাকালীন দেখা গেল উনার শরীরের ডানপাশটা প্রায় নিস্তেজ হয়ে গেছে অনেকটা প্যারালাইজড রোগীর মত, ডাক্তাররা বললো একটু সময় লাগবে ঠিক হতে কিন্তু দুলাভাইয়ের অবস্হা অপরিবর্তিত থাকলো সেজন্য চাকরীটা ছেড়ে দিয়ে আপারা সিলেটেই সেটেল হতে হলো। দুলাভাইরা মোটামুটি অবস্হা সম্পন্ন, সিলেট শহরে নিজের দোতলা বাড়ী তাছাড়া আপার শশুড়ের কয়েকটা দোকান ছিল সেখান থেকে যা ভাড়া পেতেন তাতেই বেশ স্বচ্ছন্দে উনাদের চলে যেত।
আপার বাড়ীতে আসার পর আমাকে দেখে তো তার সে কি খুশি কি করবে কি খাওয়াবে তাই নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলো। দুলাভাইয়ের সাথে কুশলাদি করতে দেখলাম কেমন শুকিয়ে গেছে, হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতে হয় তাই নিজের রুম থেকে খুব একটা বের হয়না।