আমের নগরীখ্যাত রাজশাহী বিভাগের চাপাইনবাবগঞ্জ জেলা আর তারই একটি উপজেলা নাচোল। "টিকইল" নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের একটি গ্রাম। উপজেলা সদর থেকে গ্রামটির দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। নাচোল-আমনুরা সড়কের নেজামপুর বাজার থেকে সোজা পূর্বে হাটবাকইল হয়ে যেতে হয় গ্রামটিতে।
একসময় প্রত্যন্ত হলেও এখন টিকইল গ্রামকে তা আর বলার সুযোগ নেই। পাকা রাস্তা হয়েছে, ঘরে ঘরে বিদ্যুতের সংযোগ রয়েছে। গ্রামটিতে ৮০-৯০টি পরিবারের বসবাস; যার বেশিরভাগই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। টিকইল গ্রামটি এখন 'আল্পনা' গ্রাম নামে পরিচিতি। বেশির ভাগ বাড়িতেই আল্পনার কারুকর্য চোখে পড়বে। গ্রামের আল্পনা দেখতে দেশের মানুষ ছাড়াও বিদেশীরাও আসছেন।
টিকইলের পরিচিতি যাকে কেন্দ্র করে তিনি ওই গ্রামেরই সামান্য একজন গৃহবধূ "দেখন বর্মন"; যার আল্পনার কথা দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে গেছে।
নেজামপুর ইউনিয়নের কামারজগদইল গ্রামের ভজনের মেয়ে দেখনের বিয়ে হয় টিকইল গ্রামের দাসু বর্মনের সাথে। বিয়ের পরপরই শ্বশুরবাড়িতে এসে শুরু হয় দেখন বর্মনের আল্পনা আঁকা। ৩৮ বছর ধরে তার পুরো মাটির বাড়িতে আল্পনা এঁকে আসছেন তিনি। সারা বছরই শোভা পায় তার আল্পনা। প্রত্যেক বছরই নতুন নতুন আল্পনায় সাজিয়ে তোলেন তার বাড়ি। প্রথম দিকে নির্দিষ্ট চিন্তাভাবনা নিয়ে আল্পনা আঁকলেও এখন আর তা নেই। মনের ভেতর আঁকা আল্পনা আঁকতে শুরু করেন মাটির দেয়ালে। আল্পনাতে স্থান পায় পশুপাখি, নদী, নৌকা, গাছপালা, ফুল, লতাপাতা, প্রভৃতি। আল্পনার রঙ হিসেবে ব্যবহার করেন গুঁড়া রঙকে। ব্যবহার করেন এক প্রকার আঠা। সংসারের কাজের ফাঁকে পুরো বাড়ি আল্পনাতে ভরিয়ে তুলতে প্রথম দিকে ৮-১৫ দিন সময় নিলেও এখন বয়সের কারণে ৫০-৬০ দিন সময় লেগে যায়। দেখন বর্মনের আল্পনার কাজে তার মেয়ে ছাড়াও বর্তমানে নাতনিরা সহযোগিতা করে। আর এ কাজে বরাবরই উৎসাহ যুগিয়ে এসেছেন স্বামী দাসু বর্মন।