What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

অচেনা এক মুক্তিযোদ্ধা (1 Viewer)

prinanad

Administrator
Staff member
Administrator
Joined
Mar 2, 2018
Threads
2,707
Messages
182,405
Credits
971,363
Television
School
অচেনা এক মুক্তিযোদ্ধা ......🌹🌹

২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭১। ব্রাসেল্‌স, বেলজিয়াম।
মিউজিয়াম অব ফাইন আর্টসে সেদিনই শুরু হয়েছে ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীর ডাচ শিল্পীদের চিরায়ত সব শিল্পকর্মের এক অনন্য প্রদর্শনী। রেমব্রান্ট থেকে ভারমিয়ার কার ছবি নেই সেখানে !
প্রদর্শনী উদ্বোধন করতে হাজির হয়েছেন ডাচ রাজকন্যা পামেলা, VIP দের ভীড়ে হল তখন জমজমাট ।
পরদিন গ্যালারি খোলার পর হতবাক হয়ে গেলেন জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। নেই, কোথাও নেই ভারমিয়ার-এর অনবদ্য শিল্পকর্ম 'দ্য লাভ লেটার।'
সপ্তদশ শতাব্দীর শিল্পী ভারমিয়ারের 'দ্য লাভ লেটার' নিয়ে আসা হয়েছিল আমস্টারডামের রাইখস মিউজিয়াম থেকে। ছবিটির মূল্য ওই সময়েই পাঁচ মিলিয়ন ডলার- ১৫ বাই ১৭ ইঞ্চির ক্যানভাসে আঁকা তেলরঙা ছবিটি শিল্পকর্মের এক অসাধারণ নিদর্শন ।
হইহই পড়ে গেল দেশজুড়ে। পুলিশ ও প্রশাসনের ঘুম উড়ে গেল খবর শুনে ।

ঘটনার এক সপ্তাহ পর পয়লা অক্টোবর রাতে হঠাৎ একটি ফোন এলো বেলজিয়ামের দৈনিক পত্রিকা 'লা সয়ের'-এ। ফোন ধরার পর পত্রিকা থেকে জানতে চাওয়া হলো, 'কে বলছেন?'
'আমি থিল ফন লিমবার্গ।'
রাতে, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রেসে যাবে পত্রিকা — তাই ব্যস্ত অফিস। এরই মধ্যে কেউ যদি ফোন করে 'থিল ফন লিমবার্গ', মানে ইংরেজিতে 'থিল অব লিমবার্গ' বলে তা হলে মেজাজ কার না খারাপ হয়! ফ্লেমিশ লোকগাথার রবিনহুড হিসাবে পরিচিত একটি চরিত্র হল থিল উইলেনস্পিজেল — এই থিলের প্রতিকৃতিই ব্যবহার করা হয় তাসের কার্ডে জোকার হিসাবে। লোকগাথা অনুযায়ী, মশকরা করতে করতেই থিল অন্যায়কারী-দুর্নীতিবাজদের মুখোশ খুলে ফেলতেন, ধনীদের সম্পদ নিয়ে আসেন গরিবদের জন্যে।

'থিল' পরিচয়ে সংবাদপত্র অফিসে সেদিন ফোন করেছিল চিত্রচোর। ফোন ধরেছিলেন সাংবাদিক ওয়াল্টার শুল্ডেন। তিনিই প্রথম জানতে পারেন, কেন চুরি করা হয়েছে 'দ্য লাভ লেটার।' শুল্ডেনকে ফোনে জানানো হয়, ২০০ মিলিয়ন ফ্রাঙ্ক বা চার মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ পেইন্টিংটি ফেরত পেতে পারে। তবে এর একটা ডলারও সে নিজে নেবে না। ওই দুশ মিলিয়ন ফ্রাঙ্ক পৌঁছে দিতে হবে ক্যাথলিক দাতব্য সংস্থা কারিতাসের কাছে — কারিতাস সেটি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করবে বাংলাদেশের মানুষের কাছে।

নিজের জন্যে নয়, পেইন্টিং চুরি করা হয়েছে অচেনা এক দেশের শরণার্থী মানুষের জন্যে, যে দেশের মানুষ যুদ্ধ করছে স্বাধীনতার জন্য, যে দেশের মানুষ পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর অত্যাচারে সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে । দিনের পর দিন টিভি আর রেডিওতে বাংলাদেশে যুদ্ধরত মানুষদের মরণপণ যুদ্ধগাথা আর ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেয়া উদ্বাস্তুদের অবর্ণনীয় কষ্টকর জীবনযাপনের কথা শুনে তার এই পদক্ষেপ ।

পরদিন 'থিল ফন লিমবার্গ' -এর দাবিগুলো নিয়ে এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপা হয় লা সয়ের-এ। পুরো বেলজিয়ামে তোলপাড় শুরু হয় ওই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পরে। এমনকি CNN প্রচার করে পেইন্টিং চুরি যাওয়ার সংবাদের নেপথ্য কাহিনী ।

এরই মধ্যে বেলজিয়াম রেডিও জানায়, তারাও একই ধরনের একটি টেলিফোন পেয়েছিলেন ক'দিন আগে। কিন্তু তা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি বলে পুলিশকে খবরটি জানিয়েই ক্ষান্তি দিয়েছেন। কয়েকদিন পর একই রকম ফোন আসে'হেট ফক' নামে একটি পত্রিকাতে; জানানো হয় ৬ই অক্টোবরের মধ্যে উদ্বাস্তুদের জন্যে অর্থ দেয়া না হলে পেইন্টিংটি নষ্ট করে ফেলা হবে। আরও বলা হয় কেবল অর্থ দিলেই হবে না, অর্থপ্রদান সংক্রান্ত চুক্তির অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করতে হবে টেলিভিশনে । জাদুঘর কর্তৃপক্ষ সরাসরি এ দাবী
প্রত্যাখ্যান করে জানান, এত অল্প সময়ের মধ্যে, বিশাল এই অর্থ দেয়া তাদের পক্ষে অসম্ভব।

কর্তৃপক্ষের এই অস্বীকৃতির খবর প্রচারিত হয় ৬ অক্টোবর সকালে বেলজিয়াম রেডিওতে, আর তা শুনেই শহরতলির এক পেট্রোল পাম্পে গিয়ে রেডিও স্টেশনে টেলিফোন করেন চোর বাবাজী । ওই সময় সেখানে চলছিল জনপ্রিয় অনুষ্ঠান 'টু বেড অর নট টু বেড'। অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সরাসরি দর্শকদের উদ্দেশ্যে কথা বলেন তিনি। সবাইকে জানান, তার এই পেইন্টিং নিয়ে আসার কারণ ও উদ্দেশ্য। এদিকে পেট্রোল পাম্পের অপারেটর কথা শুনে বুঝতে পারে, ফোনে কে, কোথায়, কোন উদ্দেশ্যে কথা বলছে। সঙ্গে সঙ্গে সে পুলিশে খবর দেয়। ধরা পড়ে যায় চোর, উদ্ধার হয় লাভ লেটার ।

'দ্য লাভ লেটার'-এর মুক্তিপণ পাওয়া না গেলেও এ ঘটনার সুবাদে যুদ্ধরত বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়ে ওঠে বেলজিয়ামে ও পার্শবর্তী দেশগুলিতে । বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন বাংলাদেশের শরণার্থী মানুষদের জন্যে সাহায্য পাঠাতে শুরু করে। এমনকি পোপও নাগরিকদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করার পক্ষে মুখ খোলেন।
সাধারণ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন চিত্রচোর যার বয়স তখন মাত্র ২১ বছর । মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এমন একটি কাজ করেছে দেখে তার পক্ষে রাস্তায় নেমে আসে সর্বস্তরের মানুষ। বিভিন্ন গণমাধ্যম পর্যন্ত তার নিঃশর্ত মুক্তির জন্যে প্রচারাভিযান চালায়।
আদালত তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিলেও পোপের হস্তক্ষেপে ছমাস পরেই ছাড়া পায় সে ।
অচেনা এক বেলজিয়ান তরুণ মারিও রয়ম্যান্স পাশ্চাত্য দুনিয়ায় হয়ে ওঠেন সত্যিকারের থিল অব লিমবার্গ।

কারাবাস থেকে বেরিয়ে কেমন যেন ছন্নছাড়া হয়ে গেছিল রয়ম্যান্সের জীবন, দেখা দিলো মানসিক রোগ । জীবন কেটেছে পথে পথে, পার্কিং করা কিংবা বাতিল হয়ে যাওয়া গাড়ির মধ্যে শুয়ে । এ রকমই এক গাড়ির মধ্যে থেকে ডিসেম্বরের এক শীতের রাতে উদ্ধার করা হয় মৃতপ্রায় রয়ম্যান্সকে। দিনদশেক পর ৫ জানুয়ারি ১৯৭৯ সালে কিছটা অভিমান নিয়েই দুনিয়া ছাড়েন একালের থিল । মৃত্যুর কারণ ?? অপুষ্টি ও অনাহার ।
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের মহান এক সুহৃদ যে পাশে থাকতে চেয়েছিল লাখো নিপীড়িত জনগণের , মৃত্যুর সময় ছিল অসহায় ও একা ......সম্পূর্ণ ভাবে একা ।
পরম শান্তিতে আজ শুয়ে আছেন জন্মস্থান টঙ্গারেন নেরেম-এর পুরনো কবরখানায় । 🌺🌺
 

Users who are viewing this thread

Back
Top