What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected গল্প নম্বর 6 (1 Viewer)

Nil328

Member
Joined
Sep 13, 2018
Threads
101
Messages
101
Credits
3,429
প্রতিদিন আমি যখন বাসায় ফিরি তখন আমাকে চাবি দিয়েই দরজা খুলতে হয় । কারন তৃষার বাসায় আসতে আসতে আমার থেকেও বেশ খানিকটা দেরি হয় । ওর অফিসে সেই আশুলিয়ার দিকে । আমার কাজ থাকে মগবাজার । কতবার বলেছি ওকে বাসা আরেকটু সরিয়ে নিয়ে যাই । এমন জায়গাতে নিয়ে যাই যেন ওর আসা যাওয়ার সুবিধা হয় কিন্তু কে শোনে কার কথা !

আমি কাজ শেষ করে একটু আগে আগে আসতে পারলেও ওর কোন দিনই দশটার আগে বাসায় আসতে পারে না । কিন্তু আজকে চাবি ঢুকিয়ে দরজা খুলতে গিয়েই টের পেলাম দরজা ভেতর থেকে বন্ধ । এর মাঝে হচ্ছে তৃষা আগেই চলে এসেছে বাসায় । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি এখনও নয়টাও ঠিক মত বাজে নি । একটু অবাক হলাম । সেই সাথে একটু ভয়ও জাগলো মনে । ওর কিছু সমস্যা হল না তো আবার ।

আমি দ্রুত কলিংবেল চাপলাম । একটু পরেই দরজা খুলে গল । তাকিয়ে দেখি তৃষা আমারই একটা টিশার্ট গায়ে দিয়েছে । এইকাজটা ও প্রায়ই করে । আমার টিশার্ট ও প্রায় সব সময়ই পরে । নিচে আর সাদা রংয়ের একটা লেগিংস পরা । ওর হাতের বড় কিচেন চামছ দেখেই বুঝতে পারলাম ও রান্না করছে ।

আমি খানিকটা অবাক হয়ে বলল

-তুমি কখন এলে ?

-এসেছি অনেক আগেই । আমার দিকে তাকিয়ে বলল ক্ষুধা পায় নি তোমার?

তৃষা খুব একটা রান্না করে না । ও খুব একটা খাওয়া দাওয়াও করে না । এক বেলা কোন মতে খাওয়াতে পারি ওকে জোর । বেশির ভাগ সময়ে ফল জুস খেয়ে কাটায় । ও হঠাৎ আজকে খাওয়ার কথা বলছে । ও নিশ্চয়ই রান্না ঘরে রান্না করছিলো । তার মানে কি আজকে কোন স্পেশাল দিন ?

আমি ভুলে গেছি ?

খাইছে আমারে ! আজকে আমার তাহলে খবরই আছে !

আমি চট করে মনে করার চেষ্টা করলাম । একবার মনে করলে অবশ্য বিপদ কারানো যাবো । কারন আমার স্টকে সব সময় গিফট হিসাবে চকলেট মজুত থাকে । তাই বিশেষ দিনটা কি সেটা মনে করতে পারলেই আমি বেঁচে যাবো !

আজকে কি ওর বার্ড ডে ?

নাহ । ওটা তো জানুয়ারিতে ।

আজকে আমাদের ম্যারেজ ডে ?

না তাও না !

আজকে আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল কিংবা কথা ?

নাহ । তাও না ।

তাহলে ড্যাড কিংবা মমের জন্ম দিন ?

-নাহ । সেটা হলে তারা আসতো এখানে ?

তাহলে কি এমন বিশেষ দিন যে তৃষা এতো আয়োজন করছে । তৃষা ছুটির দিন গুলোতে আমার জন্য প্রায়ই রান্না করে । ও বাইরের খাবার একদমই খায় না । তাই ছুটির দিনে আমরা বাসাতেই বিশেষ রান্নার আয়োজন করি । তাহলে আজকে কি ?

আমি কিছুতেই মনে করতে পারলাম না । আজকে আমার খবর আছে !

সত্যি সত্যিই খবর আছে !

ইয়া উপরওয়ালা আমাকে রক্ষা কর !

আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে তৃষা বলল

-কি হল দাড়িয়ে আছে কেন ? যাওয়া ফ্রেশ হয়ে এসো । আমি খাবার দিচ্ছি!

আমি ভিত মুখের ওয়াশরুমে গিয়ে হাজির হলাম । ওয়াশ রুমে থাকতে থাকতেই মাথায় একটা বুদ্ধি এল । কোন বিশেষ দিন সেটার কথা আমি মুখে আনবো না । এমন একটা ভাব করবো যে আমি সব জানি । তারপর ওকে চকলেট গিফট করবো । তৃষা চকলেট পছন্দ করে খুব । চকলেট পেয়ে ও খুশি হয়ে যাবে । আশা করা যায় আর কিছু জানতে চাইবে না । যে ভাবা সেই কাজ ।

ফ্রেশ হয়ে আমি চকলেট নিয়েই টেবিলে এলাম । ততক্ষণে খাবার দেওয়া হয়েছে । খাবারের মেনু দেখে আমি সত্যি সত্যিই অবাক হয়ে গেলাম । আমার পছন্দের কাচ্চি রান্না হয়েছে । এর মানে হচ্ছে আজকে তৃষার মন খুব বেশি ভাল । এবং সে আমাকে খুশি করতে চাচ্ছে । এমনিতে আমার তেল জাতীয় খাবার খাওয়া একদম নিষেধ ।

একবার বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে আমি পুরান ঢাকাতে কাচ্চি খেয়েছিলাম । আর সেই কথা কিভাবে যেন ওর কানে পৌছে গেল । ব্যাস আর কোথায় যাবো । প্রথমে সে কি চিৎকার চেঁচামিচি । রাতে শুতে গিয়ে দেখি ও চোখের জলে বালিশ ভিজিয়ে ফেলেছে । আমাকে জড়িয়ে ধরে তখন তার সে কি কান্না ! তার একই কথা যে আমি কেন আমার স্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ্য রাখি না । আমার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে সে কি নিয়ে থাকবে !

আমি কি বলবো খুজে পাই নি । আমার পুরো জীবনে আমাকে কেউ এতো তীব্র ভাবে কেউ ভালবাসে নি । আমি সেদিন থেকে প্রমিজ করেছি যে ওর পছন্দের বাইরে কোন খারাব খাবো না । অন্তত যে খাবার গুলো শরীরের জন্য ভাল নয় সেগুলো তো মতেই খাবো না । আজও সেই প্রমিজ রেখে চলেছি ।

আমি বসতে বসতে চকলেট টা ওর দিকে বাড়িয়ে দিলাম । ও আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু সময় তারপর বলল

-তো তুমি ভাবছো আজকে কোন বিশেষ দিন তাই এতো আয়োজন ?

কি বলবো খুজে পেলাম না । তৃষা বলল

-এটা তোমার স্টকেই রেখে যায় । বলা যায় আবার কবে কোন বিশেষ দিনের কথা ভুলে যাও । তখন কি হবে !

আমি এতো স হজে ধরা পড়ে যাবো ভাবি নি । বললাম

-আসলে ঠিক বুঝতে পারছি না । আজকে কি আসলেই কোন বিশেষ দিন ?

তৃষা হাসলো । তারপর বলল

-বিশেষ দিন তো অবশ্যই ।

-কি বিশেষ দিন ? আমি না সত্যিই মনে করতে পারছি না ।

তৃষা আমার দিকে তাকিয়ে বলল

-আজকে আমার মন ভাল খুব । কেন ভাল জানো ?

-কেন ?

-কারন তুমি ? তুমি আমার জীবনে এসেছো এই জন্য ভাল । এখন চুপচাপ খাওয়া শুরু করতো ।

-আহ বল না !

তৃষা কি যেন ভাবলো । তারপর বলল

-গত পরশুদিন কামাল ভাইয়ের বাসায় দাওয়াত ছিল, তাই না ?

কামাল ভাই আমার কলিগ । কালকে তাদের ম্যারেজডে ছিল । তাই সবাইকে অফিসের পরে দাওয়াত দিয়েছিলো । তৃষাকে বলেছিলাম তবে ও আসতে পারে নি । আমাকে একাই যেতে হয়েছে ।

আমি বললাম

-হ্যা ছিল ।

-কামাল ভাইয়ের স্ত্রী আমার কলেজ ফ্রেন্ড । ও তোমাকে চেনে । ও ফোন দিয়েছিলো । তুমি যে এখনও আমাকে করা প্রমিজটা রেখেই চলেছো এটা জানালো ।

আমি কাচ্চি মুখে তুললাম । একদম পার্ফেক্ট স্বাধ । ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ও আমার দিকে কেমন ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে আছে ।

কামাল ভাইয়ের দাওয়াতে অনেক এই রকম খাবার ছিল । সবই বাইরে থেকে এসেছিলো । আমি সেগুলোর কিচ্ছু খাই নি । অল্প কিছু ফল ফ্রুট খেয়েছিলাম । কামাল ভাই আমাকে অনেক অনুরোধ করেছিলো কিন্তু আমি শেষ পর্যন্ত সেগুলো কিছুই খাই নি । তৃষা সেটা জানতে পেরেছে । সেটা জেনে সে খুশি হয়েছে খুব । আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম

-তোমার সাথে আরও ১০০ বছর বেঁচে থাকতে হবে না !

-ইস ! ডং ! খাও তো চুপ করে !

আমাদের খুনশুটি গল্প এগিয়ে চলে খেতে খেতে । সেই শুরুর দিন গুলোর মতই ওর সাথে কথা এগিয়ে চলে । আরও এগিয়ে যাবো অনেক গুলো বছর।

মাঝে মাঝে মনে হয় এই মেয়েটার জন্যই আমার জন্ম হয়েছে । তৃষা ছাড়া সব কিছু একেবারে মূল্যহীন । আসলেই আমি ওর সাথে সর্বোচ্চ সময় ধরে, এক সাথে বেঁচে থাকতে চাই ।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top