বর্তমান বিশ্ব করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত। কিন্তু করোনাই কি প্রথম ভাইরাস যা মহামারী আকার ধারণ করে সারা বিশ্বে আতংক ছড়িয়েছে? না! পৃথিবীর ইতিহাস দেখলে এই রকম আরও অনেক ভাইরাস সম্পর্কে জানা যায়, যেগুলো করোনার মতোই ভয়ংকর ছিলো। আজ আমরা জানবো ৫টি মারাত্মক ভাইরাস সম্পর্কে যা কাঁপিয়ে দিয়েছিলো সমগ্র বিশ্বকে!
প্রথমেই আসুন বুঝে নেই- ভাইরাস কি?
ভাইরাস একটি ল্যাটিন শব্দ, যার অর্থ “বিষ”। এটি একপ্রকার অতিক্ষুদ্র জৈব কণা, যা অন্য জীবিত প্রাণীর শরীরে প্রবেশ করে বংশবৃদ্ধি করতে পারে। এরা ছোট যে খালি চোখে দেখা যায় না। শক্তিশালী অনুবীক্ষনিক যন্ত্র দিয়ে দেখতে হয়। মানুষ এবং উদ্ভিদের অনেক রোগের জন্য ভাইরাস দায়ী। বেশ কিছু ভাইরাস আছে, যাদের দমন করার মতো কোনো ওষুধ আজও আবিষ্কার হয়নি। আজ শোনাবো তেমনই কিছু ভাইরাসের কথা।
ইবোলা ভাইরাস
সব ঘাতক ভাইরাসের মধ্যে একদম উপরে আছে ইবোলা ভাইরাস। মারাত্মক এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মৃত্যুর হার ২৫ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশ। এই ভাইরাস প্রথম দেখা যায় ১৯৭৬ সালে। আফ্রিকার তিন দেশ- নাইজার, সুদান ও কঙ্গোতে ইবোলা ভাইরাসের আক্রমণ হয়। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে মারা গেছে ১৭,০০০ এর বেশি মানুষ। এখনও ইবোলা ভাইরাসের কোনো কার্যকর ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের রক্ত, লালা কিংবা শরীরের ক্ষতস্থানের মাধ্যমে অপরের শরীরে ভাইরাসটি সংক্রামিত হয়।
রেবিজ ভাইরাস
রেবিজ ভাইরাসের সংক্রমণে জলাতঙ্ক রোগ হয়। জলাতংক খুব ভয়ংকর এক রোগ। প্রতিবছর পৃথিবীতে জলাতঙ্কের আক্রমণে প্রাণ হারায় ৫৯ হাজার মানুষ। তবে রোবিস ভাইরাস সরাসরি মানুষের শরীরে আসতে পারে না। সাধারণত কুকুর, শেয়াল কিংবা হায়েনার জলাতংক রোগ হয়। এরা মানুষকে কামড় দিলে, মানুষের শরীরেও এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। যদিও জলাতংকের ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়েছে, কিন্তু সময়মতো ভ্যাকসিন দিতে না পারলে মৃত্যু ঠেকানো মুশকিল! তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে তীব্র খিঁচুনি ও প্যারালাইসিস হয়ে রোগীর মৃত্যু হয়।
ডেঙ্গু ভাইরাস
ডেংগু রোগের সাথে আমরা মোটামুটি সবাই বেশ পরিচিত। এডিস মশার কামড় দ্বারা এই রোগ হয়। এটি অন্যান্য ভাইরাসের চেয়ে কম বিপজ্জনক, কিন্তু সংক্রমণের দিক দিয়ে সংখ্যায় অনেক বেশি। প্রতিবছর বিশ্বে ৩৯ কোটি মানুষের ডেঙ্গু হয়। এর মধ্যে অন্তত ২৫ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। এই রোগ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা।
এইচআইভি ভাইরাস
বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর ভাইরাসটির নাম হচ্ছে এইচআইভি ভাইরাস। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মানুষের এইডস রোগ হয়। এইডস রোগের কোনো চিকিৎসা নেই, একবার হলে নিশ্চিত মৃত্যু। ১৯৮০ সালের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রে সর্বপ্রথম ৫ জন এইডস রোগী ধরা পড়ে। এরা সবাই ছিলো সমকামী। এরপর আস্তে আস্তে এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। এ পর্যন্ত সাড়ে সাত কোটি মানুষ এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ মানুষ এইচআইভিতে মারা গেছে। সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে অনিরাপদ যৌন সম্পর্কের ফলে এই রোগ হয়।
নভেল করোনাভাইরাস (Covid-19)
এবার আসি করোনাভাইরাস প্রসঙ্গে। পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রকার করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। তবে শুধুমাত্র নভেল করোনা ভাইরাসের আক্রমনেই মানুষের মৃত্যু হতে পারে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে চীনের উহান শহরে সর্বপ্রথম এই ভাইরাসটি চিহ্নিত হয়। ভাইরাসটি উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়ে চীনের সব জায়গায়। মাত্র ৬ মাসে ভাইরাসটি বিশ্বের সব স্থানে ছড়িয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত ৬ লক্ষের বেশি মানুষ মারা গেছে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষনগুলো খুব সাধারণ- জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি, গলাব্যাথা ইত্যাদি।
বন্ধুরা তোমরা সবাই সতর্ক থাকো। নিয়মিত হাত পরিস্কার করো, অপরিস্কার হাতে নাক ও মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকো এবং যতটা সম্ভব বাসায় থাকার চেষ্টা করো। নিজে সচেতন হও, অন্যকেও সচেতন হতে উৎসাহ দাও। মনে রাখবে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে করোনাভাইরাসকে প্রতিহত করতে।