এটি একটি চটি গল্প অবশ্য যেটুকু লেখা হয়েছে তাতে আমার নিজের ই সন্দেহ হচ্ছে একে চটি বলা যায় কিনা । এই গল্পের স্থান কাল পাত্র পাত্রি সব কাল্পনিক , বাস্তবের সাথে কোন মিল নেই । এখানে যারা বাংলা উপন্যাস পরেন তাদের কাছে মনে হতে পারে এখানকার কিছু কিছু চরিত্র আপনারা আগে কই যেন দেখেছেন , হ্যাঁ আমার এই গল্পের কিছু কিছু চরিত্রের মধ্যে একটি বিখ্যাত উপন্যাস এর কিছু চরিত্রের ছায়া আছে । সুধুই ছায়া অন্য কিছু নয় , সেই উপন্যাস আর লেখকের নাম আর উল্লেখ করলাম না । যারা পড়ে না বুঝবেন তারা তো বুঝবেন ই না আর যারা বুঝবেন তারা যেন আমাকে চোর না বলেন তাই বললাম । না হয় আমার এই বস্তা পচা গল্পের সাথে সেই মহান লেখকের সম্পর্ক কখনই করতাম না । পড়ে ভালো লাগলে লইকে কমেন্ট করবেন , পড়ার জন্য লইকে কমেন্ট করতে হবে না ।
প্রথম খণ্ড ঃ পর্ব ১
এই সোনা এই সোনা ডাক শুনে সোনা পেছনে ফিরে তাকাল । সোনা বলে তো সুধু ওর কাছের লোকেরা ওকে ডাকে তাই ও পিছনে ফিরে তাকাল । ওর নিজের বয়সী এক মেয়ে ওকে ডাকছে সাথে একটি যুবক ছেলে। সোনা কয়েক মুহূর্ত মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর চিনতে পারলো আর চিনতে পেরে ওর মুখে চওড়া হাসি ।
ওর কলেজ এর বন্ধু শিলা । অনেকদিন দেখা নেই খুব ভালো বন্ধু ছিল ওরা হঠাৎ হারিয়ে গিয়েছিলো শিলা । শিলা সোনার কাছে এগিয়ে আসলো । ঠিক আগের মতই আছে শিলা মুখে সব সময় হাসি লেগেই থাকে ।
আরে সোনা তুই দেখি একদম আগের মতই আছিস একদম চেঞ্জ হয়নি তোর ,
একজন আরেকজন কে জড়িয়ে ধরলো ,
তোর বুঝি খুব চেঞ্জ হয়েছে
হয়নি আবার কেমন মুটকি ধুমসি হয়ে গেছি । শিলা নিজের শরীর এর দিকে ইশারা করে বলল । তা একা এসেছিস নাকি , ওহ পরিচয় করিয়ে দেই এই হচ্ছে রানা আমার অফিস এর কলিগ ,
রানা হাই বলল সোনা ও রানা কে হাই বলল
হ্যাঁ একাই এসেছি জহির কে তো চিনিস কাজ ছাড়া কত দিন পর দেখা বলতো ,
শিলা একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেরে বলল তা প্রায় ৭ বছর তো হবেই , জীবন থেকে সাত তা বছর মনে হয় হারিয়ে গেলো । মাস খানেক হোল ফিরে এসেছি আবার এখনো গুছিয়ে উঠতে পারিনি ।
কি করছিস এখন তুই শিলা ।
কি আর করব চাকরি করছি , দেশ বিদেশ ঘুরে আবার এখনে চলে এলাম , পরিচিত জন বলতে তোর সাথে প্রথম দেখা হোল লিজা সান্তা রোকেয়া ওদের সাথে যোগাযোগ আছে তোর ,
লিজা আর সান্তার সাথে কথা হয় রোকেয়া তোর মতো হারিয়ে গেছে ।
দুজনে মিলে প্রায় ঘণ্টা দেরেক কথা বার্তা চলল , এর পর একজন আর একজনের ঠিকানা নিয়ে বিদায় নিল ।
সোনা সেদিন আর শপিং না করে বাসায় চলে এলো ।
সোনা চলে যেতেই , রানা বলল তোমার বান্ধবীটি তো দারুন মাল
শিলা ওকে কনুই দিয়ে গুঁতো দিয়ে বলল এক হপ্তা না যেতে যেতে আমি পুরনো হয়ে গেলাম
রানা হেঁসে বলল তুমি পুরনো হও নি ডার্লিং তুমি হলে গরম গরম পরটা আর ও হচ্ছে ধোওয়া ওঠা কাবাব দুটো একসাথে পেলে একেবারেই সোনায় শিলা ।
তোমার রুচি যে কি রানা কি সব উপমা দিচ্ছ কাবাব আর পরটা , দুজনেই হেঁসে উঠলো ।
কিন্তু জনাব তোমার কাবাব আর পরটা একসাথে খাওয়া কোন দিন হবে না ,
রানা এক হাতে শিলার কোমর বের দিয়ে কাছে টেনে বলল সে দেখা যাবে এখন না হয় বাসায় গিয়ে চিনি দিয়ে একটু পরটা খেয়ে নেই ।
সোনা ক্যাব থেকে নামার সাথে সাথে রতন সাহেব এর সাথে দেখা , রতন সাহেব সব সময় পান খান আর সাদা লুঙ্গি পড়ে থাকেন বিশাল ধনি বেক্তি । অবশ্য এই এপার্টমেন্ট বিল্ডিং এ যারাই ফ্ল্যাট কিনেছেন সবাই ধনী কিন্তু রতন সাহেব একটু বেশি । দেখা হলেই সোনার সাথে অনেক্ষন গল্প করেন ।
এই যে সোনালী ভাবি কেমুন আসেন , গেসিলেন কই মার্কেটে নাকি ।
জি ভাই একটু শপিং করে আসলাম , সোনা ছোট্ট উত্তর দিয়ে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলো , কিন্তু সম্ভব হল না ।
আরে ভাই যানগা নাকি , একটু খারান গপ সপ মারি , তা কোন মার্কেটে গেসিলেন , কি কিনলেন ।
সোনা মনে মনে প্রমাদ গুনল এই শুরু করলো রতন সাহেব , সেই প্রথম থেকে রতন সোনার বুকের দিকে তাকিয়ে কথা বলছে একবারের জন্য চোখ সরায় নি । রতন এর এরকম ব্যাবহারে সোনার মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয় লোকটাকে একাধারে অসহ্য লাগে আবার ওর প্রতি লোকটার যে আকর্ষণ তা ভালো ও লাগে ।
জি ভাই একটু ------ শপিং মলে গিয়েছিলাম টুকিটাকি কিছু কিনলাম আসলে সোনা আজ একটা খুব ছোট আর ট্রান্সপারেন্ট বেবি ডল কিনেছে আর দুটো সাড়ি । আজ একটি বিশেষ দিন ।
ভালো ভালো মাইয়া মানুষের সব সময় ফিট ফাট থাকন ভালা , এইজে আপনার ভাবি রে দেখেন আমার এত টাকা কিন্তু খরচ করতে পারেনা । আর আপনে কিমুন সবসময় ফিট ফাট থাকেন । দেখলেই পরান জুরায়া যায় ।
সোনা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো এরকম সরাসরি কথা আগে কখনো বলে নি রতন , দিন দিন লোকটার সাহস বেড়ে যাচ্ছে , সোনা কি কঠিন কোন কথা বলবে , নাহ থাক মনে মনে চিন্তা করলো এরকম কমপ্লিমেন্ট শুনতে ওর ভালই লাগে ।
তা ভাবি যখন কিনতে চায় না আপনি নিয়ে গিয়ে কিনে দিলেই তো পারেন , সোনা একটু হেঁসে বলল ।
কি যে কন না আপনে ভাবি আমার কি টাইম আসে নাকি সারা দিন দৌরের উপরে । আর কি কিন্না দিমু সইল টা কি বানাইসে দেখসেন , আপনের সমান বয়স লোকে দেখলে কইব আপনের মা হা হা হা
কি যে বলেন না ভাই ভাবি কিন্তু অনেক সুইট সোনা লজ্জিত হয়ে বলল
তা ভাবি আপনে কিন্তু সইল তা ভালো ফিট রাখসেন ,
এই নিয়ে আজকে দ্বিতীয় বার রতন সোনা কে সরাসরি এমন কথা বলল । সোনা মনে করলো আজকে এই পর্যন্ত যথেষ্ট আর বারতে দেয়া যাবে না ।
ভাই আজকে যাই আপনার ভাই এর জন্য রান্না বসাতে হবে ,
ওহ আপনের অনেক সময় নষ্ট করলাম আজকা তাইলে যান আর একদিন সময় কইরা আড্ডা দেয়া যাইব , বলে রতন শেষ বারের মতো সোনার বুক আর পেটে চোখ বুলিয়ে নিল ।
আসেন না একদিন বাসায় ভাবি কে নিয়ে , চা খাবেন আমি তো সারাদিন ঘরেই থাকি সোনা সামজিকতা রক্ষার জন্য বলল ,
আসমু তবে আপনার ভাবি কোন জায়গায় জাইতে চায়না , আমি একাই আসমুনে একদিন আপনার হাতের চা খাওয়ার লইগা ।
সোনা লিফট এর দিকে হাটা দিলো ও জানে রতন সাহেব এখনো ওর দিকে তাকিয়ে ওর হাটার তালে দুলতে থাকা পাছার দিকে তাকিয়ে আছে সোনার একবার ইচ্ছে হল পাছাটা আরে একটু বেশি করে নাড়ায় কিন্তু নিজেকে নিজে ধমক দিলো , দিনে দিনে তোর কি হচ্ছে সোনা তুই এত নিচে নেমে যাচ্ছিস , এই জংলী লম্পট লোকটাকে তুই পাছা নারিয়ে দেখাতে চাস ।
পুরো ফ্ল্যাট খালি ১৮৮০ স্কয়ার ফিট এর ফ্ল্যাট , থাকে মাত্র দুটি প্রাণী , জহির আর সোনালী । সকালে একজন কাজের মেয়ে আসে ফুলির মা। এসে ঘর পরিষ্কার করে কাপড় ধুয়ে দিয়ে যায় ।
বিয়ের প্রথম প্রথম এত বড় ঘর ছিল না ওদের , তখন জহির ছোট একটা চাকরি করে । তার উপর জহিরের পরিবারের পুরো দায়িত্ব জহিরের ঘারে । জহির নিজের ভাই বোন দের জন্য করতে করতে নিজের ভবিষ্যৎ কিছুই করেনি । বিয়ের আগে থাকতো একটা মেসে । সোনালীর সাথে জহিরের প্রথম দেখা হয় সোনালী দের বাসায় তখন সোনালী কলেজে পড়ে ১৯ এর উচ্ছল তরুণী । একদিন কলেজ থেকে ফিরে দেখে একজন ২৪ ২৫ এর যুবক বসে আছে ওদের বসার ঘরে । কমদামি পুরাতন জামা গায়ে । কিন্তু জামার সাথে মানুষটি একদম মানায় নি । দেখতে দারুন , একটু চিকন কিন্তু গায়ের রং দারুন ফর্সা । একটু কুঁজো হয়ে বসে আছে । সোনালীকে কে দেখে তেমন ভাবান্তর হল না । কয়েক মুহূর্ত শুন্য দৃষ্টি তে তাকিয়ে আবার নিচের দিকে তাকাল ।
ওই শুন্য দৃষ্টি মায়াবি চেহারা আর জহিরের অসহায় ভাব গভীর দাগ কেটে গেলো সোনালীর ভাবুক তরুণী মনে , মেয়ে দের ১৫ থেকে ২০ এই বয়সটা খুব খারাপ সময় , এদের মন তখন থাকে একেবারে নরম সামান্য ব্যাপার ও এদের মনে গভীর আচর কাটে । বিশেষ করে যে মেয়েরা সমাজের কঠিন বাস্তবতা থেকে দূর আদরে আহ্লাদে বড় হয় ।
সোনালী খোজ নিয়ে জানতে পারে এই ছেলের নাম জহির । সোনালীর ছোট ভাই তমাল এর প্রাইভেট টিউটর ।এর পর থেকে সোনালী নিজে যেচে গিয়ে জহির এর সাথে কথা বলত , তমালের পড়াশুনার খোজ নেওয়ার ছলে আবার কখনো নিজে পরা বুঝতে আসতো । কিন্তু সোনালী বুঝতে পারে এই ছেলে কোন দিন বুঝতে পারবে না যে একটি মেয়ে ওকে ভালবাসে তাই বার বার নানা ছলে কাছে আসার চেষ্টা করে ।
তাই সোনালী চিন্তা করলো ওকেই কিছু করতে হবে । একদিন করেই বসলো সেই রকম কিছু ,
অনেক কষ্ট করে তমালের কাছ থেকে জহিরের অফিস এর ঠিকানা যোগার করলো সোনালী , তারপর এক দুপুরে আকাশি রং এর সাড়ি পড়ে হাজির হল জহির এর অফিসে ।
জহির এর অফিসে ঢুকতেই , রিসেপসন এরিয়া সেখানে দুটি মেয়ে বসা । সোনালী তাদের ডেস্ক এর সামনে যেতেই একটি মেয়ে বলল আপনাকে কি ভাবে সাহায্য করতে পারি ,
আমি কি একটু জহির সাহেব এর সাথে দেখা করতে পারি
মেয়ে টি উত্তর দিলো আপনি কি কোন কাজের জন্য এসেছেন
সোনালী নিজের ভুল বুঝতে পারলো এরকম সেজে আসা ওর উচিত হয়নি , মেয়ে টি সন্দেহ করছে ও কোন কাজে আসে নি ।আর জহির নিশ্চয়ই বড় মাপের কোন অফিসার না যে হুট হাট ওর সাথে দেখা করা যাবে না ।
না আমি কোন কাজে আসি নি , আমি ওনার পরিচিত এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম ভাবলাম একটু দেখা করে যাই।
সরি ম্যাডাম আমাদের অফিসে কাজের সময় ভিজিটর এলাউ না । আপনি চাইলে লাঞ্চ এর সময় দেখা করতে পারেন ।
সেদিন সোনালী ১ ঘণ্টা ৩৩ মিনিট বসে ছিল রিসেপসনে , এই বসে থাকা জহিরের জন্য ওর মনে মমতা আরও গভীর করে তুলেছিল ।
সেদিন সোনালী জহির কে ওর মনের কথা বলেছিলও , জহির স্বভাব মতো চুপ করেই ছিল সুধু বলেছিল
আপনি কি পারবেন আমার মতো গরীব ঘরের সন্তান এর সাথে জীবন পার করতে ।
ওই সময় সোনালীর গরীব ধনী এসব ভাবার সময় ছিল না ।
পারবো আমি তুমি সুধু আমায় ভালবেসো , দু বছর প্রেমের পর বিয়ে করে ফেললো ওরা সোনালীর বাবা মা কোন ভাবেই মেনে নেয়নি ওদের এই বিয়ে ,।
বিয়ের কিছুদিন পর সোনালী বুঝতে পারে ওর প্রথম দিন করা ওই প্রতিশ্রুতি “ জহির কাছে থাকলে ও সবকিছু মানিয়ে চলতে পারবে তা কত বড় ভুল ছিল “ সোনা সোনা জানত যে জহির গরীব কিন্তু সুধু যে গরীব না সমাজের নিচু শ্রেণির থেকে উঠে আসা সেটা সোনা জানত না । জহিরের পরিবারের অন্য সদস্য দের যে সোনালীর এই ভদ্র সমাজে কিছুতেই মানায় না তা সোনালী ভুঝতে পারলো বিয়ের পর । এক রং মিস্ত্রি ওকে ভাবি ভাবি করছে আবার একটু আদি রসাক্তক মস্করা করতে চেষ্টা করছে । সোনালীর গা সেদিন গুলিয়ে উঠেছিল । বিয়ের পর জহির এর খরচ বেড়ে যায় বাড়িতে টাকা পাঠানো কমতে থাকে এতে জহিরের ভাই বোনেরা ক্ষেপে যায় । আস্তে আস্তে জহিরের সাথে ওদের সম্পর্ক কমতে থাকে , সবাই এর জন্য সোনালী কে দাই করে । কিন্তু এতে সোনালী মনে মনে খুশি হয় সপ্তায় সপ্তায় ওই বাড়িতে না যাওয়ার অজুহাত পেয়ে যায় সোনালী । কয়েক বছর আগে খবর পায়েছে জহির এর সবচেয়ে ছোট বোন নাচের দলে নাম লিখিয়েছে । তাও আবার ভদ্র নাচের দলে নয় একেবারে অশ্লীল নাচের দলে ।
জহির গরীব হলেও সোনালী জহিরের প্রতি ভালবাসা এক্তুও কমেনি সোনালীর । কিন্তু জহির যেন একটু একটু করে দূরে সড়ে যাচ্ছে । আস্তে আস্তে যেন সেই গভীর ভালবাসার নদিতে পলি পড়তে পড়তে ভরাট হয়ে যাচ্ছে । যখন থেকে জানতে পারলো ওদের সন্তান হওয়ার আর কোন সম্ভাবনা নেই তখন থেকে সোনালী আর জহিরের মধ্যে আরও দুরুত্ত তৈরি হল । এখন তো জহির তেমন কথাই বলে না ৯ টা ১০ টার আগে বাসায় ফিরে না । বাসায় ফিরে ডিনার করে কিছুক্ষন পরা সুনা করে সোনালীর সাথে টুক টাক কথা বলে শুয়ে থাকে । ওদের মাঝে সেক্স বলতেগেলে হয় ই না যা ও মাঝে মাঝে হয় বেশির ভাগ সময় সোনালীর ইচ্ছায় । সোনালী প্রথম প্রথম মনে করতো জহির এর অন্য কোন এফেয়ার আছে । পড়ে সে চিন্তা নিজেই বাদ দিয়ে দিয়েছে জহির এর পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব না । সোনালীর মাঝে মাঝে মনে হয় জহির ওকে কোনদিন ভালইবাসেনি । ওদের একপেশে ভালবাসা ছিল বা আদৌ কি ভালবাসা ছিল । নাকি যা ছিল টা একটা অসহায় গরীব সুন্দুর ছেলের প্রতি একটি ভাবুক তরুনির করুনা । সোনালী এখন আর ভেবে পায় না । তা সেটা যাই হোক ভালবাসা অথবা করুণা , সোনালীর মনে এখনো একটু রয়ে গেছে । তাই আজ ওদের ১১ তম বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে সোনালী জহির এর জন্য গিফট কিনতে গিয়েছিলো । সোনালী একটি ফিনফিনে কাপরের বেবি ডল কিনে এনেছে যার ঝুল ওর পাছার একটু নিচেই শেষ । আর কাপড় টা এত পাতলা যে ভেতরের সব দেখা যায় । সোনালী আজ এটা পড়ে জহিরের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করবে । এর চেয়ে ভালো কোন গিফট সোনালী আর ভেবে পায়নি । আজ সোনালী ভালো ভালো রান্না করেছে । এখন ও জহিররের জন্য অপেক্ষা করছে ।
বিশাল বড় বহুতল বিল্ডিং এর ১৭ তলায় একটি বিদেশি কোম্পানির অফিস সেই অফিস এর রিজনাল হেড জহির সাহেব এর কামড়া টা বিশাল সারে চারশো স্কয়ার ফুট কামড়া । বিশাল কাঠের টেবিল এর ওপাশে জহির বসে কাজে নিমগ্ন ,লোকটা কাজ পাগল । কাজ করার সময় অন্য দিকে খেয়াল থাকে না । অফিসে সবার আগে আসে সবার পড়ে বের হয় । স্যার সবাই চলে গেছে আপনি জাবেন না । পিওন এসে জিজ্ঞাস করলো ।
জহির কাজ থেকে মুখ তুলে বলল ওহ আব্দুল কটা বাজে এখন ,
স্যার ৯ টা বাজে ,
তাই নাকি অনেক দেরি হয়ে গেছে তুমি সব গোছ গাছ কর আমার আর মিনিট পনের সময় লাগবে ।
আব্দুল বির বির করতে করতে চলে গেলো , এই স্যার একটু পাগলা কিসিম এর । এর আগে যারা ছিল তারা আসতো সবার পর যেত সবার আগে ।
জহির কাজ শেষ করে বের হল নিচে ড্রাইভার গাড়ি তৈরি রেখেছে , এসি গাড়ি আর বেশ আরাম দায়ক , ভাঙ্গা রাস্তায় ও ঝাকি লাগে না । এই গাড়ি ফ্ল্যাট ওকে অফিস থেকে দিয়েছে । জহির ছোট থেকে এইসবে অভ্যস্ত নয় ।
গরীব ঘরের সন্তান জহির সহ ৩ ভাই ২ বোন , টানাটানির সংসার , সব সময় ঝামেলা লেগেই থাকতো । এমন কোন দিন নেই বাবা মার মধ্যে ঝগড়া হয়নি । ঘরের সবচেয়ে বড় সন্তান ছিল জহির , খুব ব্রিলিয়ান্ত ছাত্র ছিল জহির , পরিবারের এই কলহ বিবাদ থেকে নিজেকে দূরে রেখে নিজ চেষ্টায় একের পর এক ডিগ্রি লাভ করেছে , এখনো জহিরের একটি ঘটনা মনে পড়ে সবে ওর মেট্রিক এর রেজাল্ট বের হয়েছে । বোর্ডে ২য় । কিন্তু ওর বাবা ওকে কলেজে ভর্তি করাতে কিছুতেই রাজি নয় । জহির যখন ওর বাবার কাছে কলেজে ভর্তি হওার টাকা চাইলো । তখন ওর বাবা ওকে তেরে আসলো মারতে ।
চুদির পুত কলেজে ভর্তি হইবা কলেজে ভর্তি হইয়া কোন বাল ছিরবা , বাপ যে খাইত্তা মরতাসে সেইদিকে খেয়াল নাই ।
কি করেন কি করেন পোলারে মাইরা ফালাইবেন নাকি জহির এর মা দৌরে আসে ,
চোপ চুতমারানি একদম মাইরা ফালামু , পোলার লইগা দরদ আসে স্বামীর লইগা নাই , যা নতুন কোন ভাতার জুটাইয়া পোলার লেখা পড়ার টেকা যোগার কর ,
এই সব আপনে কি কইতাসেন পোলার সামনে , আপনের ই তো পোলা ।
জহির এর বাপ আরও রেগে গেলো , মাগি এইটা যে আমার পোলা তার প্রমান কি , আমার পোলা লেখা পড়ায় এমন ভালা হয় কেমনে ।
চুপ করেন আপনে আর আমারে লজ্জা দিয়েন না পোলাপান বড় হইসে ।
এই কথা শুনে জহিরের বাপ আর থাকতে পারলো না মাগি চোপা করস আমার লগে শুরু হল বেদম মার ।
জহির আর টিকতে না পেরে সেখান থেকে চলে গেলো ।
সারা দিন এদিক সেদিক ঘুরে অনেক রাত করে বাসায় ফিরল জহির , বাসায় ফিরতে ইচ্ছে করছিলো না কিন্তু ফিরতেই হল ।
বাড়িতে ঢুকে বাড়ির থমথমে আবহাওয়া টের পায় জহির , ওর ছোট ১ ভাই আর দুই বোন উঠানে বসে আছে , মা কে কোথাও দেখা যাচ্ছে না
জহির ওর ছোট ভাই তারেক এর কাছে গিয়ে বলল , মা কই রে তারেক আর মানিক কই ।
মার জর আইসে ভাইজান ঘরে শুইয়া আসে , আর মানিক ভাইজান বাবারে লাঠি দিয়া বাড়ি দিসে এর পর থেইকা পলায়া আসে কই জানি ।
ভাইজান আমার খিদা লাগসে জহির এর সবচেয়ে ছোট বোন রানু জহির কে বলল , রানু একদম খিদে সহ্য করতে পারে না , পারার কথা ও না ৪ বছরের শিশু সারাদিন কিছু খায়নি ।
তোরা বস আমি কিছু নিয়া আসি ।
এমন সময় জহির এর বাপ ঢুকল উঠানে পুরো মাতাল ওরা সবাই ভয়ে জড়সড় হয়ে গেলো । কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে জহির এর বাবা কাওকে কিছু না বলে একাটা ব্যাগ এগিয়ে দিলো ব্যাগের ভেতর পাউরুতি আর কলা জহির এর সব ভাই বোনেরা খেতে শুরু করলো এরা খাবার পেয়ে খুশি এদের অন্য দিকে খেয়াল নেই ।
জহির আমার লগে একটু আয় তো , বলে জহির এর বাপ কলতলার দিকে চলে গেলো ,
জহির অবাক হয়ে ওর বাবার পিছন পিছন গেলো , কল তলায়
জহির এর বাবা জহির এর হাতে কিছু টাকা গুজে দিলো , আর বলল পারলে এই বাপেরে মাপ কইরা দিস আর যদি জিবনে বড় কোন চাকরি পাস তাইলে ছোট ভাই বইন গুলারে দেখিস , এই কথা গুলো বলেই জহিরের বাবা টলতে টলতে চলে গেলো । অনেক রাতে মানিক ফিরে এলো আবার সব স্বাভাবিক হয়ে গেলো ।
জহির আজ অনেক বড় চাকরি পেয়েছে কিন্তু ও ওর বাবার কথা রাখতে পারে নি , একটা সময় পর্যন্ত জহির নিজের ভাই বোনদের দেখে রেখেছে কিন্তু আসতে আসতে জহির ওদের কাছ থেকে দূরে সড়ে এসেছে ।
স্যার আইসা পরসি , ড্রাইভার এর কথায় জহির এর ধ্যান ভাঙ্গে ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখে ৯ টা ৩৫ এই ৩৫ মিনিট জহির অতিতে ডুবে ছিল।
জহির কলিং বেল টিপতেই সোনালী দরজা খুলে দিলো । পরিপাটি করে নতুন সাড়ি পরেছে সোনালী মনে হয় একটু আগে গোসল ও করেছে, হাল্কা সাজগোজ করেছে চোখে কাজল হাল্কা লিপিস্তিক , কপালে টিপ , অন্য যে কোন পুরুষ হলে সোনালীর উপর থেকে চোখ সরাতেই পারত না , কিন্তু জহির একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিল ।
আজ সারাদিন খুব খাটুনী গিয়েছে , তোমার দিন কেমন কাটল ,
আমার দিন ভালই গিয়েছে খাবার পর তোমাকে একটা জিনিস দেখাবো ,
আচ্ছা সে দেখা যাবে আগে খাবার দাও অনেক খিদে পেয়েছে ।
তুমি ফ্রেশ হয়ে এস আমি খাবার দিচ্ছি ,
খাবার টেবিলে বসে জহির একটু অবাক হল আজ সব বাঙালী গ্রাম্য খাবার , আর জহিরের পছন্দের , জহির মনে মনে খুশি হল কিন্তু মুখে কিছু বলল না , জহির প্রসংসা করতে পারে না ।
সোনালী জহিরকে বেড়ে বেড়ে দিচ্ছে নাও না পাট শাঁক আর একটু ,
না না অনেক তো নিলাম আর খেতে পারবো না ,
কেন ভালো হয়নি
ভালো হয়েছে তবে তেল একটু কম হয়েছে ,
অন্য সময় হলে সোনালী ক্ষেপে যেত আজ খেপল না জহির এই সোম গ্রাম্য বাঙালী খাবার পছন্দ করে বলে সোনালী অনেক কষ্টে বই দেখে দেখে রান্না করেছে ওর মন টা ভেঙ্গে গেলো । তবুও চেপে গেলো আজকের রাত মাটি করতে চায় না ।
খাবার পর জহির বিছানায় একটা ম্যাগাজিন নিয়ে আধশোয়া হয়ে পড়তে লাগলো আর সোনালী ড্রেসিং রুমে চলে গেলো সাজগোছ এর জন্য , সোনালীর একটু মন খারাপ হয়েছে জহিরের আজ বিবাহ বার্ষিকীর কথা মনে নেই । কিন্তু সোনালী এটা নিয়ে উচ্চ বাচ্য না করার সিধান্ত নিয়েছে , ভাঙ্গা সম্পর্ক জোরা লাগানর জন্য সোনালী যে কোন কিছু করতে রাজি ,
সোনালী যখন লাল বেবি ডল পড়ে ঠোঁটে লাল রং এর লিপস্তিক দিয়ে চুল গুলো এলো করে ডান পায়ে স্বর্ণের পায়েল পড়ে বিছানার সামনে এসে দাঁড়ালো তখন জহির নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে ।
চরম অপমানিত বোধ করলো সোনালী যে চিকন সুতয় ওদের সম্পক টা ঝুলছিল আজ যেন তাও ছিরে গেলো । সোনালী কাপড় চেঞ্জ করে সারা রাত বেড রুমের সিঙ্গেল সোফায় বসে কাঁটালো ।