What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

অন্যভাবে শুরু (1 Viewer)

newsaimon80

Member
Joined
Mar 31, 2019
Threads
2
Messages
182
Credits
2,490
০১।​
অনেক সময় অনেক কিছু নতুন ভাবে শুরু হয়। তখন অনেক কিছুই আর আগের মত থাকে না। আজকের এই গল্প এমন নতুন শুরু হওয়া এক সম্পর্কের। বন্ধুরা সবাই পড়াশুনা শেষ করে তখন চাকরি বাকরিতে ঢুকে গেছে। কেউ সরকারি আর কেউ বেসরকারী। তখনো বিসিএসের এত দাপট শুরু হয় নাই। ব্যাংক আর কর্পোরেটে ঝোক বেশি ছেলেমেয়েদের। আমিও এমবিএ শেষ করে কয়েকদিন এক এড ফার্মে ছিলাম। এক বছর চাকরির পর আর ভাল লাগল না। ছেড়ে দিলাম। ভাবলাম বিসিএস দিই, সরকারি চাকরি করি। এত মুখস্ত বিদ্যা আর লম্বা সময় অপেক্ষার ধাক্কায় আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম এখানেও। হতাশ হয়ে কিছুদিন বসে ছিলাম। বাসায় সবাই বলতে বলতে একসময় আগ্রহ হারিয়ে ফেলল। এই সময় হঠাত করে বিজনেসের বুদ্ধি আসল। অন্যের চাকরি না করে নিজের চাকরি।​
ইসলামপুর থেকে কাপড় নিয়ে সেটা দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাপ্লাই দেওয়া। এটা ছিল শুরু। মেসে থাকতাম খরচ বাচানোর জন্য পুরান ঢাকায়। এর পাশে এক হোটলে পাইকারি কাপড় কিনতে আসা লোকজন থাকত রাতে। সামনের দোকানে নাস্তা খেতে আসত সবাই। আস্তে আস্তে দুই একজনের সাথে পরিচয় হল। এই ব্যাবসার মূল মুলধন হল সুনাম। বাকিতে চলে, পরে টাকা শোধ হয়। আস্তে আস্তে আমি দুই একজনের সাথে ইসলামপুরের দোকানগুলোতে যাওয়া শুরু করলাম। অনেকে বারবার ঢাকায় আসার কষ্ট নিতে চায় না। আমি মাঝখানে জিনিস ঠিক করে দিই। মেসেঞ্জারের কাপড়ের ছবি পাঠাই, মাল বুক করে বাসে, লঞ্চে তুলে দেই। মাঝখানে দোকানদারদের ঢাকা আসার পরিশ্রম আর খরচ বাচে। এটাই আমার পারিশ্রমিক। শুরুতে তেমন লাভ নেই। দুইটা টিউশনি করতাম আর মাঝখানে এটা। বন্ধুরা যখন ব্যাংকার, বিসিএস অফিসার তখনো আমি এইসব ছুটকা কাজ করি তবে এটাই ছিল আমার অন্য শুরুর প্রথম ধাপ।​

একটু করে পরিচিতি বাড়োতে লাগল। টাকা আসতে শুরু করল। তেমন কিছু না। তবে টিউশনি ছেড়ে দিতে পারলাম। পরিচিত কাউকে অবশ্য কিছু বললাম না। সবার কাছে আমি তখনো বেকার। বাসায় আমার উপর বিরক্ত হয়ে কিছু বলা বন্ধ করে দিয়েছে আগেই। অনেকদিন বাড়ি যাওয়া হয় না তাই। ভার্সিটির বন্ধুদের সাথেও আলাপ হালকা হয়ে গেল। সংগ্রামের এই সময়টা আসলে অন্যরকম। কেউ বুঝতে চায় না, অনেকে বুঝতে পারে না। আমিও কিছু বলি না। আবার অনেকে স্ট্যাটাসে এগিয়ে যায় বলে নিজেরাই এড়িয়ে যায়। শুরুতে এসব গায়ে লাগলেও এখন ভাবা ছেড়ে দিয়েছি। মন দিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছি। পুজি নেই এই ব্যবসার, সুনাম মূলধন। তাই সময় মত সব কিছু করা আর কথা রাখাটা খুব গূরুত্বপূর্ণ। ডেটলাইন মিস করা যাবে না। ভাল ভাবে কাজ করলে এক কাস্টমারের লিংকে নতুন কাস্টমার আসে। এভাবেই ব্যবসা বাড়তে শুরু করল। আমি অবশ্য এখনো আগের সেই মেসে থাকি। কারণ এখানে ঐ হোটেলের জন্য ইসলামপুরে কাপড় কিনতে আসা অনেকের সাথে দেখা হয় কথা হয়, নতুন কাস্টমার পাওয়া যায়। এটা বলা যায় আমার ব্যবসার চেম্বার। একটা বাইক কিনে ফেললাম। পুরান অবশ্য। পঞ্চাশ হাজার নিল। তবে ঢাকার রাস্তায় সময় আর টাকা বাচাতে এটা ভাল। এই মটরসাইকেল চালাতে গিয়ে অনেকদিন পর দেখা হয়ে গেল সাদিয়া আপার সাথে।
 
০২

অনেকদিন পর ক্যাম্পাসে গেলাম। আসলে আজকে আর ব্যবসার কাজ করতে ইচ্ছে করছিল না। জহির কে ফোন দিলাম। জহির একটা প্রাইভেট ফার্মে আছে। বলল সাতটার দিকে ক্যাম্পাসে আসবে। আমি একটু আগে আগে রওনা হয়ে গেলাম। বেশ কয়েক মাস ক্যাম্পাসে যাওয়া হয় না তাই আজকে একটু আগে আগে রওনা হয়ে গেলাম। জহির আসার আগে একটু চারপাশে হেটে দেখব। যদি পুরান কারো সাথে দেখা হয়ে যায় তাহয় একটু গল্প করে নেওয়া যাবে। আসলে ব্যবসটা একটু একটু দাড়ানোয় এখন কিছুটা নির্ভার লাগছে আগের তুলনায়। চাকরি বাকরির ট্রেডিশনাল লাইন ছেড়ে এই ব্যবসা যার আবার তেমন কোন স্বীকৃতি নেই সেটা করাতে একধরনের সংশয় ছিল। এখন এই সংশয় কেটে গেছে। তাই নির্ভার। মনে হচ্ছে আবার ক্যাম্পাসের এসে ছুটীর দিনে আড্ডা দেওয়া যায়। মাঝখানে কি করি কাউকে এর উত্তরে বলতাম বেকার। এখন আর তা বলব না, বলব ব্যবসা করি। কাপড়ের ব্যবসা।

চাংখারপুল দিয়ে ঢুকে মেডিকেলের পাশ দিয়ে ভিসি চত্বর ঘুরে লাইব্রেরির সামনে একটা ঢু মারলাম। কাউকে দেখলাম না। অবশ্য পাচ বছর হয়ে গেছে পাশ করে বের হওয়ার তাই পরিচিত কাউকে এই সময় ক্যাম্পাসে পাওয়া কঠিন। মটরসাইকেলটা আইবিএর ভিতর রেখে হেটে শাহবাগের দিকে গেলাম। পাবলিক লাইব্রেরির সামনে একটা ছোট বইমেলা চলছে। হেমন্তের বইমেলা। বেশ কয়েকটা প্রকাশনী স্টল দিয়েছে। কাজের চাপে শেষ নয় দশ মাস কোন বই ধরে দেখা হয় নি। আসলে পাগলের মত কাজ করেছি এই কয় মাস। বিনোদন বলতে ছিল মাঝে কয়েকদিন পর ফেসবুকে ঢুকে মানুষের কাজকর্ম দেখা। তাই আজকে একটু আড্ডা দিব আর ক্যাম্পাস ঘুরে দেখব। হেমন্তের বইমেলা দেখে মন ভাল হয়ে গেল। কর্পোরেটে ব্যস্ততার জন্য নিজের জন্য সময় থাকত না, বই পড়ার সময় পাওয়াই যেত না। তখন চাকরি ছাড়ার সময় এটা একটা কারণ ছিল। আর এখন ব্যবসা দাড় করাতে গিয়েও সময় নেই হাতে। তবে আশা করি এখন থেকে একটু একটু করে সময় বের করে আবার বই পড়া শুরু করা যাবে। স্টল গুলোতে ঘুরে ঘুরে বই দেখতে শুরু করলাম। এক স্টলে এসে বই দেখতে দেখতে পাশের এক জনের দিকে চোখ গেল।


সবুজ শাড়িতে দারুণ লাগছে। চুল গুলো গালের এক পাশে পড়ে আছে আর আনমনে উনি বই পড়ছেন। চোখে চশমা। দেখে চোখ আটকে গেল। বই পাতা উল্টাতে উল্টাতে আস্তে আস্তে আড় চোখে তাকাতে থাকলাম। কেন জানি চেনা চেনা মনে হচ্ছিল। কিছুক্ষণ মনে করার চেষ্টা করে বাদ দিলাম। দেখতে ভাল লাগছে তাই এত কিছু না ভেবে একটু দূর থেকে আড় চোখে তাকিয়ে থাকলাম। শেষ বিকেলে যদিও রোদ কমে এসেছে তাও কেমন জানি একটা গুমট ভাব, ভ্যাপসা গরম। কপালের উপর ঘামের রেখা, হাত দিয়ে চুল সরানোর ফাকে বগলের ফাকে ভিজে ব্লাউজের অস্তিত্ব। একটু দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখতে দেখতে যেন মোহে পড়ে গেলাম। উনি এর মাঝে মনোযোগের সাথে বই পড়ে যাচ্ছেন। একটু সরে দাড়াতেই শাড়ির ফাকে পেটের অস্তিত্ব দেখা গেল, সামান্য একটু মেদ জুড়ে যেন সৌন্দর্য আর বাড়িয়ে দিয়েছে। হঠাত করে মনে হল শরীরে রক্ত প্রবাহ বেড়ে গেছে। মনে হল, অনেকদিন কিছু দেখা হয় না, করা হয় না তাই এই দেখে শরীরে রক্ত প্রবাহ বেড়ে গেছে। হঠাত করে খেয়াল হল মেয়েটাও আমার দিকে তাকাচ্ছে। ধরা পড়ার ভয়ে চোখ বইয়ে সরিয়ে নিলাম। আড় চোখে আবার তাকাতে দেখি আমার দিকে তাকিয়ে কিছু মনে করার চেষ্টা করছে। আবার বইয়ের দিকে নজর দিতেই মনে হল আমার কাছে এগিয়ে আসছে। আমি অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম। এইবার তাকাতেই দেখি বলছে, তুই শফিক না?
 

Users who are viewing this thread

Back
Top