-আরেকটু দেবো !
-না না আন্টি আর লাগবে না ।
-কেন রান্না ভাল হয় নি ?
-কি যে বলেন আন্টি ! রান্না খুব ভাল হয়েছে । আজকে যথেষ্ট খেয়েছি ! আর খাওয়ার উপায় নেই ।
-আরেকটু নাও !
আবীরের অবস্থা দেখে মিতুর হাসি পেয়ে গেল । সে হাসি ঠেকানোর চেষ্টা করলো না । বরং ফিক করে হেসে দিল ।
আবীর ওর দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনি হাসছেন ?
-হাসবো না তো কি করবো ? আম্মুর জীবনের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে মানুষকে ধরে ধরে তার রান্না করে খাওয়ানো । কিন্তু আমি আর আব্বু কেউ এতো খাদক নয় । তাই যাকেই পায় তাকেই খাওয়াতে লেগে যায় ।
মিতুর আম্মু বলল
-তুই চুপ থাকতো । ছেলেটাকে একটু খেতে দে !
মিতুর বাবা চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছিলো । এক সময়ে আবীরকে বলল
-তা বললে যে তুমি এই এলাকাতেই থাকো ?
-জি আঙ্কেল ! এই তো আপনাদের পাশের হাউজিং এ ।
-মিতুর সাথে চাকরি করছো কতদিন ?
-বেশি দিন হয় নি এই ব্যাংকে জয়েন করেছি । আগে প্রাইম ব্যাংকে জব করতাম । সেখান থেকে এখানে এসেছি ।
-ভাল ভাল । তা তোমার বাবা কি করে ?
-উনি এখন কিছু করে না । আগে সরকারি চাকরী করতেন । আম্মু এখনও কলেজের শিক্ষকতা করেন ।
-তুমি কি একাই ?
-এক বড় বোন আছে । আমাদের সাথে থাকে না । এখন আমি বাবা মাকে নিয়ে এখানে থাকি ।
মিতুর কেন জানি ওর বাবার এই প্রশ্ন উত্তর শুনতে বেশ ভাল লাগছিলো । কেন লাগছিলো সেটা ও বলতে পারবে না । সেদিনের পর থেকে আবীর নামের মানুষটা যেন হঠাৎ করেই ওর কাছের মানুষ হয়ে গেছে । ঐদিন বাসায় পৌছে দেওয়ার পরে মিতুর মনে ঘুরে ফিরে কেবল আবীরের কথায় আচ্ছে ।
পরদিন অফিস গিয়েই প্রথমে মিতু আবীরের সাথে দেখা করেছিলো । তারপর সেদিনের লাঞ্চটাও করেছিলো এক সাথে । দুর থেকে আবীরকে যতখানি গম্ভীর মনে হয়েছিলো কাছ থকে দেখলে সেটা মোটেই মনে হয় না । বরং মিতুর মনে হচ্ছে আবীর খুবই চমৎকার একজন মানুষ । কেবল সঠিক মানুষটা খুজে পেলেই সে নিজেকে তার সামনে তুলে ধরে !
সেদিনের পর প্রায় প্রতিদিনই ও অফিসের পর আবীরের সাথে এসেছে । মাঝের একদিনে ওর সাথে গিয়েছিলো বেঙ্গল বইয়ে । সময় গুলো কেমন চট করে চলে যাচ্ছে । আজকে শুক্রবার আবীরকে ওদের বাসায় ডেকেছে খাওয়ার জন্য । সেদিনের ঘটনার পর থেকে ওর বাবাই ওকে আসতে বলেছিলো ।
আবীর বলল
-আঙ্কেল মিতুর ঐ ব্যাপারে কিছু করেছেন কি ? মিতু বলছিলো যে ওর আগেও মনে হয়েছে যে কেউ ওর পিছু নেয় ! কিন্তু এর আগে বিষয়টা পাত্তা দেয় নি । কিন্তু ব্যাপারটা তো সিরিয়াস !
মিতুর বাবা সাফায়েত আহমেদের মুখটা খানিকটা কঠিন হয়ে গেল । সে বলল
-আমি জানি এর পেছনে কে আছে ?
-জানেন ?
আবীর মিতুর দিকে তাকিয়ে দেখলো ও খানিকটা কালো মুখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে । ও নিজেও জানে সম্ভত ওকে কে ফলো করে ! সাফায়েত আহমেদ বললেন
-মিতু যখন ইন্টার মিডিয়েট পড়তো তখন আমরা কুমিল্লা থাকতাম । ওখানে ওকে একটা ছেলে ওর পিছু নিয়েছিলো । ভাল পরিবারের ছেলে হলেও ছেলেটা ভাল ছিল না । পড়াশুনা করতো না । বাপের টাকা ছিল বলে সারা দিন টইটই করে ঘুরে বেড়াতো । মিতুকে বিয়েও করতে চেয়েছিলো । আমি রাজি হই নি ।
-তারপর ?
-তারপর আর কি ? ক্ষমতা থাকলে আর যা হয় ! আমাদের পিছু লাগা শুরু করলো । শেষ বাধ্য হয়ে ওর পরীক্ষার পরেই ঢাকাতে চলে এলাম । এতোদিন ভেবেছিলো সে ভুলে গেছে । এখন দেখছি সে ভুলে নি !
-আপনি ব্যবস্থা নেবেন না ?
-অনেক ছাড় দিয়েছি । আর না । এবার কিছু একটা করতেই হবে !
সাফায়েত আহমেদ আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো তখনই তার ফোন বেজে উঠলো । ফোনের দিকে তাকিয়ে কিছু সময় ভুরু কুচকে রইলেন তিনি । তারপর ফোনটা রিসিভ করলেন । মিতু লক্ষ্য করলেন কেবল হ্যালো বলে আর কোন কথা বলল তার বাবা । মুখটা আরও গম্ভীর হয়ে গেল । তারপর ফোন রেখে দিলেন ।
টেবিল ছেড়ে উঠতে দেখে মিতুর মা বলল
-সে কি খাওয়া হয়ে গেল ?
-হ্যা । আমাকে একটু যেতে হবে !
-কি হয়েছে !
-কল্যান এক্সিডেন্ট করেছে !
কল্যান ঘোস সাফায়েত আহমেদের অনেক দিনের বন্ধু । মিতু সেটা জানে । আগে যখন কুমিল্লাতে ছিল তখন মাঝে মাঝেই ওদের বাসায় আসতো । ঢাকাতে চলে আসার পরে অবশ্য আর আসে নি সে । মাঝে মাঝে ফোনে কথা হত এই যা ! মিতুর মা বলল
-সেকি ! কখন ?
-কাল সকালে । মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছিলো । পেছনে একটা ট্রাক এসে চাপা দিয়ে চলে গেছে ! এখন ঢাকা মেডিক্যালে আছে । আমি একটু দেখে আসি ওকে !
মিতুর মা বলল
-এখনই যাবে ? খাওয়া শেষ করে যাও !
-নাহ ! আর খাওয়া হবে না । আমি গেলাম !
তারপর আবীরের দিকে তাকালো বলল
-তুমি কিছু মনে কর না প্লিজ !
-না না মনে করার কিছু নেই ।
-আমি আসি !
মিতুর বাবা তখনই বের হয়ে গেল । তবে আবীর আর মিতু আরও ধীরে সুস্থে খাওয়া শেষ করলো । খাওয়া শেষ করে মিতু ওকে নিজের ঘরে নিয়ে গেল । মিতুর মা তখন নিজের কাছে ব্যস্ত ! মিতুর ঘরে বসতে বসতে আবীর বলল
-আমি আসলে ভাবি নি এতো জলদি আমাদের পরিচয় হয়ে যাবে !
মিতু হেসে বলল
-আমিও না । কেবল মনে হচ্ছে আপনার সাথে আমার কোথায় যেন একটা মিল আছে । দেখছেন না পড়লাম তো পড়লাম একেবারে আপনার গায়ের উপর ! আর আপনিও থাকেন একেবারে আমার বাসার পাশে !
-তাই তো দেখছি ।
-সবই কি কাকতালীয় ব্যাপার !
আবীর এই প্রশ্নটার উত্তর না দিয়ে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো মিতুর দিকে । মিতু হঠাৎ করেই লজ্জা পেয়ে গেল । কিন্তু চোখ সরালো না । মিতুর আবীরের দিকে তাকিয়ে থাকতে অদ্ভুদ ভাল লাগছে !
-না না আন্টি আর লাগবে না ।
-কেন রান্না ভাল হয় নি ?
-কি যে বলেন আন্টি ! রান্না খুব ভাল হয়েছে । আজকে যথেষ্ট খেয়েছি ! আর খাওয়ার উপায় নেই ।
-আরেকটু নাও !
আবীরের অবস্থা দেখে মিতুর হাসি পেয়ে গেল । সে হাসি ঠেকানোর চেষ্টা করলো না । বরং ফিক করে হেসে দিল ।
আবীর ওর দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনি হাসছেন ?
-হাসবো না তো কি করবো ? আম্মুর জীবনের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে মানুষকে ধরে ধরে তার রান্না করে খাওয়ানো । কিন্তু আমি আর আব্বু কেউ এতো খাদক নয় । তাই যাকেই পায় তাকেই খাওয়াতে লেগে যায় ।
মিতুর আম্মু বলল
-তুই চুপ থাকতো । ছেলেটাকে একটু খেতে দে !
মিতুর বাবা চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছিলো । এক সময়ে আবীরকে বলল
-তা বললে যে তুমি এই এলাকাতেই থাকো ?
-জি আঙ্কেল ! এই তো আপনাদের পাশের হাউজিং এ ।
-মিতুর সাথে চাকরি করছো কতদিন ?
-বেশি দিন হয় নি এই ব্যাংকে জয়েন করেছি । আগে প্রাইম ব্যাংকে জব করতাম । সেখান থেকে এখানে এসেছি ।
-ভাল ভাল । তা তোমার বাবা কি করে ?
-উনি এখন কিছু করে না । আগে সরকারি চাকরী করতেন । আম্মু এখনও কলেজের শিক্ষকতা করেন ।
-তুমি কি একাই ?
-এক বড় বোন আছে । আমাদের সাথে থাকে না । এখন আমি বাবা মাকে নিয়ে এখানে থাকি ।
মিতুর কেন জানি ওর বাবার এই প্রশ্ন উত্তর শুনতে বেশ ভাল লাগছিলো । কেন লাগছিলো সেটা ও বলতে পারবে না । সেদিনের পর থেকে আবীর নামের মানুষটা যেন হঠাৎ করেই ওর কাছের মানুষ হয়ে গেছে । ঐদিন বাসায় পৌছে দেওয়ার পরে মিতুর মনে ঘুরে ফিরে কেবল আবীরের কথায় আচ্ছে ।
পরদিন অফিস গিয়েই প্রথমে মিতু আবীরের সাথে দেখা করেছিলো । তারপর সেদিনের লাঞ্চটাও করেছিলো এক সাথে । দুর থেকে আবীরকে যতখানি গম্ভীর মনে হয়েছিলো কাছ থকে দেখলে সেটা মোটেই মনে হয় না । বরং মিতুর মনে হচ্ছে আবীর খুবই চমৎকার একজন মানুষ । কেবল সঠিক মানুষটা খুজে পেলেই সে নিজেকে তার সামনে তুলে ধরে !
সেদিনের পর প্রায় প্রতিদিনই ও অফিসের পর আবীরের সাথে এসেছে । মাঝের একদিনে ওর সাথে গিয়েছিলো বেঙ্গল বইয়ে । সময় গুলো কেমন চট করে চলে যাচ্ছে । আজকে শুক্রবার আবীরকে ওদের বাসায় ডেকেছে খাওয়ার জন্য । সেদিনের ঘটনার পর থেকে ওর বাবাই ওকে আসতে বলেছিলো ।
আবীর বলল
-আঙ্কেল মিতুর ঐ ব্যাপারে কিছু করেছেন কি ? মিতু বলছিলো যে ওর আগেও মনে হয়েছে যে কেউ ওর পিছু নেয় ! কিন্তু এর আগে বিষয়টা পাত্তা দেয় নি । কিন্তু ব্যাপারটা তো সিরিয়াস !
মিতুর বাবা সাফায়েত আহমেদের মুখটা খানিকটা কঠিন হয়ে গেল । সে বলল
-আমি জানি এর পেছনে কে আছে ?
-জানেন ?
আবীর মিতুর দিকে তাকিয়ে দেখলো ও খানিকটা কালো মুখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে । ও নিজেও জানে সম্ভত ওকে কে ফলো করে ! সাফায়েত আহমেদ বললেন
-মিতু যখন ইন্টার মিডিয়েট পড়তো তখন আমরা কুমিল্লা থাকতাম । ওখানে ওকে একটা ছেলে ওর পিছু নিয়েছিলো । ভাল পরিবারের ছেলে হলেও ছেলেটা ভাল ছিল না । পড়াশুনা করতো না । বাপের টাকা ছিল বলে সারা দিন টইটই করে ঘুরে বেড়াতো । মিতুকে বিয়েও করতে চেয়েছিলো । আমি রাজি হই নি ।
-তারপর ?
-তারপর আর কি ? ক্ষমতা থাকলে আর যা হয় ! আমাদের পিছু লাগা শুরু করলো । শেষ বাধ্য হয়ে ওর পরীক্ষার পরেই ঢাকাতে চলে এলাম । এতোদিন ভেবেছিলো সে ভুলে গেছে । এখন দেখছি সে ভুলে নি !
-আপনি ব্যবস্থা নেবেন না ?
-অনেক ছাড় দিয়েছি । আর না । এবার কিছু একটা করতেই হবে !
সাফায়েত আহমেদ আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো তখনই তার ফোন বেজে উঠলো । ফোনের দিকে তাকিয়ে কিছু সময় ভুরু কুচকে রইলেন তিনি । তারপর ফোনটা রিসিভ করলেন । মিতু লক্ষ্য করলেন কেবল হ্যালো বলে আর কোন কথা বলল তার বাবা । মুখটা আরও গম্ভীর হয়ে গেল । তারপর ফোন রেখে দিলেন ।
টেবিল ছেড়ে উঠতে দেখে মিতুর মা বলল
-সে কি খাওয়া হয়ে গেল ?
-হ্যা । আমাকে একটু যেতে হবে !
-কি হয়েছে !
-কল্যান এক্সিডেন্ট করেছে !
কল্যান ঘোস সাফায়েত আহমেদের অনেক দিনের বন্ধু । মিতু সেটা জানে । আগে যখন কুমিল্লাতে ছিল তখন মাঝে মাঝেই ওদের বাসায় আসতো । ঢাকাতে চলে আসার পরে অবশ্য আর আসে নি সে । মাঝে মাঝে ফোনে কথা হত এই যা ! মিতুর মা বলল
-সেকি ! কখন ?
-কাল সকালে । মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছিলো । পেছনে একটা ট্রাক এসে চাপা দিয়ে চলে গেছে ! এখন ঢাকা মেডিক্যালে আছে । আমি একটু দেখে আসি ওকে !
মিতুর মা বলল
-এখনই যাবে ? খাওয়া শেষ করে যাও !
-নাহ ! আর খাওয়া হবে না । আমি গেলাম !
তারপর আবীরের দিকে তাকালো বলল
-তুমি কিছু মনে কর না প্লিজ !
-না না মনে করার কিছু নেই ।
-আমি আসি !
মিতুর বাবা তখনই বের হয়ে গেল । তবে আবীর আর মিতু আরও ধীরে সুস্থে খাওয়া শেষ করলো । খাওয়া শেষ করে মিতু ওকে নিজের ঘরে নিয়ে গেল । মিতুর মা তখন নিজের কাছে ব্যস্ত ! মিতুর ঘরে বসতে বসতে আবীর বলল
-আমি আসলে ভাবি নি এতো জলদি আমাদের পরিচয় হয়ে যাবে !
মিতু হেসে বলল
-আমিও না । কেবল মনে হচ্ছে আপনার সাথে আমার কোথায় যেন একটা মিল আছে । দেখছেন না পড়লাম তো পড়লাম একেবারে আপনার গায়ের উপর ! আর আপনিও থাকেন একেবারে আমার বাসার পাশে !
-তাই তো দেখছি ।
-সবই কি কাকতালীয় ব্যাপার !
আবীর এই প্রশ্নটার উত্তর না দিয়ে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো মিতুর দিকে । মিতু হঠাৎ করেই লজ্জা পেয়ে গেল । কিন্তু চোখ সরালো না । মিতুর আবীরের দিকে তাকিয়ে থাকতে অদ্ভুদ ভাল লাগছে !