What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected শেফার ভাল বাসা (1 Viewer)

Nil328

Member
Joined
Sep 13, 2018
Threads
101
Messages
101
Credits
3,429
শেফার মনের ভেতরে একটা ভয় কাজ করছে । মোটেই সামনে এগিয়ে যেতে মনে চাচ্ছে না । বারবার মনে হচ্ছে এখনই এখান থেকে চলে যেতে । কিন্তু পারছে না সামনের মানুষটার জন্য ।
সাদিক আবারও বাসার কলিংবেলটা বাজালো । শেফার বারবার মনে হচ্ছে জাকির যেন বাসায় না থাকে । বাসায় থাকলেই সমস্যা সৃষ্টি হবে । না থাকলে এখনকার মত বিপদ কেটে যাবে । কিন্তু ওর ধারনা কে ভুল প্রমান করে দিয়ে স্বয়ং জাকিরই দরজা খুলল । প্রথমে সাদিকের দিকে তারপর ওর দিকে তাকিয়ে রইলো খানিকটা অবাক চোখে । অন্তত এই সকাল বেলা জাকির ওদেরকে এখানে আশা করে নি ।
গতকাল রাতেই জাকিরের সাথে দেখা হয়েছিলো ওর । সাদিকের সাথে রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিলো ও । সাদিক ওকে রেখে একটু ওয়াশ রুমে যেতেই কোথা থেকে যেন জাকির এসে হাজির । ওকে উদ্দেশ্য করে নানান কথা বলতে শুরু করে দিল । ওর চোখে পানি চলে আসছিলো তখনই সাদিক এসে হাজির । শেফার চেহারার দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারছিলো কিছু হয়েছে ।
জাকির দিকে এগিয়ে যেতেই শেফা ওকে আটকালো । এক প্রকার জোর করেই সাদিককে রেস্টুরেন্ট থেকে বের করে আনলো । সাদিককে বেশ কয়েকদিন থেকেই সাদিকের সাথে কথা বলছে ও । যেই ধারনাটা ঠিক করে রেখেছিলো যে আর কখনও কোন ছেলের সাথে নিজেকে জড়াবে না সেই ধারনা থেকে বের হয়ে এল সাদিকের সাথে পরিচয় হওয়ার পরেই । একবার সে ভুল করেছে । তবুও আরেকবার সাদিকের সাথে জড়াতে ইচ্ছে করছে ওর । বারবার কেবল মনে হচ্ছে যে সাদিক ওর আগের স্বামীর জাকিরের মত নয় মোটেই ।
জাকির ওদের দুজনের দিকেই তাকিয়ে রইলো বেশ কিছুটা সময় । তারপর রুক্ষ গলাতে বলল
-কি চাই এখানে ?
শেফা কি বলবে খুজে পেল না । ওর কিছু বলতে ইচ্ছেও করছে না । ওরা যে ফ্ল্যাটে থাকছে এটা শেফার নিজের ফ্ল্যাট । বিয়ের পর থেকে ও এখানেই ছিল । কিন্তু বিয়ের পর পরই জাকির ওকে সব সময় চাপ দিত এই ফ্ল্যাট টা ওর নাকে লিখে দিতে । শেফা সেটা করতে চাই নি বলেই ঝামেলা শুরু । একটা সময় জাকিরের আসল রূপটা বের হয়ে এল । শেফা স হ্য করতে না পেরে বাসা ছেড়ে চলে গেল । সেটাই ওর জন্য ভুল ছিল । জাকির এই ফ্ল্যাটের উপর কবজা করে নিলো । শেফা সেই ছোট বেলা থেকে এতিম ছিল । ওর একার পক্ষ্যে এই ফ্ল্যাট উদ্ধার করা কোন ভাবেই সম্ভব ছিল না । পুলিশের কাছে নালিশ করেও কোন লাভ হয় নি । জাকিরের এক বন্ধু এই থানার ওসি হয়ে আছে । সেই সব কিছু সামাল দিয়ে রেখেছে । শেফার কিছুই করার ছিল না এতোদিন ।
কিন্তু গতকাল রাতের পর সাদিক খুব রেগে আছে । আজকে এসেছে এই ফ্ল্যাট টা উদ্ধার করতে । সাদিক বলল
-এই যে ফ্ল্যাটের কাগজ পত্র । আপনি এই ফ্ল্যাট টা ছেড়ে দেন এখনই ।
জাকির এমন একটা ভাব করলো যেন এর থেকে হাসির কথা ও আর শোনেই নি কোন দিন । ওদের দিকে তাকিয়ে বলল
-আরে যা । সকাল বেলা ডিস্টার্ব করিস না !
সাদিক আবারও বলল
-আমি ভদ্র ভাবে বলছি, দয়া করে বাসা থেকে এখনই বের হয়ে যান ।
-না গেলে ?
শেফা আবারও ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দুজনের কথা শুনছিলো । শেফার কেবল মনে হচ্ছে এখনই ওদের এখান থেকে চলে যাওয়া উচিৎ । এখনই নয়তো কোন ঝামেলা শুরু হয়ে যাবে । শেফার মনের চিন্তা মনেই রয়ে গেল, সে দেখতে পেল সাদিক ওর বাঁ হাত দিয়ে জাকিরের মাথাটা ধরে দরজার সাথে জোড়ে ধাক্কা মারলো । ঘটনা এতোই দ্রুত ঘটলো যে জাকির কিছু বুঝতেই পারলো না । শেফা কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো সামনের দিকে ।
জাকির প্রথমে কয়েক সেকেন্ড কিছু বুঝতেই পারলো না ওর সাথে কি হল । মাথাটা কেবল ঝিমঝিম করতে লাগলো । খানিকটা সুস্থির হতে বেশ কিছুটা সময় লাগলো । মাথায় হাত দিয়ে বুঝতে পারলো ওর মাথাটা বেশ ব্যাথা করছে । মুখ দিয়ে একটা কঠিন গালি বের হওয়ার আগেই আরেকটা থাপ্পড় এসে লাগলো ওর গালে । এসে খানিকটা বাসার ভেতরে গিয়েই পড়লো ।
শেফা তখনই দেখলো ভেতরে থেকে একটা মেয়ের মুখ উকি দিচ্ছে । ওদের তাকিয়ে আছে ভিত চোখে । সাদিকের দিকে তাকিয়ে বলল
-ওকে মারছেন কেন ?
সাদিক বলল
-আপনি কে ?
মেয়েটি বলল
-আমি ওর স্ত্রী ?
সাদিক একটু হাসলো । তারপর বলল
-বাহ ভাল । এই যে এই মেয়েটিকে দেখছেন না এই হচ্ছে প্রথম স্ত্রী । এই ফ্ল্যাট টার মালিক এই মেয়েটি । আপনার স্বামীর সাথে ওর ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে কিন্তু আপনার গুনধর স্বামী এই ফ্ল্যাট টা নিজের বাপের সম্পত্তি মনে করে রেখে দিয়েছে । বুঝলেন ?
মেয়েটি অবাক হয়ে একবার সাদিকের দিকে আরেকবার জাকিরের দিকে তাকাচ্ছেন । স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে এসবই তার কাছে নতুন লাগছে । জাকির ততক্ষনে উঠে দাড়িয়েছে । সে শেফা আর সাদিকের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলল
-তোদের আমি দেখে নেব । দাড়া তুই ।
সে এক প্রকার দৌড়েই চলে গেল ঘরের ভেতরে । একটু পরেই শেফা শুনতে পেল সে ফোন করে কাকে যেন আসতে বলছে । শেফার বুঝতে কষ্ট হল না কাকে ফোন করে আসতে বলছে । জাকিরের সেই পুলিশ বন্ধুকে । সাদিকের অবশ্য সেদিকে কোন ভাবান্তর হল না । সে দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লো । তারপর শোফার উপর আরাম করে বসে পড়লো ।
শেফা ভয়ে ভয়ে ভেতরে ঢুকে চারিদিকে তাকাতে লাগলো । পুলিশ এসে সাদিককে নিয়ে যাবে এটা ভাবতেই ওর হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে । কি দরকার ছিল এই ঝামেলা করার ! জাকির এই ফ্ল্যাট নিয়ে থাকছিলো, থাকুক ! কি এমন দরকার ছিল ও সাথে ঝামেলা করার !
১০ মিনিটের মাথায় জাকিরের সেই পুলিশ বন্ধু এসে হাজির । নামটা শেফা ভুলে গিয়েছিলো । নেম প্লেট দেখে আবার মনে পড়লো । হেদায়েত । হেদায়েত আসতেই জাকির যেন শরীরে শক্তি পেয়ে গেল বহুগুণে । সাদিকের তাকিয়ে বলল
-এবার তোর খবর আছে ।
তারপর হেদায়েতের দিকে তাকিয়ে বলল
-এই গুন্ডাটা আমাকে মারধোর করেছে । তুই এখনই এর নামে কেস লিখবি । এমন কেস লিখবি ....।
জাকিরকে থামিয়ে দিয়ে হেদায়েদ সাদিকের দিকে এগিয়ে এল । তারপর বলল
-আমার এলাকাতে এসে মাস্তানী ? চল থানায় চল ....
সাদিককে খুব বেশি চিন্তিত মনে হল না । উঠে দাড়িয়ে হেদায়েতের মুখোমুখি হয়ে বলল
-কোন জোনের আন্ডারে আপনি ?
-মানে ?
-মানে আপনাদের ডিআইজি রফিকুল ইসলামের নাম্বার আছে না আপনার কাছে ?
হেদায়েতকে এবার খানিকটা দ্বিধান্বিত মনে হল । ঠিক বুঝতে পারছে না যেন কি করবে ?
হেদায়েতকে চুপ থাকতে দেখে সাদিক নিজেই মোবাইল বের করলো । তারপর একটা নাম্বার টেপাটেপি করে কাকে যেন ফোন দিল । কয়েক মুহুর্ত পরেই লাইন পেয়ে গেল ।
-হ্যা মামা ? হ্যা আমি ।
শেফা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সাদিকের দিকে । হেদায়েতের দিকে তাকিয়ে দেখে তারও মুখ শুকিয়ে গেছে । সাদিক তখন বলেই চলেছে ।
-তোমাকে তো বলেছিলাম বিয়ে করছি । ওর একটা ফ্ল্যাট এক বদমাইস দখল করে রেখেছে । আর সেই দখলে সাহায্য করছে তোমার এক অফিসার ! নাম ?
সাদিক সামনে দাড়ানো হেদায়েতের নেম প্লেট । বুঝতে পারছে যে সাদিক ওর নেম প্লেট পড়ার চেষ্টা করছে । সে সাথে সাথেই নিজের হাত দিয়ে নেম প্লেট টা ঢাকার চেষ্টা করলো কিন্তু ততক্ষণে দেরী হয়ে গেছে । সাদিক নামটা খুব ভাল করেই পড়ে ফেলেছে ।
সে নামটা বলে দিল ফোনে । তারপরই ফোনটা বাড়িয়ে দিল হেদায়েতের দিকে । বলল
-নেন কথা বলেন
হেদায়েত প্রথমে কথা বলতে চাইলো না । কিন্তু মানাও করতেও সাহস হল না । ফোনটা কানে নিয়ে বেশ কিছুটা চুপ করে দাড়িয়ে রইলো । হু হা বলল বেশ কয়েকবার ! বুঝতেই পারছে ওপাশ থেকে ধমক শুনতে পাচ্ছে । ফোনটা বাড়িয়ে গোমড়া মুখে তাকিয়ে রইলো সবার দিকে । হেদায়েতকে অবশ্য আর থাকতে দেখা গেল না । সে জাকিরের দিকে তাকিয়ে বলল
-দোস্ত নিজে বাঁচলে বাপের নাম । তোর সমস্যা তুই বুঝো আমি আর নাই ।
হেদায়েত চলে যাওয়ার পরপরই জাকিরের চেহারা বেশ বদলে গেল । গলার স্বরও বদলে গেল বেশ । সাদিক খুব শান্ত কন্ঠে বলল
-এখনই বাসা ছেড়ে চলে যাবে । এই মুহুর্তে । আমি আধা ঘন্টা সময় দিলাম ।
জাকির কোন মতে বলল
-আমি কোথায় যাবো এখন ? এই মাসের মাঝে ?
-সেটা আমার সমস্যা না । জিনিস পত্র এখানে থাকবে । তিন বছর বাসা কবজা করে রেখেছো, তিন বছরের বাসা ভাড়া দিয়ে নিয়ে যাবা সব । না হলে কিছু নিতে পারবে না ।
জাকির কিছু বলতে যাচ্ছিলো তার আগেই শেফা দেখতে পেল সাদিক আবারও খুব দ্রুত ওর সামনে গিয়ে হাজির হল । জাকির নিজের মুখটা এবার ঠেকানোর ভঙ্গি করে আটকালো । সাদিক সোজা ওর কলার চেপে ধরে এক প্রকার টানতে টানতেই ঘর থেকে বের করে দিল । যে মেয়েটি এতো সময় পেছনে ভীত মুখে দাড়িয়ে ছিল সে তখনও চুপ করে দাড়িয়ে আছে । সাদিক সেদিকে তাকিয়ে বলল
-কি ব্যাপার আপনি কেন দাড়িয়ে আছেন ? এটা আপনার বাসা না বুঝতে পারছেন না । বের হন ।
মেয়েটা এবার আর দেরী করলো না । বলতে গেলে এক কাপড়েই জাকিরের পাশে গিয়ে দাড়ালো । জাকির তখনও দাড়িয়ে আছে দরজাতে । অসহায় মুখে তাকিয়ে আছে শেফার দিকে । শেফার দিকে করুণ কন্ঠে বলল
-প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা করো ! আমি এখন কোথায় যাবো । এই মাসটা সময় দাও !
শেফা তাকিয়ে আছে জাকিরের দিকে । একটা সময় এই ঘর থেকেই ওকে এক প্রকার বের করে দিয়েছিলো । কেবল গায়ের শক্তি দেখিয়ে ওর সম্পদ দখল করে রেখেছিলো । আর আজকে ওর কাছে কেমন করুণা চাচ্ছে । শেফা কিছু বলবে তার আগেই সাদিক বলল
-এখনও দাড়িয়ে ! এবার কিন্তু ঐ হেদায়েতকে ডেকেই পেছনে বাঁশের দান্ডা চালাবো । গেলি !
শেফা কিছু বলতে গিয়েও বলল না । কেবল তাকিয়ে রইলো সাদিকের দিকে । কেন জানি জাকিরের এই পরিনতি দেখে ওর মোটেই খারাপ লাগছে না । বরং বেশ আনন্দ হচ্ছে । সেই সাথে এও খুশি লাগছে যে সাদিকের মত একজনের সাথে ওর বিয়ে হতে যাচ্ছে দেখে । সব বিপদ থেকে এই ছেলে তাকে ঠিক ঠিক রক্ষা করে রাখবে ।
দরজাটা সাদিককে বন্ধ করতে হল না । জাকিরের মুখের উপর শেফাই বন্ধ করে দিল ঠাশ করে । মনের ভেতরে একটা আনন্দ হল । এই আনন্দের কোন শেষ নেই ।
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top