What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

নিখাদ ভালোবাসা (1 Viewer)

ছোটভাই

Super Moderator
Staff member
Super Mod
Joined
Mar 4, 2018
Threads
775
Messages
51,102
Credits
371,053
Sunflower
T-Shirt
Sari
Sari
Thermometer
Tomato
হঠাৎ করে নিজের মনটা অন্যের দখলে চলে যাওয়াই হলো "ভালোবাসা" ভালোবাসা মানে, অপর প্রান্তের সেই মানুষটির মুখের আওয়াজ শুনে বুঝতে পারা সে কেমন আছে | হাজারো ঝামেলা ঝগড়ার পরেও যে সম্পর্কটা টিকে থাকে তার নাম ভালোবাসা অথবা রবি ঠাকুরের কথায়েঃ
‘ভালোবাসা’ ‘ভালোবাসা’—
সখী, ভালোবাসা কারে কয়!
সে কি কেবলই যাতনাময়।
সে কি কেবলই চোখের জল?
সে কি কেবলই দুখের শ্বাস?
লোকে তবে করে কী সুখেরই তরে
এমন দুখের আশ।
এই আজকের ভালবাসার গল্পটা প্রেমদিবসে লাল গোলাপ, কিস ডে তে কিস বা প্রপোস ডে তে প্রপোসের গল্প নয় আমার খুড়তুতো ভাই আবীর আর তার স্ত্রী সিক্তার গল্প।
 
সিক্তার সঙ্গে আমার পরিচয় কলেজ থেকেই। সেই থেকেই আমাদের প্রেম। মাঝে মাঝেই আমার মনে হত কোন কুক্ষণে যে সিক্তার প্রেমে পড়েছিলাম! উফ! জান কয়লা কয়লা করে দিল গো! এই মেয়ের মাথার পেছন দিকেও মনে হয় একজোড়া চোখ আছে। পাশ দিয়ে দেখতে সুন্দর, এমন কোনো মেয়ে হেঁটে গেলে নিজের অজান্তেই তো চোখ চলে যায় মেয়েটার দিকে, সন্ন্যাসী তো আর নই! সিক্তা কি করে যেন ঠিক টের পেয়ে যায়। আমাকে বলে ... "
"ওই মেয়েটার দিকে তাকাচ্ছিলে কেন?"
"কোন মেয়েটা!" আকাশ থেকে পড়ি আমি।
"ন্যাকামি করছ? নিজেকে বেশী চালাক ভাবো?"
"মানে?"
"কি ভেবেছ? ওই পাশটাতে আমি ফুচকা খাচ্ছিলাম বলে দেখতে পাই নি!? আমি সব দেখেছি। শর্টস পরা বেহায়া মেয়েটা পাশ দিয়ে হেঁটে গেল, আর তুমিও হাঁ করে তাকিয়ে থাকলে।"
"আচ্ছা জ্বালা তো! সুন্দর দেখতে, তাই তাকিয়েছি, সুন্দর ফুল দেখলেও তো তাকাই। তাতে কি?"
"ফুল আর ওই মেয়েটা এক হল? মেয়েটা সুন্দর, আর আমি! আমি কি! বল! ওই মেয়েটার মত সুন্দর নই, তাই তো! সেজন্যই তো আমি পাশে থাকতেও মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলে!"
"তুমি কিন্তু ইচ্ছে করে ঝগড়া করছ। চোখ যখন আছে, একটু তাকিয়েছি, তাতে দোষ কোথায়? আমি কি মেয়েটার সাথে প্রেম করতে যাচ্ছি!"
ঝগড়ার এই পর্যায়ে সিক্তার চোখ ছলছল করবে, গলা ভারি হয়ে আসবে, ঠোঁট কাঁপবে, তারপরেই শেষ অস্ত্র এবং একেবারে মোক্ষম অস্ত্র প্রয়োগ করবে।
"হ্যাঁ, প্রেম করতে যাওয়াই বাকি রাখলে! তাই কর গিয়ে! আমার সাথে আজ থেকে আর কোনো যোগাযোগ রাখবে না। আমি তোমার কেউ হই না।"
কথাটা বলেই সিক্তা হনহন করে হাঁটা দেবে। আমি আকুল হয়ে ডাকলেও আর সাড়া দেবে না। একবারও পেছন ফিরে তাকাবে না।
এর পরের সাত দিন সত্যিই ওর সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ করা যাবে না। আর আমার কাছে এই সাত দিন সাত বছরের মত কাটবে। যদিও আমি বুঝি, সিক্তা আমাকে খুব ভালোবাসে বলেই এমন ছেলেমানুষি করে।
বিরহটা যখন আমার কাছে অসহ্য হয়ে ওঠে, সেই জ্বালায় আমিও সিক্তাকে জব্দ করার নানান ফন্দি আঁটি, তখনই ওর ফোন আসে, এবং অনেক কান্নাকাটি আর অনেকবার স্যরি বলার পরেও সে কিন্তু বলতে ভোলে না,
"আর কখনো কোনো মেয়ের দিকে তাকাবে না তো! আমার একদম ভালো লাগে না।"
দেঁতো হাসি হেসে আমাকে বলতেই হয়, "আর তাকাবো না, ঠিক আছে!"
সবচেয়ে আশ্চর্য এই যে, এত প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও আমাদের সম্পর্কটা টিকে আছে পাঁচ বছর ধরে। কারণ আমরা দুজনেই একজন আরেকজনকে ছাড়া থাকতেই পারি না। সিক্তা যতই অবুঝ হোক, আর আমি যতই বিরক্ত হই ওর অবুঝপনায়, তবু সিক্তাকে ছাড়া আমার এক মুহূর্তও চলে না।
এইভাবেই দেখতে দেখতে আরও কয়েকটা বছর পার করে ফেললাম আমরা। আর সেই সময়টায় কখনও মসৃণ রাস্তায় গড়গড় করে ছুটেছি আমরা, আর কখনও উঁচু নিচু রাস্তায় হোঁচট খেতে খেতে ছুটেছি, তবু কেউ কারো হাত ছাড়ি নি।
এখন আমি চাকরি খুঁজছি হন্যে হয়ে, তবু মনের মত একটা চাকরি জোগাড় করতে পারছি না। বাড়িতে এজন্য অনেক কথা শুনতে হচ্ছে। নিজের হাতখরচের জন্যও অন্যের কাছে হাত পাততে হচ্ছে। বন্ধুদের কাছে প্রচুর ধার করেছি, কিভাবে শোধ করব জানি না।
সেরকম সময়ে একদিন ব্যাঙ্কের একটা চাকরির রিটেন টেস্ট দিয়ে বেরিয়ে আসছি, বাইরে রাস্তায় দেখি সিক্তা দাঁড়িয়ে আছে।
"কি ব্যাপার? তুমি এখানে?"
দুচোখে হাসির ফুলঝুরি নিয়ে সিক্তা বলে, "সারপ্রাইজ!!"
"কেন?" মনে মনে অল্প বিরক্ত হই আমি। কিচ্ছু ভালো লাগে না এখন আমার। কবে যে একটা উপযুক্ত চাকরি পাবো!
"কেমন হয়েছে পরীক্ষা?" সিক্তা জিজ্ঞেস করল।
"ওই প্রতিবারের মতই। জানি না কি আছে কপালে।"
"আরে, এভাবে হতাশ হয়ে পড়ছ কেন? ঠিক একটা কিছু হয়ে যাবে, দেখো!"
আমি আর কিছু বললাম না। রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকলাম দুজনে। একসময় সিক্তা জিজ্ঞেস করল,
"খিদে পেয়েছে তোমার? সকালের পর থেকে নিশ্চয়ই কিছু খাও নি!"
"না না, আমার খিদে পায় নি তো! "তাড়াতাড়ি বললাম আমি।
হঠাত রাস্তার পাশে একটা রেস্টুরেন্ট দেখে সিক্তার আবদার,
"এই, চলো না, ওই রেস্টুরেন্টে কিছু খাই!"
"কি খাবে? আমার খিদে নেই কিন্তু!"
"আমার আছে তো। চল!"
প্রবল অনিচ্ছে সত্বেও সিক্তার আবদার রাখতে আমাকে ঢুকতেই হল ওখানে। মনে মনে সিক্তার মুন্ডুপাত করছি, আমি মরছি নিজের জ্বালায়, আর ওনার আহ্লাদ দেখো! কবে যে ওর বুদ্ধি হবে!
রেস্টুরেন্টের বয় মেনু কার্ড দিয়ে গেল। বাপরে, কত দাম! পকেটে কত টাকা পড়ে আছে, মনে মনে একটা হিসেব করি। সব দেখে টেখে এক প্লেট মোগলাই পরোটা অর্ডার করলাম।
"এক প্লেট কেন?" সিক্তা ভুরু কোঁচকায়।
"আমি খাবো না, খিদে নেই আমার। তুমি খাও।" বিরক্তি চেপে আমি বললাম।
"না না, সে হবে না। আরেক প্লেট অর্ডার কর।"
বলেই আমার উত্তরের অপেক্ষা না করে সিক্তা নিজেই আরেক প্লেট অর্ডার করে দিল। ওর এই অবুঝপনায় সত্যি আমার খুব রাগ ধরছে এখন। একবার জিজ্ঞেসও করল না, আমার কাছে অতো টাকা আছে কি না! এখন বিল দেব কি করে! সব টাকাই যে খরচ হয়ে যাবে! আমার চলবে কি করে তবে!
মোগলাই পরোটা এল। সিক্তা খুশী খুশী মুখ করে খাচ্ছে। আমিও খাচ্ছি, খুব খিদে পেয়েছিল আসলে। আমার খাওয়া শেষ হতেই সিক্তা বলল,
"আর কিছু খাবে?"
"না না, আর কিছু লাগবে না।"
সিক্তা আমার দিকে তাকিয়েছিল। কি মায়ায় ভরা দুটো চোখ। ও কি বুঝতে পেরেছে, আমার খুব খিদে পেয়েছিল!
 
বিল নিয়ে আসতেই আমি পে করতে গেলাম। কিন্তু সিক্তা ছোঁ মেরে বিলটা কেড়ে নিয়ে নিজেই পে করে দিল। আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকাতেই ও বলল,
" আবীর! তোমার প্রতিটা মিথ্যে আমার কাছে ধরা পড়ে যায় যে। তোমার মুখ দেখেই বুঝেছিলাম, খুব খিদে পেয়েছে তোমার। কেন আমায় মিথ্যে বল তুমি? তোমার পাওয়া গুলো যেমন আমার, তেমনি তোমার না পাওয়া গুলোও তো আমারই আবীর! তোমার সবটুকু নিয়েই তুমি আমার।"
আমি হাত চেপে ধরলাম সিক্তার। আমার সব না পাওয়া গুলো যে এখানে এসেই পূর্ণ হয়ে যায়।
"আজ সত্যিই একটা সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য। আমি স্কুলে পড়ানোর চাকরি পেয়েছি আবীর। এবার আরও বেশী করে তোমার পাশে থাকতে পারব আমি। তোমার যুদ্ধটা এবার থেকে তুমি আর আমি একসাথে লড়ব।"
"আমি কি পারবো সিক্তা!"
"পারবে না মানে! অবশ্যই পারবে! আমি আছি তবে কি করতে!"
সিক্তার আত্মবিশ্বাসে ভরা চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে আমিও যেন মনের জোর খুঁজে পাই। মনে মনে বলি, পারতেই হবে আমাকে। অন্তত সিক্তার জন্য!
 
~~
এরপর কেটে গেছে বহুদিন।
এয়ারপোর্টে প্লেনের জন্য অপেক্ষা করতে করতে এরকম পুরনো নানা স্মৃতিরা মনে ভিড় করে আসছিল। এক কচি গলার চিৎকারে ভাবনার জাল ছিঁড়ে গেল।

"বাপিইইইই! তুমি ওই বেবিটাকে আদর করলে, আমাকে করো নি কেন?"

চেয়ে দেখি চোখ পাকিয়ে কোমরে দুহাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে সায়নী। আমার আর সিক্তার চার বছরের ছোট্ট রাজকন্যা। যেমন মা, তার তেমন মেয়েই হবে তো! ঠিক কখন দেখে ফেলেছে, একটু আগে একটা ছোট্ট বাচ্চার গাল টিপে দিয়েছিলাম আমি আদর করে। তাই অভিমানে ঠোঁট ফোলাচ্ছে, ওকেও আদর করতে হবে।
হাত বাড়িয়ে রাজকন্যাকে বুকে টেনে নিলাম আমি। কি সুন্দর মিষ্টি গন্ধ ওর গায়ে।

"কেন মামনি! তোমাকে তো আমি কত্ত কত্ত আদর করি। আরও চাই?"

বলেই আমি ওর নাকে নাক ঘষতে লাগলাম। আমাদের ছোট্ট রাজকন্যা খিলখিল করে হেসে উঠলো।

"আরে! বাপ মেয়েতে মিলে বোধহয় ভুলেই গেছ, প্লেন ধরতে হবে আমাদের। গোয়ার ফ্লাইট টেক অফ করবে একটু পরেই, চলো তাড়াতাড়ি।"

সিক্তার তাড়ায় আমি আমার দুই মেয়ের হাত ধরে এগোই, বড় সিক্তা আর ছোট সিক্তা। বিয়ের ছ বছর পর সেকেন্ড টাইম গোয়া যাচ্ছি আমরা। আর আমার এই সুন্দর জীবনটা পুরোটাই সিক্তার উপহার। ও পাশে না থাকলে, এই আবীর কোথায় থাকতো!

থামল আবীর। আমরা সবাই স্তব্ধ হয়ে আছি। শুধু সিক্তা হাসছে ঠোঁট টিপে। এতক্ষণ আমার দূর সম্পর্কের খুড়তুতো ভাই আবীরের মুখ থেকে শুনছিলাম ওর জীবনের ভালোবাসার কাহিনী। আমাকে ভালোবাসা নিয়ে গল্প লিখতে হবে জেনেই আবীর চেয়েছে ওর জীবনের প্রেমের কাহিনীও যেন আমি লিখে ফেলি, তাতে নাকি ওর খুব ভালো লাগবে।

আমি গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম সিক্তাকে, কজন এমন ভালবাসতে পারে! আবীরের যে দুরবস্থা ছিল, তাতে কোনো মেয়েই ওর সঙ্গে নিজের জীবন জড়াতে ভয় পেত। কিন্তু সিক্তা ভয় পায় নি। সে আবীরের ওপর পুরো বিশ্বাস রেখেছে, আর তাই তো ওরা সব বাধা কাটিয়ে আসতে পেরেছে এভাবে। ভালোবাসা সত্যিই অনেক কিছু পারে। যদি সেই ভালোবাসাটা নিখাদ হয়।

হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন ডে
 

Users who are viewing this thread

Back
Top